![মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা](https://media.priyo.com/img/500x/http://media.priyo.com/image/upload/people_photos/aa727764-cac7-497f-a435-01bbcf06f614.jpg)
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাধারণ সম্পাদক
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একজন আদিবাসী নেতা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাধারণ সম্পাদক এবং সন্তু লারমার ভাই ছিলেন। পাহাড়ি জনতার প্রাণের দাবিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সারা জীবন আন্দোলন করে গেছেন। তার আন্দোলনের সফলতা অর্জিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তিনি ছিলেন আসলে শোষিত মানুষের নেতা।
১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার। তার মায়ের নাম ছিল সুভাষিণী দেওয়ান এবং বাবার নাম চিত্তকিশোর চাকমা। তার সহধর্মিনীর নাম পঙ্কজিনী চাকমা এবং ছেলে জয়েস লারমা, মেয়ে পারমিতা লারমা। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা, ভাই শুভেন্দু প্রভাষ লারমা এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রথম বিদ্যালয় ছিল মহাপ্রুম জুনিয়র হাইস্কুল। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএ ও বিএড ডিগ্রি লাভ করেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৫ ও ১৯৬৮ সালে যথাক্রমে। তিনি ১৯৬৯ সালে এলএলবি ডিগ্রিও লাভ করেন।
১৯৬৬ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে আইনজীবী কাজ শুরু করেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে তিনি পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।১৯৬০ সালে পাহাড়ি ছাত্র সমাজের নেতা হয়ে যান। ১৯৫৮ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
তিনি পাকিস্তান সরকারের হাতে গ্রেফতারও হন ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পরে ১৯৬৫ সালে শর্তসাপেক্ষে ছাড়া পান। তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি ১১টি আদিবাসী গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতি এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে মোট ৪ দফা দাবি পেশ করেন আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য। ঐ বছরের ৩১শে অক্টোবর তিনি সংসদ ত্যাগ করেন সংবিধানে পাহাড়ীদের বাঙালী বলার প্রতিবাদে।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেন ইংল্যান্ডে। তিনি মনে করতেন পাহাড়ি ও বাঙ্গালী ২টি আলাদা গোষ্ঠী। তাই বঙ্গবন্ধু যখন বলতেন পাহাড়িরাও বাঙালী তা তিনি মেনে নেননি। তিনি ১৯৭৫ সালে বাকশালেও যোগদান করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের দিনই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আত্মগোপনে চলে যান এবং গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী। একই সাথে তিনি গড়ে তুলেছিলেন মহিলা সমিতি, জুমিয়া সমিতি, যুব সমিতি ও গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী। অনেকের মতে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত হয় শান্তিবাহিনী। মার্ক্সীয় আদর্শ তিনি ধারণ করেছিলেন তার আন্দোলনের জন্য।
পরে জিয়াউর রহমান নতুন বাঙালীদের পাহাড়ী অঞ্চলে অভিবাসিত করলে তাদের সংগ্রাম তীব্র হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের লড়াই তীব্রতর হয়ে ওঠে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দলেও সৃষ্টি হয় অন্তর্দন্ধ এবং দলটি ২টি ধারা এম এন রায় গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮২ সালেও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর তিনি বিপক্ষ দলের আক্রমণে ৮ জনসহ মারা যান খাগড়াছড়িতে।
সংবাদ
![loading ...](/static/img/ajax-loader.gif)