
বিএনপির দলীয় লোগো
১/১১: এখনো দলের বাইরে বিএনপির বহু সংস্কারপন্থী
আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:৪০
(প্রিয়.কম) বিএনপির আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে অন্য অনেকের মতো সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এর পর মূল স্রোত থেকে দূরে সরে গেলেও দলে ফিরতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এ অবস্থাতেই ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। কিন্তু এর পরও দলে ঠাঁই হয়নি তার।
ওয়ান-ইলেভেনের এক দশক পরও ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিত সাখাওয়াতের মতো অনেক নেতা দলে ভিড়তে পারছেন না। এমন বাস্তবতায় ইচ্ছা সত্ত্বেও আগামী সাধারণ নির্বাচনে তারা বিএনপির হয়ে আদৌ অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।
গত বছর সাক্ষাতের পর সাখাওয়াত হোসেন বকুল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়া তাকে দলের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন।
সাখাওয়াতের ওই বক্তব্যের পরও দলের কোনো কার্যক্রমে দেখা যায় না তাকে। সংস্কারপন্থী অন্যদের অবস্থাও তার মতোই।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেদিন প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এর জেরে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের সমর্থনে ক্ষমতায় আসে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। দুই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সরিয়ে রাজনীতিতে মেরুকরণের চেষ্টাও চলে।
‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে পরিচিত এই তৎপরতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যুক্ত করার চেষ্টা চালায়। অনির্বাচিত সরকারের বিভিন্ন তৎপরতায় যুক্ত হন দুই দলেরই বেশ কিছু নেতা। তারাই পরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পায়।
বহু বাঘা রাজনীতিককে ধরে শুরুতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেললেও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে সেনা-সমর্থিত সরকার। এর পর নানা ঘটনা পরম্পরায় ক্ষমতা দুই বছরের বেশি পাকাপোক্ত করতে পারেনি ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায়ের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর দলের সংস্কারপন্থী প্রায় সব নেতাকে মার্জনা করে দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সেই সৌভাগ্য হয়নি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনজর না পাওয়ায় এখনো দলের বাইরে অধিকাংশ সংস্কারপন্থী নেতা।
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন ১০৪ জনের মতো সংসদ সদস্য (এমপি) সংস্কারপন্থী হিসেবে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে সেই সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন বলে পরবর্তী সময়ে কিছু প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
বিএনপির রাজনীতিতে এখনো সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হয় আশরাফ হোসেন, এম এ হেনা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান, আইনজীবী জেড আই খান, আলমগীর কবির, মোজাম্মেল হক, নাসিরুল হক সাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান, আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, মো. আবদুল গনি, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, এস এ সুলতান, মো. আবদুল্লাহ, সুলতান মাহমুদ বাবু, মনি স্বপন দেওয়ান, এম এম শাহীন, সেলিম রেজা হাবিব, এ টি এম আলমগীর, দেওয়ান সুলতান আহমেদ, এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, শাহ মো. আবদুল হোসেন, মোশারফ হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, কামরুজ্জামান, শামীম আহমেদ লিংকন, আবদুল ওয়াহেদ, আহসান হাবীব, আনিসুর রহমান, ওয়াহিদুর রহমান, আশরাফ হোসাইন চৌধুরী, আবদুল মতিন, ফজলুর রহমান বাদশা, মতিয়র রহমান, ইসরাত সুলতানা এলেন ভুট্টো, এম এ রশিদ, আমিনুল ইসলাম বকুলসহ কিছু নেতাকে।
তবে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের ক্ষমা পেয়ে দলে ফিরেছেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কিছুটা তৎপর বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতারা। কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তারা। তবে বিএনপি নির্বাচনে গেলে এবং নির্বাচনের আগেই তাদের ফিরিয়ে নিলে বিএনপির সঙ্গে মিশে যেতেও প্রস্তুত আছেন তারা। এ জন্যই তারা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বসে শলাপরামর্শ করছেন। উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নজরে পড়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্কারপন্থী একজন নেতা প্রিয়.কমকে বলেন, ‘দলের একটি বড় অংশের আপত্তি থাকায় বিএনপির হাইকমান্ড আমাদেরকে দলে ফিরে পদ-পদবি দিতে পারছি না। অপেক্ষায় আছি ম্যাডাম (খালেদা) জিয়ার আহ্বানের জন্য। তবে সে ক্ষেত্রে আমরা বেশি দিন অপেক্ষা করব না।’
‘রক্তে যেহেতু রাজনীতি, তাই প্রয়োজনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারি।’
প্রিয় সংবাদ/কামরুল