ছবি সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনের শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচয়!

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০১৫, ০৪:২৫
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫, ০৪:২৫

বিজ্ঞানময় আল-কোরান মানবজাতির মুক্তিরসনদ। এটা সর্বকালের ও সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ। এতে মানবজীবনের মৌলিক সমস্যাগুলোর প্রকৃত সমাধান পেশ করা হয়েছে। তা ছাড়া জাগতিক সকল সৃষ্টির বিজ্ঞানভিত্তিক বর্ণনা রয়েছে এই কুরআনে । আর উক্ত কুরআনকে সহজে উপলব্ধি করার জন্য এবং ক্রমান্বয়ে অধ্যয়ন করার সুবিধার্থে সুরা এবং আয়াতে বিভক্ত করে দিয়েছেন। যার ফলে মানুষ সহজে কোরআন অধ্যয়ন করে তা অনুধাবন করতে পারে। এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এ সকল কারনেই এ পৃথিবীতে আল-কোরান সর্বাধিক পঠিত ও গবেষণার উৎস। অন্যান্য আসমানী কিতাবের ন্যায় মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরান একেবারেই নাজিল হয়নি,বরং মহানবী [সা.] -এর নবুয়তি জীবনের সুদীর্ঘ তেইশ বছরে প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে জিব্রাইল আমীনের মারফতে ওহীর মাধ্যমে অবতীর্ন করেন। এ প্রক্রিয়ায় কোরআন অবতীর্ন হওয়ার মাঝে নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর অপার হেকমত নিহিত ছিল। সুতরাং কুরআনের উপর আমলকারীদের এর সুরা বা আয়াত অবতীর্নের কারন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন,যা থেকে বহুবিধ উপকারীতা লাভ করা যায়। এই কুরআন যেহেতু আরবী ভাষা-ভাষীদের উপর নাযিল হয় তাই তাতে যবর যের ইত্যাদি ছিল না। পরবর্তীতে অনারবদের পড়ার ও বুঝার সুবিধার্থে যবর-যের ইত্যাদি সংযোগ করে আমাদের জন্য আরো নেয়ামতপুর্ণ করে তোলা হয়। নিন্মে আল-কুরআনের বিষয়ে বিস্তারীত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আল-কোরআনের শাব্দিক পরিচয় : কোরআনের শাব্দিক বিশ্লেষণ নিয়ে আলেমদের মতবিরোধ রয়েছে। যেমনঃ- ১। ইমাম শাফেয়ী ও একদল আলেমের মতে-'কুরআন' হল নির্ধারিত নাম।এটা এসমে মুশতাক বা অনির্ধারিত নাম নয়। তাঁরা বলেন এটা কালামুল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট নাম। যেমন ইঞ্জিল, তাওরাত, যবুর বিশেষ কিতাবের নাম ছিল। অনুরুপ সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থের নাম হল কুরআন; আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-"বরং এটা মহান কোরআন লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।"(বুরুজ ২১-২২) ২। আরেক দল আলেম বলেন,'কুরআন' শব্দটি অনির্দিষ্ট নাম। যার অর্থ মিলিত অর্থাৎ একটি অপরটির সাথে মিলিত। আর যেহেতু পবিত্র কুরআনের এক আয়াত অপর আয়াতের সাথে মিলিত তাই এটাকে 'কুরআন' বলা হয়। ৩। কিছু সংখ্যক আলেমের মতে, 'কুরআন' শব্দটি 'ক্বারউন' হতে নির্গত। এসমে মাফউল থেকে এর অর্থ হবে পঠিত। পবিত্র কুরআনকে এজন্যই কুরআন বলা হয় যেহেতু এটা পৃথিবীতে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। ৪। অনেকে বলেছেন, 'কুরআন' শব্দটির অর্থ অধিক নিকটতর। যেহেতু কুরআনের পাঠ, পঠন ও তদানুযায়ী আমলকারীকে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেয়। তাই কুরআনকে 'কুরআন' নামকরন করা হয়েছে। ৫। ইমাম রাগেব ইসফাহনী (রহ.) বলেছেন 'কুরআন' এর অর্থ হল একত্র করা, জমা করা। কোন বিষয় অধ্যয়ন ও পাঠ করার জন্যে প্রচুর অক্ষর এবং শব্দসম্ভার একত্র করতে হয়; এই ন্যুনতম সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে পরবর্তী পর্যায়ে 'কুরআন' শব্দটি অধ্যয়ন করা , পাঠ করা'র অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল-কুরআনের পারিভাষিক পরিচয় : ১। নুরুল আনোয়ার গ্রন্থকার বলেন-কুরআন হল রাসুল [সা.]-এর উপর অবতারিত যা সহীফাসমুহে লিপিবদ্ধ আছে, যা রাসুল [সা.] থেকে সন্দেহমুক্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে উদ্ধৃত হয়ে এসেছে। ২। মুজামুল ওয়াসীত গ্রন্থে বলা হয়েছে-কুরআন হল আল্লাহর কালাম বা কথা যা তিনি তাঁর রাসুল [সা.] এর উপর অবতীর্ণ করেছেন, যা সহীফাসমুহে লিপিবদ্ধ আছে। ৩। আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান [রহ.] বলেন- কুরআন হল এমন এক আসমানী কিতাব যা আমাদের মহান নেতা মুহাম্মদ [সা.] এর উপর অবতীর্ণ, যার একটি সূরার মোকাবিলায় মানুষ অক্ষম। সঙ্কলন : মাওলানা মিরাজ রহমান