ছবি সংগৃহীত

কিতাবুল ইমান : প্রবন্ধ নং- ৩৩ : কেয়ামতের বড় আলামত-০১ : পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়া

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০১৪, ০২:৪৮
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪, ০২:৪৮

কেয়ামতের বড় আলামত

কয়েকটি সহিহ হাদিসে কেয়ামতের বড় আলামতগুলো উল্লিখিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের দশটি আলামত উল্লেখ করেছেন। যেমন হুযায়ফা বিন উসাইদ আল গিফারি রযি. বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের কাছে আগমন করলেন। আমরা তখন আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছ?’ আমরা বললাম, আমরা কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তিনি বললেন,‘দশটি আলামত দেখার পূর্বে কেয়ামত ঘটবে না। এর মধ্যে তিনি উল্লেখ করলেন- ধোঁয়া, দাজ্জাল, জমিনের জন্তু, সূর্য পশ্চিম আকাশ থেকে উদিত হওয়া, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ এবং তিনটি ভূমিধ্বস- একটি পূর্বে, আরেকটি পশ্চিমে, আরেকটি আরব উপদ্বীপে এবং পরিশেষে ওই আগুন যা ইয়ামেন থেকে বের হবে এবং মানুষকে ময়দানে হাশরের দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে। নিচে আমরা এ আলামতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আলামত, হাদিস ব্যাখ্যাকারদের ভাষ্য মুতাবেক বর্ণনা করব, পশ্চিম আকাশ থেকে সূর্য উদিত হওয়া পৃথিবীর জীবন ও মহাবিশ্বের নিয়এ শৃঙ্খলায় আল্লাহ তাআলা যে পরিবর্তন আনবেন, এটি হবে তারই শুরু, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেবেন, কেয়ামত ঘটতে আর দেরি নেই। আর কেয়ামত ঘটার সঙ্গে-সঙ্গে মহাবিশ্ব সম্পূর্ণরূপে পালটে যাবে, যার ইঙ্গিত আল-কোরানের অনেক আয়াতেই এসেছে। হাদিস অনুযায়ী প্রথম পরিবর্তনটি হলো সূর্য পশ্চিম আকাশ থেকে উদিত হওয়া। অথচ ইতোপূর্বে তা পূর্ব আকাশ থেকে উদিত হয়েছে। আর যিনি পূর্বাকাশ থেকে সূর্যোদিত করতে পেরেছন, তিনি তার গতিপথ পরিবর্তন করে দিতেও সক্ষম। কারণ তিনিই তার স্রষ্টা ও সার্বিক ব্যবস্থাপক। সহিহ হাদিস অনুযায়ী, প্রকাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ আলামতটিই হবে প্রথম [কেয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশ পাওয়ার ক্রম কি হবে, সে ব্যাপারে ইবনে হাজার র. বলেন,‘সকল হাদিস একত্র করলে, যে বিষয়টি আমার কাছে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে মনে হয়, তা হলো দাজ্জালের প্রকাশ পাওয়া ওই বড় আলামতগুলোর মধ্যে প্রথম, যা ভূপৃষ্ঠের সাধারণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে জানান দেবে। এ আলামতটি ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের পরলোকগমনের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। আর সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হওয়া এমন বড় আলামতগুলোর মধ্যে প্রথম, যা ঊর্ধ্ব জগতে প্রকাশ পাবে এবং কেয়ামত ঘটে যাওয়ার মাধ্যমে তা শেষ হবে। আর জন্তু বের হওয়ার ঘটনা হয়ত একই দিন ঘটবে যেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হবে। এর হিকমত হলো, সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হয়ে তাওবার দরজা বন্ধ করে দেবে। এরপর জমিনের জন্তু বের হয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে এবং বুঝিয়ে দেবে, কেন তাওবার দরজা বন্ধ করা হলো। আর কিয়ামত শুরু হয়ে যাওয়ার প্রথম আলামত আগুন বের হওয়া, যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে যাবে।’ (ফাতহুল বারী ১১/২৯৬)। ইবনে হাজার র. এর কথার খোলাসা হলো, কেয়ামতের বড় আলামতগুলো তিন প্রকার। প্রথম প্রকার হলো, যা ভূপৃষ্ঠে সাধারণ অবস্থার পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করবে। আর দ্বিতীয় প্রকার হলো, যা ঊর্ধ্বজগতে সাধারণ অবস্থার পরিবর্তনকে বোঝাবে। আর তৃতীয় প্রকার হলো, যা কেয়ামত শুরু হয়ে যাওয়া নির্দেশ করবে।]। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল আস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘প্রকাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আলামত হলো পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্য বের হওয়া। আর নাস্তার সময় জমিন থেকে জন্তু বের হয়ে মানুষের কাছে আসা। যখন এ দুটির একটি প্রকাশ পাবে, তখন দ্বিতীয়টিও তার অব্যবহিত পরে প্রকাশ পেয়ে যাবে।’ [মুসলিম ও আবু দাউদ। দেখুন ফাতহুর বারি ১১/২৯৭; আবুদাউদ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়।] আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে যে, মানুষ যখন পশ্চিমাকাশ থেকে সূর্যোদয় হতে দেখবে, তখন তাদের সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু সে সময়ের ঈমান তাদের কোনো উপকারে আসবে না, যদি না ইতোপূর্বে তারা ঈমান এনে থাকে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই ইরশাদ হয়েছে, يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آَيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آَمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ‘যেদিন তোমার রবের আয়াতসমূহের কিছু প্রকাশ পাবে, সেদিন কোনো ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি, কিংবা সে তার ঈমানে কোনো কল্যাণ অর্জন করেনি।’- (সূরা আল আনআম, ১৫৮)। মুফাসসিরদের অনেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তার খোলাসা হলো- সূর্য পশ্চিমাকাশ থেকে উদিত হওয়ার পর কাফের ব্যক্তির ঈমান আনা, পাপী ব্যক্তির তাওবা করা আদৌ কোনো উপকারে আসবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মুমিন হয়েও সৎকাজ করেনি, এ সময় যদি সে আমল করতে শুরু করে, তবে তাও কোনো ফায়দা পৌঁছাবে না। [দেখুন ফাতহুল বারী ১১/২৯৭] মূল : ড. মুহাম্মাদ নাঈম ইয়াসিন বাংলা অনুবাদ : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক