ছবি সংগৃহীত

ঘুরে আসুন দর্শনীয় স্থান, জেনে নিন খুঁটিনাটি তথ্য (তৃতীয় পর্ব)

Toufikul Islam
লেখক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০১৪, ১৫:২৪
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৪, ১৫:২৪

শত ব্যস্ততার শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। কাজের ফাঁকে একটু ছুটি পেলেই তাই অনেকেই ছুটেন একটু বিনোদনের জন্য। কিংবা ছুটির দিনে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাতে একটু খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো, সন্তানদের দৌড়ে বেড়ানো, প্রাণ খোলে নিঃশ্বাস নিতে রাজধানী ও এর আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এসব দর্শনীয় স্থান সপ্তাহে কয়দিন খোলা থাকে, কোন দিন বন্ধ থাকে, সময়সূচি, যাতায়াত ব্যবস্থা ও যোগাযোগ নম্বরসহ বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য আজ রইল তৃতীয় পর্ব।

লালবাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লা, মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন। যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া আর বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। প্রায় প্রতিদিন হাজারও দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণয় মুখরিত হয় ঢাকার লালবাগ এলাকার এই দুর্গটি। কেল্লাতে একটি মসজিদ আছে, আজম শাহ দিল্লি চলে যাওয়ার আগেই তিনি এই মসজিদটি তৈরি করে গিয়েছিলেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। এছাড়া রয়েছে প্রাচীন আরও অনেক নিদর্শন। লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম দশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য একশত টাকা করে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবারসহ সকল সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। যাতায়াত ব্যবস্থা: পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলি পেরিয়ে আপনাকে যেতে হবে লালবাগের কেল্লায়। সেখানে যাওয়ার সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম রিকশা। আপনি এই এলাকার আশেপাশেই কোথাও থাকলে বা রিকশা যায় এমন দূরত্বে থাকলে রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারেন সেখানে। যে কোনো রিকশাওয়ালাকে লালবাগ কেল্লা বললেই চিনে ফেলার কথা।

আহসান মঞ্জিল

বুড়িগঙ্গার তীরে ইসলামপুরের কুমারটুলিতে রয়েছে বাংলার অন্যতম নজড়কাড়া ঐতিহাসিক নিদর্শন আহসান মঞ্জিল। প্রায় প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীর পদচাড়নায় মুখরিত থাকে এই গোলাপি প্রাসাদ তথা আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল
দেখার মতো বেশ অনেক কিছুই আছে এই পিঙ্ক প্যালেসে। সবই যদি বলে দেই তাহলে পরে জানা জিনিস দেখে আর কি মজা পাবেন? তাঁর চেয়ে বরং সপরিবারে/সবান্ধব ঘুরে আসুন বাংলার ঐতিহাসিক এই স্থানটি। এতোটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, যদি আগে গিয়ে না থাকেন, তাহলে সময় নিয়ে প্রতিটা জিনিস দেখে আপনার ভালোই লাগবে। সময়ের অপচয় হবেনা। ১০-১০.৩০ এর মধ্যে জাদুঘর খুলে দেয়া হয়। টিকেট কেটে আপনাকে ঢুকতে হবে, সাধারণত সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খোলা থাকে। শনিবার – বুধবারের জন্যে এই সময়সূচী প্রযোজ্য। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ, আর শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার পরে খোলা হয় আহসান মঞ্জিলের দুয়ার। যাতায়াত ব্যবস্থা: যারা ইতোপূর্বে আহসান মঞ্জিল যাননি, তাদের বাসা যদি পুরান ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে হয় তাহলে সরাসরি সিএনজি-তে করে আহসান মঞ্জিল চলে আসতে পারেন। আর যদি বাসা কাছে হয় পুরান ঢাকার তাহলে রিকশা নিয়েই যেতে পারেন।
জাতীয় জাদুঘর

জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। প্রাচীন যুগ থেকে আজকের বাংলাদেশ যতগুলো সিড়ি পার করেছে তার সবকটির চিহ্ন ধরে রেখেছে জাতীয় জাদুঘর। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে ঢাকা জাদুঘর নামে আত্মপ্রকাশ করে আজকের জাতীয় জাদুঘর। রাজধানী ঢাকার শাহাবাগ এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে এর অবস্থান। বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহের অন্যসব দিন এই সংগ্রহশালা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকে। গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল – সেপ্টেম্বর) শনিবার – বুধ (সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৫.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে)। শীতালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) শনিবার – বুধ (সকাল ৯.৩০ টা থেকে বিকাল ৪.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে)
জাতীয় জাদুঘরের একটি গ্যালারি
কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে জাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। কাউন্টার প্রধান গেইটের পাশে অবস্থিত। টিকিটের মূল্য ৩ – ১২ বছর পর্যন্ত ৫ টাকা ,১২ বছর এর উপরে ১০ টাকা, বিদেশী দর্শনার্থী ৭৫ টাকা। তবে জাতীয় দিবসগুলো যেমন – পহেলা বৈশাখ, ২৬শে মার্চ ও ২১শে ফ্রেব্রুয়ারিতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা: শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে বাসযোগে রাজধানীর যে কোনো জায়গা থেকেই যাতায়াত করা হয়। বাসে যাওয়া-আসায় খরচাও কমে আসবে। আর বাসে উঠতে না চাইলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও যেতে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবময় সাহসী এক অধ্যায় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ জাতি বিজয় ছিনিয়ে আনে, পূরণ হয় দুই শতকের স্বাধীনতার স্বপ্ন। সেই সব সংগ্রামের সাহসী কাহিনী তথ্য চিত্র, আলোকচিত্র এবং ইতিহাসের নানান স্বারকের সমন্বয়ে গড়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল এই দুই ভাগে নির্ধারণ করেছেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। গ্রীষ্মকাল: সোমবার থেকে শনিবার, সকাল ১০.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকাল: সোমবার থেকে শনিবার, সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। যাতায়াত ব্যবস্থা: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবস্থান ৫, সেগুন বাগিচা, ঢাকা – ১০০০। শিল্পকলা একাডেমি থেকে দুই-তিন মিনিটের পায়ে হাঁটার দূরত্বে এটি অবস্থিত।
বলধা গার্ডেন

বলধা গার্ডেন

ঢাকার ওয়ারি এলাকায় বলধা গার্ডেন নির্মাণ করেছিলেন বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। নরেন্দ্র নারায়ণের বাড়ির নাম ছিল ‘কালচার’। এর পাশে ‘সাইকী’ ও সিবিলী’ নামে দুটি বাগান করেছিলেন। বাগান দুটি সম্মিলিতভাবে আমাদের কাছে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত। পুরাতন ঢাকার ওয়ারীতে এটি অবস্থিত। এর আয়তন হচ্ছে ৩.৩৮ একর। প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ১২.৩০ টা এবং দুপুর ২.০০ টা থেকে বিকাল ৬.২০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই বাগান সবার জন্য উন্মুক্ত। সবার জন্য টিকেটের মূল্য একই ১৫ টাকা। ২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য টিকেট লাগে না। যাতায়াত ব্যবস্থা: বলধা গার্ডেন পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত। গুলিস্তান, সায়েদাবাদ কিংবা মতিঝিল থেকে রিকশায় সহজেই যেতে পারেন। এছাড়াও সিএনজিযোগে অনায়াসে যাতায়াত করা যায়।

শ্যামলীর শিশুমেলা

কিডি রাইডস গেমস, মেরী গো রাউন্ড, চুক চুক ট্রেন, হ্যানি সুইং, সোয়ান অ্যাডভেঞ্চার, প্যারাটপার, মিনি ট্রেন, টোরিস্ট ব্যাটারি কার, ভিডিও গেমস, হেলিকপ্টার কর্নার, বাউন্সি ক্যাসল, থ্রিডি গ্যালারি, ভাইকিং বোট, বাম্পার কার, ওয়ান্ডার হুইলসহ আরও নানা চমকপ্রদ রাইড রয়েছে রাজধানী শ্যামলীর শিশুমেলায়। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ বিনোদন পার্কের প্রবেশ ফি ৩০ টাকা, প্রতিটি রাইড চড়া ২৫ টাকা তবে বাম্পার কার ৫০ টাকা। সপ্তাহে তাদের কোন দিন নেই। চাইলে যে কোন দিন ঘুরে আসা যাবে এ বিনোদন পার্কে। ছোটো এই শিশুপার্কটি শ্যামলী থেকে আগারগাঁওগামী রাস্তার মোরে অসস্থিত। এটি প্রতি দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে। যাতায়াত ব্যবস্থা: শিশুমেলা মিরপুর সড়কের শ্যামলী ও কলেজগেটের মাঝে অবস্থিত। এই সড়কে যাতায়াত করে যে কোনো বাসেই যাওয়া যাবে কিংবা সিএনজিযোগে যেতে পারেন সহজেই।