ছবি সংগৃহীত

যে ৫টি কারণে কিনতে পারেন মটোরোলা মটো জি

Rahat Rahman
লেখক
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০১৪, ০৭:৪০
আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৪, ০৭:৪০

(প্রিয় টেক) গুগলের মালিকানায় যাবার পর বাজারে আনা গুগল-মটোরোলার দ্বিতীয় স্মার্টফোন মটোরোলা মটো জি। মটোরোলার নতুন এই স্মার্টফোন এরই মাঝে বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাজেট ফোনে পরিণত হয়েছে। গুগল মটোরোলার মাধ্যমে বাজারে এমন একটি স্মার্টফোন আনতে চেয়েছিল যাতে প্রিমিয়াম ফোনগুলেোর প্রায় সবরকম ফিচারই থাকবে তবে দামের দিক দিয়ে যা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ কিংবা আইফোন ৫এস এর মত প্রিমিয়াম ফোনগুলোর এক তৃতীয়াংশেরও কম হবে। মটোরোলা তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে কিনা তা এখন সকলের কাছেই স্পষ্ট। এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক মটোরোলা মটো জি এর স্পেসিফিকেশন এবং যে ৫টি কারণে বেছে নিতে পারেন এই ডিভাইস।

Motorola Moto G

এক নজরে মটোরোলা মটো জি

  • ডিসপ্লেঃ ৪.৫ ইঞ্চি প্রসস্ত ৭২০ পিক্সেলের এইচডি আইপিএস স্ক্রিন
  • সিপিইউঃ ১.২ গিগাহার্জ কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪০০ কোয়াড কোর প্রসেসর
  • জিপিইউঃ অ্যাড্রিনো ৩০৫
  • র‍্যামঃ ১ গিগাবাইট
  • স্টোরেজঃ ৮ গিগাবাইট / ১৬ গিগাবাইট
  • ক্যামেরাঃ ৫ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা ও ১.৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
  • অপারেটিং সিস্টেমঃ অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩ জেলি বিন, ৪.২.২ কিটক্যাটে আপগ্রেডেবল
  • কানেক্টিভিটিঃ ৩জি, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৪.০, জিপিএস
  • ডাইমেনশন্সঃ ৬৫.৯ x ১২৯.৯ x ১১.৬ মিলিমিটার
  • ওজনঃ ১৪৩ গ্রাম

পারফরম্যান্স

বাজেট ফোন হলেও পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে মটোরোলা মটো জি অন্যান্য বাজেট ফোন থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। শুধু এগিয়েই নয়, এটি অনেক হাই এন্ড ডিভাইসের সাথেও তুলনীয়। এতে লো-পাওয়ারের ১.২ গিগাহার্জের কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪০০ কোয়াড কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হলোও এটি অনেক শক্তিশালী ডুয়াল কোর প্রসেসরের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে। তাছাড়া ফাস্ট রেসপন্সের জন্যও মটো জি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। স্ন্যাপড্রাগন ৪০০ প্রসেসর এর পাশপাশি এতে অ্যাড্রিনো ৩০৫ জিপিইউ থাকায় গেম ও শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশনও খুব সহজে চালানো সম্ভব। তবে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে যখন ২ গিগাবাইট র‍্যাম সাধারণ হতে চলেছে তখন মটোরোলা ডিভাইসটিতে মাত্র ১ গিগাবাইট র‍্যাম দিয়েছে। ফলে অনেকেই একে মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখছে। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, ১ গিগাবাইট র‍্যাম থাকার পরও মটো জি-তে সামান্য পরিমাণও ল্যাগ নেই যার অন্যতম কারণ হলো এটি পিওর অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য অপটিমাইজড। এছাড়া বাজেটের কথা চিন্তা করলে ১ গিগাবাইট র‍্যাম আমাদের কাছে যথাযথই মনে হয়েছে। এবার আসা যাক স্টোরেজে। মটোরোলা মটো জি ৮ গিগাবাইট ও ১৬ গিগাবাইটের দুটি সংস্করণে এলেও এতে এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার কোনো সুবিধা নেই। তবে মটো জি ব্যবহারকারীরা গুগল ড্রাইভে ৫০ গিগাবাইট অতিরিক্ত ক্লাউড স্টোরেজ পাবেন। ফলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য স্টোরেজের কোন সীমাবদ্ধতা থাকবেনা। তাছাড়া প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটলের পাশাপাশি শুধুমাত্র আপনার পছন্দের গান, মুভি কিংবা ভিডিও রাখার জন্য ১৬ গিগাবাইটই যথেষ্ট। বাজেটের দিক বিবেচনা করলে এটুকু সীমাবদ্ধতা খুব সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
Motorola Moto G

ব্যাটারি ব্যাকআপ

অসাধারণ ব্যাটারি লাইফের ডিভাইস আনার কারণে প্রযুক্তি জগতে এরই মাঝে মটোরোলার বেশ সুনাম রয়েছে। আর মটোরোলা মটো জি -ও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ব্যবহারকারীদের তথ্যে জানা গেছে, ১৯৫০ mAh ব্যাটারি থাকা সত্ত্বেও টানা ব্যবহারে মটোরোলা মটো জি প্রায় ২৪ ঘন্টা ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। টানা ওয়েব ব্রাউজিং, ইমেইলিং কিংবা মিউজিক শোনার পরও মটোরোলার এই ডিভাইস পুরোপুরি ১ দিন ব্যাকআপ দিতে পারে। এছাড়া সাধারণ ব্যবহারে এটি প্রায় ২ দিন পর্যন্ত স্ট্যান্ডবাই থাকে। ৩জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাটারি ব্যাকআপ অতুলনীয়। কেবল বাজেট ফোনই নয়, ৩জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার পরও এটি বর্তমানে বাজারে থাকা যেকোন ফোনের চেয়ে বেশি ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। ফলে এটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল ৩জি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি আদর্শ স্মার্টফোন হতে পারে।

পিওর অ্যান্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স

পারফরম্যান্সেই উল্লেখ করেছিলাম ডিভাইসটি পিওর অ্যান্ড্রয়েড অপটিমাইজড। অর্থাৎ মটো জি এর দ্রুত ও ল্যাগবিহীন ইউজার ইন্টারফেস, অ্যাপ্লিকেশন লোডিং এবং সোয়াপিং এর মূলেই রয়েছে এর পিওর অ্যান্ড্রয়েড অপটিমাইজেশন। মটো জি এর হার্ডওয়্যারের পিওর অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারে যেন সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স পাওয়া যায় ডেভলপাররা সেই চেষ্টাই করে গেছে। এছাড়া গুগল প্লে স্টোরের প্রায় ৮৫০,০০০টি স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপ্লিকেশনের প্রায় সবকটিই মটো জি সমর্থন করে। অর্থাৎ মটো জি ব্যবহারকারীরা অ্যাপ্লিকেশন সমর্থন নিয়ে কোনরকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন না যা গুগল মালিকানাধীন মটোরোলা থেকে প্রত্যাশিতই ছিল। বর্তমানে ডিভাইসটির সাথে অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩ জেলি বিন দেয়া হলেও এই বছরের জানুয়ারিতেই অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট আপডেট দিচ্ছে গুগল।
Motoroloa Moto G
এর বাইরেও মটো জি তে মটোরোলা বেশ কিছু সফটওয়্যার টুইক যুক্ত করেছে যা একে অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস থেকে একে আলাদা করে তুলেছে। যেমন এতে স্টক অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে মটোরোলা অ্যাসিস্ট নামের একটি নতুন সার্ভিস দেয়া হয়েছে যা আপনার ক্যালেন্ডার এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে। গুগল অ্যাসিস্ট এর অন্যতম একটি সুবিধা হলো আপনার মিটিং এর সময় এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ফোন সাইলেন্ট করে দেবে। এছাড়া সেসময় কোন কল এলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলারকে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে দেবে। মটো অ্যাসিস্ট এর মাধ্যমে আপনি “নাইট আওয়ার” কিংবা আপনার প্রয়োজনীয় কোন কাজের সময় ঠিক করে সে সময় ফোন মিউট করে রাখতে পারবেন। তাছাড়া সেসময় আপনার প্রিয় মানুষদের কনটাক্ট সেখানে যুক্ত করে দিতে পারবেন। এতে প্রিয় মানুষদের কেউ দুবার কল দিলে তখন সেটি সাধারণ কল হিসেবে গণ্য করবে। এসব ছাড়াও মটো জি এর ব্লুটুথ সেটিংসে “ট্রাস্টেড ডিভাইসেস” নামের একটি ফিচার যুক্ত করা হয়েছে যা আপনার মটো জি ডিভাইসটি আনলক করে রাখবে যখন ট্রাস্টেড লিস্টের থাকা ডিভাইস আপনার কাছাকাছি থাকবে। এতে এসব ব্লুটুথ ডিভাইস যেমন: স্পিকার, হেডফোন ইত্যাদি দ্রুত কানেক্ট করতে পারবেন। আর এই সব সুবিধাই পাবেন গুগলের পিওর অ্যান্ড্রয়েড এর ভেতরেই।

ক্যামেরা

মটোরোলা মটো জি-তে মাত্র ৫ মেগাপিক্সেল এর রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করা হলেও এর ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনে বেশ কিছু টুইক যুক্ত করেছে মোটোরোলা। মটো জি-তে ছবি তোলার সময় ক্যামেরার অপশনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরে যায়, ফলে পুরো ছবির ফ্রেমটিই স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়া এর ক্যামেরাতে হাই ডাইনামিক রেইঞ্জ ফটোগ্রাফি, ফ্ল্যাশ সেটিংস, প্যানোরামা মোট এবং স্লো মোশন ভিডিও, অটো ফোকাস সেটিংস বেশ কিছু অ্যাডভান্স ফিচার রয়েছ যা বাম পাশে একটি পুল-আউট মেনুতে রয়েছে। তাছাড়া পূর্বে তোলা ছবিগুলোও ডানপাশের একটি পুল-আউট মেনুতে রাখা হয়েছে।
Motorola Moto G Camera
৫ মেগাপিক্সেলের তুলনায় এর ছবির কোয়ালিটিও বেশ ভালো। জুম করার ফিচারটি খুব একটা ভাল না হলেও এর শাটার স্পিড বেশ ভাল, ফলে এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ছবি তোলা সম্ভব। এছাড়া মটো জি এর মাধ্যমে ৭২০ পিক্সেলের হাই ডেফিনিশনের ভিডিও রেকর্ড করাও সম্ভব।

দাম

মটোরোলা মটো জি কেনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এর দাম। মটোরোলা এর বিক্রির হার বাড়াতেই মূলত এর দাম ঠিক করেছে। বর্তমানে মটো জি-এর ক্যারিয়ার আনলকড ৮ গিগাবাইট ভার্সনটির দাম মাত্র ১৭৯ ডলার এবং ১৬ গিগাবাইট ভার্সনটির দাম মাত্র ১৯৯ ডলার। বাজেট ফোন হিসেবে প্রিমিয়াম ফোনের প্রায় সবরকম ফিচার থাকায় এই দামের মাঝে নিঃসন্দেহে এটিই এখন সেরা ফোন।