ছবি সংগৃহীত

তবুও প্রকাশ্যে শিবির (মানবকন্ঠ)

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ২১:০৫
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ২১:০৫

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের স্বীকৃতি পেলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিবিরের মূল সংগঠন জামায়াতের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণসহ আদালতে একটি রিট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জামায়াত কিংবা শিবির নিষিদ্ধের দাবি উঠলেই সরকার আইনের দোহাই দিয়ে কালক্ষেপণ করে আসছে। সম্প্রতি আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও নিষিদ্ধ হয়নি তাদের রাজনীতি। বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও তৎপর বেসরকারি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। থাইল্যান্ডের বারিসান রেভুলুসি ন্যাশনাল ও আফগানিস্তানের তালিবানের পরপরই রয়েছে ছাত্রশিবিরের নাম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা বিষয়ক থিঙ্কট্যাংক আইএইচএস জেনস সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থার তৈরি করা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী হামলা ইনডেক্স-২০১৩তে ছাত্রশিবিরসহ ১০টি সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালের শেষদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরুর পর পুলিশের ওপর হামলা চালানো শুরু করে ছাত্রশিবির। এরপর বিভিন্ন সময়ে নাশকতা ও চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা ও আহত করার অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সন্ত্রাসী তালিকাতেও এসেছে সংগঠনটির নাম। এ বিষয়ে সংগঠনটি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে আত্মপক্ষও সমর্থন করেনি। কিন্তু এ সংগঠনটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে সর্বত্র। তবে সরকার দোহাই দিচ্ছে নিরাপত্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন এ বিষয়ে সরকারকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানবকণ্ঠকে তিনি বলেন, শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই সমাধান হবে না। সবদিক থেকে চিন্তুা-ভাবনা করেই ইফেকটিভ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেই সরকারকে এগুতে হবে। এর আগে জেএমবি নিষিদ্ধ করা হলেও সম্প্রতি জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে আমরা দেখেছি। এ ধরনের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গভীর ভাবনা দরকার। ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এখনই কিছু বলতে পারব না। আগে সংবাদটির (সন্ত্রাসী সংগঠন) সত্যতা নির্ণয় করব। তারপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করব। দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা দেশের সবাই জানে শিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এখনই তাদের নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকারের মাথায় নেই। তবে জনগণ সচেতন হলে তারা হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদকে ঠাঁই দেবে না। একাত্তরে নিষিদ্ধের পরও এখনো সক্রিয় শিবির। সর্বশেষ বিশ্বের ৩ নম্বর সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের উত্থানের পরিক্রমাটি এরকম : ‘সংঘ’ কেটে ‘শিবির’ যোগ: একাত্তরের ছাত্র সংঘই আজকের ছাত্রশিবির। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে প্রণীত ‘১৯৭২ সালের দালাল আইন’টি ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে বাতিল করে দেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দালাল আইন বাতিলের ফলে জেলে আটক প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রাজাকার সে সময় মুক্তি পেয়ে যায়। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছাত্র সংঘের নতুন নাম হয় ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’। শুধু ‘সংঘ’ বাদ দিয়ে ‘শিবির’ যুক্ত করা হয়, আর সবকিছুই একই থাকে। পতাকা, মনোগ্রাম সবই এক। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, এমনকি জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত নেতৃত্ব-কাঠামো সবই এক থাকে। মীর কাসেম আলীকে সভাপতি ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে জামায়াতের এই ছাত্র সংগঠন নতুন কার্যক্রম শুরু করে। দু’জনই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। নতুন করে স্বাধীনতাবিরোধী কার্যকলাপ: নাম পরিবর্তন করে নতুনরূপে এলেও তাদের কার্যকলাপ আগের মতোই থাকে। এক বছরের মধ্যেই শিবির শুরু করে তাদের প্রথম অভিযান। ১৯৭৮ সালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভেঙে ফেলার জন্য স্বাক্ষরও গ্রহণ শুরু করে। এতে ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে রাতের অন্ধকারে তারা অপরাজেয় ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সচেতন ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হঠে এবং সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এরপর একইভাবে তারা জয়দেবপুরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়। তারপর ঢাকা ছেড়ে নিজেদের সারাদেশে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করে। শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের লড়াই। ঢাকার বাইরে আস্তানা: ঢাকায় কর্মকাণ্ড চালাতে না পেরে তখন শিবির চট্টগ্রামে চলে যায়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে শুরু হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের হত্যার রাজনীতি। শিবিরের হাতে ১৯৮১ সালে প্রথম খুন হন চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেন। ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ এক মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রী। মৌলবাদমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতেই এই শান্তিপূর্ণ মিছিল। শুরু হয় মিছিলে শিবিরের গুলিবর্ষণ। নিহত হন ছাত্রমৈত্রী নেতা ফারুক। ফারুক হত্যার মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের খুনের রাজনীতির শুরু। ১৯৯৩ সালে শিবির ক্যাম্পাসে তাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হকের ছেলে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মুছাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২২ আগস্ট ১৯৯৮ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী সঞ্জয় তলাপাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের পর আশির দশকের মাঝামাঝিতে শিবিরের টার্গেটে পরিণত হয় চট্টগ্রামের খ্যাতনামা কলেজগুলো। তাদের টার্গেটে প্রথম চট্টগ্রাম কলেজ, দ্বিতীয় সরকারি মহসীন কলেজ ও তৃতীয় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি মহসীন কলেজ পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ছাত্রশিবির। নিয়মিত মিছিল-মিটিং করে কলেজে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শিবির। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিনকে গুলি করার পর তাদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের ‘বহদ্দারহাট ট্যাজেডি’। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শিবির চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট মোড়ে একটি মাইক্রোবাসে থাকা ছাত্রলীগের আটজন নেতা-কর্মীকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এরপর ২০০১ সালে ২৯ ডিসেম্বর ফতেয়াবাদের ছড়ারকুল এলাকায় শিবির ক্যাডাররা ব্রাশফায়ারে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতা আলী মর্তুজাকে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে কুপিয়ে হত্যা করে রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এএম মহিউদ্দিনকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ইতিহাসে আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড গোপালকৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর শিবির ক্যাডাররা গোপালকৃষ্ণ মুহুরীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দুর্গম এলাকা ফটিকছড়িতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে তারা পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগের বেশ ক’জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করে। তাদের এই হত্যা ও রগকাটা রাজনীতি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অধিভুক্ত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেরোরিজমের তৈরি ফাইলে ছাত্রশিবিরের ব্যাপারে বলা হয়, ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি তৎপরতা চালানো ছাড়াও শিবির আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিজেদের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রাজশাহীতে শিবিরের তাণ্ডব ও হত্যার খতিয়ান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে শিবির নৃশংসতার পথ বেছে নেয়। ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ প্রথমবারের মতো শিবির ক্যাডাররা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বাসভর্তি বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৮৮ সালের ৩ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে শিক্ষার্থীদের সামনে ছাত্রমৈত্রী নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। ১৯৮৮ সালে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির। ১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা যখন ঘুমিয়ে, ঠিক সে সময়ে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি ও সিনেট সদস্য আইয়ুব আলী খান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য আহসানুল কবির বাদল এবং হল সংসদের ভিপি নওশাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। একই বছরের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইউনুসের বাসভবনে শিবির বোমাহামলা করে। ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সন্ত্রাসীদের হাতে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত খুন হন। এ দিন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র হল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ১৯৯২ সালের ১৯ জুন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে রাজাকারদের অন্যতম প্রধান গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিলে শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। শিবিরের হামলায় ওই দিন সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং ২৪ জুন তিনি মারা যান। একই বছরের আগস্ট মাসে শিবির নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী নতুন বুধপাড়া গ্রামে শিবির ক্যাডার মোজাম্মেলের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় শিবির ক্যাডার আজিবরসহ অজ্ঞাতনামা অন্তত আরো তিনজন নিহত হয়। ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিবির সবচেয়ে বড় তাণ্ডবলীলা চালায় শিবিরের ক্যাডাররা। ছাত্রদল ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপনসহ ৫ জন ছাত্র নিহত হন। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বহিরাগত সশস্ত্র শিবিরকর্মীরা শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের সদস্য জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি শিবিরকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। ১৯৯৬ সালে জাসাস বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইউনুসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থি শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং ছাত্রশিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীসহ আরো দু’শিবির ক্যাডার একযোগে হামলা চালিয়ে রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে। ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি রাতের আঁধারে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে তার লাশ ম্যানহোলে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।