গর্ভধারণ করা প্রত্যেক নারীর জন্যই অত্যন্ত আনন্দের একটি বিষয়। সন্তানকে গর্ভে ধারন করার পর প্রসবকাল পর্যন্ত চল্লিশ সপ্তাহের এই লম্বা যাত্রায় অনুর সমান ভ্রুন থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর অবয়ব ধারন করা পর্যন্ত গর্ভস্থ সন্তান পরিবর্তিত হয় নানান ভাবে, আস্তে আস্তে পরিণত হয় একজন সম্পূর্ণ মানুষে। কিন্তু গর্ভধারণের এই সময়ের মধ্যে যদি কোন কারণে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয় বা ভ্রুন নষ্ট হয়ে যায়, তবে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত। ভ্রূণের বয়স ১ দিন হোক বা ১ মাস, সন্তান হারানো সব সময়ই চরম কষ্টের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । সমস্ত পরিবার, বিশেষ করে পিতা মাতার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠে।
অনেক সময় অনেক পরিস্থিতিতেই ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত। অতিরিক্ত পরিশ্রম বা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার ফলেও গর্ভপাত হতে পারে। দুর্ঘটনা হয়ত এড়ানো সম্ভব না কিন্তু অন্য সবকিছুর জন্য আছে নানা ধরনের প্রতিকার যা ঠিকভাবে পালন করলে গর্ভপাত অনেকটাই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
ডাক্তারের পরামর্শ মতন চিকিৎসা গ্রহণ-
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে সেবন করতে পারেন ওষুধ বা নিতে পারেন ইনজেকশন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না। যদি গর্ভধারণের প্রথম পর্যায়ে মাসিকের মত পানি বা রক্ত যায় তবে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। সঠিক সময়ে পরামর্শ করলে গর্ভপাত এড়ানো সম্ভব। এছাড়া শারীরিক কোনও হরমোনাল ক্রুটি থাকলে নিতে পারেন হরমোনের জন্য ওষুধ। এই ওষুধ সেবন করলে গর্ভপাত এড়ানো সম্ভব। দরকার পড়লে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিয়ে নিন দরকার কোন ইনজেকশন। তবে নিজে নিজে কোন ওষুধ সেবন বা ইনজেকশন নিতে যাবেন না। এমনটা করলে বরং গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গর্ভধারণের আগেই-
যদি গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক হন এবং আপনার কোনও শারীরিক ক্রুটি থাকে তবে আগেই করিয়ে নিন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। যদি অপারেশন প্রয়োজন হয় সুস্থ হতে, সেটাও করান। এতে পরবর্তীতে গর্ভপাতের ও মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি কমে যায়। জন্মগতভাবে জরায়ুতে বা প্রজননতন্ত্রে ত্রুটি থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করে নেয়া দরকার হয়। আমাদের দেশেই এখন উন্নতমানের অপারেশন হচ্ছে এবং এর খরচ অনেক কম পড়ছে। তাই সমস্যা থাকলে অবহেলা না করে অপারেশন করান। এছাড়াও যদি সাধারনভাবে গর্ভপাতের আশংকা বেশ থাকে বা গর্ভ সঞ্চারের সমস্যা হয় তবে টেস্ট টিউব বেবি নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে গর্ভপাতের আশংকা কম থাকে কারণ জরায়ুতে এক সাথে একাধিক ভ্রুন স্থাপন করা হয়। এই চিকিৎসায় প্রায় শতকরা ত্রিশজনের জীবনে মাতৃত্ব আসে। তবে নিরুপায় না হলে এই উপায় গ্রহন না করে সাধারনভাবে সন্তান লাভের চেষ্টা করলেই ভাল হয়।
থাকুন বিশ্রামে-
গর্ভসঞ্চারের পর দরকার শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম। ঠিকভাবে বিশ্রাম নিলে শরীরের উপরে যে অত্যধিক চাপের সৃষ্টি হয় তা কমানো সম্ভব। আর ঠিক মত বিস্রাম ও খাবার দাবার ঠিক মত গ্রহন করলে গর্ভপাতের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
খাওয়া দাওয়া ঠিক ঠিক ডাক্তারের পরামর্শ মতন-
যাদের গর্ভধারণের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ কেবল তাঁরা নয়, সকল গর্ভবতী নারীই খাওয়া দাওয়া করুন শতভাগ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। এটা খেলে বাচ্চা দেখতে সুন্দর হবে, ওটা খেলে গায়ের রঙ ফর্সা হবে, সেটা খেলে দ্রুত প্রসব হবে... ইত্যাদি নানান রকম পরামর্শ আপনাকে নানান জন দিতে আসবেন। কিন্তু অযথা ঝুঁকি না নিয়ে কেবলমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক বিজ্ঞান বর্ণিত নিয়মে খাওয়া দাওয়া করুন।
থাকুন মানসিকভাবে সুস্থ-
অনেক সময়ে গর্ভধারণের আগেই বা একবার গর্ভধারণ করার পরে গর্ভপাত হয়ে গেলে পরবর্তীতে বাচ্চা না হবার ভয় মনে ভর করে। ফলে অনেকেরই মনোবল হারিয়ে যায় এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে যান। আর এই মানসিক অবস্থা তার উপরে চাপ ফেলে যার ফলে গর্ভধারণ করলেও এই চাপ সহ্য করতে না পেরে গর্ভপাত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় যদি তার মধ্যে মনোবল জাগানো যায় তবে তার মধ্যে মানসিক শান্তি আসবে এবং স্ট্রেস কমে আসবে। ফলে তার গর্ভপাতের সম্ভাবনাও কমে আসবে। মানসিকভাবে শান্ত থাকতে সাহায্য করতে পারে তার পরিবার ও আপনজন, এদের সহায়তায় বিষাদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও গর্ভবতী মা নিয়মিত প্রার্থনা করতে পারেন। প্রার্থনা করলে মন শান্ত থাকবে এবং নানাবিধ চিন্তা থেকেও মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা কমে যাবে।
সন্তানকে ধরা হয় সৃষ্টিকর্তার অমূল্য দান হিসেবে। কিন্তু এখনো আমাদের মাঝে নিঃসন্তান দম্পতিকে করুনার চোখে দেখার অভ্যাস পরিবর্তিত হয়নি। অথচ আমরা একবারও চিন্তা করে দেখিনা তাদের অবস্থায় আমরা নিজেরা থাকলে কি হতো। অনেকে আছেন যারা কোন ক্রুটির কারণে সন্তান জন্মদানে সক্ষম নন। কিন্তু যদি কেউ সক্ষম হন কিন্তু কোন সমস্যায় জর্জরিত থাকেন, তাহলে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সঠিক চিকিৎসা নিন, এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি কমিয়ে সুস্থ ও সবল সন্তানকে নিয়ে আসুন এই পৃথিবীতে।