(প্রিয়.কম) কারোর কাছে ‘বন্ধু’ যেন তার সমগ্র পৃথিবীটাই। এক একজন বন্ধু যেন, এক একটা আলাদা পৃথিবী। নিজের জীবনে তাদের আবির্ভাবের পূর্বে এই পৃথিবী যেন অদৃশ্য হয়ে থাকে। বন্ধুত্বের বন্ধন, বন্ধুর প্রতি টানটা যেন কোনকিছু দিয়েই যেন সঠিকভাবে এবং পূর্নাঙ্গরূপে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না!

প্রিয় এই বন্ধু যখন কোন বিপদে থাকে, তার জীবনে যখন খুব বেশি খারাপ সময় আসে তখন আপনি কী করেন? হয়তো খুব প্রিয় কাউকে কিংবা পরিবারের কাউকে সম্প্রতি হারিয়েছেন তিনি। অথবা ব্যবসা ক্ষেত্রে খুব বড় ধরণের লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। কিংবা, শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একদম হুট করেই। বন্ধুর এমন অবস্থায় কীভাবে তার পাশে থাকতে হবে, তাকে কী বলতে হবে- এমন খুব সাধারণ ব্যাপারগুলোও অনেকে বুঝতে পারেন না। একদম কিছুই না করাও অন্যতম একটি উপায়, তবে অবশ্যই ভালো কোন উপায় নয়!

একজন ব্যক্তির বিপদে অথবা খারাপ সময়ে একজন বন্ধুকেই সবচেয়ে বেশী তার পাশে প্রয়োজন হয়। তাই জেনে রাখুন, বন্ধুর খারাপ সময়গুলোতে কীভাবে তার পাশে থাকবেন আপনি।

সকল বিষাদ এবং মনঃকষ্ট শুধুমাত্র আপনার বন্ধুর

একটা কথা খুব ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। খারাপ সময়গুলোর অভিজ্ঞতা আপনার বন্ধু করছে, আপনি না। আপনি শুধুমাত্র তার পাশে থাকতে পারেন, তার কষ্টগুলো বোঝার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু কোনোভাবেই তার কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবেন না। বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য আছে। “যার যায় শুধু সেই বোঝে।“ যার ফলে যে কারণেই হোক আপনার বন্ধু যখন তার কঠিন সময়গুলো পার করছেন, শুধুমাত্র সেই ভালো মতো জানেন যে তার মনের উপর দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে! এই মনঃকষ্টগুলো তার একান্ত। আপনি তার পাশে থেকে তাকে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।

ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত নয়, বর্তমান সময়ের কথা বলুন

অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব আবেগপূর্ণ ও কাল্পনিক কথাবার্তা বলাটা প্রলুব্ধকর বটে! তবে এটা মনে রাখতে হবে, আপনার বন্ধু অতীতের সময়ে অথবা ভবিষ্যৎ এর সময়ে বসবাস করছেন না। তিনি বর্তমান সময়ে বসবাস করছেন। বর্তমান সময়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। কাল্পনিক কথা বলে সাময়িকভাবে স্বান্তনা দেওয়া গেলেও সেটা খুব উপকারী কিছু নয়। কারণ, তার কষ্টগুলো বর্তমান সময়ের! যে কারণে তার সাথে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। তার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। তার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। জানুন কী করতে তার সমস্যা এবং কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হবে।

যেটা ঠিক করার মতো নয় সেটা ঠিক করার চেষ্টা করবেন না

আপনার বন্ধুর খারাপ সময়গুলো হয়তো, তার ভালোবাসার কাউকে হারানোর জন্য অথবা অনেক বড় ধরণের কোন ক্ষতির জন্যে। যা পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এমন ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করে ফেলা সম্ভব নয়। বরং সবকিছু ঠিক করে ফেলা সম্ভব এমন আচরণ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিতে পারে। যে কারণে অতল মানসিক কষ্ট ভোগ করার সময়ে শুধুমাত্র পাশে থাকার মতো একজন বন্ধু থাকাটাই অনেক বড় একটা ব্যাপার।

তিনি আপনার উপরে মনঃক্ষুণ্ণ নন

মানসিক অস্থিরতার মাঝে থাকা সময়কালীন কেউই স্বাভাবিকভাবে কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। হয়ত আপনি বন্ধুর খারাপ সময় জেনে তার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন, কথা বলতে চাচ্ছে, তার পাশে থাকতে চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি আপনার সাথে যোগাযোগই করছে না। পরিস্থিতি অন্য রকমও হতে পারে। খারাপ সময় পার করার মধ্যবর্তী সময়ে বন্ধুর সাথে সবসময় থাকলে অনেক সময় বন্ধু অকারণেই আপনার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারে। আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে বসতে পারে।

তবে উভয় পরিস্থিতির ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে, বন্ধু আপনার উপরে কোন কারণে মনঃক্ষুণ্ণ নন। তিনি মানসিকভাবে খুব বেশী অস্থিতিশীল অবস্থা পার করছেন বলেই এমন আচরণ করে বসছেন আপনার সাথে।

তাকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই, সরাসরি তার সাথে দেখা করুন

স্বাভাবিকভাবে একজন যখন খুব বেশী মানসিক অস্থিতিশীল অবস্থার মাঝে থাকেন এবং মনঃকষ্টে থাকেন তখন তিনি নিজেকে সকলের কাছ থেকে গুটিয়ে নিতে চান। যে কারণে আপনার বন্ধুর খারাপ সময়ে তার সাথে সরাসরি দেখা করতে চলে যান। ফোনকল দিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন- দেখা করতে চান কিনা, কিংবা বাইরে একসাথে বের হতে চান কিনা, তবে তিনি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরে অসম্মতি জানাবেন। তাই কোন প্রশ্ন করে সময় নষ্ট না করে সরাসরি তার সাথে দেখা করার জন্য বের হয়ে পড়ুন।

তার প্রাত্যহিক দিনের কিছু কাজ করে দিয়ে সাহায্য করুন

অনেক সময় খুব ছোটখাটো কিছু কাজের মাধ্যমেও ভালোবাসা প্রকাশ করা সম্ভব হয়। খুব বেশী কিছু নয়, বন্ধুর জন্যে তার নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে তার জন্য নিয়ে যান। একবেলার খাবার রান্না করে অথবা কিনে তার জন্য নিয়ে যান। সে যে ধরণের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তেমন কিছু সিনেমা ডাউনলোড করে দিন। এমন খুব সাধারণ এবং ছোট কাজের মাধ্যমে বন্ধুর খারাপ সময়গুলোতে তার পাশে থাকা যায়।

পরিচিত মানুষদের বন্ধুর অবস্থা সম্পর্কে জানান

আগেই বলা হয়েছে, খারাপ সময়গুলোতে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পছন্দ করেন। যার ফলে, তার আশেপাশে পরিচিত কিংবা অর্ধ-পরিচতি অনেকের সাথেই তিনি বেশ কিছুদিনের জন্য যোগাযোগ স্থগিত করে রাখবেন। এমতাবস্থায় আপনার এবং আপনার বন্ধুর মিউচুয়াল কেউ আপনার বন্ধুর কথা জানতে চাইলে তাকে বন্ধুর পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলুন। জানান যে কেন তিনি কিছুদিনের জন্য চুপচাপ আছেন। আরো জানান, তিনি যেন আপনার বন্ধুকে ভুল না বুঝে থাকে।

সবশেষে, ভালোবাসুন আপনার বন্ধুকে

সকল কথার শেষে একটা কথা বলতেই হয়- আপনার বন্ধুকে ভালোবাসুন। সকল কিছুর উর্দ্ধে তার প্রচুর ভালোবাসার প্রয়োজন। তার পাশে থেকে, তাকে বুঝে, তার সাথে কথা বলে তার প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তার খারাপ সময়ে তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে না নিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। একজন বন্ধু হিসেবে তার খারাপ সময়ে সহযাত্রী হিসেবে তার সাথে থাকার চেষ্টা করুন।

সূত্র: Psychology Today

প্রিয় লাইফ/ রুমানা বৈশাখী