ছবি সংগৃহীত

দ্য রুলস অব ওয়ার্ক : ব্যক্তিগত সাফল্যের চাবিকাঠি- পর্ব ৫

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫, ১৬:২৮
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫, ১৬:২৮

(প্রিয়.কম) কর্মজীবনে সাফল��যের জন্য রিচার্ড টেম্পলারের লেখা ‘দ্য রুলস অব ওয়ার্ক’ নামের বেস্টসেলার বইটি পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে প্রকাশ করার প্রয়াস নিয়েছে প্রিয়.কম। এই বইটি জীবনে চলার পথে প্রয়োজনীয় কিছু নিয়মের সংকলন, যা বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক পঠিত বইয়ের একটি। সারা বিশ্বে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ এর অনেকগুলো সিরিজ ক্রয় করেছেন এবং বইটি প্রায় ২২টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। প্রিয়.কম শুরু করলো বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ। আজ প্রকাশিত হলো এর পঞ্চম পর্ব।

পর্ব ৫: নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন

আপনাকে যাদের সাথে কাজ করতে হয় তাদের বেশিরভাগই হয়তো ভদ্র- যাদের আশেপাশে থাকতে ভাল লাগে। তবুও, সবসময়ই দুয়েকজন মানুষ থাকেন যারা এমনটা নন। আপনি এদের এড়াতে পারবেন না- এই অসভ্যদের, এই হিংসুটে সহকর্মীদের, যারা আপনার পিঠে ছুরি চালানোর বা আপনাকে নিচু করার কোনো সুযোগই ছাড়বেন না। একটা সুযোগ পেলেই তারা আপনাকে গুলি করে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেবেন। আপনার নতুন ইমেজ যেন আপনাকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করে তা নিশ্চিত করুন। এই রুলটি হলো শত্রু কমানোর এবং এক লাফ এগিয়ে থাকার। যত সফল হয়ে উঠবেন, অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি হিংসা ও ঈর্ষাকে আকর্ষণ করবেন। এই রুলটি প্র্যাকটিস করে আপনি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন- বিশেষ করে আপনার পিঠ!

৫.১ আপনার কর্মক্ষেত্রের ‘এথিক্স’ সম্পর্কে জানুন

আপনি বেঁচে থাকার জন্য কী কাজ করেন? আমি আসল চাকরির কথা বলছি না। আমি জানতে চাইছি সমাজে আপনি কী কন্ট্রিবিউট করেন? আপনার এই অংশগ্রহণ কি ইতিবাচক, প্রয়োজনীয়, স্বাস্থ্যকর? নাকি এটি ক্ষতিকর, নেতিবাচক, বিধ্বংসী? আপনার কর্মক্ষেত্রের কাজ কী? সেটির কতটুকু অংশ আপনি? আপনি কি আপনার কর্মক্ষেত্রের ‘এথিক্স’ নিয়ে ভেবে দেখেছেন? আমরা এথিক্স বলতে কী বুঝি? এথিক্স হলো আপনার কর্মক্ষেত্রের মূল্যবোধ- সেখানে কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক, কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। আপনার কর্মক্ষেত্রটি কি ভালো জিনিস না খারাপ? এটি কি ক্ষত বানায় না সারায়? সমাজে কি এটি ইতিবাচক কিছু দিচ্ছে না সমাজ থেকে তা সরিয়ে নিচ্ছে? না, আপনি যদি হঠাৎ বুঝে থাকেন যে আপনার এই বিশেষ কর্মক্ষেত্রটি খুব বাজে তাহলে আপনাকে এখনই সোজা হেঁটে বেরিয়ে যেতে হবে না। যেটা করতে পারেন তা হলো বিষয়গুলোকে ঠিক করার জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করা। এর মানে এই না যে এখানে আমরা পরিবেশগত ইস্যু নিয়ে কথা বলছি, যদিও সে বিষয়টিও আমাদের অনেকের কাছেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি বোঝাতে চাইছি যে আপনার কর্মক্ষেত্র নীতিগতভাবে কী করে সে বিষয়ে মনোযোগী হোন। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার কর্মক্ষেত্রের অ্যাপ্রোচ অযৌক্তিক আর সিদ্ধান্ত নেন যে আপনার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয় তাহলে অবশ্যই বেরিয়ে যাওয়া উচিত। আমার সাথে একবার এমন হওয়ায় আমি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। এটা সৎকাজ এবং এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আপনি অন্যভাবে লাভবান হবেন। আপনার কর্মক্ষেত্রের ভেতরে ভালো জিনিসও থাকবে আবার খারাপও থাকবে। কখনো কখনো আপনাকে সীমারেখা পার করে কোনো বাজে কাজও করতে বলা হবে। আপনি পরে অবশ্যই রুল ৫.৩ পড়বেন যেখানে বলা আছেঃ নিজের স্ট্যান্ডার্ড সেট করুন। কিন্তু আমি এখানে আপনার নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড না বলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্ট্যান্ডার্ড সেট করার বিষয়ে বলতে চাইছি। নিজের কথা না ভেবে কোম্পানির স্বার্থ ভাবুন। এমনকিছু করা বা বলা যাবে না যাতে মিডিয়া বা অন্য কেউ সেটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে পারে। নৈতিকভাবে এবং এথিক্সের জায়গা থেকে নির্ধারণ করতে হবে আপনাকে যে কাজটি করতে বলা হয়েছে সেটি কোম্পানির জন্য কীভাবে ক্ষতিকারক। নিজেকে ক্রমাগত বলুন, ‘ব্যাপারটি যদি সংবাদ মাধ্যমের হাতে পড়ত তাহলে তারা কী করত?’ হয়তো তারা এরকম একটি শিরোনাম করতঃ ‘স্ক্রুজ লিমিটেড তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করে এশিয়ান কর্মীদের সস্তায় নিয়োগ দিয়েছে’- যেটি কোম্পানিকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। হ্যাঁ, আপনি যেভাবে খুশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, কিন্তু এতে করে আপনি হয়তো একজন ভীতু মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত হবেন যে হাত নোংরা করতে ভয় পায়- বিন্দুমাত্র সাহস নেই টাইপের। না, আপনি মোটেই সেই লেবেল গায়ে লাগতে দেবেন না। কোম্পানির স্বার্থে আপনাকে সেই কাজটির বিভিন্ন প্রভাব ও পরিণতির দিকগুলো বের করতে হবে। কোনো অনৈতিক বা বেআইনি কাজে লিপ্ত হলে কোম্পানিকে যে হুঁশিয়ার করে সেই হুইসেল ব্লোয়ারের কাজ করতে হবে। এভাবে আপনি কোম্পানির একজন হয়েও এথিক্সের তাস দিয়ে বাজিমাত করতে পারবেন। আপনি ‘আমাদের’ একজনের পাশাপাশি ‘তাদের’ একজনও হয়ে উঠবেন। এই সবগুলো কাজ করার জন্য আপনাকে আপনার ইন্ডাস্ট্রির এথিক্স এবং কন্ট্রিবিউশন সম্পর্কে জানতে হবে। এখনই গবেষণা শুরু করে দিন।

৫.২ আপনার ইন্ডাস্ট্রির আইনগত বৈধতার বিষয়ে জানুন

আপনার কোম্পানি কি কোনো আইন ভঙ্গ করছে? আপনি নিজে কোনো বেআইনি কাজ করছেন? আপনার ইন্ডাস্ট্রির আইনগত বৈধতা-অবৈধতার বিষয়গুলো জানেন তো? আমি একসময় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম যাদের কাজকর্ম প্রথমদিকে লক্ষণীয়ভাবে প্রকাশ্য ছিল। তারা স্ট্যান্ডার্ড সেটার হিসেবে গর্ববোধ করত, পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে এটা একটা নতুন ব্যাপার ছিল। কয়েক বছর পরে, অকস্মাৎ তারা পথ বদলে মিস্টার হাইডকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ডক্টর জেকিলকে হারিয়ে ফেলল। এত উদ্ভট কাণ্ড যে কেন করল আমি তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। সিনিয়র বোর্ড মেম্বাররা এমন কোনো বদলাননি আর পরিস্থিতি বিবেচনা করলেও এমনটা হওয়ার কথা না- এমন না যে আমরা জীবন-মরণ সমস্যায় ছিলাম! কিন্তু হঠাৎই আইন ভাঙা হলো। আচমকা আমি নিজেকে একটা অসৎ আর দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিতে আবিষ্কার করলাম! কী করি? কিছুদিনের জন্য আমি বোবা-কালার মতো থাকলাম, চোখে ঠুলি বেঁধে দেখেও না দেখার ভান করে কাজ করলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমাকেও বেআইনি কাজে হাত লাগাতে বলা হলো। ওই পর্যায়ে পৌঁছেই আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। নিজের মানসম্মান আর সুনাম বাঁচিয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিতে চলে গেলাম। সেখানে একবার আমাকে আমার পুরোনো কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলো, কিন্তু আমি তো কোনো তথ্য দেবো না যা কাজে লাগিয়ে নতুন বসরা আমার আগের কোম্পানিকে একহাত দেখিয়ে দেয়ার সুযোগ পাবে। জানি না কেন, কিন্তু মনে হলো যা জানি সবকিছু চাপা দিয়ে বসে থাকাই সম্মানজনক হবে। আগের কোম্পানি কীভাবে ব্যবসা করত তা নিয়ে টুকটাক আলাপ সেরেই খুশি থাকলাম, আইনগত দিকে আর গেলামই না। মজার ব্যাপার দেখুন, কয়েক বছর পরেই আমি নিজেকে এমন একটি কোম্পানিতে আবিষ্কার করলাম যেটিকে আগের সেই দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিটি টেক ওভার করেছে। এতদিনে অবশ্য তারা ধরা পড়ে, শাস্তি পেয়ে, নিজেদের কৃতকর্ম শুধরে নিয়েছে। আমার কি তাদের সাথে কাজ করতে মন চাইছিল? খুব একটা না। কিন্তু একটি ইন্টারভিউয়ে একজন সিনিয়র ডিরেক্টর বললেন যে আমাকে পেয়ে তিনি খুশি- ‘তুমি অন্তত জানো কীভাবে মুখ বন্ধ রাখতে হয়’। আমার মনে হলো চিতাবাঘটার গায়ে এখনও কিছু কালো ছোপ রয়ে গেছে, তাই সটকে পড়লাম। কাজেই আপনার ইন্ডাস্ট্রি কতটুকু সাফ? আপনার কোম্পানি? আপনাকে জানতে হবে যে কী কী করার জন্য আপনাকে বলা হতে পারে আর কোনটা আইনগতভাবে বৈধ কোনটা নয়। কোনো কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে এমনকিছু আইন লুকিয়ে থাকে যে আপনি না বুঝেই হয়তো আইন ভাঙার দায়ে ফেঁসে যাবেন। কিন্তু এটা বুঝে নিন যে আপনাকে বুঝতেই হবে। রুলস প্লেয়ার হতে হলে আপনাকে সাদার চেয়েও সাদা হতে হবে, কেউ যেন আপনাকে সন্দেহ না করে আর পলায়নপর না ভাবতে পারে। তারা যদি এমন কাউকে চায় যে অন্যদের শুষে শেষ করবে, নিশ্চিত করুন সেটা আর যে-ই হোক আপনি হবেন না। আপনি সীমারেখার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন কিন্তু ভুলেও ওপারে পা দিয়ে ফেলবেন না। আপনি আইন ভাঙতে চাইলে অন্য কথা, কিন্তু এমন যদি হয় যে একটা বিশ্রী পরিস্থিতিতে পেঁচিয়ে গেলেন কারণ আপনি এ বিষয়ে জানতেন না- সেটা খুবই বাজে ব্যাপার হবে। বোকা বনে যাওয়ার চেয়ে বুদ্ধিমান দোষী হওয়া শ্রেয়- ‘কিন্তু আমি তো কিছুই জানতাম না’, এই কৈফিয়ত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো যুগেই কার্যকর ছিল না।

৫.৩ নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড সেট করুন

কিছু নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড আপনাকে সেট করতে হবে যেগুলো কোনো কারণেই আপনি ভাঙবেন না।
  • জেনেশুনে কাউকে আঘাত দিবো না বা নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে গিয়ে কোনো মানুষকে পেছনে ঠেলে দিয়ে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবো না
  • ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে গিয়ে জ্ঞানত কোনো আইন ভাঙবো না
  • আমি নিজের জন্য মূল্যবোধের একটা নীতিমালা বানাবো, যা-ই হোক না কেন সেটা মেনে চলবো
  • আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো যাতে আমার জীবিকার মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক অবদান রাখতে পারি
  • এমনকিছু করবো না যা আমার ছেলেমেয়েকে বলতে লজ্জা লাগবে
  • সবসময় নিজের পরিবারকে অগ্রাধিকার দিবো
  • সন্ধ্যার পর দেরি করে বা ছুটির দিনে কাজ করবো না, নিতান্তই কোনো জরুরী অবস্থা হলে আমার জীবনসঙ্গীর সাথে আলাপ করে এমন দিনগুলোতে কাজ করবো
  • নতুন কাজে লাভের আশায় অন্যায়ভাবে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করবো না বা ফাঁসাবো না
  • যেকোনো দক্ষতা, জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা যদি আমার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কারো কাজে লাগে তাহলে মুক্তমনে তা তাকে শেখাবো বা জানাবো- তথ্যগুলো সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখবো না
  • একই ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য কারো সাফল্যে আমি ঈর্ষান্বিত হবো না
  • সবসময় আমি যা যা করি দীর্ঘমেয়াদে সেগুলোর বিভিন্ন প্রভাব ও পরিণতি সম্পর্কে প্রশ্ন করবো
  • সবসময় রুলস-এর নিয়মেই খেলবো।
এই আচরণবিধি আমার নিজের ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ডের তালিকা। আপনার সাথে এটি না-ও মিলতে পারে। হয়তো এর চেয়ে ভাল নীতিমালা দরকার হবে আপনার। তবে আশা করবো এর চেয়ে কম মানের কোনো তালিকা আপনি খুঁজবেন না। আমাদের প্রচেষ্টা থাকতে হবে সবসময় আরো, আরো অনেক বেশি ভাল হওয়ার।

৫.৪ কখনও মিথ্যা নয়

রুল ৪.৮-এ যেমন আছে কসম খাবেন না তেমনই এই রুলটি খুব, খুব সহজ। এর ফলে আপনাকে একটা সীমার পর আর কিছু ভাবতে হবে না। যা-ই ঘটুক না কেন, মিথ্যা বলবেন না মানে বলবেনই না। যখন আপনার একটা সুখ্যাতি হয়ে যাবে যে কখনও মিথ্যা বলেন না তখন কেউ আপনাকে কারো পক্ষে উল্টোপাল্টা সাফাই গাইতে ডাকবে না। জীবিকার জন্য যদি মিথ্যা বলার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আপনার কাছে প্রচুর বিকল্প আর উপায় থাকবে। আপনি কোথায় সীমারেখাটা টানবেন? আপনি কি শুধু খুচরা টুকটাক মিথ্যা বলেন? নাকি বিশাল বিশাল মিথ্যা? নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলেন? অন্যদের? কোম্পানির জন্য বলেন? বসের জন্য? সহকর্মীদের জন্য? আপনার মিথ্যা কতটুকু উন্নত হবে? প্রথম মিথ্যাটা যখন ধরা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে তখন কি মিথ্যার পর মিথ্যা যোগ করে যাবেন? এই প্রক্রিয়ার ইতি কোথায় গিয়ে টানবেন? আপনার মিথ্যা কথায় কি অন্যদেরও জড়াবেন? নাকি একাই চালাবেন? সমস্যাগুলো দেখতে পাচ্ছেন? যদি একটা সরল রুল মানেন- কখনও মিথ্যা নয়- তাহলে আপনার একটা ডিফল্ট সেটিং হয়ে যাবে যেখানে কোনো চিন্তা করতে হবে না, অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না, কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হবে না, কোনো বাছাই না, কোনো পক্ষপাতিত্ব বা অগ্রাধিকারের ব্যাপার থাকবে না। কখনওই মিথ্যা না বলা কিন্তু আপনাকে অপরাধবোধ, ভয়, পাল্টা অভিযোগ, মিথ্যা মনে রাখা, শাস্তি, চাকরি যাওয়া বা লজ্জায় পড়ার ভয়, সহকর্মীদের দূরে ঠেলে দেয়া, পরিবারকে বিপন্ন করা, ফৌজদারি মামলার ঝুঁকি এবং রাতের পর রাত নির্ঘুম থাকা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। কখনওই মিথ্যা না বলা কর্মজীবন ও ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে সহজ, পরিষ্কার আর সৎ অ্যাপ্রোচ। আপনার সিভিকে একটু ভারী করার জন্য হালকা রঙ চড়ানো চলে, কিন্তু দয়া করে মিথ্যা বলবেন না- আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি ধরা পড়ে যাবেন। আমি যদি কোনো প্রকাশনা সংস্থায় বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যাই আর তারা জানতে চায় যে বইটা কেমন তাহলে আমি বলি নাঃ ‘ঠিকই আছে আমার ধারণা’। না, বরং বলিঃ ‘দারুণ, এককথায় দারুণ। এই বই এত বিক্রি হবে যে বলা যায় না হয়তো বেস্ট সেলার হয়ে যেতে পারে’। এখানে কি কোনো মিথ্যা আছে? না নেই। আমি যদি এটিকে দারুণ না ভাবতাম তাহলে নিশ্চয়ই লিখতাম না। এটা কি এত বিক্রি হবে? হতে পারে। আমি নিশ্চিত করে বলার কে? পুরো মার্কেটই তো পরিবর্তনশীল। অনেক বিক্রি হবে বলা কি মিথ্যা বলা? না মোটেই না। মিথ্যা সেটাই যেটাকে সুনির্দিষ্টভাবে ভুল প্রমাণ করে দেয়া যায়।

৫.৫ কখনও অন্য কারো দোষ ঢাকবেন না

রুলস প্লেয়ার হওয়ার মানে হলো আপনি নিখুঁত হওয়ার জন্য লক্ষ্যস্থির করছেন, নিজের জন্য অনেক উঁচু স্ট্যান্ডার্ড সেট করছেন। অন্যরা এত উঁচু স্ট্যান্ডার্ড সেট করবে না- এইজন্যই আপনার মতো সফলও হবে না- কিন্তু তারা আপনাকে প্রভাবিত করতে চাইবে যাতে আপনি আপনার স্ট্যান্ডার্ড নামিয়ে আনেন বা তাদের ষড়যন্ত্রে যোগ দেন। কী করবেন? আবারও একটি সহজ ডিফল্ট সেটিং দিয়ে খুশি থাকুন- কখনও, কোনো কারণেই, কারো দোষ বা ভুল ঢাকবেন না। আগেরটির মতোই এটি মানলে আপনি অযথা চিন্তা করা বা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে রেহাই পাবেন। এর ফলে আপনার অবস্থান কোথায় তা যেমন আপনি জানলেন তেমনই আপনার সহকর্মীদেরও জানিয়ে দিলেন তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়। আপনার বসকেও জানিয়ে দিলেন যে আপনি কারো পক্ষ হয়ে ওকালতি করেন না। ফলে আপনি হয়ে গেলেন বিশ্বস্ত, সন্দেহের ঊর্ধ্বে, নির্ভরযোগ্য এবং অনিন্দনীয়। অন্যদের দোষ ঢাকার বা ওকালতি করার সিদ্ধান্ত নিলে জীবন এত জটিল হয়ে পড়বে যে কোনোভাবেই সেটা আপনার পোষাবে না। কেউ যদি আপনাকে অনুরোধ করে- এমন কোনো সহকর্মী যে আবার ভালো বন্ধু- তাহলে পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন? দৃঢ়ভাবে শুধু বলুন ‘না’- কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার নেই। বা আরেকটু কোমলভাবে বলতে পারেন, ‘প্লিজ আমাকে বোলো না, তাহলে আমার তোমাকে না বলতে হবে’। তারাও তাহলে মানসম্মান নিয়ে ফেরত যেতে পারবে। একবার এরকম করতে পারলেই এ বিষয়ে আপনি আপনার অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে গলে না যাওয়া হলো সবচেয়ে কঠিন দিক। আবার সহজে এই সমস্যা সমাধানের উপায় হলো এভাবে চিন্তা করা- তারা যদি আপনার জন্য এত কম ভাবে আর নিজেদের কৌশল খাটানোর জন্য অস্থির হয়ে যায় তাহলে আপনিই বা কেন এত পাত্তা দিবেন? আপনাকে ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার তালে আছে তারা। কাজেই কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলুন। একেবারেই নাছোড়বান্দা লোক হলে তার সামনে টেপ রেকর্ডারের মতো বলতে থাকুন, ‘না, আমি পারবো না, প্লিজ আমাকে বোলো না। না, আমি পারবো না, প্লিজ আমাকে বোলো না...’। মনে রাখবেন একজন সত্যিকারের বন্ধু কখনও আপনাকে তার দোষ ঢাকতে বলবে না।

৫.৬ রেকর্ড রাখুন

আমি যখন কোনো প্রকাশকের সাথে বই প্রকাশে একমত হই তখন একটা কন্ট্রাক্ট বানাই। সেখানে সব ধরনের খুঁটিনাটি বিষয়াদি থাকে যেগুলো লিখে না রাখলে পুরো প্রক্রিয়া চলার সময়ে আমরা ভুলে যেতে পারি। এতে করে আমি পাণ্ডুলিপি জমা দেয়ার পর যদি প্রকাশক বলেন যে পৃষ্ঠা কম আছে বা অন্যকিছু, আমি কন্ট্রাক্টটি বের করে স্পষ্ট করে লেখা শর্তগুলো তাঁকে দেখিয়ে দিতে পারি। আপনার বস আপনাকে কিছু করতে বললে নোট নিন- তাঁর সামনেই- পরবর্তীতে আপনাকে দোষী প্রমাণিত করা তাঁদের পক্ষে প্রচণ্ড কঠিন হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা থাকলে বসকে সেসব বিষয়ে দ্রুত কিছু নোট বা সংশ্লিষ্ট মেমো দিন, অবশ্যই তার কপি নিজের কাছে রাখুন। তাঁরা যেন জানেন যে আপনার কাছে কপি আছে, নিশ্চিত হোন। এই টেকনিকটি কিন্তু কেবল আপনার পিঠ বাঁচানোর জন্য না, এতে সব ইস্যু পরিষ্কার হয়ে যায়। ছোটবড় বিষয়গুলো লিখিত থাকলে চাকরি করা আপনার জন্য অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। লিখিত দলিল নিয়ে কে তর্ক করতে পারে বলুন? সঠিক সময়ে লিখে না রাখলে ছোট্ট একটা ভুলের জন্য বিরাট বড় গোলমাল হয়ে যেতে পারে। আমাদের কারোরই নিখুঁত স্মৃতিশক্তি নেই। কাজেই এই অভ্যাসটা খুব স্বাভাবিক কারণেই করা উচিত। ম্যানেজমেন্টের বইগুলোতে প্রায়ই বলা হয় যে একটা সময়ের পরে সব মেমো, ইমেইল, ফ্যাক্স ইত্যাদি ফেলে দিতে- ছয় মাস যদি আপনি এগুলো দেখে না থাকেন তাহলে সেগুলোর আসলে আর তেমন প্রয়োজন নেই। একবারে বাজে কথা! সব রেখে দিন। বরং বিভিন্ন রেকর্ড সংরক্ষণ করার জন্য আরো জায়গা বানান। কোনোকিছু অপ্রয়োজনীয় এ বিষয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হলেই কেবল ফেলবেন।

৫.৭ সত্য এবং সম্পূর্ণ সত্যের মধ্যকার পার্থক্য জানুন

আমরা যেহেতু নিশ্চিত হলাম যে যা-ই হোক না কেন আপনি কখনও মিথ্যা বলবেন না এবং কারো দোষ ঢাকবেন না, কাজেই খুব আলাভোলা ভালোমানুষও সাজার কোনো দরকার নেই। আপনার সরাসরি কাজে না লাগলে কারো সঙ্গে কোনোরকম তথ্য চালাচালির প্রয়োজন নেই। কেউ কোনো ঝামেলা করা মানে এই নয় যে আপনি একলাফে বসের রুমে পৌঁছে তার সব কাণ্ডকারখানা বসের কানে ঢেলে দিবেন। বরং কখনও কখনও একটু দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা কোনদিকে এগোয় তা দেখা উচিত। আপনার সেই সহকর্মী যদি দেখেন যে আপনি ব্যাপারটা জানেন কিন্তু চুপচাপ আছেন তাহলে আপনার এই উপকার তার মনে থাকবে। কিন্তু এ-ও ঠিক যে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হলে মিথ্যা বলবেন না। তবে সত্য আর সম্পূর্ণ সত্যের মধ্যকার পার্থক্য খেয়াল রাখুন। মিথ্যা না বলা এক জিনিস আর যা জানেন সব হড়বড় করে উগড়ে দেয়া কিন্তু আরেক জিনিস! একটু এডিট করে বলা অনেকসময়ই অনেক ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়। রুলস প্লেয়ার হওয়ার সৌন্দর্যই হলো অনেক দারুণ একজন আন্তরিক মানুষ হয়েও নিজের আদর্শ মেনে নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়া। আপনি মিথ্যা বা ওকালতি যেমন করবেন না তেমনই সহকর্মীদের ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি, তাদের সম্পর্কে তথ্য পাচার, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, ফাঁসানো, ভাঙিয়ে খাওয়া, ঠেলে পেছনে ফেলা ইত্যাদিও করবেন না। দেখুন, এটি বাস্তব জগত। এখানে অনেকসময় কাকও কাকের মাংস খায়। সাবধান, কিছু চরিত্র আছে যারা খুবই নোংরা আর রুচিহীন। চারপাশে অনেক নিষ্ঠুরতা চলতে পারে, কিন্তু আপনার তাতে অংশ নেয়ার দরকার নেই। সবসময় চোখ-কান খোলা রাখবেন কিন্তু মুখ খুলবেন বুঝেশুনে। হাটে হাঁড়ি না ভেঙে প্রয়োজনমতো হাঁড়ি ঢাকুন আর হাঁড়ির ঢাকনা খুলুন। আমার মতে আপনার উচিত একজন কূটনীতিবিদ হওয়া- যিনি জানেন কী বলতে হবে এবং কখন; মার্শাল আর্টসের একজন ওস্তাদ- মুহূর্তে অবস্থা বুঝে ক্ষিপ্রতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে জানা; একজন থেরাপিস্ট- অন্যদের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আসতে দিলেও নিজের সমস্যা নিজের ভেতরেই রাখা; এবং একজন জেন মাস্টার- সব দেখা, সব জানা কিন্তু কম বলা। কাজেই আপনার কাছে যখন কোনো কাজের বিষয়ে মতামত চাওয়া হবে তখন আপনাকে মাপতে হবে যে তারা ঠিক কী জানতে চাইছেন। তাঁরা আসলেই সত্যিটা জানতে চাইছেন? তাহলে সেই রিপোর্টটির মতো বাজে আর কিছুই হবে না। নাকি তাঁরা প্রকৃত সত্যের একটা সীমিত সংস্করণ চান? সেক্ষেত্রে আপনার রিপোর্টটি ভাল, তবে কেবল কাজটুকু সারার মতো। অথবা তা কি সত্যের একটি বিশেষ নির্বাচিত অংশ? তাহলে আপনার রিপোর্টটি ভাল কিন্তু আপনি অনেককিছুই উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন। তাঁরা কি আপনার কাছ থেকে সুনিশ্চিত কোনো সত্য চান? এবার আমি বলবো যে আপনার রিপোর্টটি সত্যিই দারুণ আর আমার পছন্দ হয়েছে। সেইসঙ্গে আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করছি কারণ আপনার রিপোর্টটি অতুলনীয়। নাকি তাঁরা প্রকৃত সত্যটিই জানতে চাইছেন? আমি বলবো, এখনও আপনার রিপোর্টটি পড়ে দেখার একদম সময় পাইনি কারণ আপনাকে আমি দুচোখে দেখতে পারি না আর আমার ধারণা এই রিপোর্টটি একটা একঘেয়ে ফালতু জিনিসই হবে- অনেকটা আপনারই মতো।

৫.৮ আপনার সহায়/ যোগাযোগ/ বন্ধু তৈরি করুন

আপনি যদি লোকজনের সাফাই না গান তাহলে আপনি তাদের কোন কাজে আসবেন? আমি যা বলছিলাম, এ জায়গাটা বাস্তব দুনিয়া আর মানুষ আপনার কাছ থেকে অনেককিছু আশা করে। তারা চায় যে আপনি তাদের দায় নিবেন। আপনি তাদের বোঝা টানবেন, তাদের দোষ ঢাকবেন, তাদের জন্য নোংরা কাজ করবেন আর তাদের পিঠ বাঁচাবেন- এবং এই সবগুলো কাজই আপনি একইসময়ে দশহাতে সামলাবেন। কিন্তু আপনি তো এখন একজন রুলস প্লেয়ার যা আপনাকে তুচ্ছ অফিস গ্যাং-এর যুদ্ধক্ষেত্রের বলয়ের বাইরে রাখবে। আপনি এখন একটি একা দাঁড়িয়ে থাকা উপকরণ। আপনি হাঙরদের খাওয়াবেনও না আবার তাদের খাদ্যও হবেন না। তাহলে আপনি এখন কোথায়? আপনার কাজই বা কী? আপনি একটি শান্ত দীঘি, পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু। টিমের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শক্তি, যাকে কোনোভাবেই নাড়ানো যায় না- অটল ও অবিচল। আপনি একটি ডিফল্ট সেটিং, সততার প্রতীক, যে মানদণ্ড দিয়ে অন্য সব সহকর্মীরা নিজেদের যাচাই করে। আপনি নিজে যদি নিশ্চিত থাকেন যে এখানে কোনোরকম বেগড়বাই করার সুযোগ নেই তাহলে তারাও থাকবে। কোনো ধড়িবাজি চলতে থাকলে যদি আপনি সেটির দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়ান তাহলে তারাও জানবে যে এক্ষেত্রে ঘাঁটানো যাবে না। আপনি যদি কোনো বিষয়ে বলেন যে ঠিক আছে, তাহলে তারাও চোখ বুজে আশ্বস্ত হবে। আপনি হলেন স্ট্যান্ডার্ডের সূচক, যে মাপকাঠি দিয়ে অন্য সবাইকে মাপা হয়। করে দেখুন, এটি কাজে দেয়। আপনি যেহেতু এত বিশ্বস্ত, সৎ, নির্ভরযোগ্য- অন্য সহকর্মীরা আস্থার জায়গা থেকে ঝটপট আপনার কাছে পরামর্শ আর পথনির্দেশনার জন্য ছুটে আসবে। আপনি কিন্তু কাউকে কিছু বিনামূল্যে দিবেন না। পিঠের ওপর দেয়া আশ্বাসের প্রতিটি চাপড়, সঠিক নির্দেশনার প্রতিটি কথা, প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত আর পরামর্শ দেয়ার প্রতিটি সেশন, পথ দেখিয়ে দেয়ার প্রতিটি বিন্দুর দাম আছে- আনুগত্য। আপনি নেতৃত্ব দেয়ার জন্য হেদিয়ে মরবেন না, কিন্তু আপনার কাজেকর্মে যেন স্পষ্ট হয় যে কে নেতৃত্বদানকারী, লিডার। আর কে? আপনি! কীভাবে অর্জন করবেন এসব? সহানুভূতিশীলতা দিয়ে, বিবেচনা দিয়ে, সোজা পথে খেলার মাধ্যমে। কক্ষনো তাদের ছোট করবেন না। তাদের ঘাড়ে কিচ্ছু চাপিয়ে দিবেন না। তাদের নামে কথা চালাচালি করবেন না। সবসময় হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, অনুগত, বিশ্বস্ত থাকুন। ওকালতি করবেন না কিন্তু পারলে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন- তাদের রক্ষাকবচ হতে চেষ্টা করুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে কাজ করুন, তাদের দেখাশোনা করুন এবং অকৃত্রিমভাবেই তাদেরকে মানুষ হিসেবে দেখুন আর তাদের প্রতি আগ্রহী হোন। দেখবেন তারা আপনাকে মন থেকে পছন্দ করবে। কেন? কারণ আপনার এই কাজগুলো খুব কম মানুষই করে দেখাতে পারে। এভাবে খেলা খুব দুর্লভ। সোজা পথে খেলাটা এত অসামান্য ব্যাপার যে আপনার এই নিখাদ প্রয়াসকে প্রতিরোধ করার কোনো অস্ত্রই তাদের কাছে থাকবে না। ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখা বইগুলোতে যতই সৎ, ভাল, সরল হওয়ার কথা লেখা থাকুক, অলিখিত যে নিয়মগুলো আমরা দেখি সেগুলো হলো-নির্মম হওয়া, সুযোগ নেয়া, কুকুরের মতো কামড়াকামড়ি করা ইত্যাদি। তখন সবাই কুকুরের মতোই চিন্তা করে, সত্যিকার মানুষের মতো নয়। আপনি এগিয়ে এসে সবাইকে দেখিয়ে দিন আসলেই কেমন হওয়া উচিত এবং তারা আপনাকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো অনুসরণ করবে, হ্যাঁ আপনাকেই বলছি।

৫.৯ অন্যদের উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধি বুঝুন

আপনাকে কোন জিনিস প্রেরণা যোগায়, উদ্বুদ্ধ করে? আমরা জানি আপনি একজন রুলস প্লেয়ার- সৎ, পরিশ্রমী, আগ্রহী, সফল এবং স্বতঃপ্রণোদিত। আপনি এমনভাবে কাজ করেন যে কাজটা দারুণ উতরে যায়, বস খুশি হয়ে যান, সহকর্মীদের কাছ থেকে পান সম্মান ও তারিফ আর জুনিয়রদের কাছ থেকে আনুগত্য। আপনি নির্ভার ও তৃপ্ত মন নিয়ে বাড়ি ফেরেন কারণ সবার প্রতি আন্তরিক থেকে কর্মময় সুন্দর একটি দিন কাটিয়েছেন। কারো সঙ্গে অন্যায় না করার ফলে প্রতি রাতে আরামের ঘুম হয় আপনার। আপনি অনেককিছু পান, কিন্তু এতেই থেমে থাকলে হবে না কারণ আপনাকে সেরাদের সেরা হতে হবে। যতটা নিখুঁত হওয়া সম্ভব। কিন্তু অন্যদের কী কী জিনিস প্রণোদিত করে? এই সেরেছে, শ্রেষ্ঠতম বিন্দুটিতে পৌঁছুতে হলে অন্যদের উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধিগুলো যে আপনাকে জানতে হবে! তাদের উদ্দেশ্য বোঝার মানে হলো আপনাকে মনোবিদ্যার এক অন্ধকার কুয়াশাচ্ছন্ন জগতে ঢুকতে হবে। অন্যদেরকে যেগুলো অনুপ্রাণিত করে সেগুলো কিন্তু আপনার থেকে অনেক বেশী বিপরীত হতে পারে:
  • ক্ষমতা
  • টাকা
  • সম্মান
  • প্রতিশোধ
  • আঘাত করার ইচ্ছা
  • সবার ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
তাদের উদ্দেশ্য যা-ই হোক, আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে তারা রুলস প্লেয়ার নয়। আপনি তাদের থেকে যোজন যোজন ক্রোশ দূরে অবস্থান করছেন- দূরে, আলাদা, শান্ত, নিয়ন্ত্রিত, মর্যাদা নিয়ে আর পরিশীলিত অবস্থায়। যেকোনো মানুষ যে কিনা চাহিদা, ভয় আর লোভ দ্বারা প্রণোদিত হয়- এমন মানুষকে সতর্কতার সাথে সামলাতে হবে। আপনি কেবল নিশ্চিত হবেন যে তাদের জঞ্জালের স্রোতে ভেসে না গিয়ে, অস্থির না হয়ে সঠিক পথে অবস্থান করবেন। তাদের পর্যবেক্ষণ করুন, তাহলে সব সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। জ্ঞানই শক্তি!

৫.১০ ধরে নিন যে অন্যদের প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে খেলছে

এখন আমরা জানি আপনি কোন নিয়মে খেলছেন, কিন্তু অন্যরা? তাদের মানদণ্ড কী? তারা কোন রুল অনুসরণ করে? কোন ছন্দে চলে? তাদের পক্ষে খেলতে খেলতে নিয়ম বানানোর সম্ভাবনাই বেশি, যেজন্যে তাদের অনেককিছুই আগে থেকে বোঝা যায় না আর খেয়ালিপনা দৃষ্ট হয়। আপনার মতো সবাই কিন্তু এত উঁচু মাপকাঠি দিয়ে চলবে না। অবশ্য কেউ কেউ সদয় আর মর্যাদাবানও থাকবে- আপনার মতো- আর সেভাবে থেকেই কর্পোরেট মই বেয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু আরো অনেকেই থাকবে যারা এমন নয়। আপনার কাছে এখন যে বইটি আছে এটি যেন গোপনীয় থাকে। আপনার রুলস প্রকাশ করে ফেললে কিন্তু নিয়ম ভাঙা হবে। আপনি যদি ধরে নেন যে অন্যদের মধ্যে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা রুল দিয়ে খেলছে তাহলে আপনার ভুল কম হবে। তাদের রুলস আপনার রুলের চেয়ে ভাল না খারাপ তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো দরকার নেই- শুধু মনে রাখুন যে সেগুলো ভিন্ন। আপনি যদি মনে করেন যে তাদের রুলও আপনার মতোই বা আরো ভাল তাহলে আপনাকে পদে পদে কষ্ট পেতে হবে, হতাশ হতে হবে। আর যদি মনে করেন যে তাদের রুল আপনার চেয়ে খারাপ তাহলে আপনি কাউকে বিশ্বাস করতে পারবেন না, সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠবেন, দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে যাবেন। যদি ধরেই নেন যে তাদের রুল ভিন্ন, আলাদা তাহলে সতর্ক ও মুক্তমনা থাকতে পারবেন, গ্রহণ করতে পারবেন, আশা করতে পারবেন। এটি অনেকটা মার্শাল আর্টের মতো:
  • আপনি সতর্ক ও প্রস্তুত কিন্তু আক্রমণাত্মক নন।
  • আপনি যখন যেভাবে প্রয়োজন শরীরকে বাঁকিয়ে ফেলতে পারেন কিন্তু তার মধ্যে কোনোরকম যুদ্ধভাবাপন্ন ভঙ্গিমা নেই
  • আপনি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে যেকোনো কিছুর মোকাবিলার জন্য তৈরি।
মূল: রিচার্ড টেম্পলার ভাবানুবাদ: মার্জিতা প্রিমা