ছবি সংগৃহীত

চাঁদ না থাকলে কেমন হতো?

দেয়া
লেখক
প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০১৩, ০৭:৪৬
আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৩, ০৭:৪৬

“চন্দ্রযাত্রার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নয়, যে মানুষ চাঁদে পা রাখল, বরং এই, যে মানুষ চাঁদ থেকে পৃথিবীটাকে দেখতে পারল”। - নরম্যান কাজিনস সূর্য এবং পৃথিবী দুটোই যখন অনেক কমবয়সী, তখন মঙ্গল গ্রহের আকারের একটা গ্রহাণু আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে এবং সৃষ্টি হয় চাঁদের। তখন থেকেই পৃথিবীর প্রতিবেশী হয়ে আছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃথিবীর পরিবর্তন এনে চলেছে এই চাঁদ, তা পৃথিবীর প্রাণীদের জৈবিক বিবর্তনই হোক আর পৃথিবীর কাঠামোই হোক। যে কোনো রাতে আকাশের দিকে তাকালে আমরা ধরেই নেই চাঁদ দেখতে পাব (যদি না তা অমাবশ্যা রাত হয়ে থাকে)। ভাবুন তো দিনের পর দিন আকাশের দিকে তাকিয়ে যদি দেখি শুধুই একরাশ তারা তবে কেমন লাগবে? কলঙ্কে ভরা ওই চাঁদের মুখটা কি মিস করবেন না আপনি? শুধু চোখ জুড়ানোর জন্যেই নয়, চাঁদ না থাকলে আমাদের জীবনের অনেক কিছুই পালটে যেত, অন্যরকম হয়ে যেত ভূগোলের অনেক নিয়ম।

চাঁদ ছাড়া যে পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি ঘটত না তা অবশ্য নয়, কিন্তু চাঁদের অনুপস্থিতিতে এমনকিছু পরিবর্তন ঘটত যার কতগুলো আমরা স্পষ্টই বুঝতে পারতাম আবার কতগুলো বুঝতে একটু সময় লাগত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু তথ্য।

চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ পেতাম না আমরা-

চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দুটির জন্যেই প্রয়োজন তিনটি উপাদান আর সেগুলো হল পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য। এর মাঝে একটি অনুপস্থিত হলেই গ্রহণ বলে কিছু থাকবে না। চাঁদ না থাকলে পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে কে আড়াল হয়ে দাঁড়াবে? ফলে হবে না সূর্যগ্রহণ। আর চন্দ্রগ্রহনের তো প্রশ্নই ওঠে না। চাঁদের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের জ্যোতিষ্ক হবে শুক্র গ্রহ, আর সেটি এতই দূরে যে তার তৈরি সূর্যগ্রহণ তেমন দর্শনীয় কিছু হবে না।

জোয়ার ভাঁটা হয়ে যেত দুর্বল-

চাঁদের থেকে সূর্যের ব্যাস প্রায় ৪০০ গুণ বেশি, কিন্তু পৃথিবী থেকে এর দূরত্বও প্রায় ৪০০ গুণ বেশি। তাই জোয়ার ভাঁটার ওপর সূর্যের যতটা না নিয়ন্ত্রন তার চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রন হল চাঁদের। চাঁদ আর সূর্য একই সরলরেখায় থাকলে আমরা পাই তেজ কটাল- সবচাইতে শক্তিশালী জোয়ার যেটা সাধারণ জোয়ারের চাইতে ১৪০% বেশি শক্তিশালী। আর এরা যখন পরস্পরের সাথে সমকোনে থাকে তখন জোয়ারের শক্তি কমে হয়ে যায় ৬০% । চাঁদ না থাকলে জোয়ারের জন্য দায়ী হত শুধুই সূর্য এবং তখন জোয়ারের শক্তি হত মাত্র ৪০%। এই পরিবর্তনটা হয়তো আমাদের কাছে খুব বেশি মনে হবে না কিন্তু জীবজগতের ওপর এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলত।

রাতের আকাশ হয়ে যেত আরও কালো-

চন্দ্রবিহীন অমাবশ্যা রাতে বাইরে গিয়েছেন কখনো? গ্রামের আকাশ দেখেছেন, যেখানে নেই কোন কৃত্রিম আলোর অনুপ্রবেশ? সাথে করে টর্চ বা হারিকেন না নিয়ে গেলে আপনার দুটি জিনিস খেয়াল করার কথা আর তা হলো ১) রাতের আকাশ ভর্তি অগুনতি তারা আর ২) রাত এতটাই আঁধার যে আপনি নিজের সামনে একটি জিনিসও দেখতে পাচ্ছেন না।
আকাশের সবচাইতে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হল সূর্য কিন্তু রাতের বেলায় চাঁদের চাইতে উজ্জ্বল কিছু নেই, যদিও সূর্যের তুলনায় তা ৪ লক্ষ গুণ কম উজ্জ্বল। চাঁদ না থাকলে আমরা রাতের বেলায় প্রায় কিছুই দেখতে পেতাম না এবং মানুষের Night Vision এর বিকাশ ঘটত হয়তো অন্যভাবে।

দিনের দৈর্ঘ্য কমে হয়ে যেত ৬-৮ ঘণ্টা-

অর্থাৎ এক বছরে দিন থাকতো ১,১০০ থেকে ১,৪০০ টি! কি কারণ এর? এর কারণ হলো, চাঁদের ওপর যেমন পৃথিবীর টান আছে তেমনি পৃথিবীর ওপরেও চাঁদের টান আছে, যা যতই দুর্বল মনে হোক না কেন। এই টানের কারনেই আসলে নিজ অক্ষের ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কমে আসছে। এই পরিবর্তনের পরিমাণ অনেক কম বলে আমাদের চোখে ধরা পরে না কিন্তু কয়েক শতাব্দী ধরে পর্যবেক্ষণ করা গেলে তা বোঝা যেত। চাঁদ না থাকলে পৃথিবীর গতি কমত না এবং সূর্যের টানে এটি ৬-৮ ঘণ্টার মাঝে নিজের অক্ষের ওপর ঘুরে আসতো, বিষুব অঞ্চলটির ব্যাস বেড়ে যেত এবং মেরু অঞ্চলগুলো হয়ে যেত অনেক চ্যাপ্টা।

পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর আরও কাত হয়ে যেত-

আমরা জানি যে পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর সবসময় একটু কাত হয়ে থাকে এবং এ কারনেই ঋতুপরিবর্তন ঘটে। কিন্তু এর এই কাত হয়ে থাকার পরিমাণটা তেমন পরিবর্তন হয় না। মঙ্গল গ্রহ সময়ভেদে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত কাত হয়ে থাকতে পারে (অনেকটা কাত করে ছেড়ে দেওয়া লাটিমের মত) কিন্তু পৃথিবীর ক্ষেত্রে এমনটা হয় না কারণ মহাকর্ষের বলে একে জায়গামত ধরে রেখেছে চাঁদ। এর বাহ্যিক জোর খাটানোর ফলে পৃথিবীর অক্ষ মোটে ২৩ থেকে ২৬ ডিগ্রি ওলটপালট হয় এবং তার মাঝেও থাকে অনেক মিলিওন বছরের পার্থক্য। চাঁদ না থাকলে একেক সময়ে আমাদের অবস্থা হবে বুধের মত, অক্ষের ওপর পুরো সোজা হয়ে থাকার ফলে কোন রকম ঋতুপরিবর্তন দেখা যাবে না। আবার কখনো হবে ইউরেনাসের মত, এতটাই কাত হয়ে থাকবে যে চরম পার্থক্য দেখা যাবে ঋতুগুলোর মাঝে।