ছবি সংগৃহীত

মানুষ কেন পোশাক পরে?

মাওলানা সাঈদ কাদির
লেখক
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০১৬, ০২:৫০
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬, ০২:৫০

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাঁরই নিযুক্ত প্রতিনিধি। বিশ্বপ্রতিপালকের প্রতিনিধি হওয়ায় অন্য সব প্রাণী থেকে মানবজাতি একটু আলাদারকম মর্যাদাবান। সৃষ্টিগতভাবে একমাত্র মানুষের মাঝেই শালীনতাবোধ, সৌন্দর্যপ্রিয়তা ও সহজাতভদ্রতার সমাহার দেখা যায়, যা অন্য কোন সৃষ্টির মাঝে নেই। মানুষ ও প্রাণীতে পার্থক্য এখানেই। এছাড়া মানুষ গুপ্তাঙ্গ ঢেকে রাখে। পোশাক পরিধান করে। এটি তার শালীন হবার বড় পরিচয়। আর গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ দান করেছেন পোশাক। কুরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে আয়াত নাজিল হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, 'হে বনী-আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম। (সূরা আরাফ, আয়াত ২৬।)' সার কথা হচ্ছে-- পোশাক মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিরাট নেয়ামত। অফুরান দান। সুতরাং এর যথাযথ মূল্যায়নও হওয়া উচিত। এখানে শুধু মুসলমানদেরকে নয়, গোটা মানবজাতিকেই সম্বোধন করা হয়েছে। এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদন ও পোশাক পরিধান মানবজাতির জন্য একটা সহজাত প্রবৃত্তি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষই এই নিয়ম পালন করে। আয়াতে পোশাক পরিধানের তিনটি উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। ১. শরীর ঢেকে রাখার জন্য পোশাক। যে-সব অঙ্গ খুলে রাখাকে সাধারণত খারাপ মনে করা হয়, সে-সব অঙ্গ ঢেকে রাখার জন্য মানুষ প্রধাণত পোশাক পরিধান করে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়া'লা মানবজাতির ওপর দয়া করে তাদের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার জন্য (নেয়ামত স্বরূপ) পোশাক দান করেছেন। ০২. সাজসজ্জার জন্য পোশাক। সাজসজ্জা গ্রহণ করার জন্য মানুষকে পোশাক দান করা হয়েছে। সেজেগুজে থাকার জন্য আল্লাহ তায়া'লা মানবজাতির জন্য নাজিল করেছেন পোশাক। মানুষ সৃষ্টির সেরা মাখলুক। সুতরাং মানুষকে শালীন হতে হবে। অন্য প্রাণীর তুলনায় পরিপাটি থাকতে হবে তাদেরকে। অতএব মানবশরীরের সাজসজ্জাও প্রয়োজন। অন্য কোন জীবের জন্য পোশাক নেই। সাজসজ্জাও নেই। মানুষের জন্য এটি স্বাতন্ত্র্য যে, মানুষ পোশাক-আশাক পরিধান করে। পরিপাটি থাকে। সাজসজ্জা গ্রহণ করে। এতে এটাও বোঝা যায় যে, সামর্থ্য অনুযায়ী শালীন সাজসজ্জা গ্রহণ করা শুধু জায়েযই নয়, উত্তমও। ০৩. পরহেজগারির পোশাক। এটি বাহ্যিক পোশাক নয়, খোদাভীতির পোশাক। অর্থাৎ মানুষ বস্ত্রাবৃত হয়ে যেমন শরীরকে নগ্নতা ও অন্যান্য ক্ষতিসাধন থেকে হেফাজত করে, তেমনি খোদাভীতির পোশাক অন্তরকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখে। যা মানুষের পরকালীন মুক্তির জন্য একান্ত জরুরি। মাওলানা সাঈদ কাদির সহকারী পরিচালক, মোহাম্মাদিয়া কওমী মাদরাসা, কোনাবাড়ি, গাজীপুর।