ছবি সংগৃহীত

NFC কি? এবং আমরা কোথায় ও কেন তা ব্যবহার করবো?

ফয়সাল আহমেদ
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৪:৪৭
আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৪:৪৭

(প্রিয় টেক) যতই দিন যাচ্ছে, NFC হার্ডওয়্যার আছে এমন ডিভাইসের সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশী যেই ডিভাইসে এই যন্ত্রাংশটি সংযুক্ত হয়েছে তা হল মোবাইল, যদিও বর্তমানে কিছু ল্যাপটপেও দেখতে পাওয়া যায় এই ডিভাইসটি। ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে NFC প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হচ্ছে মূল্য পরিশোধে, পাসওয়ার্ড হিসেবে অথবা বিদেশ ভ্রমণে আপনার বোর্ডিং পাস হিসেবে। NFC কে QR কোডের নতুন আরেকটি ভার্সনও বলা যেতে পারে। 1 নতুন মোবাইল গুলোতে এই হার্ডওয়্যার যোগ করা শুরু হয়েছে তার পুরো সুবিধা ব্যবহার করার জন্য। যদিও অন��ক মানুষই জানে না এখনো যে তাদের ডিভাইসে এই হার্ডওয়্যারটি যুক্ত আছে এবং এটিও জানেনা কিভাবে এটি ব্যবহার করতে হয়

NFC কি?

NFC এর পূর্ণ অর্থ হল Near Field Communication, নাম শুনে হয়তো বুঝতে পারছেন কী কাজ করতে পারে এই যন্ত্রটি। NFC হল কিছু স্ট্যান্ডার্ড যা আপনার স্মার্টফোন অথবা অন্য ডিভাইসগুলোকে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে যখন ডিভাইসগুলো একটি অপরটির কাছে আসে। NFC মূলত RFID এর মতো করে কাজ করে, কিন্তু NFC এর যোগাযোগ করার সীমানা বা দূরত্ব RFID এর থেকে কম। NFC এর যোগাযোগ এর সীমানা হল ৪ ইঞ্চি যা এটিকে হ্যাক করা, মাঝখানে আড়িপাতা অথবা যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটানোকে কষ্টকর করে তুলেছে।
8
NFC হার্ডওয়্যার আছে এমন ডিভাইস আরেকটি NFC হার্ডওয়্যার যুক্ত ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, এমনকি “NFC Tags” এর সাথেও। “NFC Tags” হল বৈদ্যুতিক শক্তি বিহীন একটি চিপ (Chip) যা তার কাছে NFC সুবিধাযুক্ত অন্য স্মার্টফোন কিংবা অন্য বৈদ্যুতিক শক্তি যুক্ত ডিভাইস থেকে তার নিজের জন্য শক্তি যোগার করে। তাদের নিজেদের কোনো শক্তির উৎস বা ব্যাটারি লাগে না। এ থেকে আপনি হয়তো বুঝে গিয়েছেন ভবিষ্যতে QR কোডের জায়গা দখল করতে পারে এই নতুন প্রযুক্তিটি। NFC যোগাযোগ স্থাপন করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে তা হল শুধু ডিভাইস দুটি পরস্পরের সংস্পর্শে আনতে হবে, অর্থাৎ স্পর্শ করতে হবে। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে, আপনি যদি দুটি মোবাইলের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে চান তাহলে মোবাইল দুটির পিছনের সাইড পরস্পরের সাথে স্পর্শ করতে হবে, যদি তাদের একটি হয় “NFC Tag” তাহলে আপনাকে আপনার মোবাইলের পিছনের সাইড NFC Tag এর সাথে স্পর্শ করতে হবে। বর্তমানে NFC অনেকরকম ডিভাইসে যুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে আছে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস যেমন নেক্সাস ৪, গ্যালাক্সি নেক্সাস, নেক্সাস এস, গ্যালাক্সি এস ৩, গ্যালাক্সি এস ৪, এইচটিসি ওয়ান এক্স এর মতো মোবাইল। অ্যান্ড্রয়েডই শুধু একমাত্র প্ল্যাটফর্ম না যা NFC সাপোর্ট করে, উইন্ডোজ ফোন ডিভাইস যেমন নোকিয়ার লুমিয়া সিরিজ, এইচটিসি এর উইন্ডোজ ফোন ৮এক্স সিরিজ এবং কিছু ব্ল্যাকবেরি ফোনও NFC সাপোর্ট করে। যদিও দুঃখের বিষয় হল অ্যাপেলের কোন ডিভাইস এখনো NFC সাপোর্ট করে না। 2

মোবাইল পেমেন্টস

NFC পেমেন্টস কাজ করে অনেকটা টেপ-টু-পে (Tap-to-Pay) স্পর্শবিহীন পেমেন্ট ফিচারের মতো, যেমন মাস্টারকার্ড (MasterCard) এর পে-পাস (PayPass) যা মাস্টারকার্ড ক্রেডিট কার্ডের অন্তর্ভুক্ত। একটি NFC ডিভাইস যুক্ত স্মার্টফোন একটি NFC সুবিধাযুক্ত পেমেন্ট টার্মিনালে স্পর্শ করে অথবা তার উপর দিয়ে তা ঘুরিয়ে এনে কোনোকিছুর জন্য পে করা যায় বা কোনোকিছুর দাম দেয়া যায়, এর জন্য কোনো ক্রেডিটকার্ড লাগবে না। এটি ঠিক গুগল ওয়ালেট যেভাবে কাজ করে তার মতো। 7 সান ফ্রান্সিসকোতে NFS পার্কিং মিটার আছে, পার্কিং মিটারের কাছে আপনার NFC সুবিধাযুক্ত ফোনটি স্পর্শ করে আপনি আপনার পার্কিং বিল পরিশোধ করতে পারবেন। 3

তারবিহীন তথ্য আদান-প্রদানে

আপনি কোনো তথ্য খুব সহজেই তাঁর ব্যবহার না করে আদান-প্রদান করতে পারবেন NFC প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অ্যান্ড্রয়েড ফোন অ্যান্ড্রয়েড বিম নামে একটি সুবিধা ব্যবহার করে যা ব্যবহারকারীদের কে খুব সহজেই কোনো ওয়েব-পেইজ, ভিডিও, ছবি, গান, কন্টাক্ট অথবা অন্যকিছু শেয়ার করতে দেয় NFC প্রযুক্তি ব্যবহার করে। দুটি ফোনের পিছনের দিক একটি অপরটির সাথে স্পর্শ করলে ফোনে যা চলছিলো তা অন্য ফোনে পাঠানো শুরু হয়ে যাবে। ফাইল পাঠানোর জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু দুটি ডিভাইস পেয়ার করতে যে ঝামেলা হতো তা এই প্রযুক্তির সাহায্যে দূর করা যায়, শুধু টাচ করুন, বাকিটা নিজে থেকেই হয়ে যাবে। 4 প্রায় একই রকম শেয়ারিং ফিচার দেখতে পাওয়া যায় উইন্ডোজ ফোন এবং ব্ল্যাকবেরিতে।

NFC ট্যাগ

NFC ট্যাগ যেকেউ কিনতে পারে কারন এটি খুবই কম দামে পাওয়া যায়। আপনার ট্যাগের সাথে কোনো ডিভাইস কন্টাক্ট করলে অথবা কাছে আসলে কি ঘটবে তা আপনি নিজের ইচ্ছামতো ঠিক করে দিতে পারবেন। 5 ধরুন, আপনি সবসময় ঘুমাতে যাবার আগে আপনার ফোনটি সাইলেন্ট মোডে রেখে যান। প্রতিদিন এটি নিজহাতে না করে আপনি একটি NFC ট্যাগ আপনার ঘুমানোর খাটের পাশে রাখতে পারেন। আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন আপনি আপনার ফোনটি ওই ট্যাগের উপর রাখবেন, তাহলে আপনার স্মার্টফোন আপনার কনফিগার করা কাজটি করবে যা হতে পারে নিজে থেকে সাইলেন্ট মোডে চলে যাওয়া। এমনকি আপনি একটি NFC ট্যাগ বানাতে পারেন যা আপনার ওয়াইফাই কানেকশনের SSID এবং তার পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখবে। যখন কেউ আপনার বাসায় আসবে, তখন সে তার ফোনটি দিয়ে আপনার বানানো ওই ট্যাগ স্পর্শ করলে নিজে থেকে তার মোবাইলে আপনার বাসার ওয়াইফাই কানেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য চলে যাবে এবং তার ফোন নিজে থেকে তার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে যা নিজে ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন করা থেকে অনেক সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হবে। আমি এতক্ষন যা বললাম তা উদাহরন মাত্র। আপনি আপনার পছন্দমতো কাজ করাতে পারবেন একটি অ্যাপ এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

আরও কিছু ব্যবহার

NFC অনেক ভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারি, যেমন:
  • দ্রুত কোন তথ্য ডাউনলোড করার জন্য: অনেক বিজনেস, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এবং প্রোডাক্ট QR কোড ব্যবহার করে, যাকিনা স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে স্ক্যান করতে হয়। NFC এই কাজটি করতে পারে আরও কম ঝামেলার মাধ্যমে। শুধু স্পর্শ করবেন অথবা কাছ দিয়ে ঘুরিয়ে আনবেন, আপনার কাজ শেষ, কোন স্ক্যান করার ঝামেলা করতে হবে না।
  • ট্রানজিট এবং বোর্ডিং পাস হিসেবে: আপনার NFC সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোনটিকে ট্রানজিট এবং বোর্ডিং পাস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে যেকোনো এয়ারপোর্ট এ।
  • সিকিউরিটি পাস হিসেবে: গাড়ির দরজার লক খুলতে কিংবা দরজার লক খুলতে এটি ব্যাবহার করা যেতে পারে।
6