
প্রাচীন মিসর ছিল গণিতের উর্বর ক্ষেত্র। ছবি: লেখক
গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৩১
(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের ইতিহাস আমরা যেমন খুব সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি, গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস বা গণিত সভ্যতার ইতিহাস আমরা সেভাবে বলতে পারব না। কারণ আজ থেকে ঠিক কত বছর আগে মানুষ হিসাব করতে শুরু করে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলা প্রায় অসম্ভব । তবে এটা ধারণা করা যায় যে, মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই হিসাব-নিকাশ করতে পারত। যদিও তখনো সংখ্যা আবিষ্কার হয়নি।
সভ্যতার আদিলগ্নে মানুষ এখনকার মতো বড় সংখ্যা ব্যবহার করত না বা ব্যবহার করার প্রয়োজনও হতো না। সংখ্যার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় পাপুয়া নিউগিনির কয়েকটি গ্রামে। মনোবিজ্ঞানী জেয়ার্ড ডায়মন্ড তার একটি বইয়ে বর্ণনা করেন যে, নিউগিনির লোকজন এক সংখ্যাটি বলার জন্য (iya) ইয়া এবং দুই বলার জন্য (rarido) রারিডু ব্যাবহার করত । এভাবে তিন বলার জন্য রারিডু ইয়া, চার বলার জন্য রারিডু রারিডু এবং পাঁচ বলার জন্য রারিডু রারিডু ইয়া ব্যবহার করত। তখন মানুষ লিখিতভাবে হিসাব করতে জানত না।
আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে, ক্রমে ক্রমে মানুষ যখন পশুপাখি পালন ও কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করল, তখন তারা দাগ কেটে সংখ্যা গণনা করত। তারা কাদামাটির ব্লকে দাগ টেনে তাদের জমিজমা, ফসল বা পশুর হিসাব নিকাশ করত।
আদিম মানুষ পরপর চারটি খাঁড়া দাগ দিয়ে পঞ্চম দাগটি কোনা করে প্রথম চারটি দাগকে কেটে দিত। এই পদ্ধতিতে হিসাব করাকে ট্যালি বলে, যা এখনো ব্যবহার করা হয়। ফলে পাঁচটি করে দাগ গণনা করতে কম সময় লাগত ও ভুল কম হতো। কিন্তু ক্রমে মানুষ বুঝতে পারল যে, এই পদ্ধতিতে বড় কোনো সংখ্যা লেখা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং এতে হিসাব করতেও অনেক সময় বেশি লাগে।
দাগ টেনে হিসাব করার বেশ ভালো নিদর্শন পাওয়া যায় প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার বসবাসকারী সুমেরীয়দের থেকে। তারা চোঙাকৃতি কাদামাটিতে হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণ করতেন ।
শুধু সাধারণ হিসাব-নিকাশই নয়, তারা জমি-জমার হিসাব নিকাশ এবং বিভিন্ন জ্যামিতিক হিসাবও করতেন, যা তাদের নানাবিধ নিদর্শন থেকে পাওয়া যায়।
খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে মিসরীয়রা সংখ্যা পদ্ধতির উন্নতি সাধন করেন। তারা প্রতি ১০ গুণোত্তরের জন্য একটি করে প্রতীক ব্যাবহার করতেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা যেমন একক, দশক, শতক, হাজার ব্যবহার করি।
আদিম মানুষ একক বোঝাতে লম্বা লাইন টানত, দশক বোঝাতে এক কুণ্ডলি দড়ির অর্ধেক, শতক বোঝাতে পুরো এক কুণ্ডলি দড়ি, হাজার বোঝাতে পদ্মফুল, অজুত বোঝাতে মধ্যমা আঙুল, লাখ বোঝাতে ব্যাঙ ব্যবহার করত। তাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। তাই মিসরীয়রা নিযুত বোঝাতে তাদের ঈশ্বর হেহর (Heh) প্রতিমূর্তি ব্যবহার করত।
হেহর প্রতিমূর্তি
খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ২৩০০ বছর আগে ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়ও সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব হয়, যা ব্যাবিলনীয় সংখ্যা নামে পরিচিত । তারা ৬০ ভিত্তিক গণনা পদ্ধতিতে গণনা করতেন ।
ব্যাবিলনীয় সংখ্যা। ছবি: সংগৃহীত
এখানে বলে নেওয়া ভালো, ব্যাবিলনীয়রা কিন্তু সুমেরীয় ও আক্কাডীয়দের বিভিন্ন হিসাব পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। তারা চাষাবাদ থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে গণিত ও বিজ্ঞানের ব্যবহার শুরু করেন।তারা মাটির তৈরি ফলকে উদ্ভাবিত পদ্ধতি সংরক্ষণ শুরু করেন।
এটি হলো ব্যাবিলনীয়দের চাষ করার পদ্ধতিগত ফলক। ছবি: সংগৃহীত
আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, তারা ২৪ ঘণ্টায় দিন, ৬০ মিনিটে ঘণ্টা আর ৬০ সেকেন্ডে মিনিট ধরে হিসাব করত।
প্রাচীন রোমানরাও নিজস্ব সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, যা রোমান সংখ্যা নামে পরিচিত। রোমানরা অন্যান্য দিকে অনেক অগ্রগতি সাধন করলেও গণিত শাস্ত্রে তাদের তেমন উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। তারা শুধু সাধারণ হিসাব-নিকাশের জন্য গণিত ব্যবহার করতেন। বিশুদ্ধ গণিতের কোনো ব্যবহার তাদের মধ্যে ছিল না।
মায়া সভ্যতার লোকেরা খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০০০ বছর থেকেই মধ্য আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। ধারণা করা হয়, এটিই ছিল তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও সাংস্কৃতিকভাবে গতিশীল একটি সমাজ। মায়া ও অন্য মেসো-আমেরিকানরা ২০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন শুরু করে। সম্ভবত হাতের ও পায়ের আঙুলের ওপর ভিত্তি করে তারা এই সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেন।
প্রিয় বিজ্ঞান/আজহার
- ট্যাগ:
- বিজ্ঞান
- গণিত ও গণনা