
ছবি : সংগৃহীত
জন্মদিনে জ্বালানো মোমবাতিকে নেভানো হয় কেন?
আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭, ১২:৪০
(প্রিয়.কম) এ নিবন্ধে জন্মদিনে পলিত বিষয়সমূহের মধ্যে আন্তবৈপরিত্বমূলক ৪টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বার্থডে বা জন্মদিন পালন আমাদের দেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের দেশে শহর ছাড়িয়ে এখন প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও বার্থডে বা জন্মদিন উদযাপন লক্ষ্য করার মত বিষয় হয়ে উঠেছে। নিজেদের কিংবা সন্তান সন্তুতিদের জন্মদিনকে ঘিরে নানা আয়োজন করা হয়ে থাকে। কাছের দূরের সামর্থ অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী, অফিসের বা ব্যবসায়িক সহকর্মীদেরকে দাওয়াত দিয়ে ভাল খাবারের আয়োজন করে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে উদযাপন করা হচ্ছে এ সংস্কৃতিকে। কখনও কখনও উচ্চশব্দে গান-বাজনারও লক্ষ্য করা যায়। যার জন্য আয়োজন করা হয়ে থাকে তাকেও সাজানো হয় নিজেদের মতো করে। হোক সে, ১ বছরের বাচ্চা কিংবা ১০০ বছরের বৃদ্ধ। উৎসবকে উৎসব মুখর করতে কতো উপায়ই না ব্যবহার করা হয়। সেসবগুলো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। বরং বিশেষ দুই একটা বিষয়ে সকলের দৃষ্টিভঙ্গির প্রত্যাশা নিয়ে এই লেখা।
প্রথমত : বার্থডে বা জন্ম দিন নিয়ে একটা জিজ্ঞাসা আছে। আর তা হলো, সবার জন্মই কি দিনে হয়েছে? যদি তা না হয়; তাহলে জন্ম রাত আমরা কেন বলি না। এর পিছনে অনেক যুক্তি থাকতে পারে। তারমধ্যে অন্যতম যুক্তি হতে পারে- রাতকে কল্যাণকর মনে হয় না। আর দিনকে পজিটিভ মনে করা হয়। তাই জন্ম যত গভীর রাতেই হোক না কেন; তাকে আমরা দিন হিসেবেই পালন করতে চাই। কিন্তু এটা কেন ভেবেছেন কি কখনো একবার?
দ্বিতীয়ত : অনুষ্ঠানের সময় রাতকেই নির্ধারণ করা হয় বা রাতেই সাধারণত বার্থডে বা জন্মদিন পালন করা হয়। প্রশ্ন হলো কেন? কেন এটা দিনের বেলায় পালন করা হয় না? (দিনের বেলায় জন্মদিন পালন করা হয়েছে এরকম আমি শুনি নাই কিংবা দেখিও নাই) জন্মদিনটাকে পজিটিভ হিসেবে নিলে প্রোগ্রামটা দিনে করলে আরো কল্যাণ নিয়ে আসতে পারতো বলে মনে হয়। কারণ, জন্মদিন উদযাপনকে উপলক্ষ্য করে রাতের বেলায় যেসব কার্যক্রম আত্মীয়-স্বজনরা করে থাকে; তাতে ফ্রি হিসেবে বেহায়াপনাও যুক্ত হয়। যা মোটেও বোধগম্য নয়।
তৃতীয়ত : আরেকটা প্রশ্ন থাকে কেক কাটা এবং মোমবাতি নেভানো নিয়ে। কেক কাটা এবং মোমবাতি নেভানোর সংস্কৃতি জন্মদিনে কীভাবে এসেছে তা বিস্তারিত এবং ঐতিহাসিক আলোচনার বিষয়। কেক কাটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না তুললেও মোমবাতি নেভানো নিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে। একটু সুক্ষ্ণভাবে খেয়াল করুন। আপনার সন্তানকে দিয়ে কি পৃথিবী আলোকিত করতে চান না অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে চান? যদি আলোকিত করতে চান তাহলে জন্মদিনের সংস্কৃতিতে মোমবাতি না নিভিয়ে বরং মোমবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করুন। তাহলে অসংখ্য খারাপ দিকের মধ্যে ঐ ছোট্ট শিশুটির মনস্তাত্ত্বিক ভিত গড়ে উঠবে এবং তার মাঝে মোমবাতি জালানোর সংস্কৃতরি প্রভাবে পৃথিবীকে আলোকিত করার মানসিকতা তৈরি হবে। এভাবে আলোকিত করার প্রত্যয় তার মধ্যে গড়ে উঠেবে, বা উঠতে পারে। ১০০ বছরের বৃদ্ধটিও একবার জীবনের স্মৃতিমন্থর করে নিতে পারে কতটুকু আলোকিত করতে পেরেছে সে পৃথিবীকে? কী করার উচিত ছিল তার? এখনও সে কী করতে পারে?
চতুর্থত : এই আয়োজনটি টাকার অপচয় ও অন্যের লজ্জার কারণ। টাকার অপচয় যে সবার বেলায় প্রজোয্য তা নয়। তবে অনেকের বেলায় প্রজোয্য। কিন্তু অন্যের জন্য এটা অধিকাংশের বেলায় লজ্জার কারণ হয়ে যায়। একবার খেয়াল করুন, আপনার টাকা আছে খরচ করার জায়গা নেই। আর আপনার দুইটি সন্তানের জন্মদিন বছরের ভিন্ন ভিন্ন দিন উদযাপন করে থাকেন। এখন আপনার যে কাছের আত্মীয়টি আপনার মতো অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নয়; সে যখন আপনার বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী যারা দামী উপহার হাতে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে তাদের সাথে আপনার ঐ আত্মীয়টি অংশগ্রহণ করাটা কতটা বিড়ম্বের কারণ হতে পারে চিন্তা করে দেখেছেন। বিবাহ শাদী জীবনে একবার হতো, কিন্তু জন্মদিন তো প্রত্যেক বছর। সুতরাং প্রত্যেক বছরেই কি আপনি কারো কারোর লজ্জা পরার কারণ হচ্ছেন না?
উপরোক্ত আলোচনাটা শুধু বর্তমান সংস্কৃতির অবস্থানের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন ইসলামী শরীয়তে কী জন্মদিন পালন করা বৈধতা আছে? এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কিংবা কোনো সহিহ হাদিসের কোথায় আমরা পাই না যে তা হারাম বা নিষিদ্ধ। তবে, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনে এটা আমরা প্রতক্ষ্য করি না এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে কিংবা বিষয়গুলোতে শিরক, বিদআত ও অশ্লীলতার সম্ভাবনা বিদ্যমান তাই ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ এমন অনুষ্ঠান উদযাপন থেকে নিজেদেরকে নিরাপদে রাখতে উৎসাহিত করেছেন। বিশেষ করে, বর্তমানে যেভাবে এ দিনকে উদযাপন করা হয় তা ত্রটিপূর্ণ এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বর্জনীয়। তবে, আমার ব্যক্তিগত মতে এটি একটি দুনিয়াবী কাজ বা বিষয় হিসেবে ধরে, যেহেতু এটা বর্তমান বিশ্বের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এবং ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে উপরোন্ত এটাকে কোনভাবেই হারাম বা নিষিদ্ধ বলা যাচ্ছে না তাই বিকল্প কিছু চিন্তা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে- ১. জন্মদিন পালনে কোনো কল্যাণ, না পালনে কোনো অকল্যাণ বয়ে আনবে এমনটা মনে না করা। ২. জন্ম যে সময়ে হবে সেসময়কেই গুরুত্ব দেয়া এবং তাকে অনুসরণ করা। ৩. যেহেতু ব্যক্তির জন্ম তার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনদের সুখের কারণ হয়েছিল এবং হয়েছে তাই এর শুকরিয়া আদায় করা। অর্থাৎ আল্লাহর প্রশংসা করা। ৪. এ দিনে এমন কিছু কাজ হাতে নেয়া যাতে শিশু কিংবা বৃদ্ধটি জীবনের সত্যিকারের অর্থ অনুধাবান করতে পারে। অনুধাবন করতে পারে ইহজাগতিক জীবনের উদ্দেশ্য এবং পরকালীন জীবনের পরিস্থিতি। সে তার জীবনকে এভাবে গঠন করতে পারবে যাতে চুড়ান্ত বিচারে তার ইহজাগতিক জন্মদিন সত্যিই সুখের ও কল্যাণময় ছিল। ৫. যে কোনো অশ্লীলতাকে পরিহর করা।
পরিশেষে একটি কথা বলব, যদি সম্ভব হয় তাহলে এ ধরনের অনুষ্ঠান উদযাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাতেই বরং অসংখ্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, এসব কালচার ও ট্রেন্ডের মাধ্যমে অসংখ্য ভুল ও অন্যায় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর ইসলামী শরীয়তের একটা উসূল হলো- মুকাদ্দামাতুল হারামে হারামুন। হারাম কাজের সম্ভাবনা আছে এমন সব কাজের সূচনাও হারাম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।
লিখেছেন ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক
প্রিয় ইসলাম/গোরা