
ছবি সংগৃহীত
হারানো বস্তু পেলে আপনি কী করবেন?
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০২:৪৫
শান্তি, নিরাপত্তা ও হেফাজতের কোনো বিপরীত কল্পনা মানুষের জীবনে না থাকলেও তিক্ত বাস্তবতা হলো এই মানুষের জীবনে প্রায়ই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত যতসব নিরাপত্তা ও হেফাজত বিঘ্নকারী ঘটনা। যার ফলে মানুষ কখনও হারায় সম্পদ আবার কখনও হারিয়ে যায় প্রাণপ্রিয় কারও জীবন। আবার এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষতে কেউ আবার পেয়ে থাকেন সেসব হারানো কিছু। যিনি হারান তাকে পতিত হতে হয় নানা ধরনের বিপত্তি-বিপর্যয়ে, যা কখনও হয়ে থাকে তার জন্য অপূরণীয় ও অসহনীয়। তাই যদি কোনো ব্যক্তি তা পেয়ে থাকেন তাকে পরিচয় দিতে হয় সহৃদয় ব্যক্তিত্বের এবং এ ধরনের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ইসলামের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা, যার কিছু বিষয় আমরা নিম্নে তুলে ধরার প্রয়াস পাব। অনেক সময় আমরা স্থাননির্বিশেষে কারও হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের ও মূল্যমানের কিছু পেয়ে থাকি। এরূপ হলে ইসলাম আমাদের যে নির্দেশনা দেয় তা হলো- সেসব বস্তু যদি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তা বড় পশু জাতীয় হলে তা ছেড়ে দেয়া যাতে মালিক পেয়ে যায়, আর ছোট প্রাণী হলে তা নিয়ে নেয়া, সম্ভব হলে মালিকের অপেক্ষায় রেখে দেয়া, তা সম্ভব না হলে ভোগ করা, মালিকের সাক্ষাৎ মিললে মূল্য পরিশোধ করা। অন্যথায় তার নামে দান করে দেয়া। অতি নগণ্য দ্রব্য হলে স্বাভাবিকভাবেই ভোগ করার অনুমতি আছে। মূল্যবান কিছু যা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা যথাসম্ভব মালিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করা, না পাওয়া গেলে ছোট প্রাণীর ক্ষেত্রে যা করণীয় তাই করা। খুঁজে বের করার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, যিনি পেয়েছেন তাকে জনমানব সমাগমে যেমন বাজার, কোনো সভা-সমাবেশ ইত্যাদিতে গিয়ে ঘোষণা দিতে তার পাওয়া বস্তুর বিষয়ে। যদি মালিককে পাওয়া যায় তবে উপযুক্ত প্রমাণ দেয়া সাপেক্ষ মালিকের হাতে তার সম্পদ হসত্মামত্মর করতে হবে। ফকিহরা বলেন, এরূপ উদ্যোগ সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিকে প্রতি মাসে তিনবার করে এক বছর ধরে নিয়মিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। এরপরও যদি না পাওয়া যায় তা হলে তিনি ওই সম্পদ নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বিভিন্ন বর্ণনাকারীর সূত্রে শুবা (রহ.) এর বর্ণিত একটি হাদিসে ‘তিন বছর’ কথাটি উল্লেখ আছে। এছাড়া সুফিয়ান, জায়িদ ইবনে আবু উনায়সা ও হাম্মাদ ইবনে সালমা (রহ.) এর হাদিসে রয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এরপর আসে এবং তার গণনা (থলে) ও তার বন্ধনের বর্ণনা দিতে পারে, তবে তাকে তা দিয়ে দেবে। আর সুফিয়ান (রহ.) ওয়াকি (রহ.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, অন্যথায় তা তোমার মালের মতোই। আর ইবনে নুমাইর (রহ.) এর বর্ণনায় অন্যথায় তুমি তা ব্যবহার করতে পারবে বর্ণিত হয়েছে। নিজে ব্যবহারের ক্ষত্রে আলেমদের পক্ষ থেকে আরেকটি কথা বলা হয়ে থাকে, ব্যবহারকারী ব্যক্তি সম্পদটির মূল্য সদকা করে দেবে। এ বিষয়ে বক্তব্যের ভিন্নতা থাকায় বলা যায় বিষয়টি অপরিহার্য নয়। তবে ইসলামের মহত্ত্বের সঙ্গে যে তা সঙ্গতিপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ আমি ফাও কোনো জিনিস ভোগ করার মানসিকতা পোষণ করতে পারি না। এটাই উন্নত চরিত্র ও ইসলামী মহত্ত্ব। তারপরও কথা থেকে যাবে যে, যদি মালিক দীর্ঘদিন পর ফিরে আসেন তবে তাকে তার মাল ফেরত দিতে হবে। এসব শর্তের কোনো বিষয়ে যদি অপারগতা থাকে, তবে নিজে এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে না তুলে সক্ষম কাউকে সুযোগ করে দিতে হবে। অথবা প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে। এ ক্ষত্রে আরেকটি প্রশ্ন থাকে যে, যিনি তার সম্পদ হারিয়েছেন তিনি অবশ্যই তার প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চালাবেন। সে ক্ষত্রে তিনি যে কোনো মিডিয়াকেও ব্যবহার করতে পারলেও তা কোনো অবস্থাতে মসজিদের অভ্যন্তরে এবং মসজিদের কোনো সরঞ্জাম যেমন মাইক বা অন্য কিছু ব্যবহার করে করা যাবে না। কারণ মসজিদের মাইক মসজিদ সংশ্লিষ্ট কাজ ব্যতীত অন্য কোনা দ্বীনি কিংবা সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করার অনুমতি শরিয়তে নেই। সুতরাং মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত মাইক দিয়ে দুনিয়াবি কোনো বিষয়ের ঘোষণা দেয়া জায়েজ হবে না। এমনিভাবে মসজিদের মাইক বাইরে নিয়ে কোনো প্রোগ্রাম করাও জায়েজ নেই। তবে যদি মাইকটি এমনভাবে ওয়াকফকৃত হয় যে, দাতা দেয়ার সময় মসজিদের কাজের পাশাপাশি অন্য কোনো বৈধ কাজেও ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকেন অথবা কোনো এলাকায় মসজিদের মাইক দ্বারা জানাজার ঘোষণা দেয়া প্রসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দাতা তা হতে বারণ করেননি তাহলে সে ক্ষেত্রে তার অনুমোদিত কাজে ব্যবহার করা জায়েজ হবে। (দেখুন : আদ্দুরুল মুখতার ও আফকে মাসায়েল আওর উনকা হল)। মসজিদে হারানো বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করতে শুনবে, সে যেন বলে, আল্লাহ তায়ালা যেন তোমাকে ফেরত না দেয়। কারণ মসজিদগুলো এ জন্য বানানো হয়নি।’ মসজিদের ভেতরে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া যেসব কাজ উল্লেখিত বিষয়ের সমর্থক হবে, তার বিধানও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। যেমন মসজিদে বেচাকেনা করা, বন্ধক দেয়া ইত্যাদি যাবতীয় লেনদেন নিষিদ্ধ এবং মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা মাকরুহ। # ড. খান আবূ হোমায়রা সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ