কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

ক্ষমতার পূর্বশর্ত ১৩ দফা দাবি : হেফাজতের মহাসমাবেশের মূল কথা

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০১৩, ১৪:০২
আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৩, ১৪:০২

হেফাজত ইসলামের ১৩ দফা দাবি মানতে হবে। না হলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা ক্ষমতায় যেতে হলে দাবি মেনে তবেই যেতে হবে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ১৩ দফা দাবিতে তাঁদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে হলে এসব দাবি মেনেই থাকতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হলে এসব দাবি মেনেই যেতে হবে। আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের মহাসমাবেশে শাহ আহমদ শফী লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আহমদ শফীর পক্ষে তাঁর ছেলে ও হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আনাছ মাদানী বক্তব্য পড়ে শুনান। আহমদ শফীর বক্তব্যে সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। সরকারকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দাবি মানা না হলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ইসলামবিরোধী সরকারের পরিণতি হবে নমরুদ, আবু লাহাবদের চেয়েও ভয়াবহ। হেফাজতের আমিরের বক্তব্যে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বাতিল জাগরণ’ স্তিমিত করার জন্য জীবন বাজি রেখে ‘শহীদ’ হওয়ার প্রস্তুত থাকতে হবে। আহমদ শফীর বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, জঙ্গিবাদ দমনের নামে ইসলাম নির্মূলের জন্য বিদেশিদের এই দেশে আনার পাঁয়তারা চলছে। ‘নাস্তিক’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, মুসলমানদের সভ্যতা ধ্বংস করে দেশে ‘বেলেল্লাপনা’ আমদানি করা হচ্ছে। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন ও মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে দেশকে ‘অগ্নিপূজারি’ ‘মূর্তিপূজারিদের’ দেশে পরিণত করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের ডাকা মহাসমাবেশ আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মহাসমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাশেমী। হেফাজতে ইসলামের আমির হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী বেলা পৌনে তিনটার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এ সময় সেখানে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বানানো মঞ্চে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশের ঘোষণাপত্রে হেফাজতের ১৩ দফা তুলে ধরা হয়। মুফতি ফয়জুল্লাহ ঘোষণাপত্র পড়েন। সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আবার সংঘর্ষও নেই।’ এর আগে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা কথিত ‘নাস্তিকদের’ শাস্তি দাবি করেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ‘নাস্তিকদের’ পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করেছে তারা মুসলমানদের সরকার নয়। তারা ‘নাস্তিকদের’ সরকার। ভোর থেকেই রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। মহাসমাবেশে আসা লোকদের অবস্থান শাপলা চত্বর থেকে দক্ষিণ দিকে আর কে মিশন সড়ক (ইত্তেফাক মোড়), পশ্চিম দিকে দৈনিক বাংলা মোড় ও অন্যদিকে আরামবাগ মোড় ছাড়িয়ে যায়। পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তারেক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, লংমার্চ ও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মতিঝিল এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশপাশের এলাকায়ও পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করে।

হেফাজতের ১৩ দফা দাবি

কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম লংমার্চ-পরবর্তী মহাসমাবেশ ডাকে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি: ১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা। ২. আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস। ৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। ৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করা। ৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা। ৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা। ৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা। ১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করা। ১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা। ১২. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। ১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ৮ এপ্রিল সারাদেশে হরতাল

দাবি না মানলে ৫ মে ঢাকা অবরোধ

আগামী ৮ এপ্রিল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি না মানলে আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধের ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে মহাসমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী হরতালের ঘোষণা দেন। মহাসচিব আরও ঘোষণা দেন, আগামী ১১ এপ্রিল সিলেট, ১২ এপ্রিল ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ, ১৮ এপ্রিল বরিশাল, ১৯ এপ্রিল ফরিদপুর, ২০ এপ্রিল খুলনা, ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম, ২৯ এপ্রিল রাজশাহী ও ৩০ এপ্রিল বগুড়ায় শানে রেসালাত মহাসমাবেশ করবে হেফাজতে ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ করবে হেফাজতে ইসলাম। আটক নেতাকর্মীদের আজ রাত ১০টার মধ্যে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আজ সকাল ১০টার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকা মহাসমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বক্তারা কথিত ‘নাস্তিকদের’ শাস্তি দাবি করে বক্তব্য দেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ‘নাস্তিকদের’ পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করেছে তারা মুসলমানদের সরকার নয়। তারা ‘নাস্তিকদের’ সরকার। বক্তারা তাঁদের শাস্তি দাবি করেন।