ছবি সংগৃহীত

কলার যত গুন

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০১৩, ১৬:০৯
আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৩, ১৬:০৯

কলা সম্ভবত আমাদের দেশের সবচাইতে পরিচিত ফল। কেবল আমাদের দেশের নয়, সম্ভবত পুরো পৃথিবী জুড়েই সবচাইতে সস্তা এবং সহজলভ্য ফল এই কলা। তবে সস্তা হলেও এর পুষ্টিগুণ কিন্তু মোটেও কম নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় খাদ্যগুণ আছে- পানি------------------ ৭০.১% প্রোটিন------------------ ১.২% ফ্যাট/চর্বি---------------- ০.৩% খনিজ লবণ--------------- ০.৮% আঁশ-------------------- ০.৪% শর্করা------------------- ৭.২% মোট----------------------- ১০০%। খনিজ লবণ এবং ভিটামিন আছে- ক্যালসিয়াম----------------------- ৮৫মি.গ্রা. ফসফরাস------------------------ ৫০মি.গ্রা. আয়রন--------------------- ০.৬মি.গ্রা. ভিটামিন সি,অল্প ভিটামিন বি কমপ্লেক্স----- ৮মি.গ্রা. মোট ক্যালরি----------------------- ১১৬। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মালানের মতে ভারতবর্ষ ও চীন কলার জন্মভুমি । কিন্তু আরেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিল পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তিস্থল বিবেচনা করেন। সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে কলা ভাল জন্মে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হিসাবে বিবেচিত উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে। বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর,জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, প্রভৃতি এলাকায় শত শত বৎসর যাবৎ ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছর এ দেশের প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতেই এর চাষ করা যায়। পার্বত্য এলাকায় বনকলা, বাংলাকলা, মামা কলাসহ বিভিন্ন ধরনের বুনোজাতের কলা চাষ হয়। কলম্বিয়া ইত্যাদি ল্যাটিন আমেরিকান দেশে কলা প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রাগাধুনিক ভারতীয় অর্থনীতিতেও একটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে কলার চাষাবাস হতো। বাংলাদেশে প্রায় ১৯টি জাতের কলা পাওয়া যায় । পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, বন কলা, মামা কলা ইত্যাদি নামেও কলার কিছু বুনো জাত দেখা যায়। ক্রমশ কলার জাতের সংখ্যা বাড়ছে। গাছের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের কলা গাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- লম্বা জাতের গাছ ও খাটো জাতের গাছ। পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত ৪ প্রকার যথা: • সম্পুর্ন বীজমুক্ত কলা: যেমন-সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর প্রভৃতি । • দু-একটি বীজযুক্ত কলা: যেমন-চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী ইত্যাদি । • বীজযুক্ত কলা: এটেকলা যেমন-বতুর আইটা, গোমা, সাংগী আইটা ইত্যাদি । • আনাজী কলাসমুহ: যেমন-ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি কলার বিভিন্ন উপকারিতা নিম্নরূপ :

  • - কলাতে ট্রিপ্টোফ্যান নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেটা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। যারা হতাশাগ্রস্থ তাদের সেরোটোনিন লেভেল কম থাকে। কলা খেলে সেরোটোনিন লেভেল বেড়ে যায়, মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকে, হতাশা কেটে যায়।
  • - মেয়েদের প্রতি মাসে হরমোনাল পরিবর্তন জনিত কারনে ঋতুস্রাব হয় তার পূর্বে যে প্রি-মিনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম দেখা যায় কলা খেলে সেটা অধিকাংশে কমে যায়। কলাতে ভিটামিন বি-৬ থাকে যা রক্ত সুগার নিয়ন্ত্রন করে, মুড ভাল রাখে।
  • - কলাতে প্রচুর আয়রন থাকে যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, ফলস্বরূপ রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধ হয়।
  • - কলাতে পর্যাপ্ত পরিমান পটাশিয়াম থাকে এবং লবণ কম থাকে যা উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়।
  • - কলাতে যথেষ্ট ফাইবার থাকে তাই রেগুলার কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।
  • - যারা মাদকাসক্ত তাদের জন্য কলা সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে খেলে আসক্তি পরবর্তি প্রভাব কমে যাবে। কলা আমাদের পাকস্থলিকে কার্যক্ষম করতে সহায়তা করে, মধু রক্ত সুগার বৃদ্ধি করে শক্তি যোগায় আর দুধ পুরা শারীরিক ব্যবস্থাপনাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
  • - যাদের গ্যস্ট্রিক বা আলসার রয়েছে, যারা বুকে জ্বালা পোড়া অনুভব করেন তাদের জন্য কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসাবে কাজ করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত। কলা পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত অম্লত্ব নিরসন করে। এটি পাকস্থলীর আভ্যন্তরীক দেয়ালের আস্তরণের ওপর একটি আবরণ সৃষ্টি করে আলসারের উত্তেজনাকে প্রশমন করে।
  • - কোথাও পোকামাকড় কামড় দিলে কোন মলম দেবার আগেই যদি কলা সেই জায়গাতে দেয়া যায় তাহলে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ভাবটা কমে যায়।
  • - কলা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে পর্যাপ্ত শক্তি বর্ধনকারী সুগার রয়েছে যা একই সাথে ক্ষুধা নিবারন করে এবং অতিরিক্ত ওজন থেকে রক্ষা করে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফাস্ট ফুড না খেয়ে কলা খান।
  • - গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক যে চাপের জন্য উচ্চতাপমাত্রা হয়ে থাকে সেটা কলা খেলে ঠান্ডা এবং নিয়ন্ত্রণে আসে।
  • - যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যগ করার জন্য কলা অন্যতম উপকারী ফল। কলাতে ভিটামিন বি-৬, বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম থাকে যা নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর কে রক্ষা করে এবং ধূমপানে ত্যাগের জন্য শরীরকে তৈরি করে।
  • - কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহতে সাহায্য করে, পানির সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা কাজের জন্য অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকি তখন পটাশিয়াম লেভেল কমে যায় তাই কলা খেলে অতিরিক্ত চাপের সময়ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।
  • -কলা নরম হবার কারণে হজম শক্তির কাজে বাড়তি ঝামেলা দেখা দেয় না। সহজেই হজম হয়। ফলে দীর্ঘকাল স্থায়ী আলসার রোগের ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা ছাড়াই কলা খাওয়া যায়।
  • -কলা ও দুধের মিশ্রণ শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। অনেক বিখ্যাত ডায়েট চিকিৎসার ক্ষেত্রেই ১০-১৫ দিন প্রতিদিন ৬টি কলা এবং চার গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
  • -কলা গেটে বাত ও বাতের চিকিৎসায় বিশেষ উপকারী।
  • তাই কলাকে বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ওষুধ বলা হয়। একটি আপেলের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে যে কলাতে প্রায় চারগুণ বেশি আমিষ, দুইগুণ বেশি শর্করা, তিনগুন বেশি ফসফরাস, পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন-এ, আইরন, ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান পটাশিয়াম।