
ছবি সংগৃহীত
সুখী দাম্পত্য জীবন নির্মাণে প্রত্যেক স্বামীর যে ১১টি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা উচিত!
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০১৫, ০৩:৫৭
এক. ভালো ব্যবহার করা : মানুষ হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মধ্যে কিছু দোষ ক্রটি থাকতে পারে। অথবা স্ত্রীর মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যেতে পারে যা স্বামীর পছন্দনীয় নয় এবং স্বামীর মধ্যেও এমন কিছু পাওয়া যেতে পারে যা স্ত্রীর পছন্দনীয় নয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল [সা.] তাদের পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছেন। এরকম অবস্থার দুর্বলতা সাধারণত নারীদের মধ্যেই একটু বেশি পাওয়া যায়। অল্পতেই রেগে যাওয়া, অভিমানে ক্ষুব্ধ হওয়া এবং স্বভাবগত অস্থিরতায় চঞ্চলা হয়ে উঠা নারী চরিত্রের বিশেষ দিক। মেয়েদের এ স্বাভাবিক দুর্বলতা কিংবা বৈশিষ্ট্য যাই হোক না কেন, তা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালভাবেই জানতেন। তাই তিনি স্বামীদের নির্দেশ দিয়েছেন- হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না, যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। তারপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। [আন নিসা : ১৯] এ আয়াতের মাধ্যমে স্বামীদের এক ব্যাপক হিদায়াত দেয়া হয়েছে। স্বামীদের প্রতি আল্লাহর প্রথম নির্দেশ হচ্ছে- তোমরা যাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নিলে, যাকে নিয়ে ঘর বাঁধলে, তার প্রতি সবসময়ই খুব ভাল ব্যবহার করবে, তার অধিকার পূর্ণ মাত্রায় আদায় করবে। নবি করীম [সা.] বলেছেন: কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে তার কোনো একটি অভ্যাসের কারণে ঘৃণা না করে। কেননা, তার মধ্যে একটি অভ্যাস অপছন্দ হলে, অপরাপর গুণাবলী দেখে সে খুশীও হতে পারে। [মুসলিম] অনুরূপভাবে স্ত্রীকেও স্বামীর খুঁটিনাটি দুর্বলতা উপেক্ষা করা কর্তব্য এবং তার অন্যান্য গুণাবলীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত। অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই একে অপরেরর সামান্য দোষ ক্রটি উপেক্ষা করে সৎ গুণাবলীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া প্রয়োজন। স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা পূর্ণ ঈমান ও চরিত্রের ভূষণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নবি করীম [সা.] ইরশাদ করেছেন: যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম, নিষ্কুলুষ, সে সবচেয়ে বেশি পূর্ণ ঈমানদার। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোৎকৃষ্ট এবং যে নিজ পরিবারের সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ করে। [তিরমিযী ও আহমদ] দুই. কোনো কাজে জোর প্রয়োগ না করা : হজরত আবু হুরায়রা [রা.] হতে বর্ণিত, নবি করীম [সা.] স্বামীদেরকে স্পষ্ট নসীহত করে বলেছেন, তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সবসময় কল্যাণময় ব্যবহার করার জন্য আমার নসীহত কবুল করো। কেননা, নারীরা জন্মগতভাবেই বাকা স্বভাবের হয়ে থাকে। তুমি যদি জোরপূর্বক তাকে সোজা করতে যাও, তবে তুমি তাকে চূর্ণ করে ফেলবে। আর যদি তাকে ওভাবেই ছেড়ে দাও, তবে সে সবসময় বাকা হয়েই থাকবে। অতএব, বুঝে শুনে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার উপদেশ অবশ্যই গ্রহণ করবে। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়- নারীদের স্বভাবে বক্রতা এটা প্রকৃতিগত ও জন্মগত। তাই তাদের আসল প্রকৃতিকে যথাযথভাবে থাকতে দিয়েই তাদেরকে নিয়ে সুমধুর পারিবারিক জীবন গড়ে তোলা এবং তাদের সহযোগিতায় কল্যাণময় সমাজ গড়া যেতে পারে। আর তা হচ্ছে তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা, তাদের সাথে অত্যন্ত দরদ, নম্রতা ও সদিচ্ছাপূর্ণ ব্যবহার করা এবং তাদের মন রক্ষা করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা। তিন. ক্ষমাশীল হওয়া : একজন ইউরোপীয় চিন্তাবিদ পুরুষদের লক্ষ্য করে বলেছেন, নারীদের গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবজনিত কঠিন ও দুঃসহ যন্ত্রণার কথা একবার চিন্তা করো। দেখো নারীজাতি দুনিয়ার কত শত কষ্ট, ব্যথা, বেদনা ও বিপদের ঝুকি নিজেদের মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকে। তারা যদি পুরুষের মতো ধৈর্যহীন হত, তাহলে এতসব কষ্ট তারা কি করে বরদাশত করতে পারত? প্রকৃতপক্ষে বিশ্বমানবতার এ এক বিরাট সৌভাগ্য যে, মায়েরজাতি স্বভাবতই কষ্ট সহিষ্ণু। তাদের অনুভূতি পুরুষদের মত নাজুক ও কঠিন হলে, কষ্টকর কাজের দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ক্ষমাশীলতা দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য ও স্থায়িত্বের জন্যে একান্তই অপরিহার্য। যে স্বামী স্ত্রীকে ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা করতে জানে না, কথায় কথায় দোষ ধরাই যে স্বামীর স্বভাব, শাসন ও ভীতি প্রদর্শনই যার কথার ধরন, তার পক্ষে কোনো নারীকে স্ত্রী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন সম্ভব হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্ত্রীদের সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি ক্ষমা সহিষ্ণুতা প্রয়োগেরও নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেছেন, হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের শত্রু। অতএব, তাদের সস্পর্কে সাবধান! তবে তোমরা যদি তাদের ক্ষমা কর, তাদের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ না কর বা জবরদস্তি না কর এবং তাদের দোষত্র“টি ক্ষমা করে দাও, তাহলে জেনে রাখবে আল্লাহ নিজেই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াবান। [সূরা তাগাবুন : ১৪] চার. জুলম না করা এবং ইনসাফ রাজায় রাখা : স্ত্রীদের প্রতি অত্যাচার জুলুম করাতো দূরের কথা, তালাক দিয়ে আবার ফেরত নিয়ে স্ত্রীকে কষ্ট দেয়া ও দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। স্ত্রীদের সাথে মিষ্টি ও মধুর ব্যবহার করা এবং তাদের কোনরূপ কষ্ট না দিয়ে শান্তি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দান করার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও যদি কেউ তার স্ত্রীকে অকারণে জ্বালা যন্ত্রণা দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, তবে সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে আল্লাহর গজবের যোগ্য হবে। নবি করীম [সা.] ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসদের মত না মারে। এভাবে মারধর করার পর দিনের শেষে তার সাথে কিভাবে যৌন সঙ্গম করবে? [বুখারি] অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করাতো এক স্বাভাবিক কাজ, কিন্তু স্ত্রীকে এক দিকে মারধর করা আর অপরদিকে সেদিনই তার সাথে যৌনসঙ্গম করা অত্যন্ত ঘৃণার কাজ। এ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী [রহ.] লিখেছেন, স্ত্রীকে প্রচন্ডভাবে মারধর করা এবং সে দিনের বা সে রাতের পরবর্তী সময়ে তারই সাথে যৌন সঙ্গম করা এ দুটো কাজ এক সঙ্গে সম্পন্ন করা যে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব হতে পারে না, হওয়া বাঞ্ছনীয়ও নয়। স্ত্রীদের মারধর করতে, গালাগালি করতে এবং তাদের সাথে কোনরূপ অমতো জুলুম আচরণ করতে নিষেধ করে রাসূলে করীম [সা.] স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তোমরা স্ত্রীদের মুখের ওপর মারবে না, মুখমন্ডলের ওপর আঘাত দেবে না, তাদের মুখের শ্রী চেহারা বিনষ্ট করবে না, অকথ্য ভাষায় তাদের গালাগাল করবে না এবং নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কোথাও তাদের বিচ্ছিন্নাবস্থায় ফেলে রাখবে না। [আবু দাউদ] এখানে প্রশ্ন হতে পারে, মুখমন্ডল ব্যতীত অন্যত্র মারধর করা কি জায়িয আছে? এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এজন্য যে তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর, যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তবে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। [সূরা আন নিসা: ৩৪] এখানে যেসব নারীরা তাদের স্বামীকে মানে না, বিদ্রোহ করে, তাদের ক্ষেত্রে স্বামীরা কি করবে, তাই বলা হয়েছে। এ আয়াতে এ ক্ষেত্রে- প্রথমত : বলা হয়েছে স্ত্রীকে ভালভাবে বোঝাতে, উপদেশ দিতে, নসীহত করতে এবং একথা তাকে জানিয়ে দিতে যে, স্বামীকে মান্য করে চলা, স্বামীর সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা বজায় রাখার জন্যে আল্লাহ তাআলাই নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। অন্যথায় তার ইহকালীলন দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন তিক্ত বিষাক্ত হয়ে যাবে, পরকালেও তাকে আল্লাহর আযাব ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত : বলা হয়েছে, অমান্যকারী স্ত্রীকে মিলন শয্যা থেকে বিচ্ছিন্ন কর। অন্য কথায় তাকে না শয্যা সঙ্গী বানাবে, না তার সাথে যৌন সম্পর্ক বজায় রাখবে। তৃতীয়ত : বলা হয়েছে- তাকে মারধর করতে। কিন্তু এ মারধর সম্পর্কে একথা স্পষ্ট যে, তা অবশ্যই শিক্ষামূলক হতে হবে মাত্র। ক্রীতদাস ও জন্তু জানোয়ারকে যেমন মারা হয়, সে রকম মার দেয়ার অধিকার স্বামীর নেই। তারপর বলা হয়েছে- স্ত্রী যদি স্বামীকে মেনে নেয়, স্বামীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে রাজী হয়, তাহলে স্বামীর কোনো অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ অত্যাচার করার, তাকে এক বিন্দুও কষ্ট জ্বালাতন দেয়ার। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- উপযুক্ত কারণ ব্যতীত স্ত্রীকে কষ্ট দিলে তোমাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে যদিও তারা অক্ষম, কিন্তু তোমাদের ভুললে চলবে না আল্লাহ হচ্ছেন প্রবল পরাক্রান্ত, শ্রেষ্ঠ ও শক্তিমান, তিনি অবশ্যই প্রত্যেক জালিমের জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন এবং সেজন্য পরকালে কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা রয়েছে। স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ বা সমব্যবহার বহু বিবাহের অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। ইনসাফ বলতে বুঝায় সকল স্ত্রীকে এক মানের খাবার, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন, সময় এবং সহানুভূতি দিতে হবে। স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে সবসময় গম্ভীর হয়ে না থেকে মাঝে মধ্যে হাসি কৌতুক ও আনন্দদায়ক খেল তামাশা করা। আর স্ত্রীর পিতা মাতা, ভাই বোন ও আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। এক নাগাড়ে চারমাসের অধিক প্রবাসে থাকবে না। অন্যথায় এতে স্ত্রীর হক নষ্ট হয়। পাচ. চিত্তাকর্ষক দ্রব্যাদি উপহার দেওয়া : স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রেম ভালোবাসার স্থায়িত্ব ও গভীরতার জন্য স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে মাঝে মধ্যে নানা ধরনের চিত্তাকর্ষক দ্রব্যাদি দেয়া। স্ত্রীরও যথাসাধ্য অনুরূপ করা উচিত। রাসূলে করীম [সা.] এ জন্য উপদেশ দিয়েছেন- তোমরা পরস্পর উপহার উপঢৌকন আদান প্রদান করো। দেখবে এর ফলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে এবং মায়া মমতা বৃদ্ধি পাবে। ছয়. স্ত্রীর বিপদে-আপদে, রোগে-শোকে সহানুভূতি প্রদর্শন করা : স্ত্রীর বিপদে আপদে, রোগে শোকে তার প্রতি অকৃত্রিম সহানুভূতি প্রদর্শন করা স্বামীর কর্তব্য। বস্তুতঃ স্ত্রীর সবচেয়ে বেশি দুঃখ পায় তখন যখন তার বিপদে কষ্টে তার স্বামীকে সহানুভূতি পূর্ণ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত দেখতে পায় না। এজন্য নবি করীম [সা.] স্ত্রীর প্রতি দয়াবান ও সহানুভূতিশীল হবার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এর সাধারণ নিয়ম হিসেবে বলেছেন- যে লোক নিজে অপরের জন্য দয়াবান হয় না, সে কখনো অপরের দয়া সহানুভূতি লাভ করতে পারে না। স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের ক্ষেত্রে এটা খুবই বাস্তব কথা। এজন্যে স্বামীর একান্তই কর্তব্য স্ত্রীর মনের আবেগ উচ্ছ্বাসের প্রতি লক্ষ্য রাখা। সাত. স্ত্রীর মোহর আদায় করা : ইসলামে নারী পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সময় স্ত্রীকে মোহর প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। এ মোহরের টাকা স্ত্রীর একক অধিকার। স্ত্রীকে মোহরের টাকা পরিশোধ না করা বা গড়িমসি করা কিংবা কৌশলে স্ত্রীর নিকট হতে মাফ করিয়ে নেয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন- স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরের টাকা প্রসন্ন করে দিয়ে দাও। [সূরাহ আন নিসা: ৪] আট. স্ত্রীর অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করা : স্ত্রীর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা বিয়ের পর স্ত্রীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। আল্লাহ পাক বলেছেন-তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পর¯পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে। [সূরা ত্বালাক্ব: ৬] বিয়ের পর স্ত্রীর অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। নবি করীম [সা.] বলেছেন, তোমরা যখন খাবে, তাদেরও খাওয়াবে; আর তোমরা যেমন পোষাক পরবে, তাদেরকেও পরাবে। [আবু দাউদ] এটা ইসলামের মূলনীতি যে, স্ত্রীর আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, তার পূর্ণ ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর। কোরআন ও হাদীসে এই মূলনীতিই ঘোষিত হয়েছে। স্ত্রী ও সন্তানের পূর্ণ ভরণ-পোষণ স্বামীর জন্য কোনো দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়, বরং দুটো তার দায়িত্ব। ইসলামী আইন মতে, সংসারে স্বামী স্ত্রী সকল বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তা করবে, কিন্তু আর্থিক দায়িত্বটা পুরুষের একারই। স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদে হস্তক্ষেপ না করা স্বামীর অন্যতম র্কতব্য। ইসলামে মতোসঙ্গত ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত। নারীদেরও আয় উপার্জন ও সম্পদের মালিক হওয়ার অধিকার আছে। যেমন অধিকার আছে পুরুষদেরও। ইসলাম নারীকে যেমন ব্যক্তি স্বাধীনতা দিয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও দিয়েছে। আল্লাহ পাক বলেছেন- পুরুষগণ যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য, আর নারীগণ যা উপার্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য। [সূরা আন নিসা: ৩২] নয়. গোপন বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা : বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। একের কাছে অন্যের কিছুই গোপন থাকে না। নবি [সা.] বলেছেন- স্বামী স্ত্রীর গোপন ব্যাপার কেউ অন্যের নিকট প্রকাশ করবে না। যদি কোনো ঈমানদার ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- স্ত্রীদের মধ্যে মতো ও ইনসাফপূর্ণ সমতা-ভিত্তিক আচরণ করা। ইনসাফ কায়েম করার ব্যাপারে নেতিবাচক আশংকা থাকলে, সেক্ষেত্রে আল কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- তোমাদের যদি স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম না করার ব্যাপারে আশংকা হয়, তবে কেবল মাত্র একজন স্ত্রীই রাখবে। [সূরা আন নিসা: ৩] দশ. যৌন অধিকার আদায় করা : স্বামীর ওপর স্ত্রীর বিশেষ অধিকার হচ্ছে এই যে, স্বামী সর্বপ্রকার যৌন উচ্ছৃংখলা থেকে বিরত থাকবে এবং যৌন ব্যাপারে কেবল স্ত্রীর ওপরই সন্তুষ্ট থাকবে। বিসমিল্লাহ পড়ে উত্তম পন্থায় সহবাস করবে। হায়েস নিফাস অবস্থায় কখনও সহবাস করবে না। সবশেষে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাসূলে করীম [সা.] এর সেই ফরমান, যা তিনি বিদায় হজ্জের বিশাল সমাবেশে মুসলিম জনতাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছিলেন- হে মুসলিম জনতা! স্ত্রীদের অধিকার সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করতে থাকবে। মনে রেখো তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে পয়েছো এবং আল্লাহর হুকুমে তাদের দেহ ভোগ করাকে নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছো। আর তাদের ওপর তোমাদের জন্য এ অধিকার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, সে কোন অবাঞ্ছিত ব্যক্তির দ্বারা তোমাদের দুজনের মিলন শয্যাকে মলিন ও কলঙ্কিত করবে না। [আবু দাউদ] এগার. দীনি সহযোগিতা : রাসূলে করীম [সা.] এ প্রসঙ্গে বলেছেন- আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নফল নামায পড়ে আর নিজ সহধর্মিনীকে জাগায় এবং নামায পড়ায়। আর সে যদি উঠতে না চায়, তবে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। তেমনিভাবে ঐ নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকেও সেজন্যে জাগায় আর স্বামী উঠতে না চাইলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। [আবু দাউদ] মাওলানা মিরাজ রহমান
- ট্যাগ:
- ইসলাম
- ইসলামি বিধান
- জীবন চর্চা