
ছবি সংগৃহীত
১০ দেশের সেরা মাস্টারপিস সিনেমা
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬, ১০:২৪
ছবি: সংগৃহীত
(প্রিয়.কম) সিনেমা দেখতে কে না ভালোবাসে। অনেকে সিনেমা দেখেন বিনোদন পেতে, কেউ সময় কাটাতে। আবার অনেকে আছেন যাদের শখই পৃথিবীর সেরা সিনেমাগুলো নিজের সংগ্রহে রাখা। যখন থেকে সিনেমা নির্মাণ শুরু হয়েছে, তখন থেকে এযাবৎ অনেক সিনেমা আছে যেগুলো পুরো বিশ্বে খ্যাতি পেয়েছে। আপনি যদি বিখ্যাত সব সিনেমার পোকা হয়ে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে সেরা ছবিগুলো আপনার সংগ্রহে আছে। অনেকে আছেন যাদের জন্য নতুন শখ সেরা এবং বিখ্যাতদের তালিকা দেখে সিনেমা দেখেন। এমনও হতে পারে আপনি কিছু সিনেমার নাম জানেন না যেগুলো পৃথিবী শ্রেষ্ঠ। তাদের জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন।
প্রত্যেক দেশের সেরা সিনেমাগুলো সংগ্রহের তালিকায় রাখা এবং সেই সিনেমাগুলো খুঁজে বের করে দেখা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ পৃথিবীতে অনেক দেখেই প্রচুর ক্লাসিক সিনেমা তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিটি রাষ্ট্র থেকে একটি করে মোট ১০টি সেরা ছবি বাছাই করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সিনেমা ওয়েব সাইট ‘টেস্ট অব সিনেমা’। ক্লাসিক সিনেমার সিরিয়াস ভক্তদের জন্য প্রিয়.কমের পাঠকদের ১০টি বিশ্বসেরা ক্লাসিক সিনেমার তালিকা দেয়া হল।
এম (জার্মানি)
ফ্রিটজ ল্যাং পরিচালিত ‘এম’ ছবিটি ১৯৩১ সালে জার্মানির বার্লিনে মুক্তি পায়। এই পরিচালকের এটিই প্রথম সিনেমা যেখানে তিনি শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাঁর এর আগের বানানো সিনেমাগুলো ছিল নিরবাক,শব্দ এবং সংলাপহীন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মিলে ছবিটির চিত্রনাট্য লেখেন। কারিগরি দিক থেকে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হওয়ায় বিশ্বব্যাপী প্রচুর সফলতা পায় ছবিটি।
মানসিক বিকারগ্রস্থ হত্যাকারীকে নিয়ে ছবিটির কাহিনী। পুরো ছবিটিই সাদাকালোভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে অন্ধকার এবং ছায়ার সুন্দর দৃশ্যধারণ করা যায়। তথ্যচিত্রের আদলে নরমিত হয়েছে ছবিটি। শব্দের ব্যবহারও প্রশংসনীয়। একটি শিশুকে হত্যার কাহিনী নিয়ে এগিয়েছে পুরো ছবির গল্প। একটি বাচ্চা মেয়েকে খুন করে বিকৃত মানসিকতার এক খুনি। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই খুনি। প্রকৃত হত্যাকারী ধরা না পরায় একসময় সেই শহরটি অপরাধের আস্তানায় পরিণত হয়। এমন কাহিনীর ক্লাসিক ছবি ‘এম’।
বাইসাইকেল থিভস (ইতালি)
১৯৪৮ সালের সিনেমা ‘বাইসাইকেল থিভস’। ভিটোরিও ডে সিকা পরিচালিত ছবিটি ইতালির বিখ্যাত মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয়। ‘বাইসাইকেল থিভস’ ছবিটি একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র। এই ছবিটি দিয়ে পরিচালক একটি বিশেষ সময়ের বিশেষ ব্যাপার উল্লেখ করতে চেয়েছেন। ইতালির যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত শহর রোমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই ছবির কাহিনী। একজন বাবা আর তার ছেলের বেঁচে থাকার গল্প বর্ণনা করা হয়েছে ‘বাইসাইকেল থিভস’ ছবিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দারিদ্রতায় বিধ্বস্ত রোম শহরের স্পষ্ট আবেগ, সমাজের ন্যায় অন্যায় এবং সততার নির্মমতা বর্ণনা করা হয়েছে এই সিনেমায়।
একজন দরিদ্র লোক যুদ্ধের পর সংসার চালানোর জন্য একটি কাজ পায়, সেটি শহরে পোস্টার বিলি করা। এই কাজের জন্য তার প্রয়োজন ছিল একটি সাইকেলের। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য সে সাইকেল কিনতে অপারগ ছিল। তাই সে এবং তার ছেলে তাদের বিছানার চাদর বন্ধক রেখে একটি সাইকেল কেনে। কিন্তু চাকরির প্রথম দিনেই চুরি হয়ে যায় সাইকেলটি। অতি কষ্টের অর্থে কেনা সাইকেলটি চুরি হয়ে যাওয়ায় বাবা এবং ছেলে দুজনই ভেঙে পড়ে। একসময় রোম শহরের রাস্তায় রাস্তায় তাঁরা তাদের সাইকেল খুঁজতে শুরু করে। অনেক নাটকীয় আবেগপ্রবণ সাধারণ গল্পের সিনেমা ‘বাইসাইকেল থিভস’।
জলসা ঘর (ভারত)
বাংলা সিনেমার মেধাবী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘জলসা ঘর’ ভারতের সেরা মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ‘টেস্ট অফ সিনেমা’ নামের মার্কিন সিনেমা ওয়েবসাইটে। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। ছবিটি মুক্তির পর প্রথম দিকে সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। তবে পরবর্তীতে এই পরিচালকের সেরা কাজের মধ্যে একটি বিশেষ সিনেমা হিসেবে জায়গা করে নেয় ‘জলসা ঘর’। ভারতের বাইরে ছবিটি মুক্তি দেয়া হলে সমালোচকরা ছবিটির ব্যাপক প্রশংসা করে। আর্থিক দিক থেকেও সফলতা অর্জন করে নেয় ছবিটি। ভারতীয় সিনেমায় এই ছবির মাধ্যমে প্রথম ক্লাসিক্যাল নাচ এবং গানের ব্যবহার করা হয়।
বাংলার এক জমিদারের কাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেছে ছবিটির গল্প। শাসনআমল শেষ হয়ে যাওয়া আর্থিকভাবে পঙ্গু এক জমিদার তাঁর পরিবারের জমিদারি সময়ের প্রতিপত্তি বজায় রাখতে বিরাট বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ সাধেন। গ্রামের এক সাধারণ ব্যক্তি ব্যবসা করে হঠাৎ ধনী হয়ে জমিদারকে টেক্কা দিতে আসে। সেও জমিদারের মত নাচ গানের আসর বসায়। কিন্তু জমিদারি চলে গেলেও নিজের মর্যাদা বজায় রাখতে কোন ছাড় দিতে চান না বৃদ্ধ জমিদার। এমন এক কাহিনীর মাস্টারপিস চলচ্চিত্র ‘জলসা ঘর’।
লা গ্রান্ডে ইল্যুশন (ফ্রান্স)
ফরাসি নির্মাতা জঁ রনোয়ার পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৩৭ সালে। অন্যতম সেরা যুদ্ধ বিষয়ক সিনেমা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘লা গ্রান্ডে ইল্যুশন’ ছবিটিকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভুমিতে তৈরি করা হয়েছে এই ছবিটি। দুজন ফরাসি ব্যক্তি- একজন অভিজাত পরিবারের এবং অপরজন সামান্য কেরানি, এই দুজনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছবিটির কাহিনী।
যুদ্ধের সময়ে বেঁচে থাকা মানুষদের জার্মান ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হত। সেসময় অনেকেই সেখান থেকে পালাতে ব্যর্থ হয়। অভিজাত পরিবারের মানুষটি এবং সেই কেরানি চাকরিজীবী লোকটিকেও সেখানে আটক করা হয়। তাঁরা দুজনে সেখান থেকে পালানোর রাস্তা বানানোর শেষ পর্যায়ে বন্দীদের সেই জেলখানা থেকে আরেক জায়গায় আটকে রাখা হয়। এভাবে কয়েক জায়গা বদলের পর এক পাহাড়ি এলাকায় বন্দি করে রাখা হয় তাদের। এক যুদ্ধসেনার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাদের। সেই সৈন্য তাদের দুজনকে বন্দীশালা থেকে বেরুতে সাহায্য করে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে ধরা পড়ে যায় তাঁরা। আটক দুজনকে গুলি করে মারার জন্য সেই সৈন্যকে বাধ্য করা হয়। তাদেরকে গুলি করার অনুশোচনায় সেই সৈন্য পরবর্তীতে বেঁচে থাকা ব্যক্তিটিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেবা করতে থাকে। বিপদের সময়ে ধনী এবং গরীবের যে ভেদাভেদ থাকে না, তেমনি এক গল্পকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই সিনেমায়।
টোকিও স্টোরি (জাপান)
জাপানি নির্মাতা ইয়াসুজিরো ওযুর পরিচালনায় ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় ‘টোকিও স্টোরি’ ছবিটি। জাপানের সেরা মাস্টারপিস ক্লাসিক সিনেমা ‘টোকিও স্টোরি’। সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছিল ছবিটি। নির্মম আবেগের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে সিনেমাটিতে। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে একটি বয়স্ক দম্পতির পাওয়া কষ্টের গল্পে এগিয়েছে ছবিটি।
টোকিওতে হিরোশিমা বোমা হামলার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে গ্রাম থেকে আসেন বৃদ্ধ মা বাবা। এই দম্পতির ছেলেমেয়েরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তেই ব্যস্ত। সেই শহরের কাজের ব্যস্ততায় মা বাবাকে সময় দিতে পারেনা তারা। এমনকি দম্পতিদের নাতি নাতনিরাও তাদের জন্য সময় বের করতে পারেনা। দুজন বৃদ্ধ মানুষের অসহায় ও একাকিত্বের গল্প বর্ণনা করা হয়েছে ‘টোকিও স্টোরি’ সিনেমায়। জাপানের টোকিও শহরের আধুনিক নগরায়ন এই ছবির মূল বিষয়বস্তু।
দ্য ক্রেনস আর ফ্লায়িং (রাশিয়া)
রাশিয়ান নির্মাতা মিখাইল কালাতোজোভ পরিচালিত আরেকটি মাস্টারপিস ছবি ‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লায়িং’। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। মূলত একটি প্রেমের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে ছবিটির কাহিনী। ১৯৫৮ সালের আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পায় ‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইয়িং’ ছবিটি।
একে অপরের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ ভেরোনিকা এবং বোরিস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত সব ঠিকমতই চলছিলো। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পর সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে বোরিসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়। ভেরোনিকার সঙ্গে বোরিসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যায় বোরিস। অপরদিকে ভেরোনিকার মা বাবা বোমা হামলায় মারা যায়। নিঃসঙ্গ ভেরোনিকা পরবর্তীতে আশ্রয় নেয় মার্ক নামের এক পিয়ানোবাদকের কাছে, যে পরে বিয়ে করে ভেরোনিকাকে। মার্ককে আপন করে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করতে যায় ভেরোনিকা। কিন্তু পথে বোরিস নামের এক আহত ছোট ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসে সে। পরে দেখা যায় বোরিস নামের ছেলেটিকে দত্তক নেয় ভেরোনিকা। এমন কাহিনীর অসাধারণ ক্লাসিক ঘরানার ছবি ‘দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইয়িং’।
ভিরিডিয়েনা (স্পেন)
স্প্যানিশ ছবি ‘ভিরিডিয়েনা’ মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে। ছবিটির পরিচালক লুইস বুনুয়েল। পরিচালক লুইস নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন অতিপ্রাকৃত দুটি মাস্টারপিস ছবি নির্মাণের মাধ্যমে। ৩০ দশকের দিকে তিনি ফ্রান্সে রক্ষণশীল ধর্মীয় কারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এর কিছু সময় পরে থেকে তাঁর জন্মস্থান স্পেনে তিনি সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন। এরপর আমেরিকার মেক্সিকো থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি সিনেমা নির্মাণের ডাক পান। ১৯৬১ সালে নিজের দেশ স্পেনে ফিরে আসেন তিনি। এবং এসেই নির্মাণ করেন ‘ভিরিডিয়েনা’ ছবিটি। সেবছর কান চলচ্চিত্র উতসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় এই ছবিটি।
সিনেমার কাহিনী একজন খ্রিস্টান সেবিকাকে নিয়ে। তরুনী অবস্থায় সেই মেয়েটি, যার নাম ভিরিডিয়েনা, গির্জার সেবিকা হওয়ার সংকল্প নেয়। এরপর থেকেই সে সেবিকা ধর্ম পালন করতে গির্জায় অবস্থান করতে শুরু করে। গির্জার প্রধান মাদার একদিন তাকে খবর দেয় তাঁর এক আত্মীয় অসুস্থ। এই আত্মীয় সবসময় তাদেরকে সাহায্য করত বলে মাদার কিছুটা জোর করেই ভিরিডিয়েনাকে অসুস্থ আত্মীয়র কাছে পাঠায়। সেই লোকের বাসায় পৌঁছানোর পর লোকটি ভিরিডিয়েনার মাঝে নিজের মৃত স্ত্রীর মিল খুঁজে পায়। সেই বাড়ি থেকে চলে আসার আগের দিন ভিরিডিয়েনাকে লোকটি তাঁর স্ত্রীর বিয়ের পোশাক পরতে অনুরোধ করে। সেই সঙ্গে মেয়েটির পানীয়তে নেশাদায়ক ওষুধ মিশিয়ে ভিরিডিয়েনাকে ধর্ষণ করতে চায়। কিন্তু লোকটি মেয়েটিকে ধর্ষণ না করেই পরদিন সকালে ভিরিডিয়েনাকে জানায় সে তাঁর সর্বস্ব হারিয়েছে, যাতে সে আর তাঁর পুরনো পেশায় ফিরে যেতে না পারে। কিন্তু মেয়েটি সত্য জানতে পেরে সেখান থেকে গির্জায় ফেরত যেতে রওনা হয়। পথে পুলিশ তাকে জানায় তাঁর আত্মীয় আত্মহত্যা করেছে। ভিরিডিয়েনা সেই বাসায় ফিরে যায়, এবং কয়েকজন গৃহহীন মানুষকে সেই বাড়িতে আশ্রয় দেয়। একদিন সেই মানুষগুলো তাকে ধর্ষণ করার চেস্টা করে। এরকম অভিজ্ঞতায় সে অন্যের উপর থেকে নির্ভরতা হারাতে থাকে। এমন কাহিনী নিয়েই এগিয়ে যায় ‘ভিরিডিয়েনা’ ছবিটি।
দ্য সেভেন্থ সিল (সুইডেন)
বিখ্যাত পরিচালক ইঙ্গমার বার্গম্যান নির্মাণ করেছেন ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ ছবিটি। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এই পরিচালক তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রচুর ভালো সিনেমা তৈরি করেছেন। তবে সব ছবির মধ্যে সেরা মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত হয় ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ ছবিটি।
১৪ শতকের সামরিক বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অ্যান্টোনিস ব্লকের কাহিনী নিয়ে নিরমিত হয়েছে ছবিটি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ১০ বছর পর সুইডেনে নিজের বাড়ি ফেরেন অসুস্থ অ্যান্টোনিস। মহামারী রোগ প্লেগের কারণে তখন তাঁর গ্রাম প্রায় বিধ্বস্ত। একই রোগে আক্রান্ত হন তিনিও। সেই সময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধা বোধ করেন অ্যান্টোনিস।
একসময় মৃত্যু কড়া নাড়ে তাঁর দরজায়। কিন্তু মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত নিন বলে জানালেন অ্যান্টোনিস। মৃত্যুদেবতার সঙ্গে এক চুক্তি করেন তিনি। দাবা খেলায় জয়ের পরিবর্তে নিজের জীবন ফিরে পাওয়ার বাজি ধরেন অ্যান্টোনিস। এমন এক অসাধারণ কাহিনীর সিনেমা ‘দ্য সেভেন্থ সিল’।
ব্রিফ এনকাউন্টার (ইংল্যান্ড)
১৯৪৫ সালে মুক্তি পায় ‘ব্রিফ এনকাউন্টার’ ছবিটি। ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনের পরিচালনায় নির্মিত হয় ছবিটি। রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি এটি। দুজন বিবাহিত নারী পুরুষের রেলস্টেশনে হঠাৎ দেখা, তারপর পরিচয়, এবং অবশেষে পরকীয়াতে জড়িয়ে যাওয়ার কাহিনী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিনেমাটি। এই সিনেমার জন্য পরিচালক অস্কার পুরস্কার জিতে নেন। সেবছর একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের তিনটি শাখায় মনোনয়ন পায় ছবিটি। ১৯৪৬ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ব্রিটিশ সিনেমার খেতাব পায় ‘ব্রিফ এনকাউন্টার’। সর্বকালের সেরা ব্রিটিশ রোমান্টিক ড্রামা সিনেমার সমালোচক পুরস্কার লাভ করে ছবিটি। ডেভিড লিনের নির্মিত মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে এখনও সম্মানিত ‘ব্রিফ এনকাউন্টার’ ছবিটি।
প্রচলিত বিবাহ ব্যবস্থায় জীবন যাপন করা এক নারীর সকল ধ্যান ধারণা তাঁর স্বামী, সংসার এবং সন্তানদের নিয়ে। সংসারই ছিল তাঁর একমাত্র দুনিয়া। একদিন ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় তার দেখা হয় একজন বিবাহিত লোকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্বে রূপ নেয় তাদের সম্পর্কটি। দুজনে প্রতিদিন রেলস্টেশনের রেস্টুরেন্টে দেখা করতে থাকে। একসময় দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে যায়। সংসারের পাশাপাশি পরকীয়া প্রেম শুরু হয়। সংসার জীবনে তিক্ততা শুরু হয়। এমন কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে ‘ব্রিফ এনকাউন্টার’ ছবিতে।
সিটিজেন কেইন (আমেরিকা)
অরসন ওয়েলস পরিচালিত ‘সিটিজেন কেইন’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে। এই ছবিটির মাধ্যমেই পরিচালনায় হাত দেন নির্মাতা অরসন ওয়েলস। এই ছবিতে তিনি পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা এবং প্রযোজনার পাশাপাশি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। সিনেমা নির্মাণের আগে পরিচালক রেডিও এবং থিয়েটারে কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৯ সালে প্রথম তিনি সিনেমা নির্মাণের ডাক পান। নিজের নির্মিত সিনেমায় কাজের মাধ্যমে তিনি পুরো সিনেমা ধারন, চিত্রগ্রহন এবং কাহিনীর গভীরতা দেখানোর ভঙ্গীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। সেই সঙ্গে মিউজিক ও শব্দধারনের জায়গাতেও ভিন্নতা সৃষ্টি করেন।
‘সিটিজেন কেইন’ ছবিটির কাহিনী একজন বাস্তব জীবনের পত্রিকা ব্যবসায়ীর চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সিনেমাটি মুক্তির পর সেই ব্যবসায়ী নির্মাতাদের নামে মামলা করে। ছবিতে ব্যবহৃত ইন্টারভিউ, সংলাপ এবং বেশ কয়েকটি দৃশ্যে আপত্তি জানান। আদালত থেকে এগুলো সরিয়ে নিয়ে বলা হলেও মেনে নেননি নির্মাতা। বিতর্কিত এই ছবিটি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ৯টি বিভাগে মনোনয়ন পায়। পরে সেরা স্ক্রিনপ্লের জন্য পুরস্কার জিতে নেয় ছবিটি। ‘সিটিজেন কেন’ আমেরিকায় নির্মিত একটি মাস্টারপিস সিনেমা এবং এযাবতকালের সেরা ক্লাসিক সিনেমার মধ্যে অন্যতম।
- ট্যাগ:
- বিনোদন
- হলিউড
- সেরা মাস্টারপিস সিনেমা