
ছবি সংগৃহীত
মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান থেকে দূরে থাকার উপায়!
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০১:১৯
মানুষকে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সে হিসেবে মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। ফলে মানুষ ভালো কিংবা মন্দ দু’টিই গ্রহণ করতে পারে। এ স্বাধীনতার সুযোগ নিচ্ছে শয়তান। শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করে। জিন-শয়তান আদিকাল থেকেই মানুষের ক্ষতি করে আসছে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন- [আল জিন : ৬] অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্মঅহংকার বাড়িয়ে দিত। কোরআন মজিদে শয়তান একবচন ও বহুবচনে ৮৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহর রহমত বাদে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বুখারি শরিফে আছে- রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেন, রক্ত যেমনভাবে শিরার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ঠিক তেমনিভাবে শয়তান মানুষের মাঝে প্রবাহমান এবং আমার ভয় হল যে শয়তান হয়তো তোমাদের অন্তরে কোনো কুমন্ত্রণা দেবে, ফলে এ নিয়ে বিভিন্ন কথা উঠবে।’ শয়তান সম্পর্কে কারও কারও ধারণা শুধু দুষ্ট প্রকৃতির লোককেই সে পথভ্রষ্ট করে। আসলে এ ধারণা ঠিক নয়। প্রতিটি আদম সন্তানকে সে টার্গেট করে। সে আল্লাহকে বলেছে- আমার পালনকর্তা আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দা ছাড়া [হিজর- ১৫/৩৯]। শয়তান আমাদের দারিদ্র্যদের ভয় দেখিয়ে উন্নত শাসন পদ্ধতির স্বপ্ন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে। একজন মানুষের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শয়তানরাজ তার জন্য একজন সৈনিক নিয়োগ করে। সে মারা যাওয়ার পর তখন তার ছেলে বা মেয়েকে বাবার সব অধর্মীয় কাজ ও কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলে, তোমার বাবাকে তো সবাই ভালো বলত। তিনি কি ভুল করেছিলেন? তোমাকে তোমার বাবার পথ অনুসরণ করা উচিত। ওই ব্যক্তিটি তখন সহজেই বাবার স্মৃতি [শয়তানের সাহায্যে] মনে করতে পারে এবং শয়তানের পরামর্শে কাজ করে। মহানবী [সা.] বলেছেন, ‘তিন ধরনের জিন রয়েছে, একদল যারা সর্বদা আকাশে উড়ে বেড়ায়, আরেক দল যারা সাপ ও কুকুরের আকার ধারণ করে থাকে এবং তৃতীয় দল পৃথিবীবাসী যারা কোনো এক স্থানে বাস করে বা ঘুরে বেড়ায় [বায়হাকি ও তাবরানী]। শয়তানের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে কিংবা তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে তার সঙ্গে দুশমনি করতে হবে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ- তোমরা জিহাদ কর শয়তানের পক্ষ অবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, [দেখবে] শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল [নিসা ৭৬]। আমাদের সবসময় শয়তানের বিরোধিতা করতে হবে। যে শয়তানের কথা শুনবে সে তার দলভুক্ত হয়ে যাবে। শয়তানের সঙ্গেই তার হাশর হবে। আর তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে জ্বলন্ত অগ্নি। রাসূল [সা.] বলেছেন, তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত কর না। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায় [সহিহ মুসলিম-৭৮০]। শয়তান সবসময় আমাদের চলার পথে ল্যাং মারার চেষ্টা করে। বিশেষ করে সালাতে, কোরআন তেলাওয়াত করার সময়, রেগে গেলে, সকাল সন্ধ্যায়, নিজগৃহে প্রবেশের সময়, দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে সন্দেহ হলে, স্ত্রী সহবাসের আগে, ঘুমানোর সময় এবং স্বপ্নযোগে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। মানুষের পক্ষ থেকে যারা শয়তানের গুণে গুণান্বিত, যারা নেক্কারদের গালমন্দ করে, তিরস্কার করে, বিদ্রুপ-মশকরা করে থাকে। যারা শয়তানের পূজারি আল্লাহ শয়তানকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছেন। হাদিসের আলোকে জানা যায়, পানির উপরে তার সিংহাসন রয়েছে। সেখান থেকে তারা গোটা বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করে। যেখানে যতজন সৈনিক প্রয়োজন সেখানে পাঠায়। তারা মানুষকে ফেতনা-ফেসাদে লিপ্ত করে। সুতরাং সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিই শয়তানের কাছে বেশি প্রিয়। শয়তান তার বাহিনী নিয়ে সারা বিশ্বে রাজত্ব করছে। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করছে নিজ সন্তানেরা। সূরা নাসে কুমন্ত্রণার ব্যাপারে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- এই কুমন্ত্রণাদাতা হতে পারে মানুষরূপী শয়তান, যাদের চোখে দেখা যায় অথবা অদৃশ্য অশুভ শক্তি যেমন জিন যারা অন্তরের ভেতর থেকে কুমন্ত্রণা দান করে। হাদিসে বর্ণিত আছে, একজন সন্তান জন্ম নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শয়তান এসে উপস্থিত হয়। শয়তান তাকে স্পর্শ করায় সে কেঁদে ওঠে। এ শয়তান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবস্থান করে। তাই শয়তান আদম সন্তানের আজন্ম শত্র“। তার কবল থেকে মুক্ত থাকতে হলে কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জীবন গড়তে হবে। আল্লাহ আমাদের শয়তানের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ লাভের তাওফিক দিন- আমিন। আল্লাহ যখন আদমকে সে গাছটির ফল খেতে নিষেধ করেছিল তখন শয়তান আদমকে বলল, ‘হে আদম তোমাকে কী এমন একটা গাছের সন্ধান দেব। যার মাধ্যমে অনন্ত জীবন ও এমন রাজত্ব লাভ হয় যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। অতঃপর আদম সে গাছ থেকে কিছু খেয়ে ফেলল [সূরা তোহা ১২০-১২১]। আদমকে সেজদা করতে অস্বীকারকারী ইবলিশ জিন-শয়তানের নেতা। তার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘আর আদমকে সেজদা করার জন্য সব ফেরেশতাকে বলা হল, সবাই সেজদা করল। একমাত্র ইবলিশ ব্যতীত। সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে আল্লাহর অবাধ্য হল [সূরা- আল কাহফ-৫০]। শয়তানের প্রধান টার্গেট মানুষকে দিয়ে করান : কুফরি ও শিরকি কাজ এবং আল্লাহ ও রাসূলের দুশমনি করান। যদি সেটি করাতে ব্যর্থ হয় তবে শয়তান মানুষকে লিপ্ত করে বিদআতি কাজে, তাতেও ব্যর্থ হলে সে কবিরা গুনাহ হয় এমন কাজে লিপ্ত করে। তাতেও ব্যর্থ হলে মুবাহ [গোনাহ বা পুণ্য কোনটাই নয়] কাজে প্রণোদিত করে। যদি তাতেও ব্যর্থ হয় তাহলে অপ্রয়োজনীয় কাজে লিপ্ত করে। শয়তান জিনদের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে বলা হয়েছে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“। এ শত্র“ই আবার কারও কারও বন্ধু হয়ে যায়। তবে শয়তানকে যে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তার আর কোনো শত্র“র প্রয়োজন নেই। যেসব লোক ইসলামের প্রচলন, অনুসরণ ও বাস্তবায়নকে পছন্দ করে না, শয়তান তাদের বন্ধু হয়ে যায়। শয়তান কাউকে বন্ধু বানাতে পারলে এ মানব বন্ধু দিয়েই অন্য মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। তারাই মানুষের বন্ধু সেজে মানুষের ক্ষতি করে। ‘তারা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং তারা আসে হয়তো মানুষ কিংবা জিনের ভেতর থেকে। [সূরা নাস-৫, ৬] এ আয়াতে মানুষ শয়তানের কথা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মূলত শয়তান পরিকল্পিতভাবে কাজ করে। মমিনুল ইসলাম মোল্লা সৌজন্যে : ইসলাম ও জীবন, দৈনিক যুগান্তর