ছবি সংগৃহীত

নামাজ ফাসেদ বা নষ্ট হয় যে ২৫টি কারণে

ফয়জুল আল আমীন
লেখক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৬, ০৫:০৪
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬, ০৫:০৪

নিচে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো নামাজে যেগুলোর কোনো একটি আমল করলে নামাজ ফাসেদ বা নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। যেমন- ১. মাজুর ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্তে নতুন অজু করে সে অজু দিয়ে ঐ ওয়াক্তের ফরজ, সুন্নাত ও নফল নামাজ পড়তে পারবে। এমন কি কোরআন তেলাওয়াত, দুরুদ বা জিকির আজকারও করতে পারবে। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। সে আগের অজুতে অন্য ওয়াক্তের কোনো নামাজ পড়বে না। পড়লে নামাজ আদায় হবে না। ২. কোনো ওয়াক্তের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সময় ওজরের অবস্থা প্রকাশ পেলে মাজুর হিসেবে গণ্য হবে। যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্ত ওজর প্রকাশ না পায় তবে মাজুর হিসেবে গণ্য হবে না। কোনো ব্যক্তির জোহর ওয়াক্তের কিছু সময় চলে যাওয়ার পর ওজর প্রকাশ পেলে সে মাজুর হিসেবে অজু করে ঐ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে। এরপর সম্পূর্ণ আসর ওয়াক্তের মধ্যে তার ওজর প্রকাশ না পেলে সে মাজুর হিসেবে গণ্য হবে না। ফলে তার আগের জোহরের নামাজ যা সে মাজুর হিসেবে পড়েছিল, শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী তা আদায় হবে না। এ কারণে পুনরায় জোহরের নামাজ কাজা আদায় করে নেবে। অন্য ওয়াক্তের বেলায়ও একই হুকুম। ৩. ওজর না থাকা অবস্থায় অজু করার পর অন্য ওয়াক্তের বেলায় একই হুকুম। পুনরায় ওজর প্রকাশ পেলে ঐ অজুতে নামাজ হবে না। নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে। ৪. যদি ওজর বন্ধ করে নামাজ পড়া যায় তবে তা বন্ধ করে নামাজ পড়া ওয়াজিব। যেমন- পট্টি দিয়ে জখম বন্ধ করা, কাপড় দিয়ে এস্তেহাজা বন্ধ করা। যদি বন্ধ না করে নামাজ পড়ে তাহলে সে নামাজ আদায় হবে না। ৫. নামাজের মধ্যে পট্টি শুকিয়ে পড়ে গেলে। ৬. মাজুর অবস্থায় নামাজ শুরু করার পর ওজর দূর হয়ে গেলে নামাজ ফাসেদ হবে। ৭. যদি কোনো কাপড়ের অর্ধেক বা তার বেশি পরিমাণ অংশে নাপাকি লাগে। যদি অন্য কোনো কাপড় থাকে তবে ঐ কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না। ৮. মাঠে বা অন্য কোথাও নামাজ পড়ার ইচ্ছা করলে সেখানে নাপাকি ভিজা থাকলে তার উপর নামাজ পড়লে নামাজ হবে না। ৯. এমন শুকনা জায়গা যেখানে কাপড় বিছালে কাপড়ে জায়গার ছাপ লাগে এবং উহা নাপাকিযুক্ত হয় তবে উক্ত কাপড়েও নামাজ হবে না। ১০. পথে-ঘাটে বা মাঠে নামাজ পড়ার সময় যদি দুপায়ের নিচে (রূপার) এক গোল টাকা পরিমাণের বেশি নাপাকি দেখা যায় তবে নামাজ ফাসেদ হবে। ১১. সিজদার সময় দুহাঁটু ও দুহাতের নিচে নাপাকি থাকলে নামাজ হবে না। ১২. দুপায়ের নিচের এবং সেজদার স্থানের নাপাকি একসাথে মিলালে এক গোল টাকা পরিমাণের বেশি হলে নামাজ ফাসেদ হবে। ১৩. কাপড় বিছিয়ে নামাজ পড়লে যদি দু’পাল্লা এক সাথে সেলাই থাকে তবে নিচের পাল্লায় নাপাক থাকলেও নামাজ বাতিল হবে। ১৪. নাপাকের ওপর বিছানা বিছিয়ে নামাজ পড়লে নাপাকের রং-গন্ধ পাওয়া গেলে নামাজ বাতিল হবে। ১৫. সেলাই বিহীন দুপাল্লার নিচের পাল্লায় নাপাক লাগলে নাপাকির রং দেখলে বা গন্ধ পেলে নামাজ বাতিল হবে। ১৬. নাপাক জায়গা বা বিছানার উপর পাতলা কাপড় বিছালে যদি নাপাক দেখা যায় বা গন্ধ বোঝা যায় তবে নামাজ বাতিল হবে। ১৭. স্ত্রীলোকের দুকান দুঅঙ্গ, দুস্তন দুঅঙ্গ, দুহাত দুঅঙ্গ, মলদ্বার আলাদা একটি অঙ্গ। পেশাবের দুদ্বার দুঅঙ্গ, পিঠ এক অঙ্গ, পেট এক অঙ্গ, রান এক অঙ্গ, হাঁটু থেকে পায়ের নলা পর্যন্ত এক অঙ্গ। নামাজের মধ্যে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া পরিমাণ সময় কোনো এক অঙ্গের চার ভাগের এক ভাগের বেশি আলগা হয়ে গেলে নামাজ ফাসেদ বা নষ্ট হবে। এমন কি দু-তিন অঙ্গ এক সাথে আলগা হয়ে গেলে সব মিলিয়ে উহাদের ছোট অঙ্গটির চার ভাগের এক ভাগের বেশি হলে এবং তা তিন তসবিহ পড়া পরিমাণ সময় আলগা থাকলে নামাজ ফাসেদ হবে। ১৮. যদি কাপড় এমন পাতলা হয় যা পরার পরেও শরীর দেখা যায় তবে ঐ কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ ফাসেদ হবে। ১৯. মেয়েদের ছেড়ে দেয়া চুলের চার ভাগের একভাগ কাপড়ের বাইরে বের হলে নামাজ ফাসেদ হবে। খোপা বাঁধা চুলের চার ভাগের একভাগ বের হলেও নামাজ ফাসেদ হবে। ২০. অন্ধকার রাতে কেবলার দিক ঠিক করতে না পারলে নিকটে স্থানীয় লোক থাকা অবস্থায় তাদের কাছে জিজ্ঞাসা না করে নিজ ইচ্ছায় কেবলা ঠিক করে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না। ২১. বিনা চিন্তা-ভাবনায় খেয়াল খুশিমতো কেবলা মনে করে নামাজ পড়বেন না। পড়লে নামাজ হবে না। ২২. কোন নামাজ পড়ছে যদি চিন্তা ছাড়া সে উত্তর দিতে না পারে তাহলে তার নামাজই হবে না। ২৩. কালব বা অন্তরে নিয়ত না করে শুধু মুখে উচ্চারণ করলে নামাজ হবে না। ২৪. মোকতাদি হলে ইমামের পিছনে একতেদা অর্থাৎ আমি ইমামের পিছনে নামাজ পড়ছি, নিয়ত করতে হবে, নতুবা নামাজ হবে না। ২৫. মেয়েলোক মোকতাদি হলে ইমাম অবশ্যই মেয়েলোকের ইমামতির নিয়ত করবে। ইমাম মেয়েদের ইমামতির নিয়ত না করলে মেয়েদের নামাজ হবে না। ফয়জুল আল আমীন লেখক : প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক