ছবি সংগৃহীত

ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে ব্রিটিশ আনুগত্য: বিতর্কে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং!

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০১৫, ১২:৫১
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫, ১২:৫১

(প্রিয়.কম) কিছুদিন আগে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত থেকে ‘অধিনায়ক’ শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে ‘মঙ্গল’ শব্দটির প্রয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পরেন রাজস্থানের গভর্নর কল্যাণ সিং। তিনি বলেন, ‘জন-গণ-মন-অধিনায়ক জয় হে, এই লাইনে অধিনায়ক কে?’ ‘অধিনায়ক’ শব্দে ব্রিটিশের প্রশংসা করা হয়েছে বলে তিনি জানান লাইনটি বদলে ফেলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন গানটি হওয়া উচিত, জন-গণ-মঙ্গল গাহে। কলকাতার প্রথমবারের মতো গানটি গাওয়ার ১০০ বছরেরও বেশি সময় পরে এই প্রথম গানটি নিয়ে কেউ এমন মন্তব্য করে। তবে এ ধারণা তার একার নয়। সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কেন্দে কাজুও বলেন ১৯৫০ সালে গাওয়া ভারতের প্রথম এ জাতীয় সঙ্গীতটি ব্রিটিশ শাসক জর্জ ভি কে সম্মান করেই গাওয়া হয়। আর তার এই বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণে তার কাছে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গানটি ১৯১১ সালে ব্রিটিশ রাজার ভারত সফরের সময় রচনা করা হয়। এটা কোনোভাবেই জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে না বরং এটি শাসকের প্রতি আনুগত্যকে বোঝায়। সেসময় ভারতে ব্রিটিশরা শাসন করতো। আর ব্রিটিশদের একটি সম্মেলনে রাজাকে অভর্থ্যনা জানানোর উদ্দেশ্যেই গানটি গাওয়া হয়। সংস্কৃত বাংলায় লেখা গানটিকে নিয়ে বরাবরই বিতর্ক ছিলো। কারো কারো মতে, গানটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আনুগত্যের গান। কেউ আবার বলেন এই গানের মাধ্যমে ভারতের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষদের জীবন প্রতিফলিত হয়। কিন্তু ইতিহাসবিদেরা জানান জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এইসকল মন্তব্যের কারণে বরং গানটির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ছোট করা হচ্ছে। এশিয়াতে প্রথম নোবেল পাওয়া এই সাহিত্যিক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হিসেবে নাইট উপাধি প্রত্যাখান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ব্ই লেখা ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানান, গানটি নিয়ে এমন মন্তব্য সম্পূর্ণ গুজব। এটি নিয়ে আর আলোচনার কিছু নেই। তবে ইতিহাস বলছে রবীন্দ্রনাথ এই গানটি লেখেন ১৯১১ সালের ১১ ডিসেম্বর এবং ২৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ রাজা জর্জ ভিকে গানটির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ১৯১২ সালে হিন্দু ধর্মালম্বীদের আন্দোলনের সময়ও এই গানটি গাওয়া হয় বলে জানান সব্যসাচী। তিনি বলেন, এতদিন পরে গানটি নিয়ে এমন ধারণা হওয়া কারণ হচ্ছে গানটি দিল্লি দরবারে গাওয়ার কথা ছিলো রবীন্দ্রনাথের। ১৯৩৭ সালের নভেম্বরে রবীন্দ্রনাথ তার সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি পাঠান যেখানে লেখা ছিলো ৫ম হোক কিংবা ৬ষ্ঠ কোনো জর্জই মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে পারে না। তাই জর্জকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তিনি এই গান লিখেছিলেন এমন মন্তব্য ঠিক নয়। সব্যসাচী বলেন, জন-গণ-মন কথাটি আসলে একজন প্রকৃত নেতার কথা বলা হয়েছে যিনি যেকোনো বিপদে দেশবাসীকে পথ দেখাবেন। এখানে রাজা জর্জকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। এখানে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়ে থাকতে পারে কিন্তু কখনোই রাজা জর্জের কথা বলা হয়নি বলেও জানান তিনি। তথ্যসূত্র: বিবিসি