
ছবি সংগৃহীত
তোমার সাথে আড়ি
আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪, ০৭:০১
তানজিল রিমন তুমি এখনো উঠোনি! কখন সকাল হয়ে গেছে। আমি সেই কখন উঠেছি ঘুম থেকে। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে না? কতদিন তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাও না। সেই যে ঢাকায় চলে গেছ। এরপর থেকে আর যাওয়া হয় না। কেউ আমাকে নিয়েই যায় না। তোমার মত আর কে আমাকে ভালোবাসে বলো? উঠো না ভাইয়া। নয়টা বেজে গেছে। কখন উঠবে তুমি। ঢাকায় গিয়ে তুমি অলস হয়ে গেছ। আগে তো এমন ছিলে না। কোন সকালে সূর্য উঠার আগেই উঠতে। মনে আছে ভাইয়া, আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। আমি একটু না উঠতে চাইলে তুমি আমাকে ছড়া শোনাতে- আমি হব সকালবেলার পাখি সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি সুয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে হয়নি সকাল ঘুমোও এখন মা বলবেন রেগে বলব আমি আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো হয়নি সকাল তাই বলে কি সকাল হবে নাকো আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে.... তোমার সাথে সাথে আমিও বলতাম। তুমি তো জানো না, আমি কত্তগুলো ছড়া শিখেছি। বড় আপু আর ছোট আপুর বইয়ের সব ছড়াই আমি বলতে পারি। না দেখেই বলতে পারি। আজ আমি তোমাকে শোনাতে চেয়েছি। এজন্য সকালে আরও দুইবার এসেছি। তোমাকে কত করে ডাকলাম। মনে করেছি হাঁটতে হাঁটতে তোমাকে ছড়াগুলো শোনাবো। তোমার তো কোনো সাড়াই নেই। আচ্ছা, তুমি এতক্ষণ কীভাবে ঘুমিয়ে থাকো? মানুষ এত ঘুমায় নাকি! তুমি না বলতে- ছোট বড় সবার সকালে উঠা উচিৎ। সূর্য উঠার আগেই। যখন পাখিরা ডাকে আমগাছটার ডালে। চড়–ই পাখির কিচিরমিচির ভেসে আসে ঘরের কোণা থেকে। সকালে না উঠলে শরীর ভালো থাকে না। ঘুম থেকে উঠে একটু হেঁটে বেড়াতে হয়। তাহলে শরীর ভালো থাকে। মন ভালো থাকে। সারাদিন সব কাজে মন বসে। এসব কথা কি তুমি ভুলে গেছো? তুমিই তো আমাকে এসব বলতে। জানো, আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি। সূর্য উঠার আগেই। তখন কেউ উঠে না। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এই শীতেও আমি ঠিকই উঠি। আজকেও উঠেছি। তুমি বাইরে গিয়ে দেখই না। কী কুয়াশা পড়েছে! কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার মাথার চুল ভিজে যাবে। কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যায় না। কেমন সাদা সাদা দেখা যায়। আচ্ছা ভাইয়া, কুয়াশা সাদা কেন? তুমি কীভাবে বলবে এখন। তুমি তো ঘুমিয়ে আছো। তুমি না বললে আমাকে এসব কে শেখাবে? ছোট বলে তো আমাকে কেউ ঘুম থেকেই উঠতে দিতে চায় না। আম্মু বলে- ঠাণ্ডা লেগে যাবে। কাশি হবে। একটু পরে উঠো। আমি তখন কোনো কথা শুনি না। একা একাই উঠি। আম্মু যখন সকালে উঠে। তখনই উঠে পড়ি। জানো ভাইয়া, আমি না একা একাই জামা, মোজা, জুতো পরতে পারি। তাই আম্মু বুঝতেই পারে না। আমি উঠেছি কি না। আম্মুতো তখন কাজ নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু আমি কারো সাথে ঘুরতে যেতে পারি না। মাঝে মাঝে ফুপু আমাকে নিয়ে যায়। একটু ঘুরে, আবার চলে আসে। দূরেও নিয়ে যায়। কিন্তু ফুপু তো প্রতিদিন সকালে হাঁটতে যায় না। আর কেউ এত সকালে ঘুম থেকেই উঠে না। উঠলেও আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। আমার তো প্রতিদিনই সকালে হাঁটতে ইচ্ছে করে। আজকেও তো যাওয়া হলো না। মনে করেছি, এত দিন পরে একটু বাইরে সড়ক ধরে হাঁটতে যাব। ঐ যে দূরে, একটা নদী আছে না? হাঁটতে হাঁটতে নদীটার কাছে যাব। আচ্ছা ভাইয়া, নদীর ওপর দিয়ে সড়ক হলো কেমনে? আর ওটা ভেঙেই বা নদীতে পড়ে না কেন? এর আগে যখন নিয়ে গিয়েছিলাম তখন এটা জানতেই ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো ঘুম থেকেই উঠো নি আজ। আজকেও যাওয়া হলো না। জানো, তুমি যখন ঢাকায় চলে গেলে। তখন আমি সকালে উঠলেই মন খারাপ হয়ে যেত। আমি একা একাই উঠে বসে থাকতাম। কেউ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেত না। তবে এখন আর একা একা থাকি না। বাগানে যাই। কত্ত ফুল। ওদের সাথে কথা বলি। গাছে পানি দেই। এখন আমার অনেক বন্ধু হয়ে গেছে। আমি তাদের সাথে কথা বলি। তাদের সাথে খেলি। আমি অনেক নতুন নতুন বন্ধু পেয়েছি। আমাদের মুরগির বাচ্চাগুলোর সাথে আজকেও সকালে কথা বললাম। তারাও কথা বলল। কিচকিচ কিচকিচ করে কথা বলে। আমাকে দেখলেই ওরা দৌড়ে আসে। কী সুন্দর ওরা! আচ্ছা ভাইয়া ওদের শীত লাগে না? তুমি তো ঠিকই লেপের নিচে ঢুকে গেছো। আমিও তো কতগুলো কাপড় পরেছি। আরও অবাক হয়েছি কি জানো! কাল দেখি পেছনের পুকুরে কয়েকটা হাঁস ডুব দিচ্ছে। ঠাণ্ডা পানিতে সাঁতার কাটছে। ওদের কি শীত লাগে না? খালি গায়ে এই শীতে ওরা কীভাবে পানিতে নামল। আমি বুঝতেই পারছি না। আমার তো ঠাণ্ডায় পানি খেতেই ইচ্ছে করে না। সূর্য উঠলে রোদে দাঁড়িয়ে গোছল করি। আর হাঁসগুলোর কী সাহস! ঠাণ্ডা লাগবে না ভাইয়া। ওদের ঠান্ডা লাগলে কে আবার ওষুধ খাওয়াবে বলো তো? আমি মানা করলাম। কিন্তু ওরা প্যাক প্যাক করে হাসতে হাসতে পুকুরের আরো ভেতরে চলে গেল। কী দুষ্টু দেখেছো। আমার কোনো কথাই শুনল না। আরোও একটা মজার ব্যাপার কি জানো? কাল সকালে দাঁত ব্রাশ করছি। দেখি- একটা মুরগির দশটা বাচ্চা হয়েছে। আমি গুণে গুণে দেখেছি। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে মুরগিটা বেশ আনন্দ করছে। কিন্তু মুরগির বাচ্চাগুলো দেখতে জানি কেমন। একটুও মুরগির মতো নয়। কাছে গিয়ে দেখি- না এসব মুরগির বাচ্চা হতেই পারে না। কেমন চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা ঠোঁট। পা দুটোও অন্যরকম। মুরগির সাথে কোনো মিল নেই। আমি বুঝতে পারছি না। ছোট আপুকে ডেকে বললাম- আপু দেখ, আমাদের মুরগিটার কাণ্ড দেখ। আপু সব শুনে বলল- ওগুলো নাকি হাঁসের বাচ্চা। আচ্ছা, মুরগির ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা বের হল কেমনে? লাল মুরগিটার বেলায় তো এমন হয়নি। মুরগিটাও দেখি ঠিকই আদর করছে ওদের। আমি ওদের সাথে কথা বললাম। ওরা খালি হাসে। কোনো কথার জবাব দেয় না। আমার মনে হয় কি জানো? মুরগিটা হাঁসের ডিম চুরি করে এনেছে। কত বড় সাহস মুরগিটার! আচ্ছা হাঁসগুলো তো কিছুই বলেনা দেখছি। নাকি হাঁস তাদের ডিম মুরগিটাকে ধার দিয়েছে। আমি না ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি তাড়াতাড়ি উঠো তো। দুইটা কাক প্রতিদিন সকালে আসে। কা কা করে ডাকে। আমি সকালে রুটি খাওয়ার সময় ছিঁড়ে ছিঁড়ে একটু একটু করে দেই। কাক দুটো খায় আর খালি কা কা করে ডাকে। বোকা কাক, আমি কি ওদের কাকা হই নাকি। তাহলে কা কা করে ডাকে কেন? ওদের কি কাকা নেই? রুটির একটু খানি মাটিতে পড়ে গেছে। আমি খেয়ালই করিনি। খাওয়া শেষ হলে যেই উঠেছি আমি তো অবাক! মাটিতে পড়ে যাওয়া রুটির অংশটুকু হাঁটছে! কি মজা আমি খুশিতে আরেকটু রুটি ফেলে দেই। কিন্তু ওটা নড়লই না। আগেরটা হেঁটে হেঁটে একটু দূরে চলে গেছে। আমি চিৎকার করে আপুকে ডাকলাম। আপু তো তখন স্কুলে। মনেই ছিল না। তখনই ফুপু আসল। ফুপুকে ডেকে বললাম। ফুপু হাসল। বলল- রুটির পা হয়েছে। ভালো করে দেখো তো। রুটির আবার পা হয় নাকি। আমি বসে রুটির নিচে তাকালাম। দেখি, সত্যিই রুটির নিচে লাল লাল পা! আমি তো খুশিতে লাফাচ্ছি। ফুপুই পরে বলে দিল- এগুলো পা নয়, পিঁপড়া। বলে কি! এত বড় রুটিটাকে পিচ্চি পিচ্চি পিঁপড়াগুলো কীভাবে নিয়ে যাচ্ছে। পিঁপড়াগুলোর গায়ে কী শক্তি! অথচ আপু তার বইয়ের ছোট ব্যাগটাই কাঁধে নিতে পারে না। তার নাকি অনেক কষ্ট হয়। ভাইয়া, আমড়া গাছটা মনে হয় আর বাঁচবে না। গাছে আর একটা পাতাও নেই। সব পাতা ঝরে পড়েছে। হঠাৎ এমন কেন হল? তোমাদের ছোট আমড়া গাছটারও তো একই অবস্থা। ফুপু বলেছে, শীতের দিনে নাকি আমড়া গাছের পাতা ঝরে যায়। কেন ঝরে ভাইয়া? কাঁঠাল গাছ কিংবা আমগাছের বেলায় তো এমন হয় না। সে দিন না আমাদের ঘরে একটা ব্যাঙ ঢুকেছে। লাফ দিয়ে যেই ছোটো আপুর সামনে গেছে। আপু তো ভয়েই চিৎকার। আমি অবশ্য ভয় পাইনি। একটা ছোটো ব্যাঙ, তাকে ভয় পাবো কেন? পিচ্চি ব্যাঙটাকে ডাকলাম। লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে পড়ল। আর খুঁজেই পেলাম না। দুষ্টু ব্যাঙ কোথাকার। একদম কথা শুনল না। তুমি না বলেছিলে- বড়দের কথা শুনতে হয়। তাহলে ব্যাঙটা আমার কথা না শুনেই পালাল কেন? আরেক দিন পেলে মজা দেখিয়ে দিব। আজ সকালে যেই ভেবেছি তোমার সাথে ঘুরতে যাব। তখনই একটা টিকটিকি টিক টিক করে উঠল। আমি যখনই কিছু ভাবি। তখনই সে টিক টিক করে উঠে। আমি ওর দিকে তাকাই। সেও আমার দিকে তাকায়। আচ্ছা ভাইয়া টিকটিকিরা দেয়ালে উপুড় হয়ে থাকে কেমনে? কিছুক্ষণ পর টিকটিকিটা একটা মশাকে গিলে ফেলল। ভালোই হয়েছে। মশাগুলোও ভীষণ দুষ্টু। কোনো কথাই শোনে না। সবাই যখন কোনো কাজ করে। তখনই গিয়ে কামড় দেয়। কী পাজি! একদিন আমার পায়ে একটা মশা বসেছে। আমি বুঝতেই পারিনি। যখন টের পেলাম। হাত দিয়ে ধরতেই লাল হয়ে গেল মশাটি। মশাগুলো রক্ত খায় কেন তুমি কি জানো? আমাকে কেন স্কুলে ভর্তি করে না? আব্বুকে বলে দিয়ো তো। আমি নাকি এখনো অনেক ছোট! তাই স্কুলে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু আমি এক দুই গুনতে পারি। অ, আ, ক, খ পড়তে পারি। আমার নাম লিখতে পারি। আঁকতে পারি। কালকে রাতেই তো দুইটা মাছ, একটা ঘর, তিনটা পাখি আঁকলাম। কতগুলো ছড়া শিখেছি। শুনবে, তাহলে শোনো- আয় বৃষ্টি ঝেপে ধান দেব মেপে .................... নেবুর পাতা করমচা যা বৃষ্টি ঝরে যা। আরেকটা শুনবে- বাক বাকুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা বৌ সাজবে কাল কি চড়বে সোনার পালকি .......। আরো শুনবে- মনা রে মনা কোথায় যাস বিলের ধারে কাটবো ঘাস ঘাস কি হবে................। আরো জানি, দাঁড়াও তোমাকে সব শোনাচ্ছি। ওহ হো, তুমি তো ঘুমাচ্ছো। অলস ভাইয়া একটা। বললেই কি আর না বললেই কি। তুমি কি উঠবে? আমি কিন্তু চলে যাবো। তোমার সাথে আর কথা বলব না। গেলাম কিন্তু। আর মনে করে আব্বুকে বলে দিয়ো কিন্তু। আমাকে যেন স্কুলে ভর্তি করে দেয়। তাহলে আমিও স্কুলে যাবো। কী মজা হবে! আচ্ছা ভাইয়া, তোমার চুল এত বড় কেন? মেয়েদের মতো। দাঁড়াও ফুপুকে বলছি। তোমার চুল কেটে দিবে। ভাইয়া, ঢাকায় কি সব ছেলেদের চুল বড়। আব্বু কি বলেছে জানো? বলেছে- তোমার ভাইয়াকে দুইটা লাল ফিতা কিনে দিয়ো তো চুল বেঁধে রাখবে। আব্বুও বুঝে না। ছেলেরা কখনো চুল বাঁধে নাকি। ঘুম থেকে ওঠে আমাদের বাসায় এসো কিন্তু। তোমাকে একটা সুন্দর জিনিস দেখাবো। আমাদের ঘরের পেছনে বেগুন গাছে একটা টুনটুনির বাসা রয়েছে! ওখানে দুইটা ডিমও আছে। আমি চুপি চুপি সেদিন দেখে এসেছি। তুমি দেখবে না? আরেকটা কথা। আস্তে বলছি। ছোট ভাইয়া না সেদিন একটা শালিক পাখির বাচ্চা ধরেছিল। সেটাকে এনে ফুপুর ভয়ে পেছনের ঘরে রেখে দিয়েছে। ফুপু তো জানেই না। আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। আমি তো দেখেই ফেলেছি। পাখির বাচ্চাটি কেবল একটু একটু উড়তে শিখেছে। ভাইয়া ঘাসফড়িং ধরেছে। বিস্কুট কিনে এনেছে। কিন্তু পাখিটা খেতেই চায় না। যখন খুব ক্ষুধা লাগতো। চিঁ চিঁ করে ডাকত। তখন সে খেতো। আমিও খাইয়েছি বাচ্চাটাকে। একদিন সে আমার সাথে কথা বলল। সে বলল- তার নাকি খাঁচার ভেতর বন্দি থাকতে ভালো লাগে না। তাকে ছেড়ে দিতে আমায় খুব অনুরোধ করল। এক সময় কাঁদতে লাগল। আমি এদিক ওদিক তাকালাম। একবার ভাবলাম- ফুপুকে গিয়ে বলে দেই। আবার চিন্তা করলাম। ভাইয়া তো এখন স্কুলে গেছে। আমি তখন খাঁচার দরজা খুলে বাচ্চাটাকে বের করে আনলাম। তারপর ছোট আমগাছটার ওখানে গিয়ে ছেড়ে দিলাম। বাচ্চাটা যেন নেচে উঠল আনন্দে। একটু উড়ে গেল। আবার আমার কাছে এল। হেঁটে হেঁটে পায়ের কাছে এসে চিঁ চিঁ শব্দে ডেকে উঠল। পায়ের বুড়ো আঙুলে একটা ঠোকর দিয়ে উড়ে গেল। জানো, ছোট ভাইয়া সেদিন কী রাগটাই না করেছিল। শালিকের বাচ্চাটাকে অনেক খুঁজেছে। পায়নি। পাবেই সে কীভাবে? বাচ্চাটা তো উড়েই গেছে। এখন অবশ্য মাঝে মাঝেই শালিক ছানাটা আসে। দূরে থেকেই আমাকে দেখে। আবার উড়ে চলে যায়। কাছে আসে না। আবার যদি ছোট ভাইয়া ধরে রাখে খাঁচায়, সেজন্যই মনে হয় ভয় পায়। শালিক ছানাটা অবশ্য এখন বড় হয়ে গেছে। আচ্ছা ভাইয়া, ওর মত যদি আমিও উড়তে পারতাম! ইস, কি মজাই না হতো! আকাশে উড়ে যেতাম। পরীর দেশে যেতাম। পরীদের সাথে খেলতাম। গান গাইতাম। চাঁদ মামার সাথে দেখা করে আসতাম। মাঝে মাঝে যখন সুয্যিমামা আকাশ থেকে হারিয়ে যায়। তখন তাকে খুঁজে বের করতাম। মন খারাপ করো না, সাথে তোমাকেও নিয়ে যেতাম। তুমি তো আমাদের বাসায় যাও নি। দাদুমনির ঘরের কোনায় মিঁও মিঁও শব্দ। বিড়ালের মতো ডাকছে। কিন্তু এত চিকন গলা। বিড়াল তো মিঁয়াও মিঁয়াও করে ডাকে। আমি আস্তে আস্তে গেলাম। একদম চুপচাপ। পায়ের কোনো শব্দ হচ্ছে না। গিয়ে দেখি- ও মা! আমাদের বিড়ালটা ছোট হয়ে গেছে। এক্কেবারে পিচ্চি। এত পিচ্চি যে আমিই ধরতে পারব। কিছুক্ষণ পর দেখি সেখানে চারটে পিচ্চি বিড়াল। মিঁও মিঁও করে ডাকছে তো ডাকছেই। আপুকে ডাক দিলাম। আপু এসে বলল- এগুলো নাকি বিড়ালের বাচ্চা। চারটা বাচ্চা দিয়েছে আমাদের বড় বিড়ালটা। আর আমি ভেবেছি বড় বিড়ালটা ছোট হয়ে চারটা বিড়াল হয়ে গেছে! আমি অবশ্য এটা কাউকে বলিনি। বিড়ালের বাচ্চাগুলো এখন একটু বড় হয়েছে। আমাকে দেখলেই দৌড়ে আসে। মিঁও মিঁও করে ডাকে। আমি চারটা বাচ্চার চারটা নাম দিয়েছি। নামগুলো তোমাকে পরে বলব। আগে আমাদের বাসায় আসো তারপর। বিড়ালের বাচ্চাগুলো না অনেক সুন্দর। আমার সাথে ওরা খেলে। আমি না ওদের শীতের জামা বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ওরা পড়তেই চায় না। ভীষণ পাজি। ওদের শরীর না তুলোর মত নরম। খালি ধরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আম্মু দেখলেই বকা দেয়। আমি না ভাত-তরকারি রাঁধতে পারি! তুমি তো কখন থেকে ঘুমিয়েই আছো। ঘুম থেকে উঠলে তোমাকে রেঁধে খাওয়াবো। ছোট ভাইয়া, আপু সবাই আমার রান্না খায়। ওরা আমার খেলাঘরে বেড়াতে আসে। তখন আমি ওদের নাস্তা খাইয়াই। ভাত খাইয়াই। ওরাও খায়। তুমিও খাবে। ওসব খেলে অবশ্য তোমার পেট ভরবে না। কারণ আমরা তো সেটা খেলি। ঠুলিমালা খেলতে খেলতে খাওয়ার আয়োজন করি। কাঁঠালগাছের পাতাকে টাকা বানাই। সদাইপাতি কিনে আনি। তারপর রান্না করি। তুমি ঠুলিমালা খেলবে নাকি? আমাদের ফুলের বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে। একদিন বাগানে পানি দিচ্ছি। তখন একটা সাদা প্রজাপতি এল। আমি গাছে পানি দিচ্ছি। প্রজাপতিটা আমার হাতে এসে বসল। চুপচাপ। হয় তো মন খারাপ। আমি জানতে চাইলাম। কিন্তু সে কোনো কথাই বলল না। আমি বুঝতে পারলাম- সত্যিই তার মন খারাপ। কেন মন খারাপ তাও বুঝলাম। দৌড়ে ঘরে গেলাম। তারপর তুমি যে রং দিয়েছিল। ওগুলো একটু একটু করে ওর গায়ে মেখে দিলাম। প্রজাপতিটা তখন চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকাল। ওর সাদা ডানা আর সাদা নেই। রঙিন হয়ে গেছে। সে খুশিতে তার ডানা দুটি নাড়াচাড়া করল। তারপর উড়ে গেল। এরপর আর তার দেখা পাইনি। সাদা প্রজাপতি তো বাগানে আর আসেই না। মনে হয় সব প্রজাপতিই রঙিন হয়ে গেছে। রঙিন প্রজাপতি দেখলেই আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠে। তোমার জন্য অনেক শাস্তি আছে। ঘুরতে যাব বলে কোন সকালে উঠে আমি রেডি হয়েছি। কিন্তু তুমি ঘুম থেকেই উঠছ না। আজ তোমার খবর আছে। ফুপুকে বলে দিচ্ছি। তারপর বুঝবে মজা। কখন থেকে তোমাকে ডাকছি আমি। সকালেও দুইবার এসে ডেকে গেছি। মানুষ কি এত ঘুমায়। এখন সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। শুধু তুমিই ঘুমিয়ে আছো। কী লজ্জার কথা! তুমি ঘুম থেকে উঠোনি। অথচ আজ সুয্যিমামাও উঠেনি। সুয্যিমামা লজ্জা পেল নাকি! তাহলে সে উঠছে না কেন? সেই ভোরে আজকে বাসায় খেজুরের রস নিয়ে এসেছে। আমি রেখে দিয়েছি তোমার জন্য। কিন্তু তুমি তো ঘুম থেকেই উঠছ না। কি মিষ্টি খেজুরের রস। জানো ভাইয়া, আমি না তোমার মোবাইলে কল দিতে পারি। সকালবেলায় দিয়েছিলাম। আম্মুর মোবাইল থেকে। কিন্তু তুমি তো ধরলেই না। এভাবে কেউ ঘুমায়! সেদিন না বাসার সামনে একটা হাতি এসেছিল। আমি দেখেছি। ছোট ভাইয়া বলেছে- ওটা সার্কাসের হাতি। হাতিটা নাকি বল খেলতে পারে! ইস, হাতিটা যদি আমার হতো! তাহলে ওর সাথে আমি খেলতে পারতাম। হাতির ওপরে একটা লোক বসেছিল। কত্ত বড় হাতি। আচ্ছা হাতিটা এত বড় হল কেন? ও কি সত্যিই বল খেলতে পারে? হাতিটাকে যদি আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। তাহলে তো সে ঘরেই ঢুকতে পারবে না। যে বড় তার শরীর। দরজাতেই আটকে যাবে। বাইরেই থাকতে হবে তাকে। তার চেয়ে থাক, সার্কাসের দলেই থাক হাতিটা। একদিন আমাদের বাসায় একটা বাঘ এল! কিন্তু বাঘটা মানুষের মতই। হাত, পা, পেট সবকিছু। খালি মুখটা বাঘের! ছোট আপু তো ভয়ে চিৎকার করে ওঠেছে। আমি ভয় পাই নি। আম্মু দৌড়ে এসেছে। কী হলো, কী হলো? আম্মু এলে দেখি ওটা বাঘ না। ছোট ভাইয়া। একটা বাঘের মুখোশ পড়ে এসেছে। সবাইকে ভয় দেখাবে বলে। আমি তো ভয়ই পাইনি। একটু একটু অবশ্য পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা তো কেউ বুঝতেই পারে নি। এই যাহ, তোমাকে তো বলেই ফেললাম। তুমি আবার কাউকে বলো না যেন। ছোট ভাইয়াটা অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে। তুমি একটু বকে দিয়ো তো। ছোটদের ওমন করে ভয় দেখায় কেন? অবশ্য সেদিন ফুপুর কাছে পিটুনি খেয়েছে। থাক, তুমি আর কিছু বল না। আচ্ছা কাল তুমি আমাকে নিয়ে গেলে না কেন? আপুরা কেউ আমাকে নিয়ে যায়নি। আমি গেলে ঠিকই একটা পুরস্কার পেতাম। মেজো আপু নাকি কবিতা বলতে গিয়ে পারেনি। গাধা কোথাকার! ওর নাকি ভয় করে। ভয়ের কী আছে! আমি কতগুলো কবিতা পারি। আমাকে কেউ নিয়ে গেল না। তুমি তো নিয়ে যেতে পারতে। আবার কবে অনুষ্ঠান করবে তুমি? সেদিন কিন্তু আমি একা একাই যাব। দেখবে আমি ঠিকই কবিতা বলতে পেরেছি। আমার কোনো ভয় নেই। কবিতা বলে একটা পুরস্কার ঠিকই নিয়ে আসব। আমি তো ছবিও আঁকতে পারি। গানও গাইতে পারি। সবগুলোতেই আমি পুরস্কার পাব। এরপর অনুষ্ঠান করলে ঠিক ঠিক আমাকে নিয়ে যাবে কিন্তু। আজ তোমাকে আর কিছু বললাম না। আব্বু না সিগারেট খায়। কেমন একটা গন্ধ। থাকাই যায় না। সিগারেট কি মজা লাগে ভাইয়া? মজা লাগলে আমিও খেতাম। কিন্তু আম্মু বলেছে, সিগারেট অনেক খারাপ জিনিস। তখন আমি বুঝেছি, এজন্যেই তো কেমন পঁচা গন্ধ সিগারেটের। সিগারেটের ধোঁয়া তো আমার নাক দিয়েও ভেতরে ঢুকে। যখন নিশ্বাস নেই তখন। তাহলে আমার ক্ষতি হবে না? আব্বুকে বকে দিয়ো তো! কেন এত সিগারেট খায়? ভাইয়া, তুমি কি ঘুম থেকে উঠবেই না? পিচ্চি মানুষের মতো তুমি এত ঘুমাও কি করে? আমি কিন্তু চলে গেলাম। কাল সকালে যদি তুমি না উঠ। আমাকে নিয়ে যদি ঘুরতে না যাও। তাহলে আর কোনোদিন আমি তোমার সাথে কথাই বলব না। তোমার সাথে আড়ি দেব। কি আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে? দাঁড়াও তোমার কানটা একটু ধরে দেই। আমার যে ঠাণ্ডা হাত। ঠিকই ঘুম ভেঙে যাবে। কী ঘুম ঘুমায়রে? এবার একটা বুদ্ধি পেয়েছি। থাক পরে আবার আমাকে দুষ্টু বলবে তুমি। তার চেয়ে বরং চলেই যাই। তোমার সাথে আমার আর কোনো কথা নাই। আমি চলে গেলাম। তোমার সাথে আড়ি। তুমি ঘুমিয়েই থাকো। ওহ হো, একটা কথা ভুলেই গেছি। আমি তো বড় হয়ে ডাক্তার হব। তুমি না বলতে- ভালো করে পড়তে হবে। আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। ঢাকার স্কুলে ভর্তি করে দিবে। কিন্তু আমি চিন্তা করছি- ঢাকায় গেলে আবার তোমার মত অলস হয়ে যাব না তো। তুমি তো ঢাকা গিয়েই অলস হয়ে গেছে। বারোটা সময় ঘুম থেকে উঠো। আগে তো এরকম ছিলে না। আমি এত ঘুমিয়ে থাকতেই পারব না। আমার বুঝি কোনো কাজ নেই। তুমি ঘুমিয়েই থাকো। আমি চলে গেলাম। অলস ভাইয়া একটা। আমি হব সকালবেলার পাখি সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি সুয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে হয়নি সকাল ঘুমোও এখন মা বলবেন রেগে বলব আমি আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো হয়নি সকাল তাই বলে কি সকাল হবে নাকো আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে..... ০ ০ ০
- ট্যাগ:
- সাহিত্য
- শিশুসাহিত্য