
গাজী আব্দুল হাকিম
বংশীবাদক
মায়ের অনুপ্রেরণায় বাঁশিকেই সঙ্গী করেন গাজী আবদুল হাকিম। ৬২ ছুঁই ছুঁই গুণী বাঁশিশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম খুলনার ডুমুরিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন। চার-পাঁচ বছর বয়সেই হাতে তুলে নেন বাঁশি। বাড়ির পাশে শ্রীনদী। কখনো নদীর পাড়ে বসে, কখনো সেই নদীতে নৌকা ভাসিয়ে গলুইয়ে বসে বাঁশি বাজিয়ে চলছেন। প্রকৃতির প্রেমে বাঁশি তাঁর বেজে চলত সময়কে থামিয়ে।
বাঁশিতে প্রথম হাতেখড়ি মুকুল বিশ্বাসের কাছে। একসময় মুকুল বিশ্বাস চলে যান ভারতে। গাজী হাকিম এরপর তালিম নেন দুলাল বাবুর কাছে। ১৯৭৪ সালে বাঁশিশিল্পী হিসেবে খুলনা বেতারে যোগ দেন তিনি। রেডিওতে বাজানোর পাশাপাশি তালিম নেন ওস্তাদ আলী আহমেদ ও বিনয় রায়ের কাছে। একসময় বদলি হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৮৪ সালের শেষ দিকে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। একই সময়ে যোগ দেন আলাউদ্দিন লিটল অর্কেস্ট্রাতে। রেডিওর পাশাপাশি শুরু হয় চলচিত্র আর অডিও অ্যালবামে নিয়মিত বাজানো। চলচ্চিত্রে খান আতাউর রহমান, সত্য সাহা, আজাদ রহমান, আলম খান, আনোয়ার পারভেজের মতো গুণী সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন গুণী এই বাঁশিশিল্পী। অডিওতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদি মহম্মদ, অজিত রায়, কলিম শরাফীর রবীন্দ্রসংগীতের প্রথম অ্যালবামগুলোতে একাই বাজিয়েছেন। দেশের বাইরে প্রথম কলকাতা গেলেও স্মরণীয় সফর ছিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ফেরদৌসী রহমান আর রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে। এক মাসের সেই সফরে এরপর তাঁরা যান লন্ডনে। গত ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, হল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অসংখ্য দেশে বাজিয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত বিশ্বের বেশ কটি দেশে তাঁর একক এবং ফরিদা পারভীনের সঙ্গে যুগলবন্দী অনুষ্ঠান হয়েছে। এর মধ্যে লন্ডনের হাউস অব কমন্সে, প্যারিসের লা ভেলি থিয়েটারে ফরিদা পারভীন ও তাঁর যুগলবন্দী হয়। এই অনুষ্ঠানগুলোর ডিভিডিও বেরিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হাকিমের গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ মিউজিশিয়ানস ফোরামের সভাপতি, বাংলাদেশ বেতার নিজস্ব শিল্পী সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল গাজী আবদুল হাকিম স্বপ্ন দেখেন একটি মিউজিশিয়ান ক্লাব করার। যে ক্লাব অবহেলিত যন্ত্রশিল্পীদের জন্যে কাজ করবে, যেখানে তাঁদের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি একটি সংগীত একাডেমি ও অ্যাকুস্টিক বাদ্যযন্ত্রগুলোর সংগ্রহশালা করার ইচ্ছে তার।
সংবাদ
