
অনলাইনে রংপুরগামী ডিপজল পরিবহনের এসি বাসের টিকিটের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৮০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ঈদযাত্রায় অনলাইনে ১০০০ টাকার টিকিট ১৮০০ টাকা!
আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১২:৩৮
(প্রিয়.কম) ঢাকা থেকে রংপুরগামী এসি বাসের অনলাইনে টিকিটের দাম দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে। বাস কর্তৃপক্ষও জানে। তারা অবলীলায় স্বীকারও করছেন। কাউন্টারে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ঈদ যাত্রাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে রংপুরগামী এসি বাসের টিকিটের মূল্য এক হাজার থেকে ১২শ টাকা। কিন্তু অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা। ঈদকে সামনে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি টাকা আদায়ের জন্যই এ কাজ করছেন পরিবহন মালিকরা।
ঢাকা থেকে রংপুরগামী সব এসি বাসের ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। অনলাইন টিকিট বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান সহজ.কম-এ গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে রংপুরগামী ডিপজল পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া এখন ১৮শ টাকা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাড়া ১ হাজার। নাবিল এসি বাসের এখন ভাড়া ২ হাজার টাকা। কিন্তু অন্য সময় ভাড়া ১২শ টাকা। হানিফের অবস্থাও একই।
এর আগে রাস্তা খারাপের অজুহাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলায় ঈদযাত্রায় বাসের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন মালিকরা। যাত্রীরাও বরাবরের মতো অভিযোগ করে আসছেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ‘বৈধতা’ নিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজিম জারিব ঢাকা থেকে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কেটেছেন। তার কাছ থেকে এক হাজার টাকার টিকিটের দাম নেওয়া হয়েছে ১৮শ’ টাকা। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৭ আগস্ট বাড়ি যাব বলে ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারে গেলাম। কাউন্টার থেকে বলা হলো টিকিট নেই। কিন্তু অনলাইনে পাবেন। পরে সহজ.কম-এ খোঁজ নিয়ে জানলাম, টিকিট আছে। কিন্তু এক হাজার টাকার টিকিটের দাম লেখা আছে ১৮শ টাকা। বাড়ি যেতে হবে তাই ৮০০ টাকা বেশি দিয়েই টিকিট কেটেছি।’
এত বেশি দামে টিকিট কেন কিনলেন প্রশ্ন করলে তামিজ বলেন, ‘এর বাইরে অন্য কোনো অপশন নেই। কারণে সবাই এখন টিকিটের দাম বেশি রাখছে। হানিফের এসি বাসে রংপুর অব্দি টিকিটের দাম ১২শ টাকা হলেও এখন নিচ্ছে ২ হাজার টাকা। বাস মালিকরা জানে কীভাবে মানুষেকে ফাঁদে ফেলতে হয়।’
সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বাস মালিকরা ইচ্ছেমতো টিকিটের দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নওগাঁর মাহমুদ প্রিন্স মানিক। তিনি বলেন, ‘এবার উত্তরাঞ্চলে বাসের টিকিট যেন সোনার হরিণ। আবার পাইলেও ডাবল টাকা গুনতে হচ্ছে। এই লীলা দেখার কেউ নেই। সরকারও নিশ্চুপ। বিষয়গুলো ভাতবেই অবাক লাগে!’
টিকিট বিক্রিকারী অনলাইন প্রতিষ্ঠান সহজ.কম-এ মূল্য তালিকা।
শুধু এসি বাস নয়, নন-এসি বাসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালী যাওয়ার জন্য হিমালয় ও আল-বারাক বাস ৩২০ টাকার টিকেট এখন ৬০০ নিচ্ছে। প্রত্যেক ঈদের ঈদের ১ সপ্তাহ আগ থেকেই এমন বাণিজ্য শুরু হয় বলে অভিযোগ করেছেন আব্দুল্লাহ আল-মামুন রুবেল।
সিরাজগঞ্জে স্বাভাবিক ভাড়া দুইশত ৫০ টাকা হলে এখন ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’ চারশ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মো. এ. কে হৃদয়। সিলেট থেকে দিনাজপুরে হানিফ বাস ৯০০ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার জায়গায় ১৩০০ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুশফিক গ্লাজমান। চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনা থেকে রাজশাহীগামী শ্যামলী পরিবহনের ভাড়া ৯০০ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এখন নেওয়া হচ্ছে ১৩০০ টাকা।
কেন বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান কাউন্টার ম্যানেজার মুহাম্মদ ফরিদ তালুকদার প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ঈদ আসলে এমন হয়। করার কিছু নেই। মালিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আমরা তাই করছি। আরও কিছু জানার থাকলে মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন।’
ঈদের সময় বেশি ভাড়া নেওয়া অলিখিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রংপুরের নাবিল কাউন্টারে যোগাযোগ করলে রাব্বী নামের একজন বলেন, ‘এটা এখন নিয়ম। ঈদের সময় আমাদেরও তো বোনাসের দরকার আছে। এখন শুধু নাবিল নয়, হানিফ, শ্যামলী, এস. আর সবাই বেশি নেয়।’
ডিপজল পরিবহনের ঢাকা শ্যামলী কাউন্টার থেকে বলা হয়, ‘আমাদের টিকিট শেষ। এখানে কোনো টিকিট নেই। সব টিকিট সহজ.কম-এ আছে। আপনার টিকিট লাগলে ওখানে যান। অনলাইনের টিকিট করুন।’
ওই কাউন্টার থেকে দাবি করা হয়, ‘আমরা টিকিটের দাম জানি না। অনলাইনে গেলে জানতে পারবেন।’
তিনি কয়েক মিনিট কথা বললেও তিনি নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হননি।
তবে টিকিট বিক্রিকারী অনালাইন প্রতিষ্ঠান সহজ.কমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথ দাবি করেন, ‘টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় বাস মালিকরা। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। আমরা শুধু বিক্রি করি। ভাড়া বেশি না কম সেটা বলতে পারব না।’