
ছবি সংগৃহীত
চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (ভিডিও)
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩, ০৭:০৩
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের অহংকার। আমাদের গৌরব, গর্ব ও বেদনাগাঁথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে গতো ৪২ বছরে মুক্তি পেয়েছে ৪০টিরও বেশি পূর্নদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সহ অসংখ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামান্যচিত্র। আজ বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রিয়.কম-এর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল বেশ কয়েকটি আলোচিত পূর্নদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ। মাটির ময়না মাটির ময়না ছবিটিকে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বা দ্বিমাত্রিকতার পর্দা-উপস্থাপনে যেমন দেখা গেছে সবমিলিয়ে তা একটি নিটোল গতির, প্রকৃতিঘনিষ্ঠ, শব্দনিষ্ঠ, দৃষ্টিনন্দন ছবি। তারেক মাসুদের এ ছবিটিতে একদিকে দেখা যায় মাটির তৈরী একটি ময়না পাখি ভাইবোনের মধ্যকার মিষ্টি-মধুর সম্পর্কের প্রতীক ধারণ করে জীবন্ত হয়ে ওঠে। মাটির ময়নাটি যেন প্রাণ পেয়ে ভাইয়ের হৃদয় থেকে বোনের হৃদয়ে উড়ে গিয়ে বসে। আর অন্যদিকে কাজী সাহেবের ধর্মীয় বাতিকের কারণে এবং প্রাণধর্মের স্বাভাবিক প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে কাজী পরিবারের জীবন্ত মানুষগুলি যেন নিস্প্রাণ এক একটি মাটির ময়না হয়ে উঠে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাটির ময়না একটি মাইল ফলক হিসেবে থেকেই যাবে। এর চিরন্তন আবেদন ফুরাবে না কখনও। যদি আমাদের প্রাণধর্মের বেগ কমে আসে, যদি চেতনা মূঢ়তায় আচ্ছন্ন হতে চায় তখনই আমরা মাটির ময়না ছবিটি দেখতে চাইতে পারি মুক্তির জন্য। চাইতে পারি একজন তারেক মাসুদের জন্ম যেন বারবার হয় এদেশে। [video: http://www.youtube.com/watch?v=BJB8aTSmjzM] আগুনের পরশমণি ১৯৯৪ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের লেখা গল্পে নির্মাণ করলেন ‘আগুনের পরশমণি’। যুদ্ধকালীন একটি পরিবারের দুঃখ, ভয় ও প্রাপ্তির স্বপ্নঘেরা গল্পে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল চলচ্চিত্রটি। ঢাকায় বসবাস করা নিতান্ত সাধারণ একটি পরিবার। পরিবারের কর্তা পাকবাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকলেও তার স্ত্রী ও কন্যা মুক্তিযোদ্ধা জেনেও এক যুবককে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়। সহযোগিতা করে। এক সময় সেই যুবকের প্রতি কন্যাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের মধ্য দিয়ে গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এর প্রধান অভিনয়শিল্পীরা হলেন- আবুল হায়াত, ডলি জহুর, বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ।আগুনের পরশমনি ১৯৯৪ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। বিপাশা হায়াতও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পান। এ ছাড়া বিদেশেও চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়। [video: http://www.youtube.com/watch?v=6STe6_-RQH4] ৭১-এর যীশু মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিজের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করেন ৭১-এর যীশু । এতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব পেশা ও শ্রেণীর মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের চিত্রের পাশাপাশি বাঙালি জাতির ওপর পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চিত্র মর্মস্পর্শী রূপে ফুটে উঠেছে। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার পথ বেছে নেয়। তাই গল্পকার ক্রুশবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের যীশুর সঙ্গে তুলনা করে চলচ্চিত্রের নামকরণ করেছেন ৭১-এর যীশু। এর মূল দুটি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও হুমায়ুন ফরীদি। জাতীয় ও বাচসাসসহ দেশে-বিদেশে পুরস্কার এবং প্রশংসা অর্জন করে এ চলচ্চিত্রটি। [video: http://www.youtube.com/watch?v=0WcRGU5Uvsc] জয়যাত্রা ১৯৭১- এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ। যুদ্ধের বিভিষিকা যখন ছড়িয়ে পড়েছে লাংলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। হাজার বছরের শ্বাষত বাংলা মুহুর্তেই পরিনত হয় বিরাণ শ্বশানে। প্রানভয়ে পলায়নয়ত একদল সাধারন মানুশ আশ্রয় নেয় একটি নৌকায়। তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যায় গল্প, কিন্তু শুধু বেঁচে থাকা নয় ক্রমেই রুখে দাঁড়াবার স্পৃহা জাগ্রত হয় তাদের হৃদয়ে। জয়যাত্রা – একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দঃখ, ব্যথা মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। কাহিনীকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন এর কাহিনী নিয়ে সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তৌকির আহমেদ। এটি তার পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ভিত্তিক এই ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ। ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন আহমেদ, আবুল হায়ত, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, চাঁদনী প্রমুখ। [video: http://www.youtube.com/watch?v=OzXbKKY0KkQ] আমার বন্ধু রাশেদ আমার বন্ধু রাশেদ ২০১১ সালে ১ এপ্রিল মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। সরকারি অনুদানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর জনপ্রিয় একটি শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুঁটে উঠেছে গল্পে। ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছে জাওয়াতা আফনান এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, হোমায়রা হিমু, পারভেজ মুরাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, কেরামত মওলা ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি সহ শিশুশিল্পীরা হলো জাওয়াতা আফনান, ইবতেশাম চৌধুরী, রিফায়েত জিন্নাত, ফাইয়াজ বিন জিয়া, লিখন রাহি, কাওসার আবেদীন ও কাজী রায়হান সোকাহান। ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র সংগীত পরিচালক ইমন সাহা। [video: http://www.youtube.com/watch?v=pGMQ_1-Qeqg] গেরিলা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও চলচ্চিত্রকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ২০১১ সালে নির্মাণ করেন গেরিলা । যুদ্ধকালীন পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের ঘৃণিত তৎপরতা ও বর্বরতা এ চলচ্চিত্রে মর্মস্পর্শীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার পৈশাচিক রূপ এবং এক সাংবাদিকের স্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার দিকটি মূলত এ চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। গেরিলা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০১১ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, পরিচালকসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে এই চলচ্চিত্রকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ। [video: http://www.youtube.com/watch?v=eR3fbz2C6Qc] জীবন থেকে নেয়া জীবন থেকে নেয়া জহির রায়হান এর নির্মিত সর্বশেষ চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ - ১৯৭১ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিতে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতহিস স্বীকৃতই লাভ করে। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে পারিবারিক কলহের মাধ্যমে দর্শকের কাছে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন এই কালজয়ী পরিচালক।তখনকার পাকিস্তানের ক্ষমতায়ন কে পরিবারের গিন্নি চাবিকে রুপক হিসেবে ধরা হয়েছে। পারিবারের গিন্নি যিনি কিনা নিজের চাবির গোছা অন্য কারো হাতে সপে দিতে চান না শেষ পর্যন্ত নতুনদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন। ঠিক যেমন পাকিস্থান বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয় এবং একটি স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। কলকাতায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া'র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈণ্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। উল্লেখ্য, ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী, খান আতাউর রহমান,রওশন জামিল আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। [video: http://www.youtube.com/watch?v=djW5cjytDUE] ওরা এগারো জন মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি 'ওরা এগারো জন'। নির্মাণ করেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে নির্মাণ করেন চাষি নজরুল এমনকি চলচ্চিত্রের অভিনেতারাও সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করার সময় সত্যিকারের গ্রেনেড রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছে। ওরা এগারো জনের কাজের সময়ের প্রতিটি মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা ঢেলে সাজিয়েছে চলচ্চিত্রটি। নব্বইয়ের দশকের পূর্ব পর্যন্ত অল্প কয়েকটি ছবি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব মুক্তিযুদ্ধনির্ভর কাহিনীচিত্রের প্রধান উপাদান পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যদের বাঙালি নারীদের ধর্ষণদৃশ্য, পাকিস্তানি সৈন্যদের মদ্যপানসহ নানাবিধ ফূর্তি করার দৃশ্যাবলি। এর বাইরে আর অন্যান্য উপাদান হলো নির্বিচারে হত্যা, ভাঁড়সদৃশ রাজাকারের চরিত্র ইত্যাদি। প্রায় সব কাহিনীচিত্রের পাত্রপাত্রীর অভিনয়রীতি গৎবাঁধা, নিরস এবং বাস্তবতাবর্জিত। ফলে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীচিত্র শেষ বিচারে করুণ রসের জন্ম না দিয়ে জন্ম দেয় হাস্যরসের, যা ভীষণ আপত্তিকর এবং পরিতাপের বিষয়। [video: http://www.youtube.com/watch?v=32PyX4alVNc] অরুনোদয়ের অগ্নিসাক্ষী ১৯৭২ সালে মুক্তি পেয়েছিল সুভাষ দত্ত পরিচালিত অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রটি। তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে বিষয়বস্তুগত দিক দিয়ে এ চলচ্চিত্রটিকে একেবারেই অন্যরকম বলে মন্তব্য করেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। এ চলচ্চিত্রের ঘটনা মূলত এক চিত্র অভিনেতার মুক্তিযুদ্ধকালের অভিজ্ঞতাকে ঘিরেই। যিনি যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা পেতে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিবেকের দংশনে দংশিত হতে থাকেন। এ চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনাগুলো ম��্মস্পর্শীভাবে উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। সুভাষ দত্তের পাণ্ডুলিপি ও নিজের পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রে ববিতা বীরাঙ্গনার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন। [video: http://www.youtube.com/watch?v=YjXAB0IfkaE] ধীরে বহে মেঘনা ধীরে বহে মেঘনা ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করছেন চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির। এবং এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র। এটি ১৯৭১ সালের পটভূমিতে নির্মিত তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছবিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, ববিতাও আনোয়ার হোসেন। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকেই। এই ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ভাল কিছু তথ্য প্রদানের মাধ্যমে দেশের প্রজন্মকে স্বাধীনতার যুদ্ধের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। [video: http://www.youtube.com/watch?v=e2N_6KbiBOc] আলোর মিছিল ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র আলোর মিছিল’। বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা ছবিটি পরিচালনা করেছেন। আলোর মিছিল শুধু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এক চলচ্চিত্রের নাম নয়, এটি চলচ্চিত্রের চেয়েও বেশি কিছু। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি যেমন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এক সঙ্গে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল, “আলোর মিছিল” মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাঙ্গালির সেই জেগে উঠার প্রেরণার আগুনকে আরও উস্কে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যে সমস্যাটি সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে তা হল শ্রেণীবৈষম্য। যত দিন যেতে থাকে, ধনীরা আরও ধনী আর গরীবেরা আরও গরীব হতে থাকে।‘সুবিধাভোগী মুনাফা লোভী মানুষ’ এর চরিত্রে প্রধানত দেখা যায় অভিনেতা খলিল কে, আর ‘কিছু মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত যুবক’ এর চরিত্রে দেখা যায় আনোয়ার হোসেন আর রাজ্জাককে। পুরো সিনেমাতেই তারকা শিল্পীতে ভরা আর বলতে কোন দ্বিধা নেই যেই, প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ চরিত্র অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । তবে সবচেয়ে তুলনাহীন অভিনয় করেছেন ববিতা যার স্বীকৃতিস্বরূপ নিজের অভিনয় জীবনে প্রথমবারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই বাংলা সিনেমার জগতে ফারুকের অভিষেক ঘটে, নিজের প্রথম ছবিতেই বেশ সাবলীল অভিনয় করেন তিনি। [video: http://www.youtube.com/watch?v=C9AQMtagZFI] হাঙ্গর নদী গ্রেনেড মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের কথা বলা হলেই আমাদের মনে যে নামগুলো ভেসে ওঠে, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড তার মধ্যে নেই। ‘ওরা ১১ জন”, “আলোর মিছিল” , “আগুনের পরশমনি” ; এ কালজয়ী ছবিগুলোর মাঝে কেন যেন হারিয়ে যায় “হাঙ্গর নদী গ্রেনেড”। তা যাক, কিন্তু কখনো যদি জানতে ইচ্ছে করে সেই মায়ের কথা, যে তার সন্তানকে অকাতরে বিসর্জন দিতে পারে দেশের জন্য, কতুটুকু আত্মত্যাগ করতে পারে, কতুটুকু স্বার্থহীন হতে পারে তা হলে দেখতে হবে “হাঙ্গর নদী গ্রেনেড”। “হাঙ্গর নদী গ্রেনেড” মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ সন্তানহারা মায়ের প্রতিচ্ছবি। চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এর চিত্রনাট্য। আবহমান বাংলার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের অপরিচিত নয় এবং নতুনও নয়। তবুও এক মূহূর্তও মনোযোগ সরবে না পর্দা থেকে। আর হৃদয়বিদারক শেষ ভাগের কথা না বললেই নয়! চোখে পানি ধরে রাখা অসম্ভব ছবির শেষ দৃশ্যে। বুড়ীর কান্না সেই লক্ষ মায়ের কান্নারই প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন।