
ছবি সংগৃহীত
শহরের কেনাকাটার প্রধান শপিং মল বসুন্ধরা সিটি
আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬, ১০:৩৮
ছবি: রিয়াজ আহমেদ ও সংগৃহিত
(প্রিয়.কম) বসুন্ধরা সিটি শপিং মল- বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরের সবচেয়ে আকাঙ্খিত শপিং মলগুলোর একটি। বসুন্ধরা সিটি গ্রুপের নির্মিত দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম শপিং মলও এটি। কারওয়ান বাজারে অবস্থিত এই শপিং মলটি ইতিমধ্যেই শহুরে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কেনাকাটা বিনোদনের জন্য প্রথম পছন্দের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আট তলার ফুড কোর্ট ও সিনেমা হল সিনেপ্লেক্সও এই মার্কেটটির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। দেশের প্রায় সব বড় বড় ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে খাবারের দোকানের আউটলেট রয়েছে এই মার্কেটটিতে। এসব কারণে মলটি আরো বেশি মানুষের আস্থা তৈরীতে সক্ষম হয়েছে।
বসুন্ধরা সিটি ভবনটি একটি ২১ তলাবিশিষ্ট ভবন, যার নিচের ৮টি তলা বিপণী বিতান ও অবশিষ্ট তলাগুলি বসুন্ধরা গ্রুপের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভবনের বিপণী বিতান অংশে প্রায় ২,৫০০টি দোকানের জায়গা রয়েছে। এছাড়াও আছে খাবারের দোকানের জন্য একটি নির্দিষ্ট তলা, মাটির নিচে বা বেসমেন্ট লেভেলে অবস্থিত একটি বড় শরীরচর্চা কেন্দ্র, একটি মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল এবং এর উপরের তলাতে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রসহ একটি খাবারের রেস্তোরাঁ। ছাদে বাগানসহ সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বিপণী বিতানটি ঢাকা নগরীর আধুনিকায়নের অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
প্রায় ২৫,০০০ লোক প্রতিদিন এই বিপণী বিতান পরিদর্শন করে। এটি বাংলাদেশে পশ্চিমা ঢঙে নির্মিত প্রথম বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটি প্রধান স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ এবং মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ও বেশি। ১৯৯৮ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০৪ সালের ৬ই আগস্ট তারিখে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে ও মঙ্গলবার বন্ধ থাকে।
দেশের অন্যতম শপিং মলের মধ্যে সর্ব প্রথম স্থানটিতে রয়েছে ‘বসুন্ধরা সিটি’। এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় যে কয়টি মার্কেট রয়েছে তার মধ্যে পরিপূর্ণ কেনাকাটার সুযোগ এখানেই মিলবে। শুধু ঈদ নয় সারা বছরই যেন জমজমাট থাকে এই মার্কেট। ঈদ এলে তা যেন আরো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বসুন্ধরা সিটির বেজমেন্ট থেকে শুরু করে লেভেল-৭ পর্যন্ত রয়েছে সারি সারি দোকান। পোশাক, শাড়ি, বোরকা, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধনী, গয়না থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালির সামগ্রী, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, বাচ্চাদের খেলনা, শোপিস, টেইলার্স সুবিধা- সবই একসঙ্গে মিলছে এখানে। নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেদার। এমনকি ঈদের দিনের অন্যতম অনুষঙ্গ আতরের জন্যও অন্যত্র ছোটার দরকার নেই।
বর্তমান সময়ে সব চাহিদা মিটিয়ে আসছে এই মলটি। তাই উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পাশাপাশি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও বেছে নিয়েছে কেনাকাটার অনন্য মাধ্যম হিসেবে।
এ ছাড়া রয়েছে বিনোদন এবং সুন্দর পরিবেশে মজাদার দেশি-বিদেশি খাবারের বিশাল আয়োজন। একসঙ্গে সব সুবিধা থাকায় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পান্থপথে এই শপিং মলে বরাবরের মতো এবারও ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড়টা বেশি।
বসুন্ধরার লেভেল ১-এ রয়েছে হরেক ডিজাইন আর রং-বেরঙের পোশাকের বিশাল সমারোহ। আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘড়ির দোকানও। বাচ্চাদের পোশাকের দোকানে বিক্রি বেশি। ভারতের জর্জেট, নেট, মসলিনের পোশাক, টপস, ফ্রক, কুন্দন, জরি ও পুঁতির কাজ করা জমকালো লং ফ্রকের চাহিদা বেশি। এসবের দাম ৭০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বা এর বেশি। ছেলে শিশুদের শার্ট-প্যান্ট ও গেঞ্জি-প্যান্টের সেট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এই লেভেলে নামকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর অনেক দোকান রয়েছে। এ ছাড়া চুড়ি, ক্লিপ, ইমিটেশনের গয়না, ঘর সাজানোর জিনিসও ভালো বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে এক দামে। আবার দরদাম করে কেনার সুযোগও আছে। একই জাতীয় পণ্যের অনেক দোকান পাশাপাশি থাকায় ক্রেতারা দোকান থেকে দোকানে ঘুরে যাচাই করে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষত শাড়ি, বাচ্চাদের পোশাক, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, ছেলেদের পোশাকের দোকানে ক্রেতা বেশি।
লেভেল-২, ৩ ও ৪ নম্বরে রয়েছে বিভিন্ন পোশাক, জুতা ও ইমিটেশনের গয়নাসহ অন্যান্য সামগ্রী। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা সালোয়ার-কামিজ ও লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে এসব দোকানে। দাম পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা শাড়ির দামও এমন। তবে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা দামের শাড়ি কেনারও সুবিধা রয়েছে বসুন্ধরা সিটিতে। লেভেল ৩-এ ছেলেদের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক বেশি। এই লেভেলে সেলাই ছাড়া মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হচ্ছে। লেভেল ৪-এ রয়েছে রকমারি বোরকার দোকান। সৌদি, দুবাইসহ বিদেশি বাহারি সব বোরকা মিলছে। দাম এক হাজার থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকা। এর সঙ্গে মিলিয়ে স্কার্ফ, ওড়নাও কিনছেন অনেকে।
অনেকে পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল কিনে গয়নাও দেখছেন লেভেল ৫-এ। এই লেভেলে সোনা, রূপা ও মুক্তার গয়নার দোকান বেশি। সীমিত পরিসরে বিভিন্ন ডিজাইনের জুতাও বিক্রি হচ্ছে। লেভেল ৬-এ পাদুকার দোকান বেশি। তৈরি পোশাকও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
লেভেল ৭-এ রয়েছে ইনফিনিটি, অ্যাপেক্স, বাটা, ফাইভ এস, দেশী দশের মতো নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান। অন্য অনেক লেভেলের চেয়ে এখানে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। এখানে উন্নত মানের জুতা-স্যান্ডেল ৭০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা বা এরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি ফ্যাশন হাউস রং, সাদা-কালো, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ড নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশী দশ। দেশী দশে সালোয়ার-কামিজের দাম এক হাজার ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। শাড়ি এক হাজার ২০০ থেকে আট হাজার টাকা বা তার বেশি। এখানে আলাদাভাবে কামিজ, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না পাওয়া যাচ্ছে। সব বয়সীদের জন্য রয়েছে শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা। বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে রকমারি পোশাক। দামও সহনীয়। নানা ডিজাইনের গয়না এবং ঘর সাজানোর সামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে গেলে মোস্তফা মার্টে কেনাকাটা করেন অনেকেই। সিঙ্গাপুরের নামিদামি চেইন শপ মোস্তফা মার্টের সুপরিসর দোকান রয়েছে বসুন্ধরা শপিং মলের বিশাল দুটি বেজমেন্টজুড়ে। থরে থরে সাজানো রয়েছে আমদানি করা পোশাক, রান্নাঘর ও গৃহসজ্জার উপকরণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ নিত্যব্যবহার্য হরেক পণ্য। এখানে হাল ফ্যাশনের প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভবনটিতে ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ একটি অগ্নিকান্ড ঘটে। যেখানে প্রায় ৭ জন নিহত হয় ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। অগ্নিকান্ডটিতে ১৩ তলা থেকে ১৮ তলা সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়ে যায়।
অন্যান্য: শপিং মলের মধ্যে ১২ টি বড় লিফট আছে, ৬ টি ক্যাপসুল লিফট আছে, ৩ টি এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) রয়েছে। শপিং মলের মধ্যে মোট ৪ টি বুথ আছে। শপিং মলের ২য় তলায় মহিলাদের ও ৬ষ্ঠ তলায় পুরুষদের নামাযের জায়গা আছে। প্রত্যেক ফ্লোরে পুরুষের জন্য ৩টি এবং মহিলাদের জন্য ৩টি করে মোট ৬টি টয়লেট আছে। শপিং মলের গ্রাউন্ট ফ্লোরে ১২০০ টি গাড়ি পার্ক করা যায়। প্রশিক্ষিত ৫০ জনের ফায়ার ফাইটিং টিম আছে। নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত ৪৫০ জন নিরাপত্তা কর্মী আছে। প্রতি ফ্লোরে পর্যাপ্ত সি সি ক্যামেরা রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এই শপিং মলে প্রশিক্ষিত ৩০০ জন পুরুষ ও মহিলা পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। এই শপিং মলে আরো আছে বাচ্চাদের টগি ওয়ার্ল্ড, খেলার জন্য পুল জোন এবং ব্যায়াম করার জন্য জিম। এই শপিং মলটি কেন্দ্রীয় ভাবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। লোডশেডিং এর সময় নিজস্ব জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, লিফট এবং এসকেলেটর চালু রাখা হয়।
স্টার সিনেপ্লেক্স: লেভেল ৮ এ সিনেমা হল আছে ষ্টার সিনেপ্লেক্স। হল সংখা ৩টি, আসন সংখ্যা ২৫০টি, প্রতিদিন সকাল ১০.০০ টা থেকে রাত ১০.০০ টা পর্যন্ত সিনেপ্লেক্সটি খোলা থাকে। সিনেপ্লেক্সের ডানদিকে টিকেট কাউন্টার রয়েছে। প্রিমিয়াম টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা (জনপ্রতি) এবং রেগুলার টিকেটের মূল্য ১৫০ টাকা (জনপ্রতি)। সিনেপ্লেক্সের গ্রাউন্ডের ভেতর ফাষ্ট ফুড শপ রয়েছে।
সাপ্তাহিক ও দৈনিক ছবি প্রদর্শনের সময়:
বার সকাল ম্যাট ১ম্যাট ২ ইভেনিং ১ ইভেনিং ২
শুক্রবার১১.০০দুপুর ১.৪৫বিকাল ৩.১৫বিকাল ৪.৩০সন্ধ্যা ৭.১৫
শনিবার১০.৫০দুপুর ১.০০বিকাল ৩.১৫বিকাল ৫.২৫সন্ধ্যা ৭.৩০
রবিবার১১.১৫দুপুর ১.১৫বিকাল ৩.১৫বিকাল ৪.০০ টা এবং ৫.২৫সন্ধ্যা ৭.৩০
সোমবার১১.০০দুপুর ১.৪৫বিকাল ৩.১৫বিকাল ৪.৩০সন্ধ্যা ৭.১৫
মঙ্গলবার১০.৫০দুপুর ১.০০বিকাল ৩.১৫বিকাল ৫.২৫সন্ধ্যা ৭.৩০
বুধবার১১.১৫দুপুর ১.১৫বিকাল ৩.১৫বিকাল ৪.৩০সন্ধ্যা ৭.৩০
বৃহস্পতিবার১১.০০দুপুর ১.৪৫বিকাল ৩.১৫বিকাল ৪.০০সন্ধ্যা ৭.৩০
স্টার সিনেপ্লক্সে ৩টি হলে চার্ট অনুযায়ী ছবি প্রদর্শিত হয়। স্টার সিনেপ্লক্সের ফোন নম্বর: ৯১৩৮২৬০, ৯১৩৪০৯৮। ওয়েব সাইট: www.cineplex.com
সময়সূচী: এই শপিং মলটি সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ফাষ্ট ফুডের দোকানগুলো রাত ১০টা পর্যন্ত থাকে। শপিং মলটির সাপ্তাহিক পূর্ণ দিবস বন্ধ মঙ্গলবার এবং অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে বুধবার। শপিং মলের ৮ম তলায় অবস্থিত ষ্টার সিনেপ্লেক্স সপ্তাহে সাতদিনই খোলা থাকে।
ঠিকানা: বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ১৩/ক/১ পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫। ফোন নম্বর - ৮১৫৮০৩৩-৩৪, ৮১৫৮৬২৩-২৪, ৯১১১৪৪০, ফ্যাক্স- ৮৮০-২-৯১৩৫৪৩৪, ই-মেইল- [email protected] , ওয়েবসাইট- http://www.bashundharagroup.com
- ট্যাগ:
- ফ্যাশন
- বসুন্ধরা সিটি শপিং মল