
ছবি সংগৃহীত
মৃত্যু যন্ত্রণা কী এবং সবাইকেই কী এই যন্ত্রণা পেতে হবে?
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৩:৫২
ইমাম গাযালি রহ. বলেন, রুহের কবযের প্রক্রিয়া ব্যক্তির পাঁয়ের দিক থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে পাঁয়ের রুহ, এরপর পাঁয়ের কব্জি বা গোছা, এরপর উরুদেশ, এরপর বক্ষদেশে এসে রুহ আটকে যায়। তখন মানুষের বাকশক্তি লোপ পায়। এরপর রুহ কণ্ঠনালীতে পেঁŠছে যায়। তখন সে ব্যক্তি কোনো কিছু দেখতেও পায় না, শুনতেও পায় না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ অর্থাৎ সেদিন পাঁয়ের সঙ্গে পাঁ জড়িয়ে যাবে। -সুরা কিয়ামা : ৩০ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ অর্থাৎ এরপর কেনো নয়? সেদিন প্রাণ কন্ঠাগত হবে। -সুরা ওয়াকিআ : ৮৩ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, كَلاَّ إِذَا بَلَغَتْ التَّرَاقِيَ ○ وَقِيلَ مَنْ رَاقٍ ○ وَظَنَّ أَنَّهُ الْفِرَاقُ ○ অর্থাৎ কখনো নয়, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে, এবং বলা হবে, ‘কে তোমাকে রক্ষা করবে?’ তখন তার প্রত্যয় হবে যে, এটাই বিদায়ক্ষণ। -সুরা কিয়ামা : ২৬-২৮ মৃত্যুর যাতনা ও কঠোর কথা কুরআনে কারিমের একাধিক স্থানে সবিসত্মারে এসেছে। যেমন কোথাও ইরশাদ হয়েছে, وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلآئِكَةُ بَاسِطُواْ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُواْ أَنفُسَكُمُ অর্থাৎ যদি তুমি দেখতে যখন যালিমগণ মৃত্যুযন্ত্রণায় পড়বে এবং ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, ‘তোমাদের প্রাণ বের করো’। -সুরা আনআম : ৯৩ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, فَلَوْلا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ অর্থাৎ এরপর কেনো নয়? সেদিন প্রাণ কন্ঠাগত হবে। -সুরা ওয়াকিআ : ৮৩ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُواْ الْمَلآئِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُواْ عَذَابَ الْحَرِيقِ○ অর্থাৎ তুমি যদি দেখতে পেতে ফিরিশতাগণ কাফেরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করছে এবং বলছে, ‘তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ -সুরা আনফাল : ৫০ এ সম্পর্কে রাসুলে আকরাম সা. হতে অসংখ্য হাদিস ও সাহাবায়ে কেরাম হতে বেশ কিছু মুল্যবান বাণী বর্ণিত রয়েছে। সেগুলো জানতে হলে পাঠকবর্গকে ‘শরহুস সুদুর’ ও ইমাম গাযালি রহ.-এর ‘ইয়াই্ইয়াউল উলুম’ অধ্যয়ন করতে হবে। সেখান থেকে নির্বাচন করে কিছু হাদিস ও বর্ণনা পাঠকবর্গের সামনে তুলে ধরা হলো। ১. ইবনে আবি শাইবা, ইবনে আবিদ দুনিয়া এবং ইমাম আহমদ রহ. হযরত জাবের রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা বনি ইসরাঈলের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করো। কেননা সেখানে তোমাদের জন্যে অনেক চমকপ্রদ শিক্ষা রয়েছে। এরপর নবি করিম সা. নিজেই সেই জাতির বেশ কিছু ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন, বনি ইসরাঈলের একটি দল একদা একটি কবরস্থানের নিকটে এসে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, আমরা দুই রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে মিনতি করবো, তিনি যেনো কবর হতে কোনো একজনকে উঠিয়ে আমাদের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা তার কাছ থেকে মৃত্যুর অবস্থা জেনে নিতে পারবো। যদি আমরা এ কাজটি করতে পারি তাহলে তা আমাদের জন্যে অনেক উপকারী হবে। এরপর তারা সেরকম সিদ্ধামত্ম নিয়ে দুরাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর দরবারে আরজি জানালো। ইত্যবসরে একজন কালো বর্ণের মুরদা কবর থেকে উঠে আসলো। লোকটির কপালে সেজদার নিশান পড়া ছিলো। সে বললো, তোমরা আমার কাছে কী জানতে চাও? একশ বছর পূর্বে আমার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু এখন পর্যমত্ম মৃত্যুর তিক্ত বিভীষিকা আমি ভুলতে পারিনি। তোমরা আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দুআ করো, তিনি যেনো আমাকে পূর্বের মতো করে দেন। ২. হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, মালাকুল মাউতের থাবা এক হাজার তরবারির আঘাত হতেও কঠিন হবে। -শরহুস সুদুর : ২০ ৩. হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. হতে বর্ণিত আছে, করাত দিয়ে চিড়লে বা কাঁচি দিয়ে চামড়া ছিললে কিংবা কাউকে তপ্ত পানির পাতিলায় নিক্ষেপ করলেও সে পরিমাণ কষ্ট বোধ হবে না যে পরিমাণ কষ্ট মৃত্যুর সময় বোধ হবে। -ইয়াইইয়াউল উলুম ৩৯৪/৪ ৪. হযরত মুসা আ.-এর রুহ যখন আল্লাহ তাআলার দরবারে হাযির করা হয় তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, কি হে মুসা, মৃত্যুযন্ত্রণা কেমন বোধ করলে? উত্তরে তিনি বললেন, একটি জীবমত্ম পাখিকে গরম তপ্ত পানির ডেকচিতে ফেললে যেমন হয় আমার ঠিক তেমন অনুভূতি হয়েছে। ৫. অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুসা আ. আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কোনো কসাই যদি কোনো জীবমত্ম বকরীর চামড়া ছিলে তাহলে ওই বকরীর কাছে যেমন ভীষণ কষ্টকর অনুভূতি হবে আমারও ঠিক সেরকম অনুভূতি হয়েছে। ৬. আরেক বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুসা আ. উত্তরে বলেছেন, হে পরওয়ারদেগারে আলম, পশম ও তুলোর মধ্যে অনেকগুলো কাঁটা বিধলে তা তোলার সময় যে ধরণের কষ্ট বোধ হয়, মৃত্যুর স্বাদ অনেকটা সেরকম। -ইয়াইইয়াউল উলুম ৭. তবরানি শরিফে হযরত আবু কতাদা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, পিপড়ার কামড়ের কারণে যতটুকু কষ্ট বোধ হয় একজন শহিদ মৃত্যুর সময় অনেকটা সেরকম কষ্ট বোধ করবে। মূল : আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি রহ. অনুবাদ : মাওলানা মিরাজ রহমান