কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফেস আইডি এবং আইরিস স্ক্যানারের তুলনামূলক পার্থক্য। ছবি: সংগৃহীত।

আইফোন টেন কি স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮ থেকে নিরাপদ?

আরিফ আরমান বাদল
সহ-সম্পাদক, বিজনেস এন্ড টেক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:৫২
আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:৫২

(প্রিয়.কম) আইফোন ৮ এবং ৮ প্লাসের সাথে অ্যাপলের স্পেসশিপ ক্যাম্পাসে ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আইফোন টেন জনসমক্ষে উন্মোচন করেছিল অ্যাপল। আইফোনে টেনে স্মার্টফোনের ভবিষ্যত দেখা গেছে। ফেস আইডি তার মধ্যে অন্যতম। তবে স্যামসাংও গ্যালাক্সি এস৮ এবং নোট ৮ সিরিজে আইরিস প্রযুক্তির আনলকিং সিস্টেম যুক্ত করেছিল। অর্থাৎ, চোখ স্ক্যান করে গ্যালাক্সি এস৮ এবং নোট ৮ আনলক করা যায়। ফেস আইডি চালু করে অ্যাপল স্যামসাংয়ের আরও এক ধাপ উপরে ওঠার চেষ্টা করল।

তবে উভয় প্রতিষ্ঠানই তাদের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে সেরা বলে অভিহিত করেছেন। তবে এখানে প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য আইরিস স্ক্যানার এবং ফেস আইডি উভয় প্রযুক্তি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিশ্লেষণ শেষে বোঝা যাবে কোনটি সেরা।

ফেস আইডির বিশ্লেষণ

যেহেতু আইফোন টেনে কোন টাচ আইডি বাটন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার নেই সেহেতু ফেস আইডিই একমাত্র বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি। ফেস আইডি পড়েই বুঝতে পারছেন যে এটি আপনার মুখ ব্যবহার করে ফোন আনলক করে। এখন প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি কি আগের কোন স্মার্টফোনে ছিল না? এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই।

ফেস আনলক ফিচারটি কয়েক বছর ধরে স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটা নিরাপদ ছিল না। কিন্তু আইফোন টেনের ফেস আইডি অধিকতর নিরাপদ এবং হ্যাক করা অনম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো ফেস আইডি নিরাপদ করতে অ্যাপল কী এমন করল?

ফেস আইডি নিরাপদ করার প্রধানতম কারণ হলো এর ভিতরে থাকা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়। আইফোন টেনের অ্যাডভান্সড ফেস ডিটেকশন ফাংশনলাটিকে নিরাপদ রাখতে তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটনো হয়েছে। সেগুলো হলো:

১. ডট প্রজেক্টর: এই ফিচারটি গ্রাহকের মুখে স্বতন্ত্র থ্রিডি ফেসিয়াল ম্যাপ তৈরি করতে অন্তত ৩০ হাজার অদৃশ্য ডট ফেলে।

২. অবলোহিত ক্যামেরা: এই ক্যামেরাটি মূলত ডট প্রজেক্টরে ফেলা ডট প্যাটার্নগুলো পড়ে এবং বিশ্লেষণ করে। পড়া ও বিশ্লেষণের পর গ্রাহকের মুখের অবলোহিত ছবি ধারণ করে এই ক্যামেরা। পরবর্তীতে এই তথ্য-উপাত্ত আইফোন টেনের এ১১ বায়োনিক চিপসেটের বিশেষভাবে সুরক্ষিত স্টোরেজে পাঠানো হয়। এই তথ্য-উপাত্ত চিপসেটে নতুন ফেস রেজিস্টার বা পুরনো ফেস মিলিয়ে দেখে।

৩. উজ্জ্বল আলোকব্যবস্থা: অন্ধকারেও যাতে ফেস আইডি কাজ করতে পারে এজন্য ফ্লাড ইল্যুমিনেটর বা উজ্জ্বল আলোকব্যবস্থা গ্রাহকের মুখে অবলোহিত আলো ফেলে থাকে।

ফেস আইডি

অর্থাৎ, সহজভাবে বলতে গেলে উপরিউক্ত তিনটি প্রযুক্তি গ্রাহকের মুখে ডট ফেলে ম্যাপ তৈরি করে সেই উপাত্ত ফোনের ডাটা স্টোরেজে মিলিয়ে ফোন আনলক করে থাকে।

তবে এই প্রযুক্তির বাইরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যোগ করেছে অ্যাপল। মানুষের মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয় এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই। সেজন্য মানুষের মুখের এই ক্রমাগত পরিবর্তনকে অভিযোজন করে নিতে পারবে অ্যাপলের শক্তিশালী কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক সিস্টেম। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের মুখে দাড়ি গজালে বা চোখে চশমা পরলেও ফেস আইডি মুখ চিনতে পারবে।

ফেস আইডির স্মার্ট সফটওয়্যার এবং সুনিপুণ হার্ডওয়্যার পরিষ্কারভাবে প্রকৃত মুখ এবং ছবির মধ্যে পার্থক্য বের করতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে ফেস আইডির চোখে ধূঁলো দেওয়াটা অতোটা সহজ নয়। এমনকি আধুনিক ফেস আইডিটি হলিউড-গ্রেড মুখোশও ধরার ক্ষমতা রাখে। সুতরায় প্রকৃত মুখ না দেখা পর্যন্ত এটি ডিভাইস আনলক করবে না।

তবে কোন বায়োমেট্রিক প্রযুক্তিই ১০০ শতাংশ নিরাপদ নয়। আর ফেস আইডিকে হ্যাক করার নতুন কোন উপায়ও বের করে ফেলতে পারে হ্যাকাররা। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক স্যামসাংয় গ্যালাক্সি এস৮ এবং নোট ৮ স্মার্টফোনে ব্যবহৃত আইরিস প্রযুক্তি কতোটা নিরাপদ?

আইরিস স্ক্যানারের বিশ্লেষণ

গ্রাহক শনাক্ত করতে ফেস আইডি পুরো মুখ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আইরিস স্ক্যানার শুধুমাত্র আপনার চোখ ব্যবহার করে ফোন খোলার সক্ষমতা দেয়। আইরিস এক ধরণের পাতলা, রঙিন রিং যা চোখের নয়নতারার চারপাশে থাকে। এটি নয়নতারায় আলোর সমন্বয় করতে বিস্তার এবং সংকুচিত হয়। প্রত্যেকটি আইরিসে স্বতন্ত্র এবং জটিল প্যাটার্ন থাকে। প্রত্যেকটি মানুষেরই ভিন্ন ভিন্ন আইরিস ডিজাইন থাকে। এমনকি যময শিশুদেরও আলাদা প্যাটার্নের আইরিস থাকে।

তবে যময শিশুদের ব্যাপারে বিতর্ক রয়ে গেছে। অনেকের দাবি যময শিশুদের আইরিস প্যাটার্ন সর্বদা একই থাকে। তবে এটা সত্যি যে যময শিশুদের জন্মের প্রথম পর্যায়ে একই ধরণের আইরিস প্যাটার্ন থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের আইরিস প্যাটার্ন পরিবর্তিত হয়।

এখন প্রশ্ন হলো স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ অথবা নোট ৮ স্মার্টফোনের আইরিস স্ক্যানিং প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে? এটি অনেকটা অ্যাপলের ফেস আইডির প্রযুক্তির মতো। আইরিস স্ক্যানার কার্যকর করতে প্রধানত দুটি প্রযুক্তি কাজ করে। সেগুলো হলো:

১. আইআর এলইডি: এটি অনেকটা আইফোন টেনের উজ্জ্বল আলোকব্যবস্থা বা ফ্লাড ইল্যুমিটেনটরের মতো। পার্থক্য হলো আইআর এলইডি শুধুমাত্র চোকে অবলোহিত আলো ফেলে।

আইরিস স্ক্যানার

২. আইরিস স্ক্যানার: ফোনের অবলোহিত ক্যামেরা গ্রাহকের চোখে বিদ্যমান আইরিসের ছবি তুলে থাকে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ বা নোট৮ স্মার্টফোনে থাকা আইরিস স্ক্যানার খুব সরলভাবে কাজ করে। আইআর এলইডি চোখে আলো ফেলে আর আইরিস ক্যামেরা আইরিসের ছবি তোলে। পরবর্তীতে এই ছবি সংরক্ষণ করা হয় এবং পূর্ববর্তী তথ্য-উপাত্তের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। এখন আপনি উভয় চোখ নাকি একটি চোখে আইরিস স্ক্যানার ব্যবহার করবেন তা পছন্দের সুযোগ দেয় স্যামসাং।

ফেস আইডি বনাম আইরিস স্ক্যানার

উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে বলা যায়, আইফোন টেনের ফেস আইডি এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ অথবা নোট ৮ স্মার্টফোনের আইরিস স্ক্যানারের কর্মপদ্ধতি একই ধরণের। উভয় বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যত প্রযুক্তির ইঙ্গিত দেয়।

তবে ফেস আইডি কিংবা আইরিস স্ক্যানার কোন প্রযুক্তিই এখনও নিখুঁত নয়। আইফোন টেন উন্মোচন অনুষ্ঠানেই ফেস আইডি মুখ চিনতে ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে স্যামসাংয়ের আইরিস স্ক্যানারও ইতোমধ্যে হ্যাকাররা হ্যাক করেছে।

সূত্র: টেক রাডার 

প্রিয় টেক/মিজান