ছবি সংগৃহীত

ঘুষ দুর্নীতির আখড়া মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়: টিআইবি

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫, ০৯:০৪
আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫, ০৯:০৪

(প্রিয়.কম) রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ে পদে পদে ঘুষ দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে (সিএজি) ১১টি স্থানে দুর্নীতি হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা এ প্রতিষ্ঠানটি আজ ঘুষ, দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, পদন্নতিতে ঘুষ, দুর্নীতি হয়ে থাকে ব্যপকভাবে এবং এমপি-মন্ত্রীরাও অবৈধভাবে সিজিএ কার্যালয়ে হস্তক্ষেপ করে থাকেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি’ ২০১৫) বেলা সাড়ে ১২টায় প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে ‘মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রনের কার্যালয়: সুশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে ২০টি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে সিএজি কার্যালয়ে যে ১১টি ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে সেগুলোর হলো

১। নিয়োগে দুর্নীতি (নিরীক্ষক, অধস্তন নিরীক্ষক ও ড্রাইভার নিয়োগ), ক্ষেত্র বিশেষে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে। ২। পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা করার সুযোগ (ক্ষেত্র বিশেষে ১ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৩। স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য, টিম প্রতি (ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৪। পূর্ত অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য, টিম প্রতি (ক্ষেত্র বিশেষে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৫। সিভিল অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য, টিম প্রতি (ক্ষেত্র বিশেষে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। (ক্ষেত্র বিশেষে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৬। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য, টিম প্রতি (ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৭। বাণিজ্যিক অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য ( ৫০ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। ৮। প্রতিরক্ষা অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য (ক্ষেত্র বিশেষে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ৯। ডাক তার ও দুরালািপনি অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষার জন্য (ক্ষেত্র বিশেষে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ১০। ত্রিপক্ষীয় সভায় অডিট আপত্তি নিস্পতিতে (ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ হাজার থেকে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় থাকে)। ১১। দীর্ঘদিনের পুরনো আপত্তি নিস্পতিতে (২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়ে থাকে) সিজিএ কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে বলে টিআইবি মনে করছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবলের অভাব, হিসাবের প্রতিবেদন সময়মত সম্পন্ন না করা, হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, নিয়োগ, পদোন্নতি ও অর্গানোগ্রামে সমস্যা, অডিট ও হিসাবের পৃথকীকরণ এবং সিএজি, সিজিএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সমস্যা। মন্ত্রণালয় ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং গ্রেডিংয়ে সমস্যা, জবাবদিহিতা ও তদারকিতে সমস্যা, অফিস স্থাপনা ও অন্যান্য লজিস্টিকের সাপোর্টের অভাব এবং প্রশিক্ষণের সমস্যাও চিহ্নিত করেছে টিআইবি। এইসব সমস্যা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এর ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে, আর্থিক বিবরণে সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না, পরবর্তী বাজেটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে কতগুলো স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ উল্লেখ করে (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে) টিআইবি।

স্বল্প মেয়াদী সুপারিশের মধ্যে রয়েছে

* সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাধ্যমে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত নিরীক্ষা আইন, অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগের বিধিমালার অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রনালয়কে যাবতীয় সহযোগিতা করতে হবে। * সিএজিসহ এই কার্যালয়ের সকল নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে বলা হয়েছে। এজন্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও সিএজি কার্যালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। * ওয়াওন্টে অফ প্রিসিডেন্সে সিএজিকে উচ্চ আদালতের বিচারপতির সমমর্যাদা দিতে হবে। ডিসিএজি সিনিয়র ও এডিসিএ ( ফিন্যান্স) রেলওয়ে ও ডিজি ফিমাকে গ্রেড ১, মহা পরিচালকদের গ্রেড ২ করাসহ নিম্নের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রী পরিষদ ও অর্থমন্ত্রনালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে। *কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাল পারফরমেন্সের জন্য পুরষ্কার বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা ও দুর্নীতিসহ বিধি বর্হভূত কাজের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা। এজন্য সিজিএ কার্যালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবেদনে মধ্যম মেয়াদী সুপারিশের মধ্যে রয়েছে

*বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বড় আকারের দুর্নীতির তথ্যগুলো সিএজি পিএসসিকে দিবে যাতে পিএসপি এই দুর্নীতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে সিজিএ কার্যালয়, পিএসসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে সাহসী ভূমিকা পালনের কথা বলা হয়েছে। * ক্যাডার কর্মকর্তা বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ৩০% করতে হবে এবং মাঠ পর্যায়ে নিরীক্ষা করার জন্য তাদের সমন্বয়ে নিরীক্ষা দল গঠন করতে হবে। এজন্য সিএজি কার্যালয়কে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

দীর্ঘ মেয়াদী সুপারিশে বলা হয়েছে

* প্রতিবেদনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয় ও হিসাবের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রনালয়গুলোতে দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রন শাখা খোলার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও সিজিএ অফিসকে স্বাধীনভাবে কাজ করা এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আরও বেশ কিছু সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে টিআইবি প্রতিবেদনে। টিআইবির সেমিনার কক্ষে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দিপু রায়। এতে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।