বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের the State School of Science এ ফরেনসিক সায়েন্সের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন নিকোলাই মিনোভিচি নামের এক ভদ্রলোক। তিনি আত্মহত্যা সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। বিস্তর পড়াশোনা করে একদিন তিনি হাতেনাতে পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন ফাঁসিতে ঝুলে গেলে মানুষের কেমন অনুভূতি হয়!

নিকোলাই নিজেই নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য একটি শ্বাস-রোধকারী যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তিনি প্রথমে একটি দড়িতে গিঁট দিয়ে ফাঁস তৈরি করেন। তারপর দড়িটিকে কপিকলের চাকার উপর দিয়ে রুমের ছাদ থেকে ঝুলিয়ে নিলেন। এরপর নিকোলাই খাটে শুয়ে পড়লেন ও দড়ির ফাঁস গলায় পড়ে নিলেন। হঠাৎ করেই তিনি নিজেই দড়ির অন্যপ্রান্ত ধরে সজোরে টান দিলেন। এর ফলে গলার ফাঁসটি শক্ত হয়ে গেল। নিকোলাইয়ের চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো, মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করলো আর মাথা যেন ভনভন করে ঘুরছিল। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার ঠিক ছয় সেকেন্ড আগে তিনি তার ফাঁসের বাঁধন আলগা করে দেন।
গবেষণার পরের ধাপে, নিকোলাই তার সহকারীদের নিয়ে আসেন। এবার তিনি ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েন ও সহকারীদের বলেন সজোরে দড়ির অন্য প্রান্ত টান দিতে। তারা টান দেয়া মাত্রই নিকোলাই ঝুলন্ত অবস্থায় মাটি থেকে কয়েক মিটার উপরে ঝুলতে থাকেন। তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে আসে, তিনি উন্মত্তের মত সংকেত দিতে থাকেন, যেন তাকে নিচে নামানো হয়। প্রথম এই পরীক্ষায় তিনি মাত্র কয়েক সেকেন্ড শূন্যে ঝুলে ছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েক বার প্র্যাকটিস করে তিনি ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলে থাকতে সক্ষম হন।
_0.jpg)
কিন্তু এখনো একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা বাকি। এবার নিকোলাই আরো শক্ত করে ফাঁসের গিঁট বাধলেন, গলায় সেটি পরে নিলেন ও সহকারীদের নির্দেশ দিলেন দড়িটি টানার জন্য। টানামাত্রই নিকোলাই তাঁর গলায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করলেন। তিনি এবারো উন্মত্তের মতো তার সহকারীদের দড়ি টানা থামাতে বললেন। এবার কিন্তু নিকোলাইয়ের পা মাটিতেই ছিল। তারপরও গলার ফাঁস এত শক্ত ছিল যে এক মাস ধরে নিকোলাইয়ের গলা ব্যথা করতে থাকে।
যাই হোক, পরবর্তী জীবনে নিকোলাই নানা রকম সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর রোমানিয়ান লোকশিল্পের প্রতি আগ্রহ ছিল। এজন্য তিনি একটি যাদুঘর তৈরি করেন, যা এখনো বিদ্যমান। তিনি রোমানিয়াতে দাতব্য চিকিৎসাকাজেও একজন সক্রিয় সমর্থনকারী ছিলেন। তিনি তাঁর নিজের খরচে বলকান অঞ্চলসমূহে বহু বছর এম্বুলেন্স ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস পরিচালনা করেন।