
ভারতের গড়িয়ার কাছে বোড়াল গ্রামের বর্তমান অবস্থা। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বর্তমানে কী হালে আছে পথের পাঁচালীর নিশ্চিন্দিপুর?
আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:২২
(প্রিয়.কম) বাংলা ভাষার ধ্রুপদী জীবনীমূলক একটি উপন্যাস পথের পাঁচালী। এর রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯২৮ সালের ধারাবাহিকভাবে একটি সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। অতঃপর পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। এর ২৬ বছর পর ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালি অবলম্বনে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র, যা নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এটিই ছিল সত্যজিৎ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র।
যারা উপন্যাসটি পড়েছেন, তারা জানেন যে- নিশ্চিন্দিপুর নামক বাংলার একটি গ্রামে অপু, দুর্গা এবং তাদের পরিবারের জীবনযাত্রা নিয়ে রচিত হয়েছিল উপন্যাস পথের পাঁচালী। অপুর বাবার নাম হরিহর রায়। তিনি পেশায় ছিলেন একজন পুরহিত। কিছুটা পড়াশোনা জানায় অপুর বাবা ভালো কিছু যাত্রাপালা লিখে একটু বেশি রোজগার করার স্বপ্ন দেখতেন। নিতান্ত সরল সিধা মানুষ বিধায় অপুর বাবাকে মানুষ ঠকিয়ে নিত। এছাড়াও এ উপন্যাসে রয়েছেন হরিহরের দুঃসম্পর্কের বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুন।
অপুর মায়ের নাম সর্বজয়া এবং দিদির নাম দুর্গা। মা সর্বজয়া পুরো দরিদ্র সংসারের দেখভাল করেন। দুর্গা দিদি গ্রামের প্রতিবেশিদের বাগান থেকে ফল ফলাদি চুরি করে এনে ইন্দিরা ঠাকরুনকে নিয়ে ভাগাভাগি করে খায়। অপুর সঙ্গে দুর্গা দিদির খুব ভাব। কখনো দুই ভাইবোন মিলে নিশ্চিন্দিপুরের কোনো এক গাছতলায় বসে থাকে, কখনো মিঠাইওয়ালার পেছনে ছোটে, সন্ধ্যাবেলায় দূরের ট্রেন যাওয়ার শব্দ খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে অপু ও দুর্গা। এই একটি পরিবার ও অপুকে কেন্দ্র করেই রচিত হয় পথের পাঁচালি উপন্যাস, যেখানে লেখক বিভূতিভূষণ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের চিত্র এমনভাবে অঙ্কন করেছেন, পাঠক যেন উপন্যাসটি পড়ার সময় পুরো নিশ্চিন্দিপুরকে চোখের সামনেই দেখতে পায়।
সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণকালীন নিশ্চিন্দিপুর হিসেবে বেছে নেন ভারতের গড়িয়ার কাছের বোড়াল গ্রামকে। চলচ্চিত্র নির্মাণ হওয়ার পর কেটে গিয়েছে ৬২ বছর। উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে সত্যজিৎ কিন্তু বর্তমানে কেমন আছে নিশ্চিন্দিপুর কল্পিত বোড়াল গ্রামটি?
সত্যজিতের মূর্তি। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
নিশ্চিন্দিপুরের মতো একটি গ্রাম খুঁজতে সত্যজিৎ রায়কে সহায়তা করেছিলেন বংশী চন্দ্রগুপ্ত নামক একজন শিল্প নির্দেশক। বোড়াল গ্রামের মধ্যে রেললাইন ছাড়া প্রায় সব কিছুই ছিল নিশ্চিন্দিপুরের মতোই। উপরের ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি দেখা যাচ্ছে। এর প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়িটিকেই হরিহর-সর্বজয়ার কুটির হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সত্যজিৎ।
অপু দুর্গার বাড়ি। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বোড়াল গ্রামে বসবাসকারী মুখোপাধ্যায় পরিবারের বাড়িটিতে বসবাস করেছে পথের পাঁচালী উপন্যাসের চরিত্ররা। বর্তমানে এই বাড়িটির সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এই বাড়িটি ঘিরে রয়েছে আন্তর্জাতিক কৌতূহল।
বাড়িতে ঢোকার দরজা। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বাড়িটির ভাঙাচোরা একটি কক্ষকে ব্যবহার করা হয়ছিল ইন্দির ঠাকুরের ঘর হিসেবে। বাকি অংশ তৈরি করে নিয়েছেন সত্যজিৎ রায় নিজেই। বর্তমানে সেখানে একটি পাকাবাড়ি গড়ে উঠেছে।
বাড়ির উঠান। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির উঠান। এখানেই কালজয়ী কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন পরিচালক।
তুলসীমঞ্চ। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
চলচ্চিত্রের অনেক অংশেই দেখা গিয়েছে তুলসীমঞ্চ। কিন্তু বর্তমানে সেই মঞ্চ ছেয়ে আছে ঝোপ ঝাড়ে।
শুকিয়ে যাওয়া পুকুর। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
এ পুকুরটি মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছেই অবস্থিত। এখানেই অপু তার দিদি দুর্গার পুতির মালা ফেলে দিয়েছিল। এছাড়াও ইন্দির ঠাকরুনের অন্ত্যেষ্টির পর এখানেই স্নান করেছিলেন হরিহর। এখন সেই পুকুরটি কেবলই কচুরিপানায় পূর্ণ।
মন্দির। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
হরিহর যখন কাজের খোঁজে নিশ্চিন্দিপুর ছাড়ছিল, তখন এই মন্দিরের প্রার্থনা করছিল। এ মন্দিরে এখনও পুজা-অর্চনা চলে। মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ১৬৯৮ সালে।
বকুল গাছটি। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বকুল গাছটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ভারি বর্ষণের সময় অপু তার দিদি দুর্গাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিনের বকুল গাছটির বর্তমান দশা হচ্ছে এই।
বাঁশবন। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
এ বাঁশবনটি নিশ্চিন্দিপুরের প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলতে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। এ বাঁশবনে ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যু দৃশ্য আজও মানুষকে করে তোলে স্মৃতিমেদুর।
ভাঙা দেওয়াল। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বংশী চন্দ্রগুপ্ত ও সত্যজিৎ রায় রায় এই ভাঙা বাড়িটি পুনর্নিরমান করেচিলেন হরিহর রায়ের বাড়ি হিসেবে দেখানর জন্য। শ্যাওলা ধরা ভাঙা পাচিল ছিল না তখন। তাই পাঁচালীসহ ভেতরের রান্না ঘর ও দরজার সেট তৈরি করে নিতে হয়েছিল সত্যজিৎ রায়কেই।
উঠানে জবা গাছ। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বাড়ির উঠানে এখনও রয়েছে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত জবা গাছটি৷
তৎকালীন শুটিংয়ের কিছু গাছপালা। ছবি: ডয়েচ ভেলে থেকে সংগৃহীত।
বংশী চন্দ্রগুপ্ত বোড়ালের এই মুখোপাধ্যায় বাড়ির খোঁজ পেয়েছিলেন এক বন্ধুর মারফত। এ বাড়ির অনেক গাছপালাই সেই শুটিংয়ের সাক্ষী হয়ে আছে।
সূত্র: ডয়েচ ভেলে।
প্রিয় বিনোদন/গোরা
- ট্যাগ:
- জটিল
- সত্যজিৎ রায়
- পথের পাঁচালী
- ভারত