
ছবি সংগৃহীত
ধারাবাহিকভাবে নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
আপডেট: ৩০ মে ২০১৬, ০৩:৪৭
আমরা অনেকেই অজু করা থেকে শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নামাজের বিভিন্ন পর্ব পালন করি। কিন্তু সামান্য ভুলের জন্য আমাদের নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আজকের আলোচনায় পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে নামাজ আদায়ের সঠিক পদ্ধতি তুলে ধরা হলো। ১. প্রথমে অজু করা অজুর নিয়ত ( নাওয়াইতুআন আতা ওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাছি, ওয়াসতি বাহাতাললিচ্ছলাতি ওয়া তাকারবান ইল্লাল্লাহি তায়ালা। অর্থ : আমি পবিত্রতা অর্জন, নামাজ আদায় এবং আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করার জন্য অজু করছি।) করে কিবলার দিকে মুখ করে বসে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বলে অজু শুরু করতে হবে। প্রথমে দুহাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। তারপর মুখে ও নাকে তিনবার পানি দিয়ে কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। অতঃপর মুখমন্ডল ধৌত করবে (কপালের ওপর চুল গজানোর স্থান থেকে নিয়ে দাড়ির নিম্নভাগ, এবং এক কান থেকে নিয়ে অপর কান পর্যন্ত)। এরপর দুহাতের আঙ্গুলের শুরু থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত অতঃপর বাম হাত। আবার নতুন করে দুহাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে তা দ্বারা মাথা মাসেহ্ করবে। দুহাত মাথার অগ্রভাগ থেকে নিয়ে পিছন দিকে ফিরাবে অতঃপর অগ্রভাগে নিয়ে এসে শেষ করবে। তারপর দুকান মাসেহ্ করবে। দুহাতের দুই তর্জনী কানের ভিতরের অংশ এবং দুবৃদ্ধাঙ্গলি দিয়ে বাইরের অংশ মাসেহ্ করবে। এর জন্য নতুনভাবে পানি নেয়ার দরকার নেই। অতঃপর দুপা টাখনুসহ তিনবার ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা। ২. ওজু শেষে এ দোয়া ‘আশহাদ আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শরীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্’আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ’আলনী মিনাল মুতাত্বহ্হেরীন’। অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী লোকদের মধ্যে শামিল করুন। (সহীহ মুসলিম ও জামে আত-তিরমিযী) ৩. জায়নামাজের দোয়া জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরুর পূর্বেই এ দোয়া পড়তে হয়- ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি, ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন’। অর্থ : নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই । ৪. এরপর নামাজের নিয়াত ও তাকবিরে তাহরিমা নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা। মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়, তবে মুস্তাহাব। সকল নামাজেই ‘নাওয়াই তু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, (২ রাকাত হলে) রাক্য়াতাই ছালাতিল (৩ রাকাত হলে) ছালাছা রাক্য়াতাই ছালাতিল (৪ রাকাত হলে) আরবায় রাক্য়াতাই ছালাতিল (ওয়াক্তের নাম) ফাজ্রি/ জ্জুহরি/আছরি/মাগরিবি/ইশাই/জুমুয়াতি (নামাজের নাম) ফরজ হলে ফারদ্বুল্ল-হি/ ওয়াজিব হলে ওয়াজিবুল্ল-হি/ সুন্নাত হলে সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি/নফল হলে নাফলি। (সকল নামাজেই) তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কাবাতিশ শারিফাতি আল্লা হু আক্বার’ বলতে হবে। বাংলায় নিয়ত করতে চাইলে বলতে হবে- আমি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে কেবলামুখী হয়ে, ফজরের / জোহরের / আসরের / মাগরিবের/ এশার/ জুমার / বিতরের / তারাবির / তাহাজ্জুদের (অথবা যে নামাজ হয় তার নাম) ২ রাকাত / ৩ রাকাত / ৪ রাকাত (যে কয় রাকাত নামাজ তার নাম) ফরজ / ওয়াজিব / সুন্নাত / নফল নামাজ পড়ার নিয়াত করলাম, আল্লাহু আকবার। ৫. তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার (৪বার) আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ (২বার) আশহাদু আন্নামুহাম্মাদার রাসুল্লাহ (২বার) হাইয়া আলাস্ সালাহ (২বার) হাইয়া আলাল্ ফালাহ (২বার) কাদকামাতিস সালাহ ্(২বার) আল্লাহু আকবার (২বার) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (২বার) ৬. সানা হাত বাঁধার পর (বুকের বা নাভীর ওপর বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে) এ দোয়া পড়তে হয়- ‘সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক’। অর্থ : হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই এবাদতের যোগ্য নয় । নবি (স.) নামাজ অবস্থায় মাথা নিচু করে জমিনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠাতে নিষেধ করেছেন। ৭. তাআউজ ‘আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম’। অর্থ : বিতশয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি । ৮. তাসমিয়া বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অর্থ : পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি । এরপর সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে হয়, সুরা ফাতিহার পর পবিত্র কোরআনের যে কোনো জায়গা থেকে তিলাওয়াত বা অপর একটি সুরা পাঠ করতে হয়। ৯. মুক্তাদির জন্য সুরা ফাতিহা পাঠ জরুরি ইমামের পিছনে মুক্তাদীও সুরা ফাতিহা পাঠ করবে। কারণ রাসুল (স.) এর বাণী ‘যে ব্যক্তি সুরা ফাতিহা পাঠ করবে না, তার নামাজ হবে না’। (বুখারি-মুসলিম) এ কথাটি ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী নামাজ আদায়কারী সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে। কাজেই সকলকেই সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। যেসব নামাজে ইমাম স্বরবে কিরাত পাঠ করেন, সেসব নামাজে মুক্তাদি ইমামের কিরাত শ্রবণ করবে এবং নীরবে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পাঠ করবে। অন্যান্য সুরা পাঠ থেকে বিরত থাকবে। সুরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা প্রসঙ্গে হাদীসে আছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা আমীন বল, আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন’। (মুসলিম) ১০. রুকু করা কিরাত পাঠ শেষে রাসুল (স.) ‘আল্লাহ আকবার’ বলে রুকুতে যেতন। (বুখারি) রুকুতে স্বীয় হাঁটুদ্বয়ের উপর হস্তদ্বয় রাখতেন এবং তিনি এজন্য নির্দেশ দিতেন। (বুখারি) তিনি কনুই দুটোকে পাঁজরদেশ থেকে দূরে রাখতেন। তিনি রুকু অবস্থায় পিঠকে সমান করে প্রসারিত করতেন। এমন সমান করতেন যে, তাতে পানি ঢেলে দিলেও তা যেন স্থির থাকে। (বুখারি, তিরমিজী, তাবরানী) তিনি নামাজে ত্রুটিকারীকে বলেছিলেন, ‘অতঃপর যখন রুকু করবে, তখন স্বীয় হস্তদ্বয় হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখবে এবং পিঠকে প্রসারিত করে স্থিরভাবে রুকু করবে। (আহমাদ) তিনি পিঠ অপেক্ষা মাথা উঁচু বা নিচু রাখতেন না। বরং তা মাঝামাঝি থাকতো। (বুখারি, আবু দাউদ) রুকুতে রাসুল (স.) এ দোয়া পাঠ করতেন- ‘সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম’। অর্থ : আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। এ দোয়াটি তিনি তিনবার বলতেন। কখনো তিনবারের বেশিও পাঠ করতেন। (আহমাদ) অতঃপর রাসুল (স.) রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি এই দোয়া বলতে বলতে রুকু হতে মাথা উঠাতেন, ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’। অর্থ : যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার কথা শ্রবণ করেন। (বুখারি-মুসলিম) তিনি যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে, মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, ‘রাব্বানা লাকাল হাম্দ’। অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! সকল প্রশংসা তোমার জন্য। মুক্তাদি ও ইমাম উভয়েই দোয়া দুটি পাঠ করবে। ১১. সিজদা করা অতঃপর রাসুল (স.) ‘আল্লাহ আকবার’ বলে সিজদায় যেতেন। তিনি বলেন, ‘কারও নামাজ ততোক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতোক্ষণ না সে ‘সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, অতঃপর ‘আল্লাহ আকবার’ বলবে, অতঃপর এমনভাবে সিজদা করবে যে, তার শরীরের জোড়াগুলো সুস্থিরভাবে অবস্থান নেয়’। সিজদা অবস্থায় পার্শ্বদ্বয় থেকে হস্তদ্বয় দূরে রাখতেন। (বুখারি, আবু দাউদ) তিনি মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হস্তদ্বয় রাখতেন। (ইবনু খুযাইমাহ) নবি (স.) রুকু-সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিতেন। ১২. সিজদার দোয়া সিজদা অবস্থায় তিনি এই দোয়া পাঠ করতেন- ‘সুবহানা রাব্বীয়াল আলা’। অর্থ: আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করতেন। অতঃপর নবি (স.) ‘আল্লাহ আকবার’ বলে সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির নামাজ ততোক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতোক্ষণ না এমনভাবে সিজদা করবে যে, তার দেহের প্রত্যেকটি জোড়া সুস্থিরভাবে অবস্থান নেয়’। দুই সিজদার মাঝখানে নবি ( স.) প্রথম সিজদা ও সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে স্বীয় মস্তক উত্তোলন করতেন। দুই সিজদার মাঝখানে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। নবি (স.) দুই সিজদার মধ্যবর্তী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্বন করতেন, যার ফলে প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেতো। (আবু দাউদ) ১৩. দুই সিজদার মাঝখানে দোয়া দুই সিজদার মাঝখানে নবি (স.) এ দোয়া পাঠ করতেন- ‘আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী’। অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, মর্যাদা বৃদ্ধি কর এবং জীবিকা দান করো। এ দোয়া পাঠ করে নবি (স.) ‘আল্লাহ আকবার’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন এবং প্রথম সিজদার মতই দ্বিতীয় সিজদায় তাসবীহ পাঠ করতেন। অতঃপর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন এবং দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পূর্বে বাম পায়ের উপর সোজা হয়ে বসতেন। এবং প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ফেরত আসা পর্যন্ত বিরাম নিতেন। (বুখারি) অতঃপর হাতে ভর দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতেন এবং প্রথম রাকাতের ন্যায় সবকিছু করতেন, তবে ছানা ও আউযুবিল্লাহ পাঠ করতেন না। এ কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করা ফরজ। ১৪. তাশাহুদ নবি (স.) চার রাকাত বা তিন রাকাতবিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকাত শেষে তাশাহুদ পাঠের জন্য বসার সময় দুই সিজদার মাঝখানে বসার ন্যায় পা বিছিয়ে বসতেন। (বুখারি) তারপর পাঠ করতেন- ‘আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস্ ছালাওয়াতু ওয়াত্বায়্যিবাতু আস্-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্ নাবিউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্-সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু’। (অর্থ : আমাদের সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবি, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।) এভাবে তাশাহুদ পাঠ করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে চার বা তিন রাকাতবিশিষ্ট নামাজের বাকি নামাজের জন্য দাঁড়াবে। বাকি নামাজ পূর্বের নিয়মে সমাপ্ত করবে। তবে কিরাতের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পাঠ করবে। ১৫. শেষ বৈঠক ও সালাম ফেরানো তাশাহুদ পাঠের জন্য শেষ বৈঠকে বসা ওয়াজিব। তবে বসার সময় তাওয়াররুক করতে হবে। তাওয়াররুক অর্থ ডান পা খাঁড়া রেখে বাম পা ডান উরুর নিচ দিয়ে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা। এভাবে বসে প্রথমে আত্যাহিয়াতু পাঠ শেষে রাসুল (স.)-এর ওপর সালাম (দরূদ)- ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাযীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাযীদ’ (অর্থ : হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহম্মদ (স.)-এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী।) পাঠ করতে হবে। ১৬. দরূদ পাঠ শেষে দোয়া মাসুরা পাঠ দোয়া মাসুরা-‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী জুলমান কাছীরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম’। (অর্থ : হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের ওপর অনেক জুলুম করেছি কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ, অনুগ্রহপূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।) অতঃপর প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ সমাধা করবে। ১৭. নামাজের পর মুনাজাত আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর দোয়া-মুনাজাতের প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে দোয়া কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক নামাজের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহু ফাযলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই৷ আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তারই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তারই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তারই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না।) ইবনে যুবাইর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাজের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন। [বর্ণনায় : মুসলিম] আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তেত্রিশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে ও তেত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এরপর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর’ (অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত এবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। [বর্ণনায় : মুসলিম] এ ছাড়াও নামাজের পর আরো অনেক জিকির ও দোয়ার কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনাও এসেছে । ফয়জুল আল আমীন লেখক : প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক