লোহা দিয়ে তৈরি হয় চুম্বক আর তাকে ব্যবহার করা যায় দিক নির্ণয়কারী কম্পাস হিসেবে। কিন্তু চুম্বক দিক নির্দেশ করে কিভাবে? এর কারণ হলো, আমাদের পৃথিবী নিজেই একটা বিশাল আকৃতির চুম্বক। এর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু বরাবর একটি চুম্বকের দণ্ড কল্পনা করে নেওয়া যায় যার আছে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই চৌম্বক শক্তির উৎস হল পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা গলিত ধাতুর প্রাচুর্য। মহাশূন্য থেকে আসা ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে এই চৌম্বক ক্ষেত্র। আবার এর কল্যানেই আমরা সাধারণ একটি চুম্বক দিয়ে দিক নির্ণয় করতে পারি। একটা চুম্বকের টুকরোকে যখন মুক্তভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তখন তা পৃথিবীর শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে একই সমতলে থাকতে চায়। ধরে নেওয়া হয়, পৃথিবীর উত্তর মেরু আসলে এর চৌম্বকীয় দক্ষিণ মেরু। আর যেহেতু চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে, তাই একটুকরো চুম্বকের উত্তর মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর চৌম্বক শক্তি দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং সেদিকে ঘুরে যায়।

এবার আসুন দেখা যাক সাধারণ একটি চুম্বক তৈরি হয় কি করে। লোহা, নিকেল এবং কোবাল্টের রয়েছে চুম্বকে পরিণত হবার ক্ষমতা। এই ধাতুগুলোর মাঝে রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চৌম্বক অঞ্চল বা ডোমেইন। এসব ডোমেইনের আছে আলাদা আলাদা উত্তর ও দক্ষিণ মেরু। সাধারণ অবস্থায় এসব ডোমেইন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকে ওই ধাতুর তৈরি পদার্থের ভেতরে। এর ফলে তৈরি চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো একে অপরের প্রভাব নষ্ট করে দেয় এবং সামগ্রিকভাবে পুরো বস্তুটির কোনও চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকে না। শক্তিশালী কোনও চৌম্বকক্ষেত্রের আওতায় এলে এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডোমেইনগুলো সুন্দরভাবে সজ্জিত হয়ে যায়। সবগুলো ডোমেইনের উত্তর মেরু এক দিকে আর দক্ষিণ মেরু অপর দিকে মুখ করে ফেলে। এর ফলে পুরো বস্তুটিই চুম্বকে পরিণত হয় এবং স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিলে এটি কম্পাসের মতো উত্তর-দক্ষিনে মুখ করে দিক নির্দেশ করবে।
এই মূলনীতি অনুসরণ করে আপনি নিজেই সহজে তৈরি করতে পারবেন এমন একটি চৌম্বকীয় কম্পাস, তবে অস্থায়ী হবার কারণে এটা অল্প কিছুদিন কাজ করবে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবেঃ
• একটি লোহার সুঁই
• এক টুকরো শোলা(স্টাইরোফোম) অথবা একটা প্লাস্টিকের বোতলের মুখ।
• চুম্বক দণ্ড
• ছুরি বা কাঁচি
• স্কচটেপ
• এক পাত্র পানি
• পরীক্ষার সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য একটি কম্পাস।
প্রণালীঃ

১) আপনার সুঁইটিকে চুম্বকে পরিণত করতে একে দণ্ড চুম্বকের চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত করতে হবে। এর জন্য দণ্ড চুম্বকের যে কোনও একটি মেরু বেছে নিন। ধরুন, আমরা উত্তর মেরু বেছে নিলাম। এরপর সুঁই এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘষটে নিয়ে যান চুম্বকের উত্তর মেরুটিকে। এভাবে বেশ সময় নিয়ে একবার সুঁই এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনার পর উঠিয়ে নিতে হবে চুম্বকটিকে। এই প্রক্রিয়ায় বার বার ওই একই মেরু দিয়ে ঘষতে হবে সুঁইটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। এতে যা হবে তা হল, উত্তর মেরুর সংস্পর্শে আসার কারণে ওই ধাতব পদার্থের চৌম্বক ডোমেইনগুলোর উত্তর মেরুগুলো একই দিকে সজ্জিত হয়ে যাবে। এভাবে এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করার ফলে আপনার সুঁইটি রূপান্তরিত হবে একটি চুম্বকে।
২) এবার এই চুম্বকটিকে ছোট এক টুকরো শোলা অথবা বোতলের মুখের সাথে আটকে দিন অল্প একটু স্কচটেপ দিয়ে।

৩) এই সুঁই সহ শোলার টুকরোটিকে এবার ভাসিয়ে দিন পাত্রের পানিতে। খুব কম পরিমাণ বাধার সম্মুখীন হয়ে চুম্বকটি নিজে থেকেই ঘুরে যাবে উত্তর দক্ষিণ বরাবর।
৪) আসল কম্পাস দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন আপনার এই ঘরে বানানো চুম্বক কম্পাসটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা।
৫) কম্পিউটার অথবা সিডি-ডিভিডি জাতীয় বস্তু থেকে দূরে রাখুন আপনার কম্পাসটি।