ছবি সংগৃহীত

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু পরামর্শ

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০১:০০
আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০১:০০

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এবারের হজ ফ্লাইট। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৬ বা ৭ অক্টোবর পবিত্র হজব্রত অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ। প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অসংখ্য বাঙালি মুসলিম হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন। ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতি- এমন বিবিধ কারণে কিছুসংখ্যক হজযাত্রী বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। আগে থেকেই এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে এসব সমস্যা দূর করা যায়। এবার যাঁরা হজে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা করেছেন এবং একেবারেই প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন, তাঁদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো। প্রথমেই নিয়ত করুন। মনে মনে এই বলে ইচ্ছা পোষণ করুন এবং বলুন- 'হে আল্লাহ, আমার জন্য হজকে সহজ করো এবং কবুল করো আমার হজ।' বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবে হজে যাওয়া যায়। আপনার পরিচিত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু কেউ আগে হজে গিয়ে থাকলে বা এলাকার কেউ হজে গিয়ে থাকলে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং হজের যাবতীয় কাজের বিস্তারিত বর্ণনা শুনে ধারণা তৈরি করুন। সরকারি বা বেসরকারি- যে ব্যবস্থাপনায় যেভাবেই হজে যান না কেন, হজের প্যাকেজের সুবিধা কী কী, কিভাবে আপনাকে রাখবে, কিভাবে আপ্যায়ন করা হবে এবং কী কী ব্যবস্থাপনা থাকবে- সব কিছু আগে থেকেই ভালোভাবে বুঝে যাচাই করুন এবং এসব ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চিত হোন। মক্কায় আপনার থাকার স্থানটি কাবা শরিফ থেকে কতটুকু দূরে হবে এবং মদিনায় মসজিদে নববি থেকে কত দূরে রাখা হবে আপনাকে- এসব বিষয়ও আগে থেকেই জেনে নিশ্চিত হয়ে নিন। মক্কা-মদিনায় থাকার ক্ষেত্রে যত বেশি দূরত্ব হবে, খরচও তত কম হবে। প্রয়োজনে আপনি যে এজেন্সি থেকে যাচ্ছেন, সেখানকার অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করুন। খাবার ব্যবস্থা ও কোরবানি আপনার প্রদত্ত প্যাকেজের ভেতরে নাকি বাইরে, তাও জেনে নিন। আপনার প্যাকেজে ফিতরা পদ্ধতি থাকবে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন। কারণ পবিত্র হজব্রত আপনার কাছে কাঙ্ক্ষিত একটি ইবাদত হলেও অনেকেই এটাকে ব্যবহার করছেন কেবলই তাঁদের ব্যবসা হিসেবে। হজে সাধারণত যেসব খরচ হয়, তার মধ্যে কিছু খরচ নির্দিষ্ট। যেমন- বিমান ভাড়া ও মুয়াল্লিম ফি। বাকি টাকা মক্কা-মদিনায় থাকা ও খাবারের জন্য প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক ও হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন এবং ভালো মানের কোনো হজ গাইড সঙ্গে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বিমানে ওঠার পর বাথরুম ব্যবহার, হাই কমোড, নামাজ আদায়, অজু, তায়াম্মুম কিভাবে করতে হয়, তা জেনে নিন। জানা থাকলে অন্যদের সহায়তা করুন। সৌদি আরবে মক্কার কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে প্রতিটি ফরজ নামাজের পর জানাজা হয়ে থাকে। জানাজার নিয়মকানুন জেনে নিন। পাসপোর্ট বা স্ট্যাম্প সাইজের ২০ কপি ছবি সংগ্রহে রাখুন। ক্রনিক ডিজিজ বা ডায়াবেটিস, হৃদরোগে যাঁদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, ৪৫ দিনের জন্য ওষুধ নিয়ে যেতে হবে। যাঁরা চশমা ব্যবহার করেন, আরেক সেট চশমা তৈরি করুন। কারণ ভিড়ে আপনার ব্যবহৃত চশমাটি ভেঙে যেতে পারে। সচেতনভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস টিকাসহ অন্যান্য টিকা দিতে হয়। নির্দিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে টিকার সনদ সংগ্রহ করবেন। কারণ জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পর ওই সনদ দেখাতে হয়। মোহরেম ছাড়া নারী হজযাত্রী এককভাবে হজে যেতে পারবেন না। নারী হজযাত্রীকে মোহরেমের সঙ্গে একত্রে টাকা জমা দিতে হয়। বিমানে কোনো হজযাত্রী ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। সৌদি আরবে অবস্থানকালে বাসস্থানের বাইরে গেলে পরিচয়পত্র, মুয়াল্লিম কার্ড ও হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। কোরবানি করার জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের কুপন ক্রয় নিরাপদ। হজে যাওয়ার আগে হজের আরকান-আহকামগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। সঙ্গে ভারী কোনো মালামাল নেওয়া আদৌ ঠিক হবে না। একটা ব্যাগ থাকাই যথেষ্ট এবং পোশাক-আশাকের মধ্যে দুই সেট ইহরামের কাপড়, দুই সেট সাধারণ পোশাক, একটা লুঙ্গি, একটা গামছা বা তোয়ালেই যথেষ্ট। এ ছাড়া একটা সাবান, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, মিসওয়াক, ছোট এক শিশি তেল ইত্যাদি থাকাই যথেষ্ট। ইহরাম অবস্থায় টুথপেস্ট, টুথব্রাশ ব্যবহার না করে মিসওয়াক ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। হজে যাওয়ার আগে কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করে যাওয়াটাই উত্তম। পরিবারের সদস্যরা তাঁর অনুপস্থিতির কারণে যাতে কোনো আর্থিক অভাবে কিংবা অন্য কোনো অসুবিধায় না পড়তে হয়, সে ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা করে যেতে হবে। হজে যাওয়ার আগেই যত দূর সম্ভব হজের কার্যক্রম ও মাসয়ালাগুলো জেনে নেওয়া উচিত। মক্কা শরিফ গিয়েই কাবা শরিফ তওয়াফ, মাকামে ইবরাহিমে সালাত আদায়, সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সায়ি করা, জমজম কূপের পানি পান করা, ৮ জিলহজ মিনায় এসে অবস্থান করা, ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে যাওয়া, ১০ জিলহজ মুজদালিফায় রাতে অবস্থান করা এবং ১০ জিলহজ সকালে মিনায় এসে শয়তানের স্তম্ভে পাথর মারা, কোরবানি করা, মাথা মুণ্ডানো, ইহরামমুক্ত হওয়া, ওই দিন বা পরদিন মক্কায় এসে কাবা শরিফ তওয়াফ করা, যাকে ইসলামী পরিভাষায় তওয়াফে জিয়ারত বা তওয়াফে ইফাদা বলে। মিনায় ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে তিন শয়তানের স্তম্ভে নির্দিষ্ট নিয়মে পাথর মারা ইত্যাদি কার্যক্রম-বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মক্কা মোকাররমাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার আদব সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সঙ্গে যে টাকা-পয়সা থাকবে, তার হেফাজত নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ মিশন কার্যালয় কোথায় তা জেনে নিতে হবে। অপরিচিত লোকের সঙ্গে গাঢ়ভাবে মেলামেশা করা পরিহার করতে হবে। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, টিকিট, কুপন, বেল্ট ইত্যাদির যথাযথ হেফাজত করতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, হজের ফরজ হলো তিনটি। এক. ইহরাম বাঁধা, দুই. ৯ জিলহজ দিনের বেলায় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, তিন. তওয়াফে ইফাদা বা ফিরতি তওয়াফ সম্পন্ন করা। এ ছাড়া হজে বেশ কয়েকটি ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব কাজ বা আমল রয়েছে, সেগুলোও জেনে নিতে হবে। জেনে নিতে হবে কী কী কারণে দম বা কাফ্ফারাস্বরূপ কোরবানি দিতে হয়। তওয়াফ ও সায়ি করার নিয়মকানুন ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। হজ একটি দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত। এই ইবাদত সুষ্ঠুভাবে আদায় করার মাধ্যমে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং আল্লাহর বিশেষ বান্দায় পরিণত হওয়া যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে হজ পালন করে এবং অশ্লীল ও গোনাহর কাজ না করে, সে হজ থেকে এমনভাবে ফিরে আসবে, যেন তার মা তাকে মাত্র জন্ম দিলেন।' মাওলানা মিরাজ রহমান