মোশতাক আহমেদ
এসপি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক
মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার তুজারপুর ইউনিয়নের সড়ইবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ পেয়েছেন তিনি।
মোশতাক আহমেদের প্রাথমিক শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয়ে। তিনি ১৯৯০ সালে খুলনা জিলা স্কুল হতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে তিনি খুলনা বি এল কলেজ থেকে যশোর বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৩ তম স্থানসহ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট হতে প্রথম শ্রেণীসহ অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস এডমিনেস্ট্রেশন (আই বি এ) হতে তিনি ৩২ ব্যাচে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫-০৬ সালে ব্রিটিশ সিভনিং স্কলার হিসাবে তিনি ইংল্যান্ডের লেস্টার ইউনিভার্সিটি হতে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
মোশতাক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধ্যয়ন শেষে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে্ যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। কর্মজীবনে তিনি স্টাফ অফসিার টু ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ, ইমিগ্রেশন অফিসার-ইন-চার্জ শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাইবান্ধা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পার্সোনাল সেক্রেটারি টু দ্যা ইন্সেপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রমনা বিভাগ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়ারি বিভাগ এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সদর দপ্তর বিভাগসহ ইন্টেলিজেন্স এন্ড এনালাইসিস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮-০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসাবে লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে পুলিশ সুপার (এস পি) পদমর্যাদায় তিনি সুদানের দার্ফুরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের হেডকোয়ার্টারসে পর্যবেক্ষক পুলিশ হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।
পেশাদার এবং ব্যক্তি জীবনে মোশতাক আহমেদ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ডেনর্মাক, জামার্নী, অস্ট্রিয়া, ইটালী, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লাইবেরিয়া, সিয়েরালিওন, মরক্কো, ঘানা, আইভরিকোস্ট, সুদানসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। মোশতাক আহমেদের লেখালেখির শুরু হয় ছাত্র জীবন হতে। তার প্রকম বই 'জকি' প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে। জীবনধর্মী এই বইটি প্রকাশের পর তিনি ঝুকে পড়েন সায়েন্স ফিকশনের দিকে। রোরটিজম, ক্লিটি ভাইরাস, নিহির ভালবাসা, লাল শৈবাল, ক্রিকি, পাইথিনের মত দুর্দান্ত সায়েন্স ফিকশনগুলো তাকে সায়েন্স ফিকশন জগতে শক্ত ভিত তৈরী করে দেয়। এরই মধ্যে ভৌতিক এবং গোয়েন্দাক্ষেত্রেও তিনি পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন। তার ক্লাসিক সায়েন্স ফিকশন 'রিবিট' কিশোর কিশোরীদের মাঝে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রকাশ হতে থাকে একটির পর একটি সংখ্যা। তার জনপ্রিয়তায় বাড়তি মাত্রা যোগ করে 'ববির ভ্রমণ' আর কিশোর গোয়েন্দা 'শিশিলিন' সিরিজ। প্যারাসাইকোলজি 'মায়াবী জোছনার বসন্তে' মোশতাক আহমেদের বহুমাত্রিক সাহিত্য বিচরণে যোগ করে নতুন মাত্রা। তার গবেষণাধর্মী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'নক্ষত্রের রাজারবাগ' লেখালেখির জগতে এক অসাধারন উপস্থাপনা হিসাবে স্বীকৃত। মোশতাক আহমেদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সায়েন্স ফিকশন - রোবটিজম, ক্লিটি ভাইরাস, লাল শৈবাল, নিহির ভালবাসা, ক্রি, ক্রিকি,লাল মানব, রোবো, লিলিপুটের গ্রহে, পৃথিবীতে লিলিপুটেরা, লিলিপুটদের ফিরে যাওয়া, নিকি, গিগো, পাইথিন, গিপিলিয়া, বায়োবোট নিওক্সি, রিরি, অণুমানর, দ্বিতীয় পৃথিবী, লাল গ্রহের লাল মানব, সবুজ মানব, প্রজেক্ট ইক্টোপাস, রোবটের পৃথিবী। ভৌতিক - আত্মা, অতৃপ্ত আত্মা, প্রেতাত্মা, রক্ত তৃষ্ণা, অভিশপ্ত আত্মা, রক্ত পিপাসা, উলু পিশাচের আত্মা, শয়তানের সাধক চিলিকের আত্মা। রিবিট সিরিজ - রিবিট, রিবিট এবং ওরা, রিবিটের দুঃখ, রিবিট ও কালো মানুষ, শান্তিতে রিবিট। কিশোর ক্লাসিক - ববির ভ্রমণ, ডাইনোসারের ডিম, লাল গ্যাং। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস - নক্ষত্রের রাজারবাগ। প্যারাসাইকোলজি - মায়াবী জোছনার বসন্তে। ভ্রমণ ও বিদেশ অভিজ্ঞতা - বসন্ত বর্ষার দিগন্তে। জীবনধর্মী উপন্যাস - জকি। মোশতাক আহমেদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। ডকুমেন্টারি তৈরিঃ মহান স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী মিলিটারি রাজারবাগ দখল করার চেষ্টা করলে রাজারবাগের পুলিশ এবং পাকিস্তানী মিলিটারিদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তার উপর তিনি 'মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ' নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ডকুমেন্টারিটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পাবে।