যে কোন শাকই একটু কৌশল করলে বাড়িতেই ফলানো সম্ভব। ছবি : প্রিয়.কম।

ছোট্ট বারান্দাতেই সারাবছর জন্মাবে সতেজ লাল শাক

রুমানা বৈশাখী
বিভাগীয় প্রধান (প্রিয় লাইফ)
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪৮
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৪৮

(প্রিয়.কম) ছোট্ট এক চিলতে বারান্দা, শাক-সবজি ফলানো সম্ভব নয় মোটেও? ভুল, একদম, ভুল! যদি ইচ্ছে থাকে, তাহলে আপনার এক চিলতে বারান্দাতেও খুব সহজেই হরেক রকমের শাক চাষ করতে পারবেন এবং প্রতিদিনই খেতে পারবেন তরতাজা ফরমালিন বিহীন শাক।
 
আজকাল লাল শাকের নামে বিক্রি হচ্ছে রঙ ও ফরমালিনে ডোবানো কচি ডাঁটাশাক। তাতে না আছে লাল শাকের স্বাদ, না আছে পুষ্টি। লাল শাকের পুষ্টির খোঁজে এইসব খেয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যই কেবল নষ্ট করে চলেছি আমরা। তাই সেরা উপায় হচ্ছে অন্তত শিশুর খাবারের জন্য হলেও প্রয়োজনীয় শাক বাড়িতেই উৎপাদন করে নেয়া।
 
টব নেই, রাখারও জায়গা নেই? কোন সমস্যা হবে না। ফেলনা প্লাস্টিকের ঝুড়ি, পুরাতন বাটি ইত্যাদি ব্যবহার করে এক চিলতে বারান্দায় কীভাবে স্বল্প খরচে লাল শাক চাষ করা যায়, সেই পদ্ধতিই জেনে নিন এই ফিচার হতে। বাগান করার ব্যাপারে তেমন আহামরি কোন জ্ঞান না থাকলেও চলবে। এমনকি বারান্দা না থাকলেও সমস্যা হবে না, আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন কোন গৃহকোণে রেখে দিলেও হবে।
 
লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Amaranthus gangeticus। যে কোন বয়সেই লাল শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর ও দেহের জন্য উত্তম। বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এবং যেখানে পানি জমে না এমন মাটি লাল শাক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। নার্সারিতে যা পাচ্ছেন, সেটা ব্যবহার করলেই হবে। মাত্র ৫০ টাকাতেই অনেক মাটি পেয়ে যাবেন সহজেই।
 
লাল শাক আজকাল সারা বছরই আবাদ করা যায়। দেশি জাতের পাশাপাশি নানা রকমের হাইব্রিড জাতের বীজও পাওয়া যায়। যেমন- আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লাল শাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ইত্যাদি।
 
যেভাবে করবেন
-আজকাল অনলাইনেই খুব অল্প দামে লাল শাকের বীজ কিনতে পাওয়া যায়। নার্সারিতেও পাওয়া যায়। মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকাতেই প্রয়োজনীয় বীজ পেয়ে যাবেন আপনি।
-শাক চাষের জন্য একটু ছড়ানো স্থান বেছে নিতে হয়। পুরাতন ঝুড়ি, বাক্স ইত্যাদি শাক চাষের জন্য ভালো হবে। সম্ভব হলে পাত্রের নিচে ফুটো করে নিন। না করলেও সমস্যা নেই, পানিটা একটু বুঝে শুনে দিলেই হবে।
-আজকাল শহরে ভালো মাটি পাওয়া যায় না। আবার কোন সার কতটুকুন দিলে কী হবে না হবে, সেটাও অল্প পরিসরে বাগান করতে গিয়ে মনে রাখা বিরাট মুশকিল। সমস্যা সমাধানের জন্য সহজ উপায় অবলম্বন করুন। মাটির সাথে সমান সমান পরিমাণ জৈব সার হাত দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। এই মাটিই ব্যবহার করুন লাল শাকের বীজ বপনের জন্য। মনে রাখবেন, আপনি বাণিজ্যিক চাষ করছেন না, নিজে খাবার জন্য করছেন। তাই চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে বসার কোন প্রয়োজন নেই।
-পাত্রে মাটি ভরে নিন। ঝুরঝুরে, সার মেশানো মাটি। অন্তত ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পুরু করে মাটি দিন। এর বেশি প্রয়োজন হবে না।
-মাটি হালকা হাতে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে নিন। তারপর পাতলা করে লাল শাকের বীজ ছিটিয়ে দিন। লাল শাকের বীজ খুব ছোট ছোট হয়, সেকারণে অনেকেই খুব ঘন করে বীজ ছেটানোর ভুল করে থাকেন। কিন্তু বেশি বীজ হলে চারা ঘন করে উঠবে আর তাতে সকল চারা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে না। বড় ছড়ানো একটি পাত্রে হাফ চা চামচ থেকে এক চামচ বীজ দিলেই হবে।
-বীজ ছেটানো হলে হালকা করে সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিন। পানি দিন এবং পাত্রের মুখটা সম্ভব হলে একটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিন। পলিথিনে কয়েকটি ফুটো করে দিতে ভুলবেন না।
-পাত্রটি আলো-বাতাস আছে এমন স্থানে রাখুন, কিন্তু করা সূর্যের আলোর নিচে রাখবেন না। প্রতিদিন একবার পলিথিন সরিয়ে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিন। ৫ থেকে ১০ দিনের মাঝেই একটি/দুটি চারা গজাতে শুরু করবে। চারা গজানোর পর সূর্যের আলোতে রেখে দিন।
-এরপর আর করার মতন কিছুই নেই। চারাগুলোকে বড় হতে দিন। বেশি ঘন হয়ে জন্মালে কিছু চারা তুলে হালকা করে দিন। রোজ একবার পানি দেবেন। বেশি না, মাটি ভেজানোর মতন। কিন্তু খুব কমও না। শাক বড় হবার সাথে সাথে পানির চাহিদা বাড়বে। প্রতিদিনের রান্নার চাল-ডাল ধোয়া পানি জমিয়ে রেখে সেটাও লাল শাক সহ বাগানের সকল গাছে দিতে পারেন।
 
বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একসাথে শাক সংগ্রহ না করে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করুন। কারণ যে বীজগুলো আগে ফুটবে, সেই শাকগুলো আগে বড় হয়ে যাবে। এভাবে সারাবছরই খেতে পারবেন সুস্বাদু লাল শাক।
 
প্রিয় লাইফ/গোরা