ছবি সংগৃহীত

'বানর' এবং 'বুদ্ধিজীবী' নিয়ে যা বললেন গোলাম মাওলা রনি

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৬:৪৭
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৬:৪৭

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বানর এবং বুদ্ধিজীবী বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। প্রিয়.কম পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু প্রকাশিত হলো।

'ইদানিং হঠাৎ এক বুদ্ধিজীবি এবং দুষ্ট বান্দরের গল্প!'

বিষয়টি প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি। যখন পারলাম তখন একটার পর একটা অদ্ভূত ঘটনা ঘটতে লাগলো। হঠাৎ করেই একদিন টের পেলাম - মাথাটা ভীষন চুলকাচ্ছে। মনে করলাম হয়তো খুশকী হয়েছে কিংবা মাথার চামড়ায় কোন এলার্জি দেখা দিয়েছে। ভালো শেম্পু দিয়ে মাথা পরিস্কার করলাম এবং খুশকীরোধক কিছু ওষুধ মাখলাম। কোন কাজ হলো না। উল্টো মাথার চুলকানি বেড়ে গেলো। ডাক্তার দেখালাম। অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষার পর সার্টিফিকেট পেলাম যে - মাথার চামড়ায় কোন এলার্জি নেই। তাহলে কি হতে পারে ! এতো চুলকাচ্ছে কেনো। নিশ্চয়ই উকুন হয়েছে। বাজার থেকে উকুন নাশক সাবান আনলাম। কাজের কাজ কিছু হলো না - মাঝখান থেকে কিছু চুল পড়ে গেলো এবং চুলকানী বেড়ে গেলো। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গেও পরামর্শ করতে পারলাম না। কারন - তার মাথায় কোনো উকুন নেই। সে যদি প্রশ্ন করে বসে - তোমার মাথায় উকুন এলো কেমনে - তাহলে বেইজ্জতির কোনো সীমা থাকবে না। ছোট কাল থেকে জানতাম - বান্দর নাকি খুব ভালো উকুন বাছতে পারে। সত্য মিথ্যা জানিনা - কিন্তু শৈশবের ধারনাটি বহন করে চলছিলাম ধারাবাহিক ভাবে। মনে মনে চিন্তা করলাম দেখি বান্দর দিয়ে কিছু করানো যায় কিনা ! আর সব শেষ চিকিৎসা মাথা টাক করা আমার একেবারেই অপছন্দ। এখন সমস্যা হলো বান্দর কোথায় পাই ? সাধারন বান্দর হলে চলবে না - প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন পার্কে কখনো কখনো ২/১ জন লোককে দেখা যায় যারা বান্দর নাচ দেখিয়ে পয়সা উপার্জন করে কিংবা নানা টুটকা কবিরাজী ওষুধ পত্র বিক্রি করে। আমি বেরিয়ে পড়লাম বান্দরের খোঁজে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে একটি নাদুস নুদুস দুষ্ট বান্দরের সন্ধান পেলাম ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। সময়টা ছিলো বিকেল বেলা। বান্দরের মালিক ডুগডুগি বাজিয়ে বিভিন্ন রকম দূর্বোধ্য বাক্য উচ্চারন করছে আর মালিকের হুকুমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বান্দরটি ধ্যাতাং ধ্যাতাং করে নাচছে। আমি মাথার চুলকানি ভুলে অনেক্ষন ধরে সেই ক্ষ্যামটা নাচ দেখলাম। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর নাচ শেষ হলো। দর্শকরা যে যার মতো চলে গেলো। দাঁড়িয়ে রইলাম আমি আর বান্দরের মালিক। আমি এগিয়ে গিয়ে লোকটির সঙ্গে মোলাকাত করলাম এবং লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে মনের কথা খুলে বললাম। তিনি তো ভারী অবাক - নাম তার টিডিক্কা। সারা জীবনে এমনতরো অদ্ভূত প্রস্তাব শোনা তো দূরের কথা - হয়তো কল্পনাও করেননি। একজন প্যান্ট শার্ট পরা ভদ্রলোক তার কাছে এসেছে বান্দর দিয়ে মাথার উকুন বাছানোর জন্য - এও কি সম্ভব। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে তারপর বললেন - আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকালে আমার বস্তিতে আসুন। আমি বস্তির ঠিকানা এবং লোকেশন ভালোভাবো জেনে নিলাম। বান্দরটির হাতে একশ টাকার একটি নোট গুঁজে দিলাম এবং মালিকের হাত ধরে বললাম- ভাই কথাটা কাউকে বলবেন না। ভদ্রলোক মুচকি হাসি দিয়ে বললো-কাউকে বলবো না কেবল স্ত্রীকে ছাড়া। আমি আবার আমার স্ত্রীকে কোন কথা না বলে একদম থাকতে পারিনা। নির্দিষ্ট সময় আমি বস্তিতে উপস্থিত হলাম এবং জনাব টিডিক্কার ঘরে পৌঁছালাম। ছোট ছোট দুটো মেয়ে শিশু এবং সুন্দরী একটি বউ নিয়ে তার সুখের সংসার। আমি ঘরে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে গৃহকর্ত্রী ফুলবানু দরজা বন্ধ করে দিলো। তাদের কথা মতো মাথায় আচ্ছা মতো নারকেল তেল মাখলাম। এরপর শুরু হলো বান্দরের উকুন মারা। অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে বান্দরটি তার কর্ম করতে থাকলো। আবেশে আমার ঘুম চলে এলো। কিন্তু ঝিমুনি আসতেই বান্দরটি এমন একটি কর্ম করতো যাতে আমার ঘুম ভেঙে যেতো। ওটি ছিলো যথেষ্ট দুষ্ট এবং পাজী প্রকৃতির বান্দর। আমি যখন ঝিমিয়ে পড়ছিলাম - ওটি তখন সজোরে আমার কান মলে দিচ্ছিলো আর বাচ্চারা সব খিলখিলিয়ে হেসে উঠছিলো। ২/১ বার আমার একটু অভিমান হলো। পরে দেখলাম বান্দরের কানমলা খেতে বেশ ভালই লাগে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক ধরে বান্দরটি তন্ন তন্ন করে আমার মাথার উকুন খুঁজলো। কিন্তু পেলনা একটিও, এমনকি একটি উকুনের বাচ্চা বা ডিমও পেলনা। আমি হাজার খানেক টাকা বকশিশ দিয়ে ফিরে আসার পূর্বে ফুলবানুর হাতের চা নাস্তা খেলাম এবং তার ছোট্র শিশু দুটিকে কোলে তুলে আদর করে দিলাম। ফিরতি পথে টের পেলাম - আমার চুলকানী বেশ কমেছে কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়নি। বহুদিন পর সে রাতে আমার চমৎকার একটি ঘুম হলো। ঘুমের ঘোরে অদ্ভূত এক স্বপ্ন দেখতে পেলাম - স্বপ্নে সৌম্য দর্শন এক স্বর্গীয় পুরুষ আমার সামনে আসলেন। তারপর পরম স্নেহে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। আমি সম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালাম এবং মন্ত্র মুগ্ধের মতো তার কথা শুনতে লাগলাম - আমার স্বপ্ন পুরুষ বললেন - প্রিয় বৎস ! নিশ্চয়ই তুমি গত কয়েকদিন যাবৎ তোমার মাথার চুলকানি নিয়ে মহা ফ্যাসাদে আছো। আজকের পর থেকে তোমার চুলকানি বন্ধ হবে। কিন্তু পরবর্তী ৭ দিন তোমার পেট সর্বদা পুট পুট করবে - ভীষন পুট পুট। তোমার মনে হবে একটু বায়ূ ত্যাগ করতে পারলে বোধ হয় তুমি প্রানে বেঁচে যাবে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তুমি পেটের পুট পুটানী যেমন বন্ধ করতে পারবেনা - তেমনি বায়ু ত্যাগও করতে পারবে না। ওষুধ পত্র খাওয়া কিংবা চেষ্টা তদ্বির যতো বেশী করবে ততই বিপদ বাড়বে এবং পুট পুটানী অসৈহ্য মনে হবে। ৭ দিন পর সবকিছু এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে আর তুমি প্রবেশ করবে- অনন্য এক নতুন ভুবনে। স্বপ্ন পুরুষের সৌম্য দর্শন আর ছন্দময় প্রকাশ ভঙ্গিতে আমি অভিভূত হয়ে পড়লাম। অতীব বিনয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - মহাত্মন - কেনো এত্তোসব ঝামেলা আমার জীবনে এলো এবং এর পরিনতিতে কি ই বা এমন অনন্য ভূবন পাবো। মাথার চুলকানী ও পেটের পুটপুটানীর মাজেজাই বা কি ? তাত্বিক পুরুষ হাসলেন - তারপর আমার মাথায় হাত রেখে বললেন - বৎস তুমি এক মহান বুদ্ধিজীবি হতে যাচ্ছ ! তোমার বুদ্ধির ঝলকে দেশের সব রাজা বাদশাহ চমকিত হবেন। তোমার বু্িদ্ধর পরিমান এতো বেশি হবে যে তা মস্তিস্ক ছাড়িয়ে তোমার পেটের মধ্যে ঢুুকে পড়বে। যে কোন সুস্বাদু খাবার পেটে ঢুকলে প্রথম প্রথম হজমে একটু গরল বা গরমিল হয়। তাই বুদ্ধির মতো মহামূল্যবান এবং অতি উপাদেয় জিনিস মাথার সীমা অতিক্রম করে পেটে প্রবেশ করলে পুটপুটানী অতি স্বাভাবিক। আমি শুনছিলাম এবং উত্তেজনায় ছটফট করছিলাম - বললাম - হুজুর ! বুদ্ধিজীবি হয়ে আমার লাভ কি ? তিনি এবার উচ্চস্বরে হাসলেন। পিঠ চাপড়ে আদর করে বললেন - অনেক লাভ। তুমি যদি প্রতিদান পেতে চাও আখিরাতে তাহলে নির্ঘাত বেহেশ্ত। আর যদি দুনিয়ার প্রতিদান একেবারে আশা না করো তবে মানুষের মাঝে তুমি অমরত্ব লাভ করবে ঠিক সক্রেটিস, প্লেটো, কনফুসিয়াস, শেখ সাদি কিংবা জালাল উদ্দিন রুমির মতো। কিন্তু তোমার জিহ্বা যদি রসালো হয়- তোমার ত্বক যদি নিত্য নতুন নরম জিনিসের আকাংখায় ইতি উতি করে কিংবা চোখ যদি কেবল বড় বড় ইট পাথরের সুরম্য অট্রালিকার দিকে নিবন্ধিত হয় - সেক্ষেত্রে তুমি পাবে ভিন্ন মাত্রার সফলতা। কেনো জানি বাকীতে কাজ কারবার আমি পছন্দ করিনা। আমার আব্বাও করতেন না। সবকিছুতে নগদ নারায়ন না হলে আমি অস্থির হয়ে পড়ি। মনের অভিব্যাক্তিকে গোপন রেখে আমি স্বপ্ন পুরুষের নিকট জানার চেষ্টা করলাম কিভাবে নিজের বুদ্ধিকে ব্যবহার করে নগদ ছগত কিছু পাওয়া যায় - প্রাপ্তির জায়গা যদি রাজ দরবার কিংবা বেশ্যালয় হয় তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই। আমি শুধু চাই - টাকা, পয়সা, ধন-দৌলত, গাড়ী - বাড়ী, পদ পদবী, নারীসহ আরো সব ভোগের সামগ্রী। আমার খুব ইচ্ছে হয় দামী দামী মদ খেতে - কিন্তু গাঞ্জা, তাড়ি, চরস এসব একদম পছন্দ করি না। মাঝে মধ্যে বিনোদনের জন্য নাচ গান সঙ্গে একটু তাস-পাশা-জুয়া হলে মন্দ হয়না। ব্যক্তিগত জীবনে আমি গর্দভদের বাদশাহ। বুদ্ধি শুদ্ধি নিম্নমানের, বংশ ঠংশও ভালোনা, খারাপ কাজ করার খুবই ইচ্ছা কিন্তু সুযোগ না পাবার কারনে করতে পারিনি তেমন কিছু। তাই বদনামী এখনো আমাকে পেয়ে বসেনি। আমার অর্থবৃত্ত নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও অল্প। বছর খানেক আগে নীলক্ষেত থেকে একটি ডক্টরেট ডিগ্রীর ভূয়া সার্টিফিকেট যোগাড় করেছি। ওটা যে নকল তা প্রমান করার সাধ্যি কারো বাপের নাই। এরপর রাজ দরবারের কিছু কর্তা ব্যাক্তির তোষন পোষন করে ২/১ টা টেলিভিশনে বক্তা হিসেবে গেছি - আমার গলার স্বর মিনমিনে মেয়ে মানুষের মতো। ছোট কালে সহপাঠীরা আমাকে মিনমিনে শয়তান বলতো; আবার কেউ বলতো ম্যানা চোট্রা। সেই আমি নিজের অবদমিত মনে বুদ্ধিজীবি হবার যে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম তা এক অলৌকিক শক্তিবলে মনে হচ্ছে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে ! স্বপ্নের ঘোরে থেকেও আমি আমার লক্ষ্য স্থির করার বিষয়ে সিদ্ধ্ান্ত নিতে পারছিলাম। আমি স্বপ্ন পুরুষকে বললাম - হে মহা পুরুষ- আপনি শিখিয়ে দিন কিভাবে আমি আমার পান্ডিত্য জাহির করবো? কিভাবে আমি ক্ষমতাসীন লোকদের নিকট অতি চড়া মূল্যে আমার বুদ্ধি বিক্রয় করবো ? আমার পোষাক আশাক, চালচলন, বাচনভঙ্গি, চাহনী এবং আচার আচরন কিরুপ হবে? কিভাবে আমি ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি হবো ? কিভাবেই বা আমি তাদের সঙ্গে লেগে থাকবো কারন ওরা তো আগুনের মতো - কাছে গেলে পুড়িয়ে মারে। পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষে নেই - যে হাত দিয়ে ওরা আমাকে লালন করবে সেই হাত দিয়েই গলা টিপে মেরে ফেলবে ! আমার কথা গুলো শুনে তিনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন ধৈর্য্য ধর বৎস - আমি তোমাকে সব কথা বলবো। শিখিয়ে দেবো সব কলা কৌশল এমনকি নারীদের পটানোর ব্যাপর স্যাপারও। তারপর তুমি সিদ্ধান্ত নেবে - আসলে তুমি কি করতে চাও বা আসলে তুমি কিছু করতে পারবে কিনা। যে কোন ভালো কাজ করতে যেমন জন্মগত ভাবে কিছু কিছু ভাল জিনিসের দরকার হয় তেমনি মন্দ কাজ করার জন্য দরকার হয় সেইরুপ বদ খাচলত। তুমি যে কাজ করতে চাচ্ছ তা হলো প্রতারণা, ভন্ডামী, মিথ্যাচার, মোনাফেকী, তেলবাজি, ভাওতাবাজি এবং অন্যকে বোকা বানিয়ে স্বার্থ হাসিল। এগুলো সবই মন্দ কাজ। মানুষ সহসাই মন্দ কাজ করতে পারে না। মন্দ কাজের খল নায়কের দুটো প্রধান গুনে গুনী হতে হয়। এক: তাকে অবশ্যই হারামজাদ হতে হবে দুই : তাকে হারাম খোর বা হারামী হতে হবে। আমার কথা শুনে তুমি হয়তো বিস্বয়ে তোমার চোখ গোল গোল করে ফেলেছো। কিন্তু আমি যদি সবকিছু খুলে বলি তবে তুমি বুঝতে পারবে এবং সেমতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। জীবনে অনেক লোক না বুঝে ভালো ভালো কাজ করে ফেলে- আবার তেমনি না বুঝেই মন্দ মন্দ কাজ করে থাকে। ফলে সেই সব লোক তাদের কৃতকর্ম গুলো হজম করতে পারে না এবং কর্মের ভারও বহন করতে পারেনা। এ কারনে লোক গুলোকে সারাজীবন আফসুসের সঙ্গে মর্মবেদনায় দিন গুজার করতে হয়। আমি চাই - তোমার জীবন যেনো ওরকম না হয়। হারামজাদা ও হারামী শব্দ দুটি শোনার পর আমার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। তিনি বুঝতে পেরে বললেন- শান্ত হও বৎস ! তোমাকে ভালো করে জানতে হবে হারামজাদা এবং হারামী কাকে বলে ! সাধারণত পিতার অবৈধ সন্তানকে হারামজাদা বলা হলেও শব্দটির বহুমাত্রিক অর্থ রয়েছে। যে লোকের পিতা সারা জীবন হারাম কাজ করতো তাকে সহজেই হারামজাদা বলা যায়। এসব লোকের পক্ষে অনায়াসে, নির্দিধায় এবং অতি সহজে যেকোন খারাপ কাজ করা কোন ব্যাপারই না। অন্যদিকে হারামী বলা হয় তাকেই যে সর্বদা নিজেকে হারাম কাজে ব্যাপৃত রাখে - এক্ষেত্রে সে হারামজাদা না হয়েও দক্ষতার সঙ্গে হারামীপনা চালিয়ে যেতে পারে। বুদ্ধিমান হিসেবে নিজেকে তারাই প্রতিষ্ঠিত করে ক্ষমতাসীনদের নেক নজর লাভ করতে পারবে যারা অতি সতর্কতার সঙ্গে নিজের হারামীপনা গোপন রাখতে পারবে। মনে কুপ্রবৃত্তি আর উপরে উপরে ভালো মানুষীর ভোল তুলে এসব লোক হেলে দুলে এগিয়ে যায় কাঙ্খিত লক্ষের দিকে। এরা অদ্ভূত সব পোশাক পরে। অশালীন নয় তবে অদ্ভুত। এরা লম্বা লম্বা চুল রাখে। কেউ কেউ নিজের বিশেষত্ব দেখাবার জন্য চুলে ঝুটি বাঁধে। এদের কেউ কেউ বড় বড় মোচ রাখে এবং বাহারী সব মসলা দিয়ে মোচে তা দেয়। নকল বুদ্ধিজীবির প্রধান লক্ষ্য থাকে চমক লাগানো কথা বার্তা বলা এবং ব্যক্তি বিশেষ বা মহল বিশেষের পক্ষাবলম্বন করা। এই কাজ তারা করে কখনো আদিষ্ট হয়ে আবার কখনো করে কাঙ্খিত ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। এরা প্রথমে একাকী ঘোরে এবং একাকী কর্ম করে। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে যায়। স্বপ্ন পুরুষ এই পর্যন্ত বলে আমার দিকে তাকালেন। মনে হলো তিনি আমার অন্তরের কথা বুঝতে পেরেছেন। কারন এতক্ষন তার কথা শোনার পর আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিভাবে এবং কতো দ্রুত বুদ্ধি বিক্রি করে কিংবা বিবেক বন্ধক রেখে ক্ষমতাবানদের কাছাকাছি হওয়া যায় এবং স্বার্থ হাসিল করা যায় ? আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে স্বপ্ন পুরুষ বললেন - তোমাকে নতুন কিছু করতে হবে। সব সময় একটা ভাব ধরে থাকতে হবে। তুমি যার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাও তার পক্ষে এমন সব কথা বলতে হবে যা কেউ সচরাচর বলে না। তোমার বক্তব্য যদি তার কানে পৌঁছায় তবে সে তোমাকে ডাকবে। অন্য পথটি আরো সোজা কিন্তু একটু বেহায়াপনা থাকতে হবে। তুমি তার সঙ্গে খাতির কর যে কিনা কাঙ্খিত যায়গায় নিয়মিত যায় এবং পিঠা পায়েস খায়। এই কাজ করতে গিয়ে তুমি তোমার গুরুকে উপহার প্রদান করো। সবচেয়ে দামী এবং কার্যকর উপহার হলো - সুন্দরী স্ত্রী কিংবা কন্যা। ক্ষেত্র বিশেষে ভগ্নিও হতে পারে। সবই তো বুঝলাম কিন্তু বুদ্ধিজীবি হয়ে নারী পটাবো কেমনে ! স্বপ্ন পুরুষ বললেন আজ আর নয় অন্য একদিন। রাত এখন শেষ প্রহরের কাছাকাছি। কিছুক্ষন পর সুবহে সাদিক হয়ে যাবে। নিকটতম আসমানে রহমতের ফেরেশতারা চলে আসবে। কাজেই তার আগেই আমাকে চলে যেতে হবে। যাবার বেলায় বলে যাচ্ছি আমার কথা গুলো হয়তো তোমার স্মরনে থাকবে। তুমি চেষ্টা করতে থাকো। যদি সফল হতে পারো তবে আরো নতুন কিছু বলার জন্য আমি আবার আসবো। এরপর স্বপ্ন পুরুষ চলে গেলেন। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে বসলাম। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে যদিও দেশে শীতকাল চলছে। উঠে বাথরুমে গেলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম পেটে পুট পুটানী শুরু হয়ে গেছে। আনন্দে আত্মহারা হবার উপক্রম হলো। তাহলে সত্যিই কি আমি সিদ্ধি লাভ করেছি - সত্যিই কি আমি অলৌকিক ভাবে বুদ্ধিজীবি হয়ে গেছি। একথা ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম - একি দেখছি আমি ! এই প্রতিচ্ছবি কি আমার না অন্য কারো ?