অধ্যক্ষ মতিউর রহমান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী (টেকনোক্রেট)
১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত আবদুর রেজ্জাক এবং মাতা মৃত মেহেরুন্নেসা খাতুন। তিনি আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ সময় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত
এরপর নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি সম্পন্ন করেন। নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯৫৮ সনে মেট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
১৯৬১ সালে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৪ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময় তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বি.এস.সি. শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সনে এম.এস.সি. সম্পন্ন করেন। এম.এস.সি. পাশের পর প্রথমে জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং পরে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করেন। তিনি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ময়মনসিংহ কলেজেও শিক্ষকতা করেন।
পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্র জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। তিনি অভিনয়, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ১৯৬৭-৬৮ সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতায় বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ঢাকা হল বর্তমানে ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সাংগঠনিক জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দুইবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে মতিউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটি’র সভাপতি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সম্মানিত সদস্য, জাতীয় সার সমন্বয় ও বিতরণ কমিটি’র সদস্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সনে একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরপর তিনবার সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে মোট তিনবার ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সন পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন। শতপ্রলোভনের মুখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি তার সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ লাভ করেন।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তার নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বিরম্নদ্ধ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তার নেতৃত্বেই ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান রণাঙ্গন ছেড়ে দেশ গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ জানুয়ারি গণআন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী আলমগীর মনসুর মিন্টুর নামে ১৯৬৯ সালে তিনি আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৪ বছর তিনি এ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মেহের রাজ্জাক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠা করেন বাসাবাড়ি মার্কেট ও গাঙ্গিনাপাড় হকার্স মার্কেট, ময়মনসিংহ। তিনি নাসিরাবাদ গার্লস স্কুল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ এবং নওমহল সানফ্লাওয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়াও একাধিক মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
একজন শিক্ষা উদ্যোক্তা ও শিক্ষা অনুরাগী হিসেবে তিনি বহু স্কুল ও কলেজ পরিচালনায় তার দক্ষ নেতৃত্বের গুণাবলীকে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ, ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়, ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজ, ইসলামি একাডেমী, আকুয়াবাড়ি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়াও ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি The United Cultural Convention, United State of America কর্তৃক ২০০৫ সালে ‘International Peace Prize’ পদকে ভূষিত হন। এছাড়ও তিনি International Biographical Center England কর্তৃক ২০০২ সালে Outstanding Intellectuals of the 21st Century’ পদকে ভূষিত হন।
তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জার্মানী, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং ভারত সহ বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। ১২ জানুয়ারি তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে গঠিত মহাজোট সরকারে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ
৪ বছর, ১০ মাস আগে
৪ বছর, ১০ মাস আগে
৫ বছর, ৫ মাস আগে