ছবি সংগৃহীত

‘প্রীতিলতা’র মতো ছবি করতে চাই: জাকিয়া বারী মম

mithu haldar
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০১৬, ১১:০৩
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬, ১১:০৩

ছবি: শামছুল হক রিপন

(প্রিয়.কম) জাকিয়া বারী মম। অভিনয়ের শিল্পগুণে হয়েছেন জনপ্রিয় মুখ। ছোটপর্দা এবং বড়পর্দা দু’ক্ষেত্রেই। রূপালি পর্দায় পা রাখেন 'দারুচিনি দ্বীপ' সিনেমার মাধ্যমে। ২০০৬ সালে  নির্বাচিত হওয়া এ লাক্স সুন্দরী দশ বছর যাবত রয়েছেন এই রঙিন জগতে। সবশেষে 'ছুঁয়ে দিলে মন' চলচ্চিত্রে সু-নিপুন অভিনয় করে দর্শকদের কাছ থেকে বাহবা কুড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী। ২০১৫ সালে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পাওয়া মম ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির দীর্ঘ বিরতির পর আবার সম্প্রতি রফিক শিকদারের পরিচালনায় ‘আমি শুধু তোর হব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এতে তার বিপরীতে রয়েছেন নীরব।


নাটক-টেলিছবি কিংবা সিনেমা, সমানতালে কাজ করেছেন মম। ভালো এবং মানসম্পন্ন কাজের মাধ্যমে রূপালি জগতের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছেন। প্রায় বছরখানেক বিরতি ভেঙে নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ মম দারুণ আশাবাদী। তিনি নতুন এই ছবির সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন প্রিয়.কম-এর সাথে। তিনি বলেন, ‘ছবিটি রোমান্টিক-অ্যাকশন ধর্মী গল্পের। নতুন ছবিটি নিয়ে আমি তো দারুণ আশাবাদী। সহ-শিল্পীও দারুণ। ভালো কিছু হওয়াই অপেক্ষায় আছি।’ 

নতুন ছবির গল্প সম্পর্কে মম জানান, ‘আমি শুধু তোর হব’ সিনেমাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছাত্র নীরব। ঘটনাক্রমে একটি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যায় সে। শুরু হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত। এক ফাঁকে তার জীবনে প্রেমও আসে। তার এই প্রেমিকা হয়ে আসে জাকিয়া বারি মম। এভাবেই এগিয়ে যায় ছবির গল্প। বাকিটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে এখনও বেশ খানিকটা সময়।

মম বললেন, ‘সংখ্যা বাড়ানো আসলে আমার উদ্দেশ্য না। সব কাজেরই তো দর্শক আছে। কোন কাজটি যে দর্শক পছন্দ করবেন সেটি তো আর আমি বলতে পারব না। একটি শুটিং ইউনিটের সকলেই চেষ্টা করেন কাজটি করার সময় তার সর্বোচ্চ ভালো কাজটি করার। সব মিলে দারুণ একটি কম্বিনেশন হওয়া দরকার। সিনেমায় শুধু একটি ভালো গল্প, পরিচালক কিংবা সহ-শিল্পী থাকাও দরকার। নইলে ভালো ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।’

রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার একটি বাড়িতে নাটকের শুটিং করছিলেন মম। আর তখন থেমে থেমে বৃষ্টিও হচ্ছিল। যার কারণে শুটিংয়েও ব্যাঘাত ঘটছিল। শুটিংয়ের বিরতিতে মম জানান, ‘নতুন চুক্তিবদ্ধ ছবির একটি বড় দিক হলো গল্প মৌলিক। আমি শুরু থেকেই বলে আসছি। যেগুলো ছেড়ে দিয়েছি সেগুলোর গল্প কপি-পেস্ট। সে ধরনের ছবিতে আমি অভিনয় করতে চাই না। দর্শক দেখে বলবে এটি তো ওই ছবির সাথে মিলে যায়। এগুলো শুনতে ভালো লাগে না। দর্শকেদের কিন্তু আমার চাইতেও বেশি জানা থাকতে পারে। যে কারণেই আমি ওসব এড়িয়ে যেতে চাই।’

মমর সাথে যখন আলাপ জমে উঠছিল তখন বাইরে বেশ টাপুর-টুপুর বৃষ্টি। আর মমও খানিকটা বেখেয়ালি হয়ে গুনগুনিয়ে গেয়ে শোনালেন, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে, জানি নে, জানি নে...’ গানটি।

এরই মধ্যে লাল রঙের চা যেন আড্ডার গতি খানিকটা বাড়িয়ে দিল। টেলিভিশনের ছোট্ট বাকসো পেরিয়ে মম এখন আবার সিনেমার আলো ঝলমলে ভুবনে ফিরেছেন। মম যে দিনে দিনে নিজেকে চলচ্চিত্রের জন্য প্রস্তুত করেছেন, তাকে দেখেও ঠাওর করা গেল সেটি। আগামী মাসের শুরু থেকেই শুটিং শুরু করবেন। এর জন্যে হাতে আটকে থাকা নাটক কিংবা টেলিছবির কাজগুলো দ্রুত শেষ করছেন। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে চলছেন। চিত্রনাট্য, কস্টিউম কিংবা নিজের চরিত্র সম্পর্কে পরিচালকের কাছ থেকে বিস্তারিত বুঝে নিচ্ছেন।

মম আবার ছবির গল্পে ফিরে এলেন। বললেন, ‘আমি হয়তো কমও বুঝি না, বেশিও বুঝি না। অল্প কিছু কাজ করলেও সেটি যেন দর্শকপ্রিয় কাজ হয়েই থাকে, সে রকমভাবেই আমিও চেষ্টা করি। প্রতিটি কাজ যেন আমার কাজ হয়ে থাকে। পরিচালকের গল্পটা সুন্দর আর থিমটাও ভাল। গানের লিরিক্সগুলোও ভাল। সব মিলে কাজটি যদি সুন্দরভাবে শেষ করা যায়; দর্শক একটি পরিষ্কার ছবি দেখতে পাবেন। যেখানে হয়তো নকলের অভিযোগটা কেউ করতে পারবেন না।’

মমর চোখে-মুখে এক ধরনের উচ্ছ্বাসের আভাস পাওয়া যায়। মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা সবখানেই মম সাবলীল। অভিনয়টাকে সব সময়ই নিখুঁতভাবে করতে চান। এবার বেশখানিকটা সময় পিছনে চলে গেলেন মম।

‘এখনকার কথা বলব না, আমি যাদের দেখেছি চিনেছি, যারা বড় মাপের শিল্পী, তাদের প্রত্যেকেরই বড় ধরনের প্রস্তুতি ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে একজনের কথা সবাই বলেন, তিনি হলেন শাবানা ম্যাডাম। তার প্রস্তুতির লেভেল ছিল অন্যরকম। আগে থেকেই জার্নিটার কথা মাথায় রেখে সামনে পা বাড়াতেন। আমি যখন কাজ করা শুরু করেছি তখন আমার সৌভাগ্য হয়েছে ভাল কিছু পরিচালকের সাথে কাজ করার। প্রস্তুতি না থাকলে আমার মনে হয় না, ভাল কোনো কাজ করা আসলে সম্ভব! বলছি নিজের মধ্যে ওউন করার একটি বিষয় থাকতে হয়। আর ফিল্ম তো অনেক বড় একটি বিষয়। সিনেমার মায়াটা কিন্তু অন্য জায়গায়।’ বললেন মম।

এরইমধ্যে শুটিংয়ে ডাক পড়ল মমর। সেটও প্রস্তুত। পরিচালক তার জন্যে অপেক্ষা করছেন। এবার আড্ডায় ইতি টানতে হবে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ তখন ধবধবে শাদা মেঘে ছেয়ে গেছে। সিনেমার প্রসঙ্গ ধরেই মমর কাছে জানতে চাওয়া হলো- ভবিষ্যতে কোন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চান?

মম বললেন, ‘আমার মনে হয় আমি আবারও ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির মতো ছবিতে অভিনয় করতে চাই। ‘প্রীতিলতা’র মতো ছবি করতে চাই। কারণ দুটি ছবির তাৎপর্য দুই ধরনের। আমি নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়তই। সে জায়গা থেকে আমি কিন্তু পরিকল্পনা করার মালিক না। যারা আসল প্ল্যানিং করার মালিক, তারা যদি আমাকে ঘীরে প্ল্যানিং করেন তাহলে আমি ভাল কাজের অংশ হতে পারব’।