ছবি সংগৃহীত

লন্ডন ভ্রমণে কী দেখবেন? (পর্ব-২)

আফসানা সুমী
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৬:৩৮
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৬:৩৮

ফটোসোর্স: www.enjoyourholiday.com
 
(প্রিয়.কম) লন্ডন একটি চমৎকার শহর। একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভ্রমণের তালিকায় লন্ডন শহরের নাম অবশ্যই থাকবে। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত লন্ডন ২০০০ বছর পুরাতন একটি শহর। এটি মাইনোরিটি মেজোরিটি শহর নামে পরিচিত। অর্থাৎ এই শহরের বেশিরভাগ মানুষ মাইনোরিটি অর্থাৎ সংখ্যালঘু অবস্থা থেকে উঠে এসেছে। এখন লন্ডন বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী অর্থনৈতিক দেশ। চার চারটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এখানে অবস্থিত। এছাড়াও রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা যার টানে প্রতি বছর হাজারো মানুষ লন্ডন ভ্রমণে আসেন।

লন্ডন ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানব লন্ডনের আরো চমৎকার এবং বিস্ময়কর মিউজিয়াম এবং স্থাপত্যের কথা।

হাইড পার্ক এবং কেনসিংটন গার্ডেন
 
একসময় এটি ছিল রাজা অষ্টম হেনরির অবকাশ যাপন স্থান। হাইড পার্ক এর পায়ে হাঁটা পথ, সাইকেল চালানোর বিস্তৃত জায়গা আর বিচিত্র গাছগাছালি আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। সারপেন্টাইল লিডো লেকে আপনি চাইলেই সাঁতার কাটতে পারবেন, লেকের পারে বসে দেখতে পারবেন রাজ হাস আর লেকে চড়ে বেড়ানো নৌকা। অথবা আরেকটু এগিয়ে দেখতে পারেন প্রিন্সেস ডায়ানার ওয়েলস ম্যামোরিয়াল এবং ডায়না মেমোরিয়াল ঝর্ণা। কেনসিংটন গার্ডেন পথে আরো দেখতে পারবেন আলবার্ট ম্যামোরিয়াল, ইতালিয়ান গার্ডেন, ডায়না মেমোরিয়াল প্লে গ্রাউন্ড।
 


ব্রিটিশ মিউজিয়াম

লন্ডনের পর্যটন আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়াম। যাদুঘরটির স্থাপত্যশৈলী যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে তেমনি এর সমৃদ্ধ পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ আপনাকে নিয়ে যাবে প্রচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের কাছে। রোসেটা পাথর থেকে শুরু করে এলগিন মার্বেল অথবা লিন্ডোও এর জলমানব, মিশরের মমি পর্যন্ত ব্রিটিশ মিউজয়াম যেন ইতিহাসের গুপ্তধন সাজিয়ে রেখেছে তার প্রতি কক্ষে। যাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ থেকে আপনি আপনার পছন্দ এবং আগ্রহ অনুযায়ী বিভাগে ঘুরে দেখতে পারেন। মাঝে নিতে পারেন ছোট্ট একটা কফি ব্রেক এখানকার মজার বায়ুমন্ডলীয় কোর্ট রেস্তোরাঁয়। অধিকাংশ পর্যটকদের মতে, এটি তাঁদের দেখা সবচেয়ে চমৎকার এবং উপভোগ্য যাদুঘর।
 

বিজ্ঞান যাদুঘর
 
বিজ্ঞান যাদুঘর একটি ৭ তলা বিশাল ভবন। এখানে থরে থরে সাজানো হয়েছে শিক্ষামূলক একই সাথে আনন্দদায়ক উপকরণগুলো। শুরুতেই দেখতে পাবেন বিজ্ঞানের আদিম যাত্রা থেকে শুরু করে এর খুঁটিনাটি নানান দিক। এছাড়া আছে মেডিক্যাল হিস্ট্রি গ্যালারী যা আপনাকে প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা, উন্নতির ধারা সবকিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। স্পেস গ্যালারিতে আছে অবাক করে দেয়া সব মহাকাশ গবেষণার বস্তু। এর মধ্যে আছে ৩০০ মিটার উঁচু, ৬০০ কেজি স্পেসল্যাব, ২টি এক্স-রে টেলস্কোপ যা ব্রিটিশ স্পেস মিশনে অংশ নিয়েছিল। আরো আছে ক্লক মেকার কালেকশান, এখানে পুরোনো বিভিন্ন ঘড়ির বিশাল সংরহ দেখতে পারেন। এমন আরো বিভিন্ন বিস্ময়ে ভরপুর যাদুঘরটি হতে পারে স্মরনীয় অভিজ্ঞতা।
 

ভিক্টোরিয়া এন্ড আলবার্ট মিউজিয়াম
 
প্রাসাদসম যাদুঘরটির নামকরণ করা হয় ১৯ শতকের রাজজুটি ভিক্টোরিয়া এবং আলবার্টের সম্মানে। সংক্ষেপে যাদুঘরটি V & A নামে পরিচিত। বিভিন্ন শিল্পনিদর্শনের দেখা পাবেন আপনি এখানে। নিদর্শনগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী ছিমছাম ভাবে সাজানো। বিভাগগুলো হল স্থাপত্য, টেক্সটাইল, আসবাব, চিত্রকর্ম, অলংকার ইত্যাদি। বিশাল যাদুঘরটি দেখার সুবিধার্থে এই বিভাজন করা হয়েছে। স্থায়ী এই প্রদর্শনীর পাশাপাশি এখানে অস্থায়ী কিছু প্রদর্শনীও হয়ে থাকে। এখানে পর্যটক গাইড বিনামূল্যে দেয়া হলেও বিশেষ প্রদর্শনীগুলোর জন্য আপনাকে টিকেট সংগ্রহ করতে হতে পারে।

 
লন্ডন আই
 
২০০০ সালে নির্মান শেষে উন্মুক্ত করা হয় লন্ডন আই। এটি সে সময়ের লন্ডনের সবচেয়ে বড় চাকা এবং সর্বোচ্চ ভিউইং পয়েন্ট ছিল। চাকাটির উপরে উঠতে হলে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে। প্রথমবার লন্ডন ভ্রমণে গেলে অবশ্যই এখানে যাবেন কারণ এর উপর থেক এক নজরে দেখে নিতে পারবেন পুরো লন্ডন শহরটি। এটি সকাল ১০টা থেকে খোলা থাকে। তবে টিকেট সংগ্রহের জন্য ৯.৩০ টা থেকে কাউন্টারটি খুলে দেওয়া হয়।

 
রিজেন্ট পার্ক
 
লন্ডনের সবচেয়ে সুন্দর পার্ক হল রিজেন্ট পার্ক। একটি পার্কে যত রকমের আনন্দ নেয়া সম্ভব রিজেন্ট পার্কে যেন তারো বেশি আয়োজন রাখা হয়েছে। এখানে লেকে নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন। আছে চমৎকার একটি উন্মুক্ত থিয়েটার, অনেকগুলো বাগান যেখানে খেলায় খেলায় জিততে পারবেন পুরস্কার, আছে খেলার মাঠ, আইসক্রিম পার্লার, একটি পাব এমনকি লন্ডন চিড়িয়াখানা। আরো চমক আছে রানী ম্যারির বাগানে, এখানে দেখতে পাবেন শহরের সবচেয়ে বড় গোলাপ বাগান (৪০০ টি ভিন্ন প্রজাতির ৩০,০০০ এরও বেশি গোলাপ)। লন্ডন চিড়িয়াখানাটি দেখা সময়সাপেক্ষ, তাই পার্কটিকে পুরোপুরি উপভোগ করতে হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভাল। 

লন্ডন ভ্রমণে আরো যোগ করতে পারেন ইপ্যারিয়াল অয়্যার মিউজিয়াম, চার্চিল অয়্যার রুম, হর্স গার্ড প্যারেড, ঘার্কিন ভবন, টাওয়ার ব্রীজ, গ্লোব থিয়েটার, ট্রাফালগার স্কয়ার, লন্ডন পার্লামেন্ট ভবন ইত্যাদি। লন্ডনকে আরো বর্ণিল ভাবে উপভোগ করতে হলে সময় নিয়ে যেতে পারলে ভাল হয়। পরিবারের ছোট-বড় সকল সদস্যকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য লন্ডন শহর অতুলনীয়।
 


লিখেছেন-

আফসানা সুমী

ফিচার রাইটার, প্রিয় লাইফ
প্রিয়.কম