ছবি সংগৃহীত

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়: নিজামী-বাবরসহ ১৪ জনের ফাঁসি

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪, ০৬:৪৩
আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪, ০৬:৪৩

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন ও সাত বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও হাজি আবদুস সোবহান। এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন পলাতক। হাজি আবদুস সোবহান জামিনে। রায়ের পর শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী রায়ের পর বলেন, ‘আমার প্রতিক্রিয়া আমার আইনজীবী দেবেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। যে রায় দেওয়া হয়েছে তা অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছে।’ এ সময় তাঁকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছিল। এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘এই বিচারে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এই বিচারকের পরও বিচারক আছেন। তিনি আল্লাহ। আখের রাতে আমি সেই বিচারকের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাব।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি। কাউকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, এই বিচারক যিনি অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছেন, তাঁরও যেন বিচার হয়। তাঁর সন্তানেরাও যেন এই অন্যায় বিচারের সাজা ভোগ করে।’ বাবর ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে। এটি সাজানো রায়।’ এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আদালতের এজলাসে ওঠেন চট্টগ্রাম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান। বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এই মামলার অন্যতম আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১১ আসামিকে আদালতে নেয়া হয়েছে। এ সময় পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়েতে ইসলামীর আমির ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমানের ফাঁসির আদেশের রায়ের প্রতিবাদে নাটোরে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা জামায়েতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

নিজামী-বাবরসহ ১২ আসামি ফাঁসির সেলে

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১২ আসামিকে ফাঁসির সেলে (কনডেম সেল) রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর তাঁদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিজামী, বাবরসহ ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের ডিভিশন বাতিল করে ফাঁসির সেলে রাখা হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারাগারে আসা ১২ আসামির মধ্যে নিজামী, বাবরসহ নয়জন আসামি ডিভিশনপ্রাপ্ত। তাঁদের সাজা হওয়ায় ডিভিশন বাতিল হয়ে গেছে। তাই আসামিদের ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে।

নেত্রকোনার মদনে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল

নেত্রকোনার মদনে শুক্রবার সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মৃত্যুদণ্ডাদেশের প্রতিবাদে এ হরতাল আহবান করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হারেছ এ হরতালের ঘোষণা দেন। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ হরতাল পালনের আহ্বান জানানো হয়। এদিকে, বাবরের নির্বাচনী এলাকার অপর উপজেলা মোহনগঞ্জে শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। এর আগে দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই মদনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে হরতালের ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিভাবে হরতাল শুরু হয়।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: বিমর্ষ ছিলেন আসামিদের স্বজনরা

রায় শোনার পরে আসামিদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালত প্রাঙ্গণে তাঁদের দেখা যায় বিমর্ষ অবস্থায়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খানের স্ত্রী সেলিমা সুলতানা তিনতলার এজলাসকক্ষ থেকে স্বামীর পাশাপাশি হেঁটে হেঁটে নিচে নেমে আসেন। পুলিশ, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যেও তিনি স্বামীর পাশাপাশি থাকতে চেয়েছেন সব সময়। চোখ ছলছল করছিল সেলিমার। আকবর হোসেন প্রিজন ভ্যানে উঠে যাওয়ার পর গ্রিলের দিকে এলে সেলিমা আদালত ভবনের ফটকের পাশে একটি উঁচু দেওয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে প্রিজন ভ্যান চালু হলে আকবর হোসেন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে দেন। সেলিমা বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে সেটি ধরেন। এভাবে একসময় চলে যায় প্রিজন ভ্যানটি। স্বামীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিলেন সেলিমা। চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। এরপর এক স্বজনসহ তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমার স্বামী এই ঘটনায় জড়িত নয়। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি দীন মোহাম্মদ অস্ত্র খালাসের জন্য ট্রলার ও শ্রমিক সরবরাহকারী ছিলেন। রায় শোনার পর থেকে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন দীন মোহাম্মদের স্ত্রী মিনু আরা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি স্বামীর পেছন পেছন নিচে নেমে আসেন। তিনি বারবার বলছিলেন ‘আল্লাহ, এটা কী হলো।’ আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় তাঁকে সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি কাঁদছিলেন বলে কোনো কথায় বলতে পারছিলেন না। একটু শান্ত হয়ে মিনু আরা বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। তাঁকে শুধু শুধু এই মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামী নির্দোষ। আমরা গরিব মানুষ। আমার পরিবারের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিচার দিলাম।’ আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুস সোবাহানের বড় ছেলে ওসমানও রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। রায়ে তিনি হতাশ হয়েছেন। ওসমান প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার বাবা নির্দোষ। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে যাব।’ একইভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমানের ভাই ওয়াসিউর রহমান ফাঁসির রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়ে। রায় ঘোষণার পর সাহাবকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন স্ত্রী-মেয়ে। গণমাধ্যমে তাঁরা কোনো মন্তব্য করেননি। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন ও সাত বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রায় পৌনে ১০ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

রায়ের প্রতিবাদে মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা

রায় ঘোষণার পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল বের করেন। এসময় তাঁরা রায়কে ‘ভুয়া ও অবৈধ’ রায় বলে মন্তব্য করে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। আদালত প্রাঙ্গণে মিছিলের পাশাপাশি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমাবেশ করেন। এ সময় বক্তব্য দেন চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক মহানগর পিপি আবদুস সাত্তার, আইনজীবী এ কিউ এম নুরুল ইসলাম, আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সরকারের নির্দেশে এ রায় দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে না পেরেও অবৈধভাবে তাঁদের ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায় তাঁরা মানেন না বলেও জানান।

আইনজীবীদের ভাষ্য

মামলার রায়ে ‘ন্যায়বিচার পাননি’ দাবি করে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এটি হাইপ্রোফাইল পলিটিক্যাল কেইস এবং রায়ও হয়েছে হাই প্রোফাইল পলিটিক্যাল।’ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান তিনি। এদিকে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, ‘এ মামলাকে সাধারণ কোনো মামলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি নজিরবিহীন ঘটনা ও স্পর্শকাতর মামলা। এ বিবেচনায় আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে।’ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এ মামলার রায় হয়েছে বলে আসামিপক্ষের অভিযোগ নাকচ করে পিপি বলেন, ‘এ ঘটনায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা তৎকালীন সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। এটা রাজনৈতিক হয়রানির মামলা নয়।’ তিনি বলেন, ‘এসব অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা হয়েছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। অস্ত্রগুলো ধরা না পড়লে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদর হাতে যেত অথবা দেশে থাকলে একটা সংকট তৈরি হতো।’ পিপি কামাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা তৎকালীন সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। এটা রাজনৈতিক হয়রানির মামলা নয়।’

এটি সাজানো রায়: রেজ্জাকুল

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীবলেছেন, ‘এটি সাজানো রায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, আমি তার সদস্য ছিলাম। সাবেক সচিব ওমর ফারুকও সদস্য ছিলেন। তাঁকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা কথা বলানো হয়েছে।’ মৃত্যুদন্ড ছাড়াও অন্যান্যদের মতো তাঁকেও অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় যাবজ্জীবন ও সাত বছর করে কারাদণ্ড পান তিনি।

মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে জ্ঞান হারান এনামুল

চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন ও সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এসময় মৃত্যুদণ্ডের আদেশের রায় শুনে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান চট্টগ্রাম ইউরিয়া সারকারখানার (সিইউএফএল) প্রশাসন বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কে এম এনামুল হক।

নিজামী শান্ত, বাবরের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার প্রতিক্রিয়া আমার আইনজীবী দেবেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। যে রায় দেওয়া হয়েছে তা অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছে।’ এ সময় তাঁকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছিল। এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘এই বিচারে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এই বিচারকের পরও বিচারক আছেন। তিনি আল্লাহ। আখেরাতে আমি সেই বিচারকের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাব।’
তিনি বলতে থাকেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি। কাউকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, এই বিচারক যিনি অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছেন, তাঁরও যেন বিচার হয়। তাঁর সন্তানেরাও যেন এই অন্যায় বিচারের সাজা ভোগ করে।’

নীরব ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী

রায় ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের কথা শুনে নীরব ছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদ জিয়া। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী তাঁকে অস্ত্র আটকের কথা জানিয়েছিলেন।’ বিচারক তাঁর রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ‘সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে এ মামলায় হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিমকে টাকা দিতে উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিনের মাধ্যমে টাকা দেন এআরওয়াই গ্রুপ। এ গ্রুপের আবদুর রাজ্জাক ইউসুফের সঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের যোগাযোগ ছিল বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।’
বিচারক বলেন, ‘এ মামলা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় তাঁদের জবানবন্দিতে ও যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁরা একে অন্যকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে তাদের সঙ্গে উলফার যোগাযোগ ছিল। তাঁরা এটা স্বীকারও করেছেন। এনএসআইয়ের মহাপরিচারক তাঁদের সহায়তায় সস্ত্রীক দুবাই বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন। মেজর লিয়াতক স্বীকার করেন যে, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। তিনি এ নিয়ে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। অস্ত্র আটকের সময় মেজর লিয়াকত নিজেকে আবুল হোসেন পরিচয় দিয়ে বাধা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন।’ বিচারক আরও বলেন, ‘ডিজিএফআইয়ের তত্কালীন মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, তিনি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এ ঘটনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ কথায় তখন নীরব ছিলেন। এ ঘটনাও মামলায় এসেছে।’

কাঠগড়ায় ওঠা নিয়ে তর্ক নিজামী-বাবরের

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতে আনার পর আসামির কাঠগড়ায় ওঠা নিয়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাথে বাক-বিতণ্ডা হয় পুলিশের। পরে তারা আদালতের এজলাসকক্ষে কাঠগড়ার পাশে চেয়ারে বসে পড়েন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে নিজামী-বাবরের এ আচরণে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। তারা চেষ্টা করেও আসামিদের কাঠগড়ায় ওঠাতে পারেননি। অবশ্য বাকি আসামিরা কাঠগড়ায় উঠেছেন যথানিয়মে।

কড়া নিরাপত্তা

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ভবন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগরজুড়ে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিজামী ও বাবরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।আদালতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্টও। মূল আদালত ভবনের সামনে র‌্যাব-পুলিশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগরজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রবেশপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকের এজলাস ঘিরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শুধু আদালত ভবন ঘিরেই ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার আসামিরা

এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সিইউএফএলের কর্মকর্তারা এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া। নুরুল আমিন, পরেশ বড়ুয়াসহ মামলার কয়েকজন আসামি পলাতক। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আটক আছেন মতিউর রহমান নিজামী, লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান ও দীন মোহাম্মদ।

জামিনে যাঁরা

আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন মজিবুর রহমান, শেখ আহাম্মদ, বশর মিয়া, বাদশা, কামাল মিয়া, মোহাম্মদ জসিম, মোহাম্মদ আক্তার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মরিয়ম বেগম, মোহাম্মদ আজিজ, কবির আহাম্মদ, মোহাম্মদ রফিক, মনির আহমদ, আবদুল মালেক, মঞ্জুরুল আলম, ফিরোজ আহমেদ, সাইফুদ্দিন, এজাহার মিয়া, ফজল আহমদ, আকবর আলী, ছালে জহুর, সানোয়ার হোসেন, দিলদার হোসেন, নুরুল আবছার, আবদুল মান্নান, ওসমান গনি ও হাজি আবদুস সোবহান।

পলাতক

পলাতক রয়েছেন পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, মোহাম্মদ সোবহান, শাহ আলম, আবদুস সবুর, শাহজাহান, আবদুর রহিম মাঝি, বাবুল মিয়া, হেলাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, নূর নবী ও প্রদীপ কুমার দাশ। এ ছাড়া মামলার বিচার চলাকালে আসামি মনির আহমদ, ইয়াকুব আলী, আতাউর রহমান ও আবুল কাশেম মারা গেছেন।

মামলা ও বিচার

অস্ত্র আটকের ঘটনায় ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় একটি এবং ১৮৭৮ সালের ১৯(এ) ধারায় অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা করা হয়। দুটি মামলারই বাদী কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে পাঁচবার। চার্জশিট হয়েছে তিন দফা। বদলে গেছে আসামিও।চোরাচালানমামলায় সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলায় ২০০৪ সালের ১১ জুন ৪৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথম দফা অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।২৫ আগস্ট স্থানীয় চোরাচালানি হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।এতে অস্ত্র আটক মামলায় ৫০ জন এবং চোরাচালানের মামলায় ৫২ জনকে আসামি করা হয়।ওই বছরের ১৫ নভেম্বর নতুন ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ২৯ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাতটি ত্রুটি চিহ্নিত করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী দুই মামলায় নিজামী, বাবরসহ নতুন ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। অস্ত্র আটক মামলায় ৫৬ এবং চোরাচালান মামলায় ৫৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া সাক্ষী ও আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রয়েছে। সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উলফার জন্য বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো এনেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিদের বেশির ভাগ ছিলেন শ্রমিক, মাঝিমাল্লা। মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং দুই মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। বাদীকে আবার জেরার অনুমতি ও আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে তিন আসামির করা চারটি আবেদন ২৭ জানুয়ারি খারিজ হয়।

আটক অস্ত্র

এসএমজি, রকেট লঞ্চার, টমিগান, রাইফেলসহ আটক অস্ত্রের সংখ্যা এক হাজার ৯৪০। ম্যাগাজিন ছয় হাজার ৩৯২। গুলি ও গ্রেনেড ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৬। জাহাজ বোঝাই করে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ এসেছে বাংলাদেশে। পরিবহনে ট্রাক লেগেছে ১০টি।

যেভাবে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্র

সর্ববৃহৎ এই অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছিল ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে। রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের (সিইউএফএল) জেটিঘাটে খালাস করার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি আটক করে টহল পুলিশ। বন্দর থানার এসআই হেলাল উদ্দিন এবং কয়লার ডিপো পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন সর্বপ্রথম বোট থেকে এসব অস্ত্রের চালান খালাস করতে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এর পর সিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নাটকীয় সব ঘটনার জন্ম দেন। সিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার (উত্তর) আবদুল্লাহেল বাকী ও সহকারী কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে উলফা নেতা পরেশ বড়ূয়াসহ মূল হোতাদের ছেড়ে দেন। অস্ত্র ছাড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ টাকাভর্তি ব্যাগটিও গায়েব হয়ে যায়। পরদিন এ ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন এবং চোরাচালান আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন কর্ণফুলী থানার ওসি আহাদুর রহমান।

কোথায় যাচ্ছিল অস্ত্র

বিপুলসংখ্যক এসব অস্ত্র বাংলাদেশ হয়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল বলে আদালতে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের দাবি, বাংলাদেশকে অস্ত্র পরিবহনের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।