আমাদের সময়
৫ বছর, ৭ মাস আগে
মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী
জনাব মুহা: ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ১৯৪১ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলাধীন কালিকাপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হযরতুল্যা প্রামাণিক এবং মাতা তুলা বেগম। তিনি তাঁর পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান। ছোট ছেলেকে এমএ পাশ করাবেন সে আশায় পিতা তার নাম রাখেন এমএ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মাত্র দেড় বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। এরপর তিনি মা ও বড় তিন ভাইয়ের আশ্রয়ে অনেক কষ্টে বড় হন। ১৯৪৮ সালে মান্দা উপজেলার চক কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি স্থানীয় কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বিদ্যালয়ে ৭ম, ৮ম, ও ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন তিনি চরম অর্থ সংকটের সম্মুখীন হন। কিন্তু তিনি কখনই পড়ালেখার হাল ছাড়েননি। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন সবজি ব্যবসায়। স্থানীয় জোত বাজার হাট হতে আলু, বেগুন, পটল ইত্যাদি সবজি ক্রয় করে পার্শ্ববর্তী দামনাস হাটে বিক্রি করে যে মুনাফা পেতেন তা দিয়ে তিনি পড়ালেখার খরচ ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। এভাবে দরিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। অতঃপর তিনি ১৯৬১ সালে নওগাঁ বিএমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬৫ সালে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করলেও আর্থিক সংকটের কারণে পিতার এমএ পাশ করার আশা পূরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর জীবিকার তাগিদে তিনি প্রথমে রাজশাহী জেলার বাগমারা থানাধীন গাঙ্গপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানাধীন বাগডোব জুনিয়র হাইস্কুলে এবং মান্দা থানাধীন কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
তিনি ১৯৫২ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শিক্ষকদের সাথে ছাত্রদের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে স্থানীয় জোত বাজার হাটে মিছিল করেন। পরবর্তীতে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নকালীন তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন নওগাঁ মহুকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এবং এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭মার্চ দেশের প্রতিটি গ্রামে/মহল্লায় মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিলে জনাব ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক তার নির্বাচনী এলাকা মান্দা থানা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার লক্ষ্যে মান্দার সর্বত্র জনসংযোগ করে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেন এবং মান্দার জনগণকে সাথে নিয়ে জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মান্দা থানা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ এর সভাপতি, নওগাঁ মহুকুমা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মালদহে ৭নং সেক্টর জোনাল কাউন্সিলরের সদস্য, ১৯৮৬ থেকে অদ্যাবধি নওগাঁ জেলা অফিসার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি, জুলাই ২০০৮ হতে অদ্যাবধি প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ নওগাঁ জেলার সহ-সভাপতি এবং ১৯৮৬ হতে অদ্যাবধি পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব, শেরে বাংলা নগরের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী/প্রবাসী সরকার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্প গুলোতে অবস্থানকারী বাঙ্গালিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করণের জন্য তার উপর দায়িত্ব প্রদান করলে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা: ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক (এমপি) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। মুহা: ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক স্থানীয়ভাবে মান্দা থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন । তিনি মান্দা থানা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, নওগাঁ মহকুমা সংগ্রাম পরিষদেও উপদেষ্টা এবং ৭ নম্বর সেক্টরের জোনাল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধেও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অকস্থানকারীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন । অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি তা পালন করেন ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। অতঃপর ১৯৭৩ সালে ১ম সংসদ, ১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ, ১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ, ২০০৮ সালে ৯ম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৯ সালে মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১ম সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, ২য় সংসদে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং ৯ম সংসদে সরকারি হিসাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ৯ম সংসদে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। টিআইবি কর্তৃক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ৩য় সংসদে তিনি শ্রেষ্ঠ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর যখন প্রথম সংসদ ভেঙ্গে যায় তখন তিনি নিজ এলাকায় গিয়ে প্রথমে পাটের ফরিয়া ব্যবসা এবং পরে কাপড়ের দোকানদারী করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুত হননি।
জনাব ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ১২ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ও ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইটালি, ভেনিজুয়েলা, মরিশাস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ভারত সফর করেন।
তিনি এখন পর্যন্ত তার নির্বাচনী এলাকা নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে মান্দা মমিন শাহানা ডিগ্রী কলেজ, উত্তরা ডিগ্রী কলেজ, মান্দা চকউলী ডিগ্রী কলেজ, গোটগাড়ী শহীদ মামুন স্কুল এন্ড কলেজ, মান্দা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজ, কালিকাপুর-চককালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, মান্দা মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়, মান্দা পাকুড়িয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় ও কালিকাপুর আলিম মাদ্রাসা অন্যতম।
পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার ১ম সন্তান মাহমুদা আকতার মুক্তি ও ২য় সন্তান শেফায়েত জামিল সৌরভ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ৩য় সন্তান মুহা: সুজাউদদৌলা বিপ্লব এবং ৪র্থ সন্তান নাছরিন সাবিহা আকতার বানু বর্তমানে দেশেই বসবাস করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই সহজ সরল জীবন যাপন করেন।
পাটের ফরিয়া ব্যবসায়ী এবং কাপড়ের দোকানদার থেকে বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী হওয়ায় তিনি নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেন। সমাজের অতি সাধারণ গরীবের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে তার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী হওয়া একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ থেকেই সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। অন্যকোন রাজনৈতিক দলই এমন সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণকারী কোন ব্যক্তিকে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করে না।