ছবি সংগৃহীত
জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি- বিনা ঔষধে, বিনা জন্মনিরোধকে
আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৪, ১৫:১১
জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে চাই আমরা সবাই। কর্মব্যস্ত সময়ে নিজের সংসার আর সবকিছু গুছিয়ে রাখার জন্য পরিবারের সদস্য সংখ্যাও সীমিত রাখতে চাই আমরা। আর সেজন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। আবার অনেক তরুণ নব-দম্পতিই চান বিয়ের পর তাদের নিজেদের জন্য কিছুটা সময় রাখতে, সন্তান পালনের মত বিরাট দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগে নিজেদেরকে তৈরি রাখতে চান অনেকে। সেজন্যও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো জানা জরুরি। আমাদের নিত্য ব্যবহার্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মাঝে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ঔষধ হলো জন্মবিরতকরণ পিল(মেয়েদের জন্য) ও নিরোধক হলো কনডম(ছেলেদের জন্য)। কিন্তু অনেকের কাছেই জন্মনিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিগুলো পছন্দনীয় নয়। বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রক পিলের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমনঃ মাথা ঘোরা, বমি ভাব হওয়া,অল্প অল্প রক্তস্রাব ইত্যাদি। আর কনডম মিলিত হবার সময় ব্যবহার করতে অনাগ্রহী থাকেন অনেক পুরুষ। তাছার কনডম কখনোই ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সামান্য একটু ফুটো হয়ে গেলেও ঘটে যেতে পারে গর্ভধারণ। যারা এইসব জন্মনিয়ন্ত্রকের বাইরে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন তাদের জন্যই মূলত এই পোস্ট।
১. ক্যালেন্ডার পদ্ধতি বা সেইফ পিরিয়ড মেথডঃ
এটা খুব পুরাতন একটি পদ্ধতি, বিজ্ঞানী ওগিনো ১৯৩০ সালে এটা প্রথম বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিটি মূলত গড়ে উঠেছে মাসিকের পর কবে মেয়েদের ডিম্বপাত হয় তার উপর ভিত্তি করে। এই বিজ্ঞানী বলেন, যাদের নিয়মিত মাসিক হয় তাদের মাসিক শুরু হবার ১২ তম থেকে ১৬ তম দিনের মাঝে ডিম্বপাত হবে। তাই এই সময়ে যদি কেউ কোন ধরণের জন্মনিরোধক বা জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া মিলিত হন তবে তাদের গর্ভবতী হয়ে পরার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে আধুনিককালে এই সময়কে আরেকটু বাড়িয়ে ১০ম দিন থেকে ১৮ তম দিন পর্যন্ত ধরা হয়। অর্থাৎ আপনার রজঃচক্র যদি ২৮ দিনের হয়ে থাকে তবে আপনি ধরে নিতে পারেন পিরিয়ড শুরু হবার দিনকে প্রথম দিন ধরে নবম দিন পর্যন্ত আপনি মোটামুটি নিরাপদ। এবং মাঝে ৯-১০ দিন বিরতি দিয়ে আবার ১৯ তম দিন থেকে আপনার নিরাপদকাল শুরু। মোদ্দা কথা পিরিয়ড শুরুর আগের দশদিন ও পিরিয়ড শেষে পরের ৮-৯ দিন আপনার গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে শুক্রানু ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মাঝে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে বলে সময়টাকে একটু বাড়িয়ে নেওয়াই ভাল। অনেক ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পিরিয়ডের সময় মিলিত হওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সেই সময়ও গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা একদমই কম। কিন্তু পিরিয়ডের সময় যৌনমিলন এড়িয়ে চলাটা তুলনামূলক ভাবে ভালো। আর এই সেইফ পিরিয়ড বা ক্যালেন্ডার পদ্ধতি কেবলমাত্র তখনই আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে যদি আপনার মাসিক/ রজঃচক্র নিয়মিত ও নির্দিষ্ট দিনের বিরতি হয়। নইলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।২. শারিরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিঃ
মাসিকের ১০ম থেকে ১৮তম দিনের মাঝে ডিম্বপাত বা ওভ্যুলেশনের সময় মেয়েদের শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয় এবং এ পরিবর্তন বেশ কিছুদিন যাবত শরীরে থাকে। এই পরিবর্তনের সময়টুকুতে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকলে গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা বেশ কম থাকে। পরিবর্তনগুলো হলো-- - শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যাওয়া
- - যে পাশের ডিম্বানু থেকে ডিম্বপাত হয়, পেটের সেইপাশ ব্যথা করা
- - স্রাবের ধরণে পরিবর্তন হওয়া
৩. উইথড্রয়িং মেথডঃ
এটা জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবেন পুরুষ সদস্য। এই পদ্ধতিতে শুক্রানু স্খলনের চরম মুহূর্তে পুরুষ সদস্য নিজেকে মিলিত অবস্থা থেকে সরিয়ে আনবেন যাতে নিঃসৃত শুক্রানু বাইরে পরে। এ বিষয়ে খুব সচেতন থাকা উচিৎ কারণ একফোঁটা শুক্রক্ষরণ থেকেও গর্ভধারণ হতে পারে। তবে অনেক ধর্মেই এই পদ্ধতি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।৪. স্তন্যদানের সময়ঃ
বাচ্চা হবার পরপর যদি মা বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তবে সেই সময় নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে অনেকদিন পর্যন্ত ডিম্বপাত বা মাসিক হয় না। তাই সে সময়ও জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া মিলন তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যত যাই বলা হোক না কেন, এত সব প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি রয়েই যায়। হিসেবে গন্ডগোল হলে সেইফ পিরিয়ড অনুসরণ করা হবে শুধুই ব্যর্থতার নামান্তর। অপরদিকে কনডম ব্যবহার করা হলে এক সদস্য থেকে অপর সদস্যে বিভিন্ন রোগ ছড়ানর সম্ভাবনা যেমন কমে যায়, তেমনি জন্মবিরতিকরণ পিল ব্যবহার করলে কমে গর্ভধারণের ঝুঁকি। তাই প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাথে সাথে যদি কোন কৃত্রিম পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে লাভজনক! -লুৎফুন্নাহার নিবিড় ময়মনসিংহ মেডিকেল- ট্যাগ:
- স্বাস্থ্য
- লাইফ
- বিজ্ঞান
- বিজ্ঞান প্রতিদিন