ছবি সংগৃহীত

নারী পোশাকে কতটা স্বাধীন

Mahmud Ullah
লেখক
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০১৬, ১০:৫৮
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬, ১০:৫৮

ছবি: নাঈম প্রিন্স 

(প্রিয়.কম) ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বব্যাপী নারীদের সম্মানে দিবসটি উদযাপন হয়ে থাকে। মূলত কর্মজীবি নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে সকল নারীদের জন্যেই দিবসটি উদযাপিত হয়।

আজকে জানাচ্ছি নারীদের পোশাক নিয়ে যত কথা। নারীর পোশাক নিয়ে অসংখ্য ঘটনা প্রায় সময়ই আমরা পড়ি কিংবা শুনতে পাই। আজকে নারীর শরীরে যে পোশাক বিশ্বব্যাপী, তা একদিনে উঠে আসেনি। এর জন্য সব দেশের সব নারীকেই করতে হয়েছে বিদ্রোহ। পোশাক নিয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘটেছে ও ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। 

কিছুদিন আগে এক লাক্স সুন্দরী শাড়ির উপর ব্লাউজ পরার ছবি ছাপা হয়েছিলো এক পত্রিকায়। সঙ্গে সঙ্গে কটাক্ষ, বিদ্রূপ আর সমালোচনায় ভরে উঠেছিল অধিকাংশের ফেসবুক। বিখ্যাত মানুষজনেরাও তাদের মন্তব্য দিয়েছেন এর বিরুদ্ধে। রব উঠল গেল গেল, বাঙালি সংস্কৃতি গেল। অথচ নারীর কি পোশাক পরবে এটা সম্পূর্ণই কিন্তু তার স্বাধীনতা। আধুনিক সভ্যতা কিন্তু তাই বলে। 

এর আগে আর একটি ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। আর তা হলো একটি নামকারা স্কুলের পরীক্ষায় প্রশ্নে আসে যে, টিএসসির যৌন নিপড়ণের ঘটনায় শালীন পোশাকের প্রয়োজনীয়তা ছিল কতটুকু? অত্যন্ত লজ্জাকর ঘটনা। দেশের নামকরা স্কুলে এই ধরনের প্রশ্নে স্বভাবতই আমাদের সভ্যতা, স্বাধীনতা কুলষিত হয়। সেখানে সেইসব পুরুষদের দোষারুপ না করে পোশাককে দায়ী করা হচ্ছে। পরে অবশ্য অভিভাবকদের চাপের কারণে স্কুল শিক্ষিকারা ভুল বুঝতে পেরে প্রশ্ন থেকে তা বাদ দিয়ে দেয়। 

২০১৪ সালের এক ঘটনা। মোহাম্মাদপুরে মোহনা ভিআইপি মহিলা হোস্টেলে বখাটেদের হামলা। প্রথম দিকে পুলিশ কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। কেননা হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক রাবেয়ার মতে ওই হামলা যৌক্তিক। তিনি মেয়েদের বলেন, ‘তোমাদের চলাফেরায় সমস্যা আছে। হামলা তো হবেই, তোমরা শার্ট প্যান্ট পরো কেন?’

এই হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা। এবার বলছি, পোশাক নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ঘটনার কথা। 

নারীদের শরীরের বর্তমান পোশাক এমনি এমনি চলে আসেনি। ২০০  বছর আগে ভারতের কেরালার রাজারা উচ্চহারে কর বসাতো মেয়েদের বক্ষ ঢেকে রাখার জন্য। এই ঘটনা পত্রিকার কারণে আমরা এখন সবাই জানি। তারপরও বলছি, কারণ বিশ্বের নারীদের অধিকারের কথা বলতে গেলে এই ঘটনা টানতেই হবে। সেই করটির নাম ছিল ‘স্তনকর’। ১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী নামে এক নারী গ্রামের ট্যাক্স কালেকটরকে কর না দিয়ে নিজের দুটি স্তনকে কেটে পাতা দিয়ে মুড়ে দিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই স্তনকর রোহিত হয়। এছাড়া  দক্ষিণভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রামও করতে হয়েছে। ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা হয় যা ‘কাপড়ের’ দাঙ্গা হিসেবেও পরিচিত। 

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, আমাদের দেধের বর্তমান জীবনযাত্রা এবং ফ্যাশনের পরিবর্তনে গ্রিক, রোমান, আরব এবং চীনাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ভিক্টোরিয়া যুগে ভারতের বাঙালি নারীরা শাড়ির সঙ্গে কোনো ব্লাউজ পরতেন না। বাঙালি নারীদের মধ্যে ব্লাউজকে কে জনপ্রিয় করেছিলেন জানেন? কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানাদান্দিনী দেবী। শুধু ব্লাউজ নয়, আধুনিকা এই নারী শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট আর সেমিজ পরারও চল করেছিলেন।

রাশিয়ায় কিছুদিন আগে আইন হল পার্লামেন্টে নারীরা মিনি স্কার্ট ও হাই হিল ��রতে পারবে না। আমেরিকার কোন এক প্রদেশেও নারীদের মিনি স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ হয়েছে। ফ্রান্সে আইন করেছে কোনো স্বামী তার স্ত্রীর পোশাক নিয়ে কোন নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারবে না। বেলজিয়াম, ফ্রান্সসহ আরো কিছু দেশে নারীদের হিজাব বা পর্দা করা নিষিদ্ধ করা হয়। 

যোয়ান-অব-আর্ক। একজন বীর। পুরুষের বেশে যিনি যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু অমন বীরত্বের পরেও সে দেশে কেবলমাত্র পুরুষের পোশাক পরার কারণে মানে শার্ট-প্যান্ট পরার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে হত্যা করা হয়। এই হচ্ছে সভ্য সমাজ ও আমাদের বিশ্ব। এখন সেই দেশে মেয়েদের প্রধান পরিধেয় পোশাকই হল পুরুষের পোশাক। নারী পুরুষ সেদেশে সমান অধিকার ভোগ করে। 

এভাবেই সময়ে বিভিন্ন নারীরা তাদের জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে গেছেন বলেই আজকের নারীরা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাদের নারী স্বাধীনতা নিয়ে সুফল ভোগ করতে পারছে। পৃথিবীতে যত ঘটনাই ঘটুক তা সব নারীদের পোশাককেন্দ্রীকই ঘটেছে, পুরুষের পোশাক নিয়ে নয়। সে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ হোক কি আমেরিকার মত উন্নত দেশ হোক। কারণ সমাজ পুরুষরা চালায়।

প্রকৃতি প্রয়োজনীয় সকল পরিবর্তনকে সময়েই ঠিকঠাক মানিয়ে নেয়। পোশাকের বিবর্তন যতখানি না ফ্যাশন তার চেয়েও অনেকখানি স্বাচ্ছন্দ, আরাম এবং প্রয়োজনের উপর নির্ভরশীল। আমরা মানুষেরা পোশাকেরও লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেই। 

এই বিংশ্ব শতাব্দীতে এখন মেয়েরা আর ঘরে বসে মেকআপ দিয়ে নিজের সৌন্দর্য উপস্থাপন করে প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকে থাকতে পারবে না। তাকে টিকে থাকতে হলে সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে হলে বুদ্ধিমত্তা ও মেধা দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

সবশেষে একটা বিষয়ই মনে হয়, পোশাক খুবই ব্যক্তিগত বিষয় ও আপেক্ষিক। এবং সংস্কৃতি একটি পরিবর্তনশীল বিষয়। এ দুইয়ের সমন্বয় নির্ভর করে ব্যক্তির বুদ্ধি বিবেচনা, পরিবেশ এবং সর্বোপরি প্রয়োজনীয়তার উপর।

মডেল: ফ্লোরা, সানজিদা ও মারিয়া।

সূত্র: ওয়েব