ছবি সংগৃহীত

হারিয়ে যাওয়া বিজয় নগর সাম্রাজ্য

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৪:১৩
আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৪:১৩

(প্রিয়.কম) দক্ষিণ ভারতের মধ্যযুগে গড়ে উঠেছিলো চমৎকার এক সাম্রাজ্য। পর্তুগিজরা এই সাম্রাজ্যকে ডাকতেন বিসনাগা রাজ্য নামে। প্রথম হরিহর ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন সেই সাম্রাজ্য। প্রতিষ্ঠার সময় সাথে ছিলেন তাঁর ভাই প্রথম বুক্কা রায়। রাজধানী ছিলো বিজয়নগর। রাজধানীর নামে সাম্রাজ্যের নামও হয় বিজয়নগর সাম্রাজ্য। তের শতকের শেষদিকে দক্ষিণ ভারত যখন ইসলামি আক্রমণের শিকার হয়, তখনও দাপটের সাথে টিকে ছিলো বিজয়নগর। কিন্তু ১৫৬৫ সালে দাক্ষিণাত্য সুলতানির নিকট যুদ্ধে পরাজিত হলে শুরু হয় এই সাম্রাজ্যের পতন। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিলো ১৬৪৬ সাল অবধি।

বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পিতে এখনো পড়ে আছে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। এটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের বিস্ময়কর অংশ। মধ্যযুগের ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পেজ, র্ফানাও নানস ও নিকোলো ডি কান্টি প্রমুখের রচনায় পাওয়া যায় সমৃদ্ধশালী এই অঞ্চলের বিবরণ। স্থানীয় সাহিত্য থেকেও ধারণা পাওয়া যায় এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে। আর এই সাম্রাজ্যের শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রমাণও মিলছে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে। এই সাম্রাজ্যের নিদর্শন ছড়িয়ে আছে সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে। আর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন অবশ্যই হাম্পি। প্রাচীন মন্দিরের নির্মাণশৈলীগুলোর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিলো বিজয়নগর স্থাপত্য। স্থানীয় গ্রানাইট পাথরে খুঁদাই করা চিত্রে ফুটে উঠেছে সেই সময়ের ধর্ম, জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, জীবিকা প্রভৃতি। বিজয়নগর সাম্রাজ্যে ছিলো দক্ষ প্রশাসন, ছিলো বৈদেশিক বাণিজ্যের বিস্তার। জলসেচের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে আনা হয় ব্যাপক উন্নয়ন।
এই সাম্রাজ্যের পৃষ্টপোষকতায় কন্নড়, তেলুগু, তামিল ও সংস্কৃত সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। কর্ণাটকী সংগীত এই সাম্রাজ্যের রাজত্বকালেই তার বর্তমান রূপ ধারণ করে। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে হিন্দুধর্মকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় সংহতি সাধনের মাধ্যমে বিজয়নগর সাম্রাজ্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এই সাম্রাজ্যের অবশেষের চিহ্ন নিয়ে পৃথিবীতে এখনো দিন রাত হয়।