
ছবি সংগৃহীত
কোরান-হাদিসের আলোকে মুসলিম নারীর পর্দা : প্রবন্ধ :- ০৮ : পর্দার বিধানের গুরুত্ব-মর্যাদা ও ফজিলত
আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪, ০৯:৫১
পর্দার বিধানের গুরুত্ব-মর্যাদা ও ফজিলত এক. পর্দা করা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আনুগত্য করা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করাকে মুমিনদের জন্য ওয়াজিব করেছেন। [পর্দা বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুমিন নারীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং মুমিনদের অবশ্যই পর্দা করতে হবে এবং আল্লাহর আদেশ মানতে হবে। যখন একজন মুমিন আল্লাহর আদেশ পালন করবে, তা হবে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ করা।] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরানে করিমে ইরশাদ করে বলেন, وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا # سورة الأحزاب36 . “আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার (গ্রহণ করা) করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”। [সুরা আহজাব : ৩৬] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে আরও ইরশাদ করেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا # سورة النساء: 65 “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়”। [সুরা নিসা : ৬৫] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ # سورة النــور 31: . “আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে”। [সুরা নুর : ৩১] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে আরও বলেন, وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ # سورة الأحزاب: 33 “আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”। [সুরা আহজাব : ৩৩] আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে আরও বলেন, وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ # سورة الأحزاب: 53. “আর যখন নবি-পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র”। [সুরা আহজাব : ৫৩] আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে বলেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ # سورة الأحزاب: 59. “হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়” [সুরা আহজাব : ৫৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « المرأة عورة » রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নারীরা হল সতর। অর্থাৎ নারীদের জন্য পর্দা করা ওয়াজিব। [হাদিসটি সহিহ] সুতরাং পর্দার বিধানকে আল্লাহ মহানের আদেশ-নির্দেশ এবং নবি [সা.]-এর নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করা প্রত্যেক মুমিন বান্দবর উপর আবশ্যক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পর্দবর বিধান মেনে চলার তাওফিক দবন করুন। দুই. পর্দা নারীদের জন্য পবিত্রতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করাকে পবিত্রতার শিরোনাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ # سورة الأحزاب: 59. “হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সুরা আহজাব : ৫৯] যাতে তারা তা ডেকে রাখতে পারে। কারণ, তারা হল, সতী ও পবিত্রা নারী। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী فَلَا يُؤۡذَيۡنَ ‘ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না’ এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা দ্বারা তাদের কষ্ট দেয়া এবং যারা দেখে তাদের ফিতনা ও অপরাধে জড়িত হওয়া। আর বৃদ্ধ নারী যাদের যৌবনের হ্রাস পেয়েছে এবং তারা বিবাহের আশা করে না, তাদের জিলবাব ব্যবহার না করা, চেহারা ও কবজিদ্বয় খোলা রাখা দ্বারা ফিতনার আশংকা থাকে না তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে বলেন, وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ﴾ # سورة النور: 60 আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে । [সূরা নূর, আয়াত: ৬০] আয়াতের ব্যাখ্যা : আল্লাহ তাআলার বাণী- أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ–যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে- এখানে তাদের জন্য কোন দোষ নাই এ কথার অর্থ হল, কোন গুনাহ নাই। অর্থাৎ বয়স্ক বা বৃদ্ধা নারীরা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে পোশাক খুলে রাখে, তাতে তাদের কোন গুনাহ হবে না। এ কথা বলার পরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ (60) ‘আর যদি এ থেকে বিরত থাকে তবে তাদের জন্য অতি উত্তম’। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হিজাবকে বৃদ্ধা ও বয়স্ক নারীদের জন্য উত্তম বলে ঘোষণা করেন। সুতরাং যুবতী নারীদের জন্য পর্দা করা কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেন, وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ # سورة الأحزاب : 53 আর যখন নবি-পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। [সুরা আহজাব : ৫৩] আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষের পবিত্রতা বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, যখন চোখ কোন কিছু না দেখে, তখন তার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। আর যখন চোখ দেখে, তখন অন্তর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে কোন কোন সময় নাও হতে পারে। এ কারণে যখন তারা নারীদের দেখবে না, তখন তাদের অন্তর পবিত্র থাকবে। তাদের মধ্যে কোন ফিতনার আশঙ্কা দেখা যাবে না। কারণ, যখন নারীরা পর্দা করবে এবং পুরুষদের সামনে প্রকাশ্য হবে না তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাদের আশা নিরাশায় পরিণত হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে বলেন, فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ﴾ # سورة الأحزاب : 53. “তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়”। [সুরা আহজাব : ৫৩] তিন. পর্দা নারীর আবরণ সহিহ হাদিসে এসেছে, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم « إن الله تعالى حيِيٌّ سِتِّيرٌ , يحب الحياء والستر » রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ লাজুক, গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা তথা পর্দা-শীলতাকে পছন্দ করেন। [হাদিসটি বিশুদ্ধ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, « أيما امرأةٍ نزعت ثيابها في غير بيتها , خَرَقَ الله عز وجل عنها سِتْرَهُ » “যদি কোন নারী তার ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে উলঙ্গ হয় এবং সতর খুলে ফেলে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার থেকে তার কাপড় খুলে ফেলবে”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ] আমলের বিনিময় আমলের মতই হয়ে থাকে। [আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার কর্মের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেবেন। কর্ম যেমন হবে, তার শাস্তিও তেমন হবে। যেমন, এখানে হাদিসে বর্ণিত, দুনিয়াতে যে নারী উলঙ্গ-বেপর্দা হবে, আখেরাতে সে নারীকে নগ্ন ও উলঙ্গ করে শাস্তি দেয়া হবে।] চার. পর্দা করা ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহর ভয় পর্দার অপর নাম তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। [যখন কোন মানুষ পর্দা করে তখন অবশ্যই তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে। এছাড়াও যে মহিলা পর্দা করে, তার পর্দা তাকে অনেক পাপাচার থেকে রক্ষা করে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে তাকওয়ার পোশাক বলে আখ্যায়িত করেন।] আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে বলেন, يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ # سورة الأعراف [26 : “হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা-স্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম”। [সুরা আরাফ : ২৬] হাদিসে একটি ঘটনা বর্ণিত। বনী তামিম গোত্রের নারীরা একবার পাতলা কাপড় [যে কাপড়ে শরীর দেখা যায়] পরিধান করে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) এর ঘরে প্রবেশ করল, তাদের দেখে তিনি বললেন, « إن كنتن مؤمنات فليس هذا بلباس المؤمنات , وإن كنتن غير مؤمناتٍ , فتمتعن به » “যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তবে তোমরা যে পোশাক পরিধান করেছ, তা কোন মুমিন নারীদের পোশাক হতে পারে না। আর যদি তোমরা মুমিন না হয়ে থাক তবে তা উপভোগ করতে থাক”। পাচ. পর্দা লজ্জা [পর্দা করা লজ্জার লক্ষণ, যাদের মধ্যে লজ্জা নাই, তাদের নিকট পর্দার কোন গুরুত্ব নাই।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « إن لكل دين خُلُقًا , وخُلُقُ الإسلام الحياء. » “প্রতিটি দ্বীনের একটি চরিত্র আছে, আর ইসলামের চরিত্র হল, লজ্জা”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, « الحياءُ من الإيمان , والإيمان في الجنة » “লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের গন্তব্য হল জান্নাত”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, « الحياء والإيمان قُرِنا جميعاً , فإذا رُفِعَ أحدُهما, رُفِعَ الآخرُ » “লজ্জা ও ঈমান উভয়টি একটি অপরটির সম্পূরক। যদি একটি শূন্য হয়, তখন অপরটিও শূন্য হয়ে যায়”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ] উম্মুল মুমীনিন আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, «كنت أدخل البيت الذي دُفِنَ فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي رضي الله عنه واضعةً ثوبي , وأقول: ( إنما هو زوجي وأبي ) , فلما دُفن عمر رضي الله عنه , والله ما دخلته إلا مشدودة عليَّ ثيابي , حياءً من عمر رضي الله عنه. » “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার পিতা আবুবকর (রা.) -কে যে ঘরে দাফন করা হয়েছে, সে ঘরে আমি আমার কাপড় (ওড়না) খুলে প্রবেশ করতাম, আমি মনে মনে বলতাম, এরা আমার স্বামী ও পিতা। এখানে পর্দা করার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু যখন ওমর (রা.) কে একই ঘরে দাফন করা হল, তখন ওমর (রা.) এর লজ্জায় আমি সে ঘরে কাপড়কে শক্ত করে পেঁচিয়ে ও কঠিন পর্দা করে প্রবেশ করতাম। [হাদিসটিকে হাকিম সহিহ আখ্যায়িত করেন এবং হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক] এতে একটি কথা প্রমাণিত হয়, নারীদের জন্য পর্দা শুধু শরিয়তের বিধানের উপর নির্ভর নয় বরং পর্দা হল, নারীদের স্বভাবের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদের সৃষ্টিই করেছেন, লজ্জাবতী ও কোমলমতী করে। ফলে তাদেরকে তাদের স্বভাবই লজ্জা করতে অনেক সময় বাধ্য করে। ছয়. পর্দা নারীদের জন্য আত্মমর্যাদা ও সম্মান আত্মমর্যাদা ও আত্ম-সম্মানের সাথে পর্দার সম্পর্ক নিবীড় ও গভীর। মানব জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্ম-সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে দেখা যায়, একজন মানুষ তার মেয়ে, বোন ও স্ত্রীদের প্রতি কোন লম্পট বা চরিত্রহীন লোকের কু-দৃষ্টিকে বরদাশত করতে পারে না। তাদের সম্মানহানি হয়, এমন কোন কাজ বা কর্মকে তারা কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারে না। ইসলাম পূর্ব যুগে এবং ইসলামের যুগে অনেক যুদ্ধ বিদ্রোহ ও হানাহানি নারীদের ইজ্জত সম্মান রক্ষার কারণেই সংঘটিত হয়েছিল। আলি ইবনে আবি তালেব (রা.) বলেন, « بلغني أن نسائكم يزاحمن العُلُوجَ – أي الرجال الكفار من العَجَم – في الأسواق , ألا تَغارون ؟ إنه لا خير فيمن لا يَغار » “আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে, তোমাদের নারীরা বাজারে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলা-মেশা ও চলা-ফেরা করে। এতে কি তোমরা একটুও অপমান বোধ করো না, মনে রাখবে, যে ব্যক্তি এতে অপমানবোধ করে না, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নাই”। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান