ছবি সংগৃহীত

মেনোপজ বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া, জেনে নিন কিছু জরুরী বিষয়

Fatema Khatun
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫, ০৩:৪৬
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫, ০৩:৪৬

(প্রিয়.কম) - মেনোপজ আসলে কী? একটি নারীদেহে সময়ের ব্যবধানে কয়েকটি ফিমেল বা মেয়েলি হরমোন দ্বারা আবর্তিত ও পরিচালিত হয়। জীবনের প্রারম্ভে একপর্যায়ে নারীদেহ যৌবনের সম্ভারে ভরে ওঠে এবং সাধারণত তের বা চৌদ্দ বছর বয়সে একটি মেয়ে যৌবনের সমাহারে সজ্জিত হয়। তারপর সুদীর্ঘ ৩০ বা ৪০ বছর আনুমানিক ৪৫ বা ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত চলে যৌবনের এই কার্যক্রম। এরপর আসে অন্য একটি অধ্যায় এবং ফিমেল হরমোনগুলো তাদের ফাংশন বা কাজ আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয় কারণ, ততদিনে তারা রিক্তপ্রায়। এ পর্জায়ে নারীর মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় মেনোপজ।

ক্লাইমেকটারিক কী?

মেনোপজের সময় ডিম্বকোষের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ডিম ফাটেনা বা ওভুলেশন হয় না, মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে কিছু কিছু দৈহিক পরিবর্তন দেখা যায়, যেমন- ১। শরীরে কিছু বাড়তি মেদ জমে ২। স্তনের আকার ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যায় ৩। হজমের ব্যাঘাত হয় ৪। কখনো কখনো রাতের ঘুমে সমস্যা হয় ৫। অনেকের মাথার চুল পড়ে যায় আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে, মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হওয়ার আগে তা বৃদ্ধি পায় অথবা মাসে তিন-চার বার হয় বা অনিয়মিত ভাবে হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। মেনোপজের আগে মাসিক ঋতুস্রাবের পরিমাণ সল্প হয় ও ঋতুস্রাবের স্থায়িত্বকালও কমে আসে। মেনোপজের আগে মাসিক ঋতুস্রাব বেড়ে গেলে বা অনিয়মিত হলে বুঝতে হবে কোন অর্গানিক কাজ বা ক্ষতিকর কারণ আছে। যেমন- জরায়ু বা ইউটেরাসে টিউমার থাকতে পারে, এমনকি তা জরায়ুর মুখ বা সারভিক্সে ক্যানসারের পূর্বলক্ষনও হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।

শারীরিক পরিবর্তন

মেনোপজ হয় ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে। এ সময়ে শরীরে বাড়তি মেদ জমে যাওয়া এবং হজমের ব্যাঘাত হওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া ও ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া খুব স্বাভাবিক।

মানসিক পরিবর্তন

এ সময়ে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক নারীই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তাদের ধারণা মাসিক বন্ধ হওয়া মানে শরীরের বদরক্ত যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে বদরক্ত শরীরে জমে গিয়ে নানা প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমন- মাথা ধরা, চোখের জ্যোতি কমে যায়, ঘুম কম হওয়া, পেট মোটা হওয়া ইত্যাদি অপ-ধারণা। এসব উপসর্গের কোনোটিই মাসিক ঋতুচক্রের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বয়স হলে শরীর মুটিয়ে যায় এবং সেই সাথে পেটেও চর্বি জমে, আর চোখের জ্যোতি প্রত্যেকেরই চল্লিশ বছর বয়স হলে কমতে শুরু করে- এটা প্রাকৃতিক নিয়ম।

মানসিক বিপর্যয়

অনেক মহিলাই মনোপজকে মন থেকে মেনে নিতে পারেন না। কারণ, তাদের বদ্ধমূল ধারণা জীবনের সব কিছুই শেষ হয়ে গেল, এভাবে বাঁচার কোন অর্থ নেই। কথাটা ঠিক নয়। মেনোপজ মানে জীবনের এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে পদার্পণ। এ নতুন অধ্যায়টি অবাঞ্ছিত নয়- একান্তভাবে প্রয়োজনীয় ও বাঞ্ছিত। সংসারে এমন একজন মহিলার মতামতের খুবই বেশি। আর স্বামীর কাছেও তার দাম অনেক বেড়ে যায় কারণ কোন সুচিন্তিত মতামত দিতে তিনি খুবই সক্ষম।

মেনোপজ হলে স্বামীর সাথে সহবাস করা সম্ভব কি না?

এই চিন্তাতেই অনেক মহিলাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের আশঙ্কা নিতান্তই বাতুলতা মাত্র। এ বয়সে সন্তান গর্ভে আসা বিব্রতকর চিন্তা থেকে মুক্ত হলেও সহবাসে লুব্রিকেন্ট ( বিশেষ ধরনের জেল ) ব্যবহার জরুরি।

কিছু অসুখ-বিসুখ

বয়স ৪০ হলে স্বাভাবিক ভাবেই একজন নারীর ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। ডায়বেটিস দেখা দিতে পারে এবং বাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা উচিত। যেহেতু তিনি মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তাই এ পরিবর্তন তাকে মেনে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে আশ্বস্ত করতে হবে। সব সময় তার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল থাকা উচিত।

চিকিৎসকের প্রয়োজন আছে কি?

মেনোপজ একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক নিয়ম এই বিষয়টি একজন নারীকে খুব ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করতে না পারার কারণে অনেকের মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা দেখা যায়। দেখা গেছে, রোগীকে মানসিকভাবে ঠিকমত আশ্বস্ত করতে পারলে ৭৫ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। বাকি ২৫ জনের সামান্য চিকিৎসা, যেমন- দুশ্চিন্তামুক্ত করার জন্য ট্রাংকুলাইজার ও ঘুমের জন্য সিডেটিভ দিতে হয়।

ফিমেল হরমোন কি দেয়া উচিত?

ফিমেল হরমোন দেয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে কিছু কিছু সিলেক্টিভ ক্ষেত্রে সল্পমাত্রায় অল্প দিনের জন্য ইস্ট্রজেন দেয়া যেতে পারে। ধীরে ধীরে এই ইস্ট্রজেন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে জরায়ুর ক্যানসারের মতো সাংঘাতিক ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে মেনোপজ একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক অবস্থা। এটা নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করা একেবারেই উচিত নয়। তথ্যঃ হেলথ ম্যাগাজিন, অধ্যাপক ডাঃ সুলতানা জাহান