
আরেফিন রুমি। ছবি: ফেসবুক
গানে ফিরছেন আরেফিন রুমি
আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪৮
(প্রিয়.কম) আলস্যের চাদর মুক্ত করেছে এক শীতের সকাল। সেদিনই ভিন্ন এক জগতে নিজের আবির্ভাবের উপলব্দি করেন সংগীতশিল্পী আরেফিন রুমি। কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে ভিন্ন এক আকাশে নিজেকে জানান দেন। পাতা ঝরে যাওয়ার গল্পেও আসে আমূল পরিবর্তন। কোমল সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো দেখে নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবেন। ফের যখন গাছে নিগূঢ় ভালোবেসে পাতা এসেছে, সে দৃশ্যই মুক্তোদানার মতো রুমিকে ঝলমল করে জেগে উঠতে সহযোগিতা করেছে।
ঠিক দেড় বছর পর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে গানে ফিরেছেন আরেফিন রুমি। এখন থেকে আগের মতোই নিজেকে গানের জগতে ব্যস্ত রাখতে চান। তার ভাষ্য, ‘এটাকে এক হিসেবে আমার প্রত্যাবর্তন বলা যায়। আমি গান থেকে দূরে ছিলাম। আবার শুরু করেছি।’
গান থেকে দূরে ছিলেন, কখনো খারাপ লাগে নাই? প্রশ্নটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন।
এরপর বললেন, ‘না লাগে নাই। আমার মনে হয়েছে ট্যুরে যায় না মানুষ? এই আঠার মাস সময়টা আমার জন্য একটা ট্যুরের মতো ছিল। যে যে ধর্মের হই না কেনো সে ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা জরুরি। আমার যে বয়স এই সময়ে আত্মশুদ্ধি বলেন আর মানসিকভাবে পরিবর্তনের কথাই বলেন, এই পরিবর্তনটা আমার জন্য জরুরি ছিল। এই সময়ে আমার মাথায় অনেক কাজও আসছে, সুর আসছে, কথা আসছে। পরে আবার ইবাদতের যে টান, সে কারণে আবার পারতাম না। তাই মনের চাওয়টাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’
তবে এই জার্নিতে কী শিখলেন? ‘নিজেই নিজের শাসক হওয়া। বাস্তবতা মেনে পথ চলা। ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি। আমার মনে হয় এই সময়গুলো আমার জীবনের সেরা সময় হয়েই থাকবে’ বললেন রুমি।
আপনি যখন একটু একটু করে গান থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন, তখন তো আপনি বেশ জনপ্রিয়। মনে হয়নি জনপ্রিয়তায় ভাটা পরবে? রুমি স্পষ্টতই জানান, তার তেমন কিছু মনে হয়নি।
আর বলেন, ‘যদি নিয়মিত কেউ কাজ না করে, একটা গ্যাপ তো তৈরি হয়। তবে রুমিকে ভুলে গেছে, এমন কেউ নাই। আমার মনে হয়েছে, আমি যখন ছোট বেলায় জেমস ভাইয়ের গান শুনতাম তখন একরকম লাগত।
এখন কিন্তু তার নতুন কোনো গান বের হচ্ছে না। কিন্তু পুরনো গানগুলো এখনো ভালো লাগে। নতুন কিছু বের হলেও ভালো লাগে। কারণ আমি তাকে ভালোবাসি। শৈশব থেকেই তার গানের প্রতি আলাদা ভালোলাগা আছে। ওইটা যেহেতু মিস হয় না। আমার ধারণা আমার গান যারা শুনেছে তাদেরও মিস হয় না। ভোলার কিছু নাই।’

আরেফিন রুমি গত দেড় বছর ঢাকা থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা জেলার গালিমপুর ইউনিয়নে অবস্থান করেছিলেন। গতকাল ঢাকায় ফিরেছেন। তার ভাষায়, ‘জার্নি’ শেষ করেই এই চিরচেনা শহরে ফিরেছি’।
এই সময়গুলোতে গান শোনা হয়েছে? রুমি বলেন, ‘আমার মেমোরিতে আপাতত কিছুই নাই। আমি চেষ্টা করেছি গান শোনার। আমি যে যে কাজগুলো করেছি, তা শুনতাম। আমি যদি দিনে দুই ঘণ্টা সময় পেতাম ঘুমানোর জন্য তখন আমি ওই দুই ঘণ্টা মনে হতো, আমি একটু গান শুনি। আর যখন গান শুনতাম তখন আমার খুব ভালো লাগত।’
‘প্রিয়তমা’, ‘খুঁজে খুঁজে’, ‘পলকে পলকে’, ‘ভালোবাসি তোমায়’, ‘বলো না কোথায় তুমি’, ‘তুমিহীনা’, ‘ভেজা ভেজা হাওয়া’, ‘বাতাসে কান পেতে থাকি’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন আরফিন রুমি। তাই প্রশ্ন এসেই যায় গানে ফিরছেন কবে?
‘প্রত্যেকের একটা জায়গা আছে, যার যার কাজের অবস্থানের দিক থেকে। আমার জায়গা অনুযায়ী আমার কাজ কম হয়েছে। আমার স্থান অনুযায়ী যদি কোনো জায়গা আসে, আমি তা করব। আর আমার সাথে কারো লেনাদেনা, দেনদরবার, ঝামেলা নেই। আমি আগে যে রকম কাজ করতাম এখনো করব। এ বিষয়গুলো এখন আমাকে ভাবায়’ যোগ করেন রুমি।
গান থেকে যে সময়টা দূরে ছিলেন তখন একটা গুজব রটেছিল, আপনি গানে ফিরলেও শুধু ইসলামিক গানই গাইবেন। এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্বান্ত নিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘এটা হওয়ার কারণ আমি নিজেই। কারণ আমার কাছে তখন মনে হতো আমি তখন শুধু এ ধরনের গানই গাই। গত ১৮ মাসে আমার অনেক কিছুই মনে হতো। যখন আস্তে আস্তে আমার সময় শেষ হয়েছে তখন মনে হয়েছে ধর্ম-কর্ম দুটিকেই যদি আকড়াইয়া না ধরি তাহলে কিছুই হবে না। তবে এখন আমি আমার সে সিদ্বান্ত থেকে সরে এসেছি।’
আপনি ফেসবুকে লিখেছিলেন আপনি আর গান গাইবেন না। তখন তো অনেকেই অবাক হয়েছে। এই বোধটা একজন শিল্পীর ভেতরে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কষ্ট থেকেই জন্ম নিয়েছে? এর কারণও জানালেন।
এ বিষয়ে রুমির ভাষ্য, ‘এটা হওয়ার কারণ আছে। যখন আমি ইবাদত করতাম শীতের সময়ে। একদিন খেয়াল করে দেখলাম সব গাছের পাতা পড়ে গেছে। শুধু ডালগুলো আছে। ওই টাইমে আমিও গান থকে বেশ দূরে।
তখন আমার মনে হয়েছে আমি ভালোই আছি। আমি মনে হয় আর গান গাইব না। সবাইকে জানিয়ে দিই। তাহলে আমাকে কেউ আর ডিস্ট্রার্ব করবে না। তখন সব করতাম কিন্তু মজা পেতাম না। তখন আমার মনে হয়েছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিই। কারণ মানসিকভাবে আমার আরও স্ট্রং হওয়া উচিত। আস্তে আস্তে আমার মনটা শান্ত হইছে। যখন গাছের পাতা উঠল তখন আমার মনে হয়েছে, আমি আবার জেগে উঠি। আগে আমার কাজ ছিল ফার্স্ট প্রায়ারোটি।
কিন্তু এখন ধর্মটাই ফার্স্ট প্রায়ারোটি। আমার কাছে মনে হয় এটা আমার একটা সফর ছিল। কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত না। ১৮ মাসের সফর শেষ। এটা জাস্ট একটা জার্নি। জার্নিতে গেছি আর নানান কিছু শিখে আসলাম।’
প্রিয় বিনোদন/গোরা
- ট্যাগ:
- গান
- তারকার জীবন
- বিনোদন
- ফিরেছেন
- গান
- আরেফিন শুভ
- আরেফিন রুমি
- ঢাকা